৬ এবং ৭ এ এপ্রিল দুই দিন ব্যাপি, পুলিশ স্টাফ কনভেনশন হলে আয়োজিত হয়েছে ন্যাশনাল হ্যাকাথন ২০১৬। এটা একটানা ৩৬ ঘন্টার একটা প্রোগ্রাম।
ন্যাশনাল হ্যাকাথনে কি হয়েছে বলি। Sustainable Development Goal এর উদ্দেশ্যে এবার দশটি লক্ষ্য নির্বাচন করা হয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য সবাই নিজ টিম নিয়ে নিজ নিজ আইডিয়া নিয়ে কাজ করবে, একটানা ৩৬ ঘন্টা। আয়োজন করেছে আইসিটি মন্ত্রনালয়। দশটি ক্যাটেগরি হচ্ছেঃ
- Agricultural Productivity
- Newborns and Children
- Road Traffic Accidents
- Qualified Teachers in Education
- Violence Against Women
- Energy Efficiency
- Sustainable Tourism
- Environment in City
- Marine Resources
- Corruption
এ দশটি ক্যাটেগরিতে প্রায় ২০০ টিম অংশ গ্রহন করেছে। প্রতিটা ক্যাটেগরি থেকে ৩টি টিম পুরষ্কার পেয়েছে। চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানার্স আপ এবং দ্বিতীয় রানার্স আপ।
সেরা টিম নির্বাচনের জন্য কাজ করেছে মেন্টররা। সেরা টিম নির্বাচন ছাড়াও কোন টিমের কোন টেকনিক্যাল সমস্যা হলে তার সমস্যার সমাধান ও দিয়েছে মেন্টরা। আমি ছিলাম মেন্টর হিসেবে। তা ছাড়া সারাক্ষণ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করেছে ভলেন্টিয়াররা। অর্গানাইজাররা তো ছিলোই।
এই হ্যাকাথনে টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা হয়েছে। দুইটা সমস্যা গুরুতর। একটা হচ্ছে ইন্টারনেট। আরেকটা হচ্ছে খাদ্য। ইন্টারনেট প্রোভাইডার ছিল কিউবির। এটা তাদের ব্যর্থতা। আর খাবারের কথা বললে হয়তো কেউ কেউ ঠিক মত খাবার পায় নি বা এমন কিছু। এত বড় ইভেন্ট প্রায় ২০০০ মানুষের সমস্যা ইন্ডিভিজুয়ালি দেখা বলতে গেলে অসম্ভব। তারপর ও ভলেন্টিয়াররা যতটুকু সম্ভব, চেষ্টা করেছে।
সমস্যা গুলোর পর ও আমি ন্যাশনাল হ্যাকাথনকে পজিটিবলি নিচ্ছি। আমি চাই এরকম ইভেন্ট আরো হোক। কারণ এখানে দুই দিন থেকে যা শেখা যায়, তা ইউনিভার্সিটিতে চার মাসের একটা কোর্স থেকে শেখা যাবে না। অনেক কিছু শেখার রয়েছে। কিভাবে টিম নিয়ে কাজ করতে হয়, তার আইডিয়া পাওয়া যাচ্ছে। কিভাবে নিজের আইডিয়া প্রেজেন্ট করতে হয়, তা জানা যাচ্ছে। কিভাবে একটা আইডিয়াকে বাস্তব রুপ দেওয়া যায়, তা জানা যাচ্ছে। নেটওয়ার্কিং এর সুযোগ হচ্ছে। নেটওয়ার্কিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। পড়ালেখা শেষে জব পাওয়ার সময় এগুলো খুবি গুরুও বহন করে। যে সারাজীবন শুধু পড়ালেখা করে গিয়েছে, তার CV থেকে যে পড়ালেখার পাশা পাশি ভিবিন্ন কম্পিটিশনে অংশ নিয়েছে, তার CV এর ভ্যালু অনেক বেশি।
হ্যাকাথনে ছোট ছোট কিছু ভুল হতে । এত বড় একটা পাবলিক ইভেন্টে এমন ভুল হতে পারে। ভুল হলেই যে খারাপ ভাবে নিতে হবে এমন না। ইভেন্ট গুলোর ভুল না খুঁজে বের করে আমরা সাজেশন দিতে পারি, কি করলে আরো ভালো একটা উপহার সবাইকে দেওয়া যায়। হ্যাকাথনের মত ইভেন্টের খুব খুব দরকার রয়েছে। এরকম একটা ইভেন্ট থেকে কত কিছু যে শেখার রয়েছে, তা অংশ গ্রহণ না করলে বোঝা যাবে না। ইভেন্ট থেকে আমি কি পেয়েছি? একটা ক্রেস্ট, একটা সার্টিফিকেট। এই আর কিছু না। তারপর ও আমি চাই, হ্যাকাথন, গ্যামাথন, কন্টেস্ট, ওয়ার্কশপ, সেমিনারের মত ইভেন্ট হোক। আরো বেশি বেশি, তরুণ প্রজন্মের স্বার্থে।
কিছু সমস্যার পরও যখন পুরষ্কার যেতা যায়, তখন সব কষ্ট ভুলে থাকা যায়। পুরষ্কার পাওয়ার পর সবার আনন্দ ছিল দেখার মত। আমার নিজের কাছেও ভালো লাগছিল। সব গুলো টিম হয়তো পুরষ্কার পায় নি, তাদের জন্য আরো সুযোগ আছে। সামনে আরো ভালো প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার। এত বড় ইভেন্টে এসে নিজেকে ইভেলুয়্যেট করার একটা সুযোগ হয়েছে। নিজের অজানা বিষয় গুলো জানার সুযোগ হয়েছে। এ বিষয় গুলো কাজে লাগালে সামনে অনেক পুরষ্কার অপেক্ষা করছে। সবার জন্য শুভ কামনা।
হ্যাকাথনকে অংশগ্রহন করতে কি যোগ্যতা লাগে এবং কোন ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে কাজ করতে হয় তা যদি বিস্তারিত বলেন তাহলে উপকার হয় 🙂
প্রথমত, তেমন কোন বিশেষ যোগ্যতা লাগেনা! লাগেনা বড় স্বপ্ন দেখার মানুষিকতা । যাই হোক আসল কথায় আসি, শুরুতে আপনাকে আপনার টিম এর সদস্যদের যোগ্যতা , কে কোন বিষয়ে পারদর্শী এরকম কিছু বিশেষ তথ্য জানাতে হবে তাদেরকে, যেগুলোর ভিত্তিতে তারা আপনাকে নির্বাচিত করবে। আপনার বা আপনার টিম মেম্বারদের করা কিছু ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট থাকলে যেমন- জাভা, পি এইচ পি , এন্ড্রয়েড , সি # ইত্যাদি সেগুলো গিটহাব এ আপলোড করে লিঙ্ক দিলে আপনার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
দ্বিতীয়ত , নির্বাচিত হয়ে গেলে আপনার পছন্দের প্রবলেম টি নিয়ে আপনি কাজ করতে শুরু করে দিবেন, পাশাপাশি মানুষিক প্রস্তুতি এবং কাজ শুরু করে দিবেন। ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ডেভেলপিং যেকোনো টা যেমন আপনি যে প্লাটফর্ম এ কাজ করতে চান সেটা করতে পারবেন। মোবাইল বেসড হলে এন্ড্রয়েড,আই ও এস , উইন্ডোস যেকোনোটা, হার্ডওয়্যার বা এম্বেডেড সিস্টেম হলেও চলবে। মোটকথা আপনার প্রোজেক্ট যেন সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় ওই সমস্যা দূর করতে পারে । এছাড়াও ওখানে বসে আরও কিছু কাজ তারা করতে দিবে, সেগুলা ওখানে বসে আপনাকে প্রিপেয়ার করতে হবে।
আপনার জন্যে শুভকামনা ।
*লাগে বড় স্বপ্ন দেখার মানুষিকতা ।