আমি অনেকাংশেই ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল। আমার মত অনেকেই আছে এই লিস্টে। বলা যায় আমরা ফেসবুক দ্বারা ইন্সটিটিউশোনালাইজড। এখানে আমার বা আমাদের একটা আইডিন্টিটি রয়েছে, যে আইডিন্টিটি এই ফেসবুকের বাহিরে কাজ করে না। তো ঠিক এই কারণেই আমরা সময় ফেলে ফেসবুকে এসে ঢুঁ মেরে যাই। গল্প গুজব করি। আড্ডা দেই। ফান করি। আবার মাঝে মাঝে সিরিয়াস হয়ে যাই।
পিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডে আমি ইন্ট্রোভার্ট, সোশাল মিডিয়ায় এক্সট্রোভার্ট। যাদের সাথে আমার সামনা সামনি দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, তারাই বুঝতে পারবেন এই ব্যাপারটা। পিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডে সত্যিকার অর্থে আমার ফ্রেন্ড সংখ্যাও হাতে গোনা। অনেকেই বলে অনলাইনের ফ্রেন্ড কাজের না। দরকারের সময় পাশে পাওয়া যায় না। আমার পিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডে ফ্রেন্ড সংখ্যা কম থাকায় দরকারে সবচেয়ে বেশি এই ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডদেরই কাছে পেয়েছি। এমনকি অনলাইনে যাদের সাথে সখ্যতা তৈরি হয়েছে, তাদের সাথেই সবচেয়ে বেশি পিজিক্যালি মিট হয়েছে। কথা হয়েছে। আড্ডা হয়েছে। আমার কাছে দুইটার মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। এমনকি অনেক ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডদের সাথে এখন পর্যন্ত দেখা হয়নি। আমি নিশ্চিত, দেখা হলে অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড অনেক দিন পর দেখা হলে যেমন ফীলিংস কাজ করবে, আমাদেরও সেইম ফীলিংস কাজ করবে।
ফেসবুক ডাউন থাকায় অনেকেরই হয়তো তেমন ইফেক্ট পড়ে নি। এই ৬ ঘণ্টা সময় আমার বা আমার মত সোশাল মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল মানুষেরও তেমন ইফেক্ট পড়েনি। কিন্তু এই সময়টা যদি কোন কারণে কয়েক দিন হত, একটা ম্যাচাকার হয়ে যেতো। ফেসবুক বিহীন একটা দুনিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে খুব কষ্ট হয়ে যেতো। কেমন কষ্ট হতো, তা হয়তো ইম্যাজিনও করতে পারছেন না। যেমন নতুন কারো সাথে পরিচয় হলে আমরা এখন আর ফোন নাম্বার চাই না, বা খুব কম সময় চাই। আমরা চাই ফেসবুক আইডি। তো ফেসবুক যেমন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিল না, আমরাও নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবব। খুঁজে পাবো না সহজে। নরমাল লাইফে এডজাস্ট হতে সময় লেগে যাবে।
যদিও আমরা অনেকে একটা ট্রানজিশন সময়ের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। মোবাইল, ফেসবুক বিহীন পৃথিবীর সাথে পরিচয় আছে। তারা সহজে রিকোভার করতে পারব। কিন্তু যারা পুরো সময়টাই এই মোবাইল বা ফেসবুকীয় সময়ের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে, তাদের কথা চিন্তা করেন। তাদের কেউ যদি আমার মতো পিজিক্যালি ইন্ট্রোভার্ট হয় এবং ভার্চুয়ালি এক্সট্রোভার্ট হয়, তার অবস্থার কথা আমি ভাবতেও পারি না।
ফেসবুক বা ইন্সট্রাগ্রাম বন্ধ হয়ে গেলে অনেক সেলিব্রেটিই আত্মহত্যা করবে। কারণ তাদের লাইফটাই এটা। এই সোশাল মিডিয়ার বাহিরে তাদের জীবন নেই। কোন কারণে আজ এই প্লাটফর্ম গুলো বন্ধ হয়ে গেলে কাল থেকে তারা কি করবে, খুঁজে পাবে না। বিষণ্ণ হয়ে যাবে। এক সময় আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিবে। খুব কম মানুষ রিকভার করতে পারবে। আমরা মানুষদের যত শক্ত ভাবি দূর থেকে, তত শক্ত না তারা। প্রতিটা মানুষই তার ব্রেকিং পয়েন্টের খুব নিকতে থাকে। শুধু ট্রিগার করে না, এই আরকি। আশা কথা হচ্ছে এই ফেসবুক সহজেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে না। যেটা হয়েছে, একটা এক্সিডেন্ট। সামনে তারা আরো সতর্ক হবে। ফেসবুক কারো কারো জন্য শুধু বিজনেসের জায়গা হলেও কারো কারো কাছে জীবনের অংশ।
খুব সুন্দর সাইট