মলিনতা

পার্কের চেয়ারটিতে বসে বসে স্নেহার কথা ভাবছি। দুই জনে বসার মত চেয়ার। এক পাশ খালি পড়ে রয়েছে। আজ কি সে আসবে?

আসবে কি আসবে না, তা ভাবার কোন কারণ ছিল না। কিন্তু ভাবতে হচ্ছে। বন্ধুরা আমাকে বলত মেয়েদের কাছে সব কিছু বলতে নেই। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই। সব কিছু জেনে যাওয়া মানে হচ্ছে তোমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। এমন ভাবে কথা বলতে হবে, যেন জানার আরো কিছু থেকে যায়। সরাসরি বলতে নেই যে তুমি তাকে পছন্দ কর, তুমি তাকে ভালোবাসো। কখনো যেন তারা না ভাবে তোমার স্টক শেষ, তাহলে তোমাদের সম্পর্ক ও শেষ হয়ে যাবে। তুমি তাকে কেয়ার করবা, আবার মাঝে মধ্যে তাকে কেয়ার কর না এমন অভিনয়ও করতে হবে। তাহলে তোমার প্রতি আকর্ষন বৃদ্ধি পাবে।

কি অদ্ভুত, আমি যা পছন্দ করি, তা জানাতে পারব না কেন? আমি যদি ভালোবাসি, তা বলব না কেনো? আমি কেন পেঁচিয়ে উত্তর দিতে যাবো? সহজ ভাবে কেন বলব না? এসবের মানে আমি খুঁজে পাই নি। তাই স্নেহার যে ভাবে ভালো লাগত, সে ভাবেই করতাম। সে যা চাইতো, তাই করার চেষ্টা করতাম। আমি কবি নই যে কাব্যের ভাষায় কথা বলব। আমি সাধারণ একটা ছেলে। সহজ ভাষায় তার সাথে কথা বলতাম। অযথা একটা কথাকে পেঁচিয়ে বলার কোন মানে হয়? বা মিথ্যে কোন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মানেও আমি খুঁজে পাই নি। আমি তো চুম্বক না যে আমার প্রতি আকর্ষন থাকতে হবে। আমি মানুষ। মানুষের প্রতি থাকতে হয় ভালোবাসা।

মেয়েরা কোন কিছু শুনতে চাইলে হয়তো আকাশকুসুম চিন্তা করে উত্তর দিতে হয়। অভান্তর উত্তর দিতে হয়। আমি সাদামাটা উত্তর দিয়েছি। আচ্ছা, একই মানুষ কিভাবে দুই রকম অভিনয় করবে? আমি স্নেহাকে ভালোবাসি, তার জন্য নিজের সাধ্যের মধ্যে তো সবই করতে চেষ্টা করি। যা করা সম্ভব সেভাবেই বলি। যেমন যখন স্নেহা আমকে জিজ্ঞেস করতঃ আচ্ছা, তুমি সারা জীবন আমার সাথে থাকবে?

উত্তরে আমি বলতাম, কেন নয়। সারা জীবন তোমার পাশে থাকবো। তোমাকে নিয়ে ছুটির দিনে পূবের পাহাড়ে সূর্যাস্ত দেখতে যাবো। পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন অস্ত যাবে, চারদিক রক্তাক্ত রঙে রঙ্গিন হবে। অস্তগামী সূর্যের আলো যখন তোমার মুখে এসে পড়বে, হালকা হাওয়ায় তোমার সামনের দিকের চুল এসে পড়বে তোমার মুখে। আমি তখন তা তোমার মুখের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে লালচে আলোয় তোমাকে দেখবো।

এসব বলতাম, কারণ আমি এমন করতে পারতাম। হয়তো স্নেহা এমন পছন্দ করে না। অথবা হয়তো বন্ধুদের কথাই ঠিক। তাই হয়তো আমি দিন দিন স্নেহার কাছে বোরিং হয়ে যাচ্ছি। সব কিছু বলতে নেই। জানি না। অনেক ভাবনা মনে খেলা করে যাচ্ছে…

শেষ বিকেলের দিকে স্নেহাকে দেখলাম। না না, আমার কাছে আসে নি। সাথে অন্য কেউ ছিল। দূর থেকে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করতে দেখলাম। বুঝলাম, আমি সত্যিই বোরিং হয়ে গিয়েছি তার কাছে। নতুন কাউকে খুঁজে নিয়েছে সে, যে তাকে আনন্দ দিতে পারবে। তার ভালো লাগবে।

আচ্ছা, আমার মত ঐ ছেলেটিও কি তার কাছে বোরিং লাগবে? নাকি আমিই এমন, যে বিরক্তি কর। অথবা এমন কি কোন দিন হবে যে ঐ ছেলেটির কাছেই স্নেহা বোরিং হয়ে যাবে? জানি না।

বিকেলের সময়টা কি স্নিগ্ধ। দারুণ লাগে। এসবের থেকে বেশি দারুণ লাগে স্নেহাকে। সব সময়ই লাগবে। বিকেলের এ সোন্দর্য্য সারাজীবনই একই রকম থাকবে। কিন্তু হয়তো স্নেহার স্নিগ্ধতা দিন দিন মলিন হতে থাকবে। সে আস্তে আস্তে দূরে চলে গিয়েছে। তাই ভালো। আমি তার মলিনতা দেখি নি। আমার কাছে সব সময়ই স্নিগ্ধ থাকবে। থাকবে তার সুন্দর স্মৃতি গুলো…

Leave a Reply