প্রীতি বলল, স্যার আপনি দেরি করে এসেছেন। আমি ঘড়ির দিকে তাকাই। দেখি সময় মতই এসেছি। আমি বলি, আমি তো সঠিক সময়ই এসেছি। প্রীতি বলে, না, আপনি দেরি করে এসেছেন। সেই বিকেল থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আমি বলি আমার তো সন্ধ্যায় আসার কথা। প্রতিদিন তো সন্ধ্যায়ই পড়াতে আসি।
প্রীতির আচরণটা কেমন জানি লাগে! কয়েক দিন থেকেই কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সে বলল, আজ আর পড়ব না। বলেই নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
আমি বসে বসে পত্রিকা পড়া শুরু করলাম। এত তাড়া নেই, একটু পর বের হওয়া যাবে। কিছুক্ষণ পর চুড়ির আওয়াজ শুনে তাকালাম। দেখলাম প্রীতি শাড়ি পরে আসছে। চোখে কাজল, কপালে টিপ। ভয়াবহ রকম সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে পত্রিকায় মনযোগ দিলাম।
প্রীতি এসে আমার সামনে বসল। জিজ্ঞেস করল, স্যার কেমন লাগছে আমাকে? আমি বললাম, বিশ্রী! শুন, কাল থেকে আমি আর আসছি না। তোমার আব্বুকে বলে দিও। দেখা হলে আমিও বলে দিব।
শখের বসেই টিউশনি নেওয়া। আসলে শখের বসে না, জিদ করে। ক্লাস শেসে বাসায় এসে সারাদিন প্লে স্টেশনে গেম খেলার কারণে বকা দিত। বকা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্য কিছু করার চেষ্টা। আর সেই চেষ্টা থেকে টিউশনি।
প্রীতি জিজ্ঞেস করল, কেনো আসবেন না স্যার? আমি বললাম ছাত্রীর সাথে প্রেম করা তেমন একটা ভালো দেখাবে না। আমার একটা মান সন্মান আছে না?
প্রীতি কান্না করে দিবে, এমন অবস্থা!
শুন, পাগলী মেয়ে! এটা তো ভালো হবে। আমরা যে কোন জায়গায় দেখা করতে পারব। একদিন এক জায়গায়। প্রীতির চোখ ভিজে উঠা দেখে আমি টিস্যু বক্সটা এগিয়ে দিলাম। বললাম চোখ মুছে নাও, তা না হলে কাজল লেপটে পেত্নীর মত দেখাবে। টিস্যু নিতে গিয়ে সে একটু হেসে উঠল। ভেজা চোখে হাসিটা কেমন অদ্ভুত সুন্দর লাগল। এত সুন্দর কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকলে অন্তর জ্বলসে যেতে পারে। আমার উঠা উচিত। কে কার প্রেমে পড়ল, তা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরলাম।