প্ল্যানিং এবং মালদ্বীপ এ প্রথম দিন
মালদ্বীপের ছবি দেখলেই কেমন যেতে ইচ্ছে করত। সবাই বলত এখানে নাকি এক্সপেন্সিভ। ভিসা পেতেও ঝামেলা করে। চিন্তা করলাম দেখি কি করা যায়। যত খরচ হবে, হোক। একবার ঘুরে আসি। আর ভিসা না দিলে নাই। ফেরত চলে আসব। মালদ্বীপে অন এরাইভাল ভিসা পাওয়া যায়। এছাড়া কয়েকটা দেশ ইতিমধ্যে ঘুরেছি। ভিসা না দেওয়ার কোন কারণ আমি দেখছি না।
আমাদের ফ্লাইট ছিল ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ সোমবার, দুপুর ১টার দিকে। আমার বাসা বসুন্ধরায় হওয়া সত্ত্বেও একটু আগে আগেই বের হয়ে পড়লাম। বাসায় বসে থাকা থেকে এয়ারপোর্টে গিয়ে অপেক্ষা করা ভালো। কারণ হচ্ছে এর আগে দার্জিলিং যাওয়ার সময় ট্রাফিক জ্যামের কারণে ফ্লাইট মিস করতে হয়েছে। পরে সকালের পরিবর্তে বিকেলে যেতে হয়েছে এবং আমার সকল প্ল্যানিং এ সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। এই ঢাকায় কখন যে জ্যামে পড়ি, আল্লাহ ভালো জানেন। যদিও পরে জ্যামে না পড়ায় এয়ারপোর্ট দশটার দিকেই আমি চলে আসি। নাহিদ ভাই এবং রাসেল ভাইও রওনা দিয়েছেন। আমি কফি নিয়ে একটু কাজ করার চেষ্টা করলাম।
১১টার দিকে উনারা পৌঁছালো। এরপর আমরা বোর্ডিং পাস নিতে গেলাম। বোর্ডিং পাস নিতে গিয়ে দেখলাম আমাদের হোটেল রিজার্ভেশন চাচ্ছে। দেখালাম। এতকিছু জিজ্ঞেস কেন করে তা ওদের জিজ্ঞেস করলাম। সাধারণত বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় ওরা শুধু টিকেট দেখে। কিন্তু এরা এত কিছু জিজ্ঞেস করায় কেমন জানি বিরক্ত লাগছিল। পরে ওরা বলল মালদ্বীপে এসব না থাকলে ভিসা দেয় না। তাই চেক করে নিচ্ছি। বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় এক মুরুব্বি তার মেয়েকে দেখিয়ে বলত তাকে হেল্প করতে। সে শ্রীলংকায় যাবে। তার হাজবেন্ড সেখানে অন্য দেশ থেকে আসবে। শ্রীলংকা দুইজনে দেখা করবে।
হেল্প করতে তো সমস্যা নেই। কি কি করতে হবে তা বলে দিলাম আমরা। ইমিগ্রেশনের সময় মেয়েটি আমার সাথে সাথে এসে দাঁড়ালো। ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছিল। জিজ্ঞেস করল কি করি, আমি বললাম স্টুডেন্ট। মেয়েটিকে কিছু না জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও বলে দিল আমি উনার কলিগ। কি বিপদ! ইমিগ্রেশন অফিসার তো পেয়ে বসছে। জিজ্ঞেস করল আপনি কই পড়েন, আইডি কার্ড দেখান। ঐ মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল মিথ্যে বললেন কেনো। আমাকে জিজ্ঞেস করল সত্যি করে বলেন তো আপনি উনারে কতদিন ধরে চিনেন। আমি বললাম। আমাদের ডেস্টিনেশন ভিন্ন। একজন শ্রীলংকায়, একজন মালদ্বীপে। আমার পাসপোর্টে পরে ডিপারচার সীল মেরে দিল। পরে দেখলাম ঐ মেয়েটির সব কাগজ পত্র অনেক্ষণ ধরে চেক করল। বেশি চালাকি করতে গিয়ে নিজের পাশা পাশি আমারও বিপদ ডেকে আনার জোগাড় ছিল! মেয়েটি ইমিগ্রেশন পাস হওয়ার পর আমরা বলে দিলাম এরপর কি করতে হবে। সময় থাকায় আমরা এয়ারপোর্টে হাঁটাহাঁটি করলাম কিছুক্ষণ।
শ্রীলংকা পৌঁছাই আমরা প্রায় ৪টার দিকে। Bandaranayake International Airport এয়ারপোর্টে। এরপর ট্রানজিট লাউঞ্জে অপেক্ষা করি। আমাদের পরবর্তী ফ্লাইট ৬.৫০ এ। পরে দেখলাম এক ঘন্টা ডিলে হয়েছে আমাদের ফ্লাইট। এটা সেটা করতে করতেই এই দুই আড়াই ঘন্টা কেটে গেলো।
এখান দিয়ে আমি আরেকটা দূর্ঘটনা ঘটাই। ওয়াশরুমে ওযু করতে যাই। ওযু করা শেষে যখনই স্যান্ডেলে পা দেই, তখনি স্লিপ কেটে পড়ে হাতে ব্যথা পাই। ফ্লোর ভেজা থাকার কারণেই এই ভাবে পড়ে যাই। পরে দেখি হাত ছিঁড়ে যায়। ভাগ্য ভালো যে মাথায় ব্যথা পাই নি। যে ভাবে পড়েছি, কোন ভাবে মাথা আগে পড়লে ভয়াবহ কিছু হতে পারত। এই ট্যুরের স্মৃতি যেন কখনো না ভুলি, তাই হয়তো নিজের হাতে একটা সীল পড়ল!
৭টা ১৫ এর দিকে আমরা বিমানে উঠি। রওনা দেই মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে। এক ঘন্টার ফ্লাইট। ৪৮৩ কিলো মিটারের মত দূরত্ব। শ্রীলংকা থেকে অনেক গুলো এয়ারলাইন্সের যাত্রী একত্রিত করে শ্রীলংকা থেকে মালদ্বীপ যায়। প্লেনটাও অনেক বড়। আমরা রওনা দেই। কিছুক্ষণ পরেই চলে আসি মালদ্বীপে, Velana International Airport এ।
এয়ারপোর্টটা ছোটই বলা যায়। ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ করে আমরা লাইনে গিয়ে দাঁড়াই। অনেক বিশাল লাইন। আস্তে আস্তে এক সময় আমাদের সময় হয়। আমাদের জিজ্ঞেস করেছিল কে কি করি, তারপর কত টাকা নিয়ে এসেছি, কতদিন থাকব এবং হোটেল রিজার্ভেশন দেখতে চাইলো।
হোটেল রিজারভেশনে দুইদিনের রিজার্ভকরা ছিল। আমাদের জিজ্ঞেস করল ২ দিন কেনো। আমরা বললাম পরে অন্য আরেকটা হোটেলে থাকব আমরা। এরপর কোন ঝামেলা ছাড়াই আমাদের ভিসা এবং এন্টারেন্স সীল মেরে দিল। ব্যাগেজ নিয়ে আমরা বের হতে যাবো, তখন আরেকজন সিকিউরিটি আমাদের হোটেল রিজারভেশন দেখতে চাইলো। দেখালাম। এরপর ছেড়ে দিল।
আমাদের একটু ভয় ছিল। কারণ রাসেল ভাই booking.com থেকে হোটেল বুক করে পরে আবার তা ক্যানসেল করে দিয়েছিল। যদি কোন কারনে ইমিগ্রেশন থেকে হোটেলে ফোন করত, তাহলে আমাদের হয়তো মালদ্বীপ ঢুকতে হতো না। আবার বাংলাদেশ ফিরতে হতো। Airbnb তে অনেক সহজেই ভালো রুম পাওয়া যায়। তাই কেউ আসতে চাইলে Airbnb তে আগেই হোটেল বুক করে নিতে পারেন। অন্য কোন সাইট ব্যবহার করেও বুক করতে পারেন।
সবাই তো ভয় লাগিয়ে দেয়, ভিসা দিবে না, এটা সেটা। এখানে দেখলাম কোন ঝামেলাই নেই। রিটার্ণ টিকেট, ডলার এন্ডোর্স করা (১০০০ ডলার হলে ভালো), হোটেল বুকিং এই তো। আর কিছুই লাগার কথা না। বাড়তি হিসেবে জব করলে NOC, নিজের ব্যবসা হলে ট্রেড লাইসেন্স, স্টুডেন্ট হলে আইডি কার্ড সাথে রাখা যেতে পারে।
আমরা বের হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম। বৃষ্টি হচ্ছিল। যাত্রী চাউনিতে আমরা অপেক্ষা করলাম। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই হাতের বাম পাশে বাস স্ট্যান্ড। সাটল বাস রয়েছে। এয়ারপোর্ট থেকে হুলহুমালে ১৫ রুপি নিবে। রুপি না থাকলে ডলার দিয়েও ভাড়া দেওয়া যাবে। ট্যাক্সি করে যেতে চাইলে তাও পাওয়া যাবে। আমরা হুলহুমালে পৌছে রুম খুঁজে নিলাম। এরপর পরের দিন কি করব, তার প্ল্যান করলাম। হুলহুমালে না থাকলে মালেতে(Male) থাকা যাবে। মালেতে রুম খরচ হুলহুমালে থেকে কম। এয়ারপোর্ট থেকে বের হলেই মালে যাওয়ার জেটি। ১০ রুপি মাত্র টিকেট। ১০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যাবে মালে শহরে। মালে ওদের রাজধানী। আর ঐখানে অনেক বিল্ডিং, অনেক মানুষ, অনেক ট্রাফিক। তাই আমি মনে করি পারলে হুলহুমালেতেই থাকা উচিত।
মালদ্বীপে আসলে সব দ্বীপ। আর ট্যুরিস্টদের জন্য দ্বীপ গুলোতে অনেক গুলো রিসোর্ট তৈরি করা রয়েছে। এই রিসোর্ট গুলোতেই থাকা যায়। আবার কিছু কিছু রিসোর্টে ডে ট্রিপ দেওয়া যায়। রিসোর্ট গুলোতে যাওয়ার জন্য স্পিডবোর্ড রয়েছে, রয়েছে সী প্লেন। রিসোর্ট বুকিং করলে তারাই নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। সমস্যা হচ্ছে এই রিসোর্ট গুলো আসলেই অনেক এক্সপেন্সিভ। এছাড়া রিসোর্টে যাওয়ার জন্য স্পিড বোর্ড বা সী প্লেন ভাড়াও অনেক।
আমরা হুলহুমালে পৌঁছে রুম খুঁজতে লাগলাম। এখানে হোটেল সানি স্যুইটস নামে একটা হোটেলে ঢুকার পর দেখলাম বাংলা গান চলছে। কি যে ভালো লাগল। আমরা রিসিপশনের থাকা ছেলেটির সাথে পরে বাংলাতেই কথা বলা শুরু করলাম। ওদের ঐখানে রুম না থাকায় আমরা অন্য একটা হোটেলে উঠি পরে। ও আমাদের বলল আমরা একটা এডভেঞ্চার ট্যুর করতে পারি আগামীকাল। যেখানে একসাথে বোটে করে স্যান্ড ব্যাংক এ নিয়ে যাবে, একটা লোকাল দ্বীপে ঘুরতে নিয়ে যাবে, সাথে ব্যুফে লাঞ্চ, এরপর স্নোরকেলিং করতে নিয়ে যাবে, তারপর ডলফিন দেখাতে নিয়ে যাবে এবং শেষে আমাদের হোটেলে ড্রপ করবে। আর সব কিছুই মাত্র ১০০ ডলারের বিনিময়ে। আমরা ডিসকাউন্টের কথা বললে ৭৫ ডলারে রাজি হলো।
পাশেই সৈকত। সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল কিছুক্ষণ সৈকতে গিয়ে বসি। কিন্তু আমাদের খাওয়া দাওয়া করতে হবে। চলে গেলাম খাওয়া দাওয়া করতে। রাস্তায় অনেক বাংলাদেশী মানুষের সাথে দেখা হলো। তারা বলল বাংলাদেশী একটা রেস্টুরেন্টে আছে কাছেই। আমরা চাইলে ঐখানে খেতে পারি। ছোট্ট একটা রেস্টুরেন্ট। যেখানে সবাই বাংলাদেশী। খাবার দাবারও বাংলাদেশী স্টাইলে। সমস্যা একটাই, প্রচুর ঝাল। খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মালদ্বীপে দ্বিতীয় দিন
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নিলাম। আজ আমাদের এডভেঞ্চার ডে। ট্যাক্সি আসতে একটু দেরি হওয়ায় আমরা হুলহুমালেতে বীচে হাঁটা হাঁটি করলাম কিছুক্ষণ। এরপর ট্যাক্সি এসে প্রথমে আমাদের নিয়ে গেলো পোর্টে বা জেটিতে। সেখান থেকে ট্রলারে করে সমুদ্রের দিকে যেতে লাগলাম। গন্তব্য স্যান্ড ব্যাঙ্ক।
ট্রলারে করে কিছুদূর যেতেই দেখা গেলো দুই রং এর পানি। একটা হালকা নীল, আরেকটা ঘাড়ো নীল। আসলে যে দিকে গভীরতা কম, সেখানের পানির রং হাকলা নীল। আর যেদিকে গভীরতা বেশি, সেখানের পানির রং গাড়ো নীল। ট্রলারে করে যেতে দুই পাশে অনেক অনেক গুলো দ্বীপ চোখে পড়ে। রিসোর্টও বলা যায়। সুন্দর করে সাজানো।
ট্রলারে করে যেতে যেতে ড্রাইভার মাছ ধরার জন্য বরশি ফেলল। একটা মাছ বরশিতে আটকানোর পর তা আস্তে আস্তে টেনে তুলল। আমাদের সেই কি উত্তেজনা।
পুরা ট্রলারে আমরা গেস্ট মাত্র ৫ জন। আমরা তিনজন, আর ফিলিপাইনের এক কাপল। আমাদের এই পাঁচজনের জন্য ৪ জন কর্মী রয়েছে ঐ বোটে। একটা বাংলাদেশী ছেলেও রয়েছে। এখানে এসে মনে হচ্ছিল আরেকটা বাংলাদেশে চলে এসেছি। আমি এ পর্যন্ত যত গুলো দেশে ঘুরেছি, কোথাও এত বাংলাদেশী চোখে পড়েনি। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল স্যান্ড ব্যাঙ্ক। প্রায় এক ঘন্টা পর আমরা সেখানে পৌঁছালাম। স্যান্ড ব্যাঙ্ক হচ্ছে ছোট্ট একটা বালির দ্বীপ। সমুদ্র থেকে অল্প একটু জায়গা জুড়ে নিজ অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। বড় ঢেউ আসলে কিছু অংশ পানির নিচে চলে যাচ্ছে আবার ঢেউ চলে গেলে ভেসে উঠছে। সাদা বালি। আমরা ঐ বালির দ্বীপে গিয়ে নামলাম। বালির মধ্যে স্লাইডিং করার চেষ্টা করলাম। এই স্যান্ড ব্যাংকে আমরা ছাড়াও আরেকটা গ্রুপ এসেছিল।
স্যান্ড ব্যাংকে কিছুক্ষণ থেকে আমরা রওনা দিলাম একটা লোকাল আইল্যান্ডের দিকে। সমুদ্রে কিছুক্ষণ বৃষ্টি তো কিছুক্ষণ অনেক রোদ। এভাবেই আমরা চলতে লাগলাম। লোকাল আইল্যান্ডে আমাদের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা রয়েছে। আরো প্রায় এক ঘন্টা পর সেখানে গিয়ে নামলাম। এটাও ছোট্ট দ্বীপ। কিন্তু প্রায় সব কিছুই আছে। দোকান, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ সব। অল্প কয়েক জন মানুষের জন্য নাগরিক সকল সুবিধে।
ব্যুফে লাঞ্চ, আইটেম যদিও অল্প কয়েকটা। ফ্রাইড রাইস, চাওমিন, ফিস এবং চিকেন বার-বি-কিউ, সালাদ এবং বিভিন্ন ফল। আমরা খাওয়া দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিলাম। পাশেই সৈকত। সৈকতের পাড়ে বসার জায়গা রয়েছে, সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নিলাম। মালদ্বীপের সব গুলো দ্বীপেরই একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে প্রতিটাতেই সুন্দর বীচ রয়েছে। পানি গুলো খুবি স্বচ্চ, নীল।
লোকাল দ্বীপটি ঘুরে দেখে আমরা রওনা দিলাম স্নোরকেলিং করার জন্য। যাওয়ার পথে বড় বড় ঢেউ পড়ল। ট্রলার একবার উপরে উঠে আবার নিচে নামে। বুকে কেমন কেঁপে উঠে। একটু একটু ভয় লাগে। সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে ট্রলার যাচ্ছে। ভয় লাগারই কথা। এরকম ভয় লেগেছিল টেকনাপ থেকে সেন্ট মার্টিন ট্রলারে যেতে ভয় ভয় করলেও অনেক মজা লাগছিল।
অন্য একটা দ্বীপের কাছা কাছি নিয়ে আসল আমাদের। গীয়ার পরে সমুদ্রে নেমে গেলাম স্নোরকেলিং করার জন্য। স্নোরকেলিং এর আগেও করেছি, বালিতে গিয়ে। বালিতে যেখানে করেছি, সেখানে গভীরতা কম ছিল। কিন্তু এখানে অনেক গভীর। উপরের দিকে যেমন একটা আকাশ, প্রথমবার সমুদ্রের নিচে তাকানোর পর মনে হলো নিচে আরেকটা আকাশ। অসম্ভব সুন্দর। প্রবাল, বিভিন্ন প্রকারের মাছ দেখতে লাগলাম।
অনেক্ষণ স্নোরকেলিং করার পর আবার ট্রলারে উঠলাম। এরপর ডলপিন খুঁজতে লাগলাম। দুই একবার ডলফিন দেখলাম আমরা। মুভিতে যেমন দেখায়, তেমন। ডলফিন এক সাথে সবাই ঢেউ এর মত লাফ দিয়ে আবার ডুব দেয়। যদিও বেশি দেখা যায় নি। গাইড জানালো মাঝে মাঝে অনেক ডলফিন দেখা যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে। হয়তো আবার কখনো মালদ্বীপ আসলে দেখা যাবে।
বুকিং দেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল এমন কি দেখাবে যে ৭৫ ডলার নিয়ে যাবে। ঘুরাঘুরি করে মনে হচ্ছিল এমন ট্রিপের জন্য ৭৫ ডলার কমই নেয়। ৪ জন মানুষ ট্রলারে করে আমাদের ঘুরাচ্ছিল, বলা যায় সারাদিনই আমাদের সাথে ছিল। আমাদের যা যা দরকার, সব কিছুর ব্যবস্থা করল। সুন্দর সুন্দর জায়গায় নিয়ে গেলো, খাবার খাওয়ালো। ৭৫ ডলারে অনেক কিছু।
ডলফিন দেখে আমরা ফিরে এলাম হুলহুমালে। তখনো বিকেল, সন্ধ্যা হয়নি। আমরা হুলহুমালে ঘুরতে বের হলাম। দ্বীপটা এতই ছোট যে আধা ঘন্টায়ই পুরা দ্বীপ ঘুরে ফেলা যাবে। ছোট দ্বীপ হলেও অনেক গোছানো। একপাশে বীচ, আরেক পাশে পোর্ট। একপাশে হোটেল গুলো, আরেক পাশে রেসিডেনশিয়াল এরিয়া। এছাড়া রয়েছে মার্কেট, স্কুল, মসজিদ ইত্যাদি। মাঝখানে রয়েছে একটা পার্ক। যার নামও সেন্ট্রাল পার্ক। পার্কের মধ্যে আবার রয়েছে জীম করার বিভিন্ন মেশিন। দ্বীপটা ছোট্ট হলেও রয়েছে অনেক গাড়ি। BMW, Audi, Mazda সহ অনেক ব্র্যান্ডেরই গাড়ি চোখে পড়ল। আর রয়েছে প্রচুর স্কুটি। আমার মনে হয় না গাড়ির তেমন একটা দরকার পড়ে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় হেঁটেই পাঁচ-দশ মিনিটে পৌঁছানো যায়। আর এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়ার জন্য রয়েছে ট্রলার, স্পিডবোড, ছোট্ট জাহাজ ইত্যাদি।
সন্ধ্যার পর আমরা বের হলাম ফিস বার-বি-কিউ খুঁজতে। কিছুক্ষণ পরই পেয়ে গেলাম। বীচ ক্লাব নানে একটা রেস্টুরেন্টে। হান্ডি মাছ নামে একটা মাছের বার-বি-কিউ করার অর্ডার দিলাম আমরা। অর্ডার নিল একজন বাংলাদেশী। বীচের পাশে চেয়ার টেবিল দেওয়া। সুন্দর করে সাজানো সব কিছু। ঐখানে বীচের উপরই আমাদের দেশের পুরির মত কিছু একটা তৈরি করছিল। ভেতরে চিকেন কিমা। তা অর্ডার দিলাম। তা খেয়ে বার-বি-কিউ এর জন্য অপেক্ষা করলাম। বার-বি-কিউ এর সাথে আমাদের রাইস দিল কিছু। ফিস বার-বি-কিউটা দারুণ লেগেছিল। আমাদের বলছিল ১ কেজি ওজনের মাছ। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিল আরো বেশি হবে ওজন। যখন অর্ডার দিয়েছিলাম, তখন ভাবলাম একটা মাছ দিয়ে হবে কিনা খাওয়া, তাই এক্সট্রা হিসেবে একটা থাই কারি নিয়ে নিলাম। পরে দেখা গেলো থাই কারি না হলেও হয়ে যেতো।
খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ সমুদ্রের পাড়ে বসে থাকলাম। ভালো লাগছিল। আমাদের দেশে এ সময় শীত কিন্তু ঐখানে গরমকাল। সমুদ্রের হাওয়া এসে গায়ে লাগলে শরীর জুড়িয়ে যায়। ভালো লাগে। কিছুক্ষণ থেকে আমরা চলে গেলাম হোটেল সানি স্যুইটসে। ঐখানে গিয়ে নাহিদের সাথে দেখা করে পরের দিন ক্লাব মেড কানিতে যাওয়ার বুকিং দিয়ে এলাম। সাধারণত ক্লাব মেড কানিতে ডে পাসের জন্য ১৬৫ ডলার নেয় এক জনের জন্য। নাহিদ আমাদের থেকে নিল ১৪৫ ডলার করে।
মালদ্বীপ তৃতীয় দিন
সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লাব মেড কানি রিসোর্টে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে আমরা নাস্তা করে নিলাম কিছু। এরপর চলে গেলাম হোটেল সানি স্যুইটসে। । সেখান থেকে আমাদের ট্যাক্সি করে নিয়ে গেলো জেটিতে। সেখানে গিয়ে উঠলাম একটা স্পিড বোডে। এটি একটু বড় স্পিডবোড। ১৫-২০ জন বসার মত জায়গায় রয়েছে। আমাদের সাথে কেরালা একটা কাপল আর চাইনিজ কয়েকজন ছিল।
গতকাল ঘুরেছি ট্রলারে করে। ট্রলারে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সময় একটু বেশি লাগে। স্পিডবোডে উঠে মনে হলো রোলার কোস্টারে উঠে পড়ছি। সমুদ্রের ঢেউ এর উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে যেতে লাগলাম আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম। যাওয়ার পথে অন্যান্য দ্বীপ চোখে পড়ল।
ক্লাব মেড কানি রিসোর্টে গিয়ে নামার পরই কেমন ভালো লাগা কাজ করল। চারদিকে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রঙ্গের মানুষ। রিসোর্টটা একটা দ্বীপ জুড়ে। পর্যটকদের যত সুবিধে দরকার, তার সব কিছুই রয়েছে এই রিসোর্টে। এ রকম আরো অনেক গুলো রিসোর্টই রয়েছে মালদ্বীপে। এটি সেরা গুলোর একটা। মালদ্বীপকে বলা হয় পৃথিবীর সুন্দরতম জায়গা আর এই ক্লাব মেড কানি হচ্ছে মালদ্বীপের মধ্যে সেরা একটা রিসোর্ট।
আমরা নেমেই রিসোর্টের বিভিন্ন অংশ ঘুরতে শুরু করলাম। এখানে ছোট ছোট অনেক গুলো ভিলা বা কটেজ রয়েছে। যেখানে যারা রিসোর্টে থাকতে চায়, তারা থাকে। রয়েছে রেস্টুরেন্ট, বার, মসজিদ ইত্যাদি। একটা অংশ ডে পাসে যারা যায়, তারা যেতে পারে না। পুরো রিসোর্টটাই একটু এক্সক্লুসিভ। ঐ অংশটা আরো বেশি এক্সক্লুসিভ। ঐখানেও রয়েছে অনেক গুলো ভিলা। যেগুলো মূলত পানির উপর।
দ্বীপটা এত সুন্দর করে সাজানো। এক পাশে এক রকম এক্টিভিটি করার ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বীপ ঘুরার পর মনে হলো আমরা যে এখানে এসেছি, কোন রেজিস্ট্রেশন করি নাই। রিসিপশনে গেলাম আমরা। রিসিপশনে থাকা একটা চাইনিজ মেয়ে জিজ্ঞেস করল আমরা কার সাথে এসেছি। আমরা বললাম। বলল এরপরের বার যখন এখানে আসব, তখন যেন প্রথমেই রিসিপশনে আসি। আমরা বললাম ঠিক আছে। জানি না আবার কখনো যাওয়ার সুযোগ হবে কিনা। কোন চাইনিজ মেয়ে এত সুন্দর হতে পারে, ঐ মেয়েটিকে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আমাদের হাতে একটা হলুদ ফিতে বেঁধে দিল। লম্বায় স্বাভাবিক থেকে একটু ছোট্ট। কি সুন্দর করে ইংরেজীতে আমাদের বলতে লাগল কি কি করতে পারব, কোথায় এবং কোন সময় কি কি করা যাবে ইত্যাদি।
আমরা জামা কাপড় পরিবর্তন করে ব্যাগ লকারে রেখে আবার বীচে চলে গেলাম। বীচের পাড়েই রয়েছে বার। যেখানে বিভিন্ন জুস, ড্রিংক্স, কফি, কেক ইত্যাদি নেওয়া যায়। আনলিমিটেড। জুস নিয়ে আমরা বীচের পাড়ে বসলাম কিছুক্ষণ। পাশেই রয়েছে বলিবল খেলার কোর্ট। কিছুক্ষণ খেললাম। এরপর টায়ার্ড হয়ে আবার বসে চারপাশ উপভোগ করতে লাগলাম।
এখানের সুইমিং পুলের পাশে বড় বড় সাউন্ড বক্সে গান বাজতেছিল, আর গানের তালে তালে সবাইকে নাচাচ্ছিল। ইন্সট্রাকটর ছিল, সে দেখিয়ে দিচ্ছিল কিভাবে নাচতে হবে। ঐখানে দাঁড়িয়ে থাকলে যে কেউই নাচা শুরু করবে। আমরা দেখলাম।
এখানে অনেক গুলো ওয়াটার এক্টিভিটি রয়েছে। আমরা গেলাম তা করতে। এখানে সেইলিং, কায়াকিং, প্যাডেলিং ইত্যাদি করা যায়। সেইলিং করার জন্য বুক করে আসলাম। বাকি দুইটা তখনি করতে পারতাম। পরে ভাবলাম লাঞ্চের পরই করি। আমরা এরপর কিছুক্ষন ব্যাডমিন্টন খেললাম। এরপর চলে গেলাম লাঞ্চ করতে।
বিশাল এরিয়া জুড়ে বিভিন্ন খাবার। জাপানিজ অংশে বিভিন্ন জাপানিজ খাবার, ইটালিয়ান অংশে বিভিন্ন ইটালিয়ান খাবার, সামুদ্রিক খাবার, ভেজিটেরিয়ানদের জন্য ভেজ কর্ণার, অনেক রকমের কেক, সালাদ, পেস্টি, ফল রেগুলার অন্যান্য আইটেম, বিভিন্ন আচার, বিভিন্ন রকমের ডেজার্ট, জুস, ড্রিংস, আইস্ক্রিম সব মিলিয়ে ২০০+ আইটেম।
এখানে ফ্রাইড রাইসটাও সুন্দর। কি কি আইটেম ফ্রাইড রাসে থাকবে, তা নিয়ে দিলে ঐখানের স্টাফ সাথে সাথেই তা তৈরি করে দেয়। কি কি ভেজিটাবল খাবেন, তা সিলেক্ট করে দিলে সাথে সাথেই কেটে সেগুলো রান্না করে দিবে। এরকম প্রায় সব কিছু। সব সাথে সাথে তৈরি করে দেয়। এখানের খাবার নিয়েই একটা পোস্ট লেখা যাবে। আমি কয়েকটা আইটেম ট্রাই করেছি তার মধ্যে একটা ছিল টুনা টার্টার। যেটা আসলে কাচা মাছ! জাপানিজ একটা আইটে ট্রাই করেছি যা হচ্ছে স্কুইড আর অক্টোপাস দিয়ে তৈরি (ওকোনোমিয়াকি নাম)। ভেজিটাবল গ্রিল। এর আগে সম্ভবত কখনো দেখিনি। সবজিরও গ্রিল হতে পারে, এমন চিন্তাও করিনি। এগুলো ছাড়া অন্যান্য রেগুলার কিছু আইটেমও ট্রাই করেছি।
খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলাম কায়াকিং করতে। আইস্ক্রিম একটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে। কায়াকিং করে কতটুকু যেতে পারব, তা আমাদের দেখিয়ে দিলো। আমরা কায়াকিং করতে করতে সমুদ্রের দিকে গেলাম। কায়াকিং করে এরপর করলাম প্যাডেলিং। কায়াকিং একের অধিক মানুষ মিলে করা যায়। প্যাডেলিং করতে হয় এক জনে। বোর্ডের উপর দাড়িয়ে একটা বইঠা দিয়ে বেয়ে যাওয়া যায়। সমুদ্রের ঢেউ বাড়লে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টের। আর মজাটা এখানেই। প্যাডেলিং করে গেলাম স্নোরকেলিং করতে। স্নোরকেলিং যেখানে করায়, সেখানে গিয়ে জানলাম স্নোরকেলিং করার বোট চলে গেছে। সমুদ্রের ভেতরের দিকে গিয়ে স্নোরকেলিং করানো হয় এখানে। দিনে মাত্র দুইবার স্নোরকেলিং করার জন্য যায়। রিসিপশনে কোনটা কখন করতে হয়, সবই বলেছে। সব কিছু এক সাথে বলায় ভুলে গিয়েছি। যাই হোক আমরা এরপর গেলাম সুইমিং পুলে।
লাঞ্চের আগে অনেক বেশি মানুষ ছিল সুমিং পুলে। সবাই মিলে অনেক মজা করছিল। এখন অল্প কয়েকজন মাত্র। কেউ কেউ সুইমিং পুলের পাশে থাকা চেয়ারে বসে বই পড়ছে বা রিলাক্স করছে। কিছুক্ষণ সুইমিং পুলে থেকে চলে গেলাম সেইলিং করতে। আমি এর আগে কখনো সেইলিং করি নাই। আমাদের সাথে একজন গাইড ছিল যে বোটটা কন্ট্রোল করেছিল। বললাম আমি ট্রাই করি। গাইড বলল যে সেইলিং পারেনা, তার হাতে কন্ট্রোল দেওয়া নিষেধ। অথচ দেখে মনে হচ্ছিল আমি নিজেই পারতাম।
সেইলিং করা, কায়াকিং করা, প্যাডেলিং সব কিছুই দারুণ লেগেছে। সেইলিংটা একটু বেশি দারুণ। পাল তুলে দিলে বোট চলতে থাকে। দারুণ লাগে। এরপর আমরা গোসল করে ফেরার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। ৫টায় আমাদের স্পিডবোড আসবে। রেডি হয়ে কফি খেয়ে নিলাম। এরপর চলে গেলাম জেটিতে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর স্পিডবোড আসল, আমরা রওনা দিলাম হুলহুমালেতে। এখানেও ১৪৫ ডলার অনেক টাকা মনে হতে পারে এক দিনের ট্যুরের জন্য। আসলে যে সব এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যাবে, তার তুলনায় ১৪৫ ডলার কিছুই না। আবার এখানে থাকা সব গুলো এক্টিভিটি আলাদা আলাদা ভাবে করতে গেলে ১৪৫ ডলার থেকেও অনেক বেশি খরচ হবে।
হুলহুমালেতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এখানে এসে কাঁচা বাজারটা দেখলাম এরপর চলে গেলাম বীচে। বীচ পাড়ে চেয়ারে বসে ব্রীজ শুনতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের মধ্যে কেমন একটা দার্শনিক ভাব চলে আসল। শুকতারা থেকে শুরু। এরপর আমরা মহাকাশ, গ্রহ, নক্ষত্র, টাইম ট্রাভেল সহ আরো কত কিছু নিয়ে আলোচনা করলাম। ঘুম ঘুম ভাব আসলে রুমে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মালদ্বীপ চতুর্থ দিন
মালদ্বীপ থেকে আজ ফিরব বলে তেমন একটা তাড়া নেই আমাদের। সকালে আস্তে ধীরে রেডি হয়ে আমরা বের হলাম নাস্তা করতে। হুলহুমালেতে নাইবারহুড২ এর এখানে একটা বাঙ্গালী রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রথমদিন যেখানে খেলাম। ঐখানে গিয়ে খিচুড়ি খেয়ে নিলাম আমরা। এরপর রওনা দিলাম জেটিতে। হুলহুমালে খুব ছোট। বড় কোন ব্যাগ না থাকলে যে কোন জায়গায় হেটেই পাঁচ মিনিটে পৌঁছানো সম্ভব। আবার ট্যাক্সিও রয়েছে। যে কোন জায়গায় যাওয়ার জন্য মাত্র ২৫ রুপি। আমরা আস্তে ধীরে জেটির দিকে গেলাম। ঐখানে টিকেট কাউন্টার রয়েছে। মালে যাওয়ার টিকেট কেটে নিলাম আমরা। মাত্র ৫ রুপি করে।
টিকেট কাটার পর বোটের জন্য অপেক্ষা করার জন্য বসার জায়গা রয়েছে। বোট আসলে এরপর আমরা বোটে উঠে পড়ি। রওনা দেই মালে দ্বীপের দিকে।
মালে হচ্ছে ওদের রাজধানী। মালে এসে দেখলাম এখানে অনেক মানুষ। অন্য দ্বীপ গুলোতে মানুষ খুবই কম। অনেক নিরিবিলি। এখানে নেমেই দেখলাম গাড়ির প্যাঁ পুঁ। ঢাকার মতই। যদিও জ্যাম কম। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম মালেতে থাকব। এরপর মালে থেকেই অন্যান্য দিকে যাবো। পরে রাসেল ভাই এবং নাহিদ ভাই বলল হুলহুমালেতে থাকতে। হুলহুমালেতে থাকাটাই ভালো হয়েছে। মালেতে থাকলে বিরক্ত লাগত। হুলহুমালের বীচটাও সুন্দর। অনেক নিরিবিলি দ্বীপটা। আবার দরকারী সব কিছুই রয়েছ এ দ্বীপে।
মালেতে আমরা ঘুরাঘুরি করলাম কিছুক্ষণ। প্রচুর গরম। টায়ার্ড হয়ে একটা আইস্ক্রিম শপে ঢুকে আইস্ক্রিম খেয়ে নিলাম। এরপর আবার ঘুরতে ঘুরতে রওনা দিলাম জেটির দিকে। এবার গন্তব্য এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্ট অন্য আরেকটা দ্বীপে। মালে থেকে কাছেই। দেখলাম মালে থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার একটা ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে। হয়তো ইনশাহ আল্লাহ পরবর্তী কোন সময় আসলে এই ব্রিজ ব্যবহার করতে পারব।
এয়ারপোর্ট এসে বোর্ডিং পাস নিয়ে এরপর ইমিগ্রেশন পাস করে শ্রীলংকা যাওয়ার জন্য অপেক্ষা। সময় হয়েছে মালদ্বীপকে বিদায় জানানোর। শেষ বার মালদ্বীপকে দেখলাম আকাশ থেকে। নিচ থেকে যেমন সুন্দর, উপর থেকে আরো বেশি সুন্দর। কোন একজন সেরা আর্টিস্টের আর্ট।
বিমানের টেকঅফ এবং উপর থেকে মালদ্বীপের ভিডিও রয়েছে এখানে একটা। মালদ্বীপ ঘুরে আসলেই ভালো লেগেছে। আল্লাহর সৃষ্টি এত সুন্দর। শুকরিয়া যে আমি ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। মালদ্বীপ ট্যুরের আরো কিছু ছবি পাওয়া যাবে ফেসবুক ফটো অ্যালবামে।
হোটেল খরচ কেমন মালদ্বীপে???
নির্ভর করবে কেমন হোটেলে থাকবেন। Around 4000bdt তে ভালো হোটেল পাওয়া যাবে।
অনেক ভাল লাগল, পুরোটা পড়লাম
via onak sundor jayga..mon chay jaitay….but……?
ভাই, মালদ্বীপের ভিসা প্রসেসিং থেকে রিটার্ন টিকেট (শুরু থেকে শেষ) চারদিনের জন্য, Quality (Average/Above average).
একজনের খরচ কেমন হতে পারে?
৮০ হাজারের মত 🙂
এখন আপনি কোথায় আছেন? মালদ্বীপে নাকি বাংলাদেশে?
অনেক সুন্দর জায়গা ভাই,,,,
এই নাম্বারে কথা বলে আমারে নিয়া যাও
01864272794 +imo