এ ট্যুরের প্রথম দুই দিনের গল্পঃ
উত্তরবঙ্গ ঘুরতে বের হয়েছি। রাতে ছিলাম হোটেল অবকাশ, নীলফামারিতে। সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে সাড়ে পাঁচটার দিকে। উঠে নামাজ পড়লাম। এরপর আবার ঘুমানোর চেষ্টা করেছি, ঘুম আসে নি। শুয়ে শুয়ে গান শুনেছি কিছুক্ষণ। তারপর উঠে গোসল করে নিয়েছি। গোসল করতে গিয়ে দেখি পানি ঠাণ্ডা। রাতেও একবার উঠে ফ্যান অফ করে রাখতে হয়েছে। গরম নেই একটুও। তার উপর ঠাণ্ডা হাওয়া। সাড়ে সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়েছি। হোটেলের মেইন দরজা তখনো খোলে নি। আমিই প্রথম বের হলাম। ওদেরকে ঘুম থেকে জাগাতে হয়েছে। তারপর গেট খুলে দিল।
নিচেই রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্ট ও মাত্র খুলছে। নাস্তা বলতে তখন চালের রুটি আছে। পারফেক্ট। রুটি খেলাম। হোটেলের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম হরিশচন্দ্রের পাঠ কিভাবে যাওয়া যায়। বলল রিক্সায় করে যেতে। রিক্সা ঠিক করে হরিশচন্দের পাঠ আসলাম।
যে রিক্সায় করে এসেছি, সে আমার মত বোকা সোকা। রিক্সা থেকে নামার পর আমাকে বলল চা খাওয়ার জন্য টাকা দিতে। আমি দিলাম। সরল রিক্সা ওয়ালা।
হরিশচন্দ্রের পাঠ এসে দেখার মত কিছুই পেলাম না। মানে এলাকাটার নামই হরিশচন্দ্রের পাঠ। রাজা হরিশচন্দ্রের নাম অনুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়। হরিশচন্দ্র পাঠ গ্রামে একটি পত্নতত্ত্ব নিদর্শন স্থান রয়েছে। আমি জানতাম না। ঐখানে যাওয়ার পর কেউ বলে নি। তাই যাওয়া ও হয় নি। এরপর আমার যাওয়ার টার্গেট ছিল তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প। মনে করেছি ছোট খাটো কিছু একটা হবে। আমি দেখব, দেখে পঞ্চগড়ের দিকে যাবো। আমি ভুল ভেবেছি।
হরিশচন্দের বাজারের পাশ দিয়ে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প হচ্ছে তিস্তা নদীর পানি চার দিকে পাঠানোর একটা ব্যবস্থা। ক্যানেল বলে, খাল ও বলা যায়। তিস্তা ব্যারাজ থেকে আমি যাবো ডিমলা, নীলফামারী জেলার একটি উপজেলা। সেখান থেকে পঞ্চগড়। তিস্তা ব্যারাজ এর পাড় দিয়েই নাকি ডিমলা যাওয়া যায়। ঐখানে মানুষ জানালো। ঐখান দিয়ে গাড়ি অনেক কম চলে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা অটো পেলাম। যেটা ডিমলা থানার দিকে যাবে। আমি উঠে পড়লাম। উঠার পর মনে হয়েছে পারফেক্ট একটা কাজ করেছি। অসাধারণের থেকে বেশি সুন্দর পুরো তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প। ক্যানেলের দুইপাশে রাস্তা। দুই পাশেই ক্ষেত। ক্যানেলে পরিষ্কার পানি। উপরে আকাশ। অসাধারণ ভিউ। বার বার মনে মনে বলি, ভ্রমণ করা স্বার্থক। ক্ষেতের ফসল উঠে গিয়েছে। যদি ধান থাকত মাঠে, আরো বেশি দারুণ হতো। এখন ধান উঠার পর ঘাশ গজিয়েছে। তারপর ও সুন্দর দেখাচ্ছে।
যে অটোতে উঠেছি, তা ছিল রিজার্ভ। যারা উঠেছে, তারা আসলে ডিমলা যাবে না। অন্য কোথাও যাবে। পরে অনেক দূর আসার পর তারা ভুল পথে আসার কারণে ব্যাক করল। আমি আবার ডিমলা যাবো। যেখানে মূল তিস্তা ব্যারাজ। অটো থেকে আমাকে নামতে হলো। আমাকে নামিয়ে দিলেও আমাকে বলল কিভাবে কিভাবে যেতে। এমনকি একটা ভ্যান যাচ্ছিল, সেখানে তুলে দিল।
ভ্যানটাও বেশি দূর যাবে না। খালিশা চাপানী নামক এক জাগায় নামিয়ে দিল। তারপর আবার আরেকটা অটোতে উঠেছি। ভ্যান থেকে এক ভদ্র লোক আমার ব্যাগটা নিজে নিয়ে নিল। আমি যত বলি আমি পারব নিতে, আমাকে আর দেয় নি, নিজেই ক্যারি করল। উনিও ডিমলা আসবে। তো আমার ব্যাকপ্যাক উনি নিজে নিয়ে অটো ঠিক করে অটোতে উঠালো। আমি যাবো তিস্তা ব্যারেজ দেখতে, অটো ডাইরেক্ট ঐখানে যাবে না। ডিমলানেমে আবার অটো পরিবর্তন করতে হয়েছে। ঐ ভদ্রলোক আমাকে অন্য অটোতে তুলে দিল। এভাবে আমাকে হেল্প করে ঋণী করে দিল। এই ঋণ গুলো কিভাবে যে শোধ করি!
পুরো তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প হচ্ছে পানির ক্যানেল। বিশাল বিশাল ক্যানেল। একটা ক্যানেল আরেকটা ক্যানেলকে ক্রস করলে পানি একটার সাথে আরেকটা মিশে না। ক্রস যদি করে, তাহলে একটা মাটির নিচ দিয়ে যায়, আরেকটা উপর দিয়ে। নিচ দিয়ে মাটি খনন করে পানির জন্য পথ করে দেওয়া।
তিস্তা ব্যারেজ এর অন্য পাড়ে গিয়ে অটো থেকে নামলাম। তারপর আস্তে আস্তে এ পাড়ে আসলাম। বিশাল ব্রিজ। ব্যারেজ হচ্ছে সুইচ গেট। পানি কন্ট্রোল করার গেট। পানির গর্জন অনেক। ব্যারেজটি হচ্ছে হাতিবান্ধা, লালমনির হাটে। ডিমলা থেকে কাছেই।
ব্যারেজ দেখতে যাওয়া পথে দেখলাম রাস্তার উপর এলাকার মানুষ ফসল গুলো শুকায়। এদিকে বেশির ভাগ হচ্ছে ভুট্টা। এত ভুট্টা! কয়েক দিন আগে আসলে হয়তো দেখতাম ধান শুকাচ্ছে। কারণ ধান উঠে গিয়েছে কিছু দিন আগে। যদিও এখনো কয়েকটা ক্ষেতে ধান রয়েছে। কয়েক জন মানুষ এখনো রাস্তার উপর ধান শুকাচ্ছে।
ব্যারাজ দেখার পরের প্ল্যান হচ্ছে পঞ্চগড় আসা। পঞ্চগড় আসার জন্য আমাকে ব্যারেজ থেকে আবার ডিমলা ফিরতে হয়েছে। ডিমলা থেকে যেতে হয়েছে ডোমার, নীলফামারী জেলার আরেকটি উপজেলা । ব্যারাজ থেকে অটোতে উঠে ডোমার পর্যন্ত এসেছি। অনেক রাস্তা, আস্তে আস্তে এসেছে। ঐ অটো ওয়ালা ও আমাকে যথেষ্ট কেয়ার করল। একজাগায় দেখলাম লিচু বিক্রি করে। ২৫টা কিনে নিলাম খাওয়ার জন্য। অটোওয়ালাকে কিছু দিলাম। বাকিটা আমি খাচ্ছি। অটোতে লোক উঠানোর জন্য এক জাগায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি বসে বসে লিচু খাচ্ছি। অন্য অটো থেকে দুই তিনটা লোক তাকিয়ে তাকিয়ে হাসে। আমি কিভাবে লিচু খাই, তা নিয়ে হয়তো। আমি তাদের দিকে একটু তাকাই, আর নিজ মত করে লিচু খাই। ভাবই আলাদা! হু!
ডোমার এসে অন্য অটোতে উঠতে হয়েছে। তা দিয়ে আরো কিছুক্ষণ যাওয়ার পর আবার আরেকটা অটো পরিবর্তন করতে হয়েছে এবার গন্তব্য দেবীগঞ্জ। আরেকটা থানা। দেবীগঞ্জ থেকে যাবো পঞ্চগড়। পঞ্চগড় থেকে তেতুলিয়া। তেতুলিয়া থেকে জিরো পয়েন্ট।
অটোওয়ালাকে জিজ্ঞেস করার পর আমাকে কিভাবে কিভাবে যেতে হবে সব বলে দিল। দেবীগঞ্জ পৌঁছাতে পোঁছাতে ২ টা বেজে গেছে। অটো ওয়ালা আমাকে বাসের সামনে এসে নামিয় দিল। বলল বাসে উঠতে। তাহলে এখান থেকে পঞ্চগড়, পঞ্চগড় গিয়ে বাস পরিবর্তন করে তেতুলিয়ার বাসে উঠতে হবে। আমি বললাম নামাজ পড়ব, মসজিদ কোথায়। অটোওয়ালা আমাকে মসজিদের সামনে নামিয়ে দিল। দেখিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে এভাবে সুন্দর করে আমাকে মসজিদের কাছে নিয়ে আসার কারণে ভালো লেগেছে।
নামাজ পড়ে খাবারের হোটেল খুঁজতে লাগলাম। একটা দোকানে জিজ্ঞেস করার পর বলে দিল। সিম্পল একটা হোটেল। আমি ভাত আর গরুর মাংস নিলাম। দারুণ টেস্টি মাংস। অনেক তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে উঠলাম। বিল দিতে গিয়ে আমি অবাক হয়েছি। মাত্র ৬০ টাকা বিল। ৬০ টাকা দিয়ে এত সুন্দর দুপুরের খাবার, কল্পনার বাহিরে। পেটে জায়গা থাকলে রিজার্ভ করে নেওয়া যেতো।
পঞ্চগড়ের বাসে উঠলাম। অনেকক্ষণ পর তেতুলিয়া নামিয়ে দিল। পঞ্চগড়ের রাস্তা অনেক প্রসস্থ। অনেক সুন্দর। রাস্তার উপর ধান এবং অন্যান্য ফসল শুকাচ্ছে মানুষ। বাসে এক হকার দেখলাম নারিকেলের পাই বিক্রি করে। মিষ্টি নারিকেল। খেয়ে দেখলাম সত্যিই মিষ্টি। বাসে চারপাশ দেখতে দেখতে আমি ঘুমে ঢুলতে লাগলাম। পাশের সিটে একটা ছেলে বসেছে, বয়সে আমার সমান প্রায়। দুই একবার ঘুমের মধ্যে তার বাহুর উপর গিয়ে পড়লাম। সাথে সাথে সরি বললাম। ছেলেটি আমার দিকে চোখ মটমট করে তাকানোর পরিবর্তে মিষ্টি হাসি দিল। যার মানে হচ্ছে ঠিক আছে, সমস্যা নেই। সমস্যা যেহেতু নেই, আমি এরপর আরো দুই একবার ঘুমে ঢুলে তার বাহুর পড়লাম।
পঞ্চগড় টার্মিনাল এসে অন্য বাসে উঠলাম। যা তেতুলিয়া হয়ে বাংলাবান্ধা যাবে। জিরো পয়েন্টের কাছে। তেতুলিয়া এসে বাস অনেকক্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছিল। তখন ৫টা বাজে ঘড়িতে। আমি সন্ধার পর জিরো পয়েন্ট গিয়ে কিছুই দেখতে পাবো না। তাই বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলাম। ওরাও বাস ছাড়ে নি। অনেকক্ষণ পর বাস ড্রাইভার উঠল। ইঞ্জিন স্টার্ট হয় না। পরে বাস ধাক্কা দিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট করল।
আস্তে আস্তে যেতে লাগল। আমার চোখ থেকে ঘুম তখনো যায় নি। এমনিতে বাসে উঠলে আমার অটোমেটিক ঘুম আসে। খারাপ অভ্যাস। আধো ঘুম আধো জাগরণ চোখে চারপাশ দেখতে দেখতে চলতে লাগলাম। জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার আগে বাস থামল। সেখানে নামিয়ে দিল। আবার অটোতে উঠতে হবে। অটোতে করে জিরো পয়েন্ট গেলাম।
জিরো পয়েন্টে যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল।বাংলাদেশের শেষ সীমানা। যেখানে বাংলাদেশ এবং ভারত একটা বাঁশ দিয়ে আলাদা করা। কে কাকে বাঁশ দিচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না।
ঐখানে কিছুক্ষণ থেকে BDR ক্যাম্পের দিকে ফিরলাম। আজান দেওয়ার সময় হয়েছে। মসজিদ খুঁজে আমি ওজু করে নিলাম। আজান দেওয়ার পর নামাজ পড়লাম। আমার ইচ্ছে ট্রাকে করে পঞ্চগড় ফেরা। পারলে ঠাকুরগাঁও চলে আসা। তো একটা ট্রাক দেখলাম যাচ্ছে, আমি বলার পর রাজি হলো। আমাকে ঠাকুরগাঁও নামিয়ে দিবে। ট্রাকে উঠলাম। ওদের ঐখানে কিছু দেরি হবে। তাই আমি ভাবলাম কিছু নাস্তা করে নি। নাস্তা করতে গিয়ে দেশি ইন্ডিয়ান মিষ্টি দিয়ে পরোটা খেলাম। দেশি ইন্ডিয়ান মিষ্টি কিভাবে বলি। ঐখানের হোটেলের লোক বলল দেশি মিষ্টি, খেয়ে দেখতে। পাশেই এক ভদ্র লোক বলল ইন্ডিয়ান কোন ঘোষ না কি নাম যেন, তার তৈরি মিষ্টি। এ জন্য মিষ্টিগুলো আমার কাছে দেশি ইন্ডিয়ান হয়ে গেলো। তবে ভালোই লেগেছে।
নাস্তা করে বের হয়ে ট্রাকের কাছে গেলাম, ট্রাক ওয়ালা বলল তাদের দেরি হবে। আমাকে অন্য ট্রাক দেখিয়ে দিল। অন্য ট্রাক ও আমাকে নিতে রাজি, সমস্যা হচ্ছে তাদের ও দেরি হবে। এবং ঠাকুরগাঁও পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাতের ২ টা বেজে যাবে। তখন আমি কি করব? তাই ট্রাক বাদ দিলাম।
তখন ঘড়িতে ৭টা ৩০, জিরো পয়েন্ট বাসস্ট্যান্ড থেকে লাস্ট বাস তেঁতুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ৭টায়। আমি মিস করেছি। যদিও তখনো আমি জিরো পয়েন্টের কাছে। বাস স্ট্যান্ড ২ কিলো দূরে। তো চিন্তা করলাম বাস স্ট্যান্ড এর দিকে যাই। ট্রাক ছাড়া কোন যানবাহন নেই। লাস্ট যে অটো যাচ্ছিল, তাও আমি মিস করেছি। বাসস্ট্যান্ড এর দিকে একটা ট্র্যাক্টর যাচ্ছে। ট্র্যাক্টর উঠে পড়লাম। তারপর এসে বাসস্ট্যান্ড নামলাম। এখানে বাস গুলো ছাড়বে সকালে। দাঁড়িয়ে থেকে কোন লাভ হবে না। একটা অটো যাচ্ছে সিপাই পাড়া। সেখানে উঠে পড়লাম। সিপাই পাড়া এসে আবার আটকা। কোন বাস, অটো তেঁতুলিয়ার দিকে যাবে না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সিপাই পাড়া। ঝড় উঠছে। সবাই দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করল। এক মাত্র আমিই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তেতুলিয়া কিভাবে ফিরব, তা ভাবছি। ভয় কাজ করে না। কারণ আমি জানি কোন না কোন ভাবে ফিরতে পারব। না ফিরতে পারলে এখানে কোথাও থেকে যাবো। অনেক গুলো ট্রাক এ রোড দিয়ে যাচ্ছে, একটা না একটাতে উঠতে পারলেই ফেরা যাবে।
আমাকে দেখতে নাকি ফরেইনারের মত লাগে। অনেকেই কৌতূহলী হয়ে আমকে জিজ্ঞেস করে কোথায় থেকে এসেছি, কোথায় যাবো। এভাবে একবার একজন এসে একটা বুদ্ধি দিয়ে যায়। এক ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞেস করল এখনো যেতে পারি নি? আমি বলি না। এরপর এদিক সেদিক আমার জন্য গাড়ি খুঁজতে লাগল। একটা অটো দেখে তা ডাক দিল। ঐ অটো সে নিজে চালিয়ে আমাকে অন্য এক জাগায় নিয়ে আসল। তেঁতুলিয়ার পথে।
অটোতে অন্য মানুষ ছিল, তারা ভাড়া দিল। আমি ভাড়া দিতে গেলে আমার থেকে কোন ভাড়া নেয় নি। উল্টো আমাকে নিয়ে একজন ট্রাক ড্রাইভারের কাছে গেলো। ট্রাকে আমাকে উঠিয়ে দিল। ট্রাক ড্রাইভারকে বলল আমাকে যেন পঞ্চগড় নামিয়ে দেয়। ভদ্রলোকের নাম মামুন। বাংলাবান্দায় বাড়ি। শেষ পর্যন্ত আমি ট্রাকে করেই ফিরতে পারছি। ভালো লাগা কাজ করল। ইচ্ছে পূরণ হলো। আর মানিক নামক ভদ্রলোক আমাকে এভাবে সাহায্য করে ঋণী করে দিল।
ঐ ট্রাকে আমি ছাড়াও আরো কয়েকজন ছিল। ওরা কাজ করে। পাথর ভাঙ্গার কাজ। এখন বাড়ি ফিরছে। পাথর গুলো আসে ইন্ডিয়া থেকে। সেগুলো বাংলাদেশে এনে ভাঙ্গা হয়। তারপর দেশের ভিবিন্ন জাগায় চলে যায়।। ঐ লোক গুলোর সাথে কথা বলতে বলতে ফিরলাম। আমাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে, আমি উত্তর দি। তারা অবাক হয়। আমিও অনেক কিছু জিজ্ঞেস করি। সে গুলোর উত্তর দেয়। মানুষ গুলো যথেষ্ট ভালো, ভদ্র। ভোজনপুর নামক জাগায় এসে দুই জন নেমে গেলো। আরো দুইজন ছিল আর ড্রাইভার। তারা আমাকে কি কি করতে হবে, এরকম অনেক গুলো উপদেশ দিল। সহজ সহজ সুন্দর কথা। ট্রাকের সামনে বসে আমি যাচ্ছি। সেই ফীল। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হলো। আরো বেশি দারুণ লাগল।
পঞ্চগড় এসে আমাকে নামিয়ে দিল। প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে। একটা পেট্রল পাম্প এর সামনে। ঐখানে একটা CNG ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম আবাসিক হোটেল কোথায়। আমাকে বলল উঠেন, নামিয়ে দিচ্ছি। পথে আমাকে জিজ্ঞেস করল কেমন হোটেলে উঠবেন, নরমাল নাকি ভিআইপি। আমি বলি মিডেল ক্লাস হলেই হবে। একটা রেঞ্জ বলি, এত টাকার মধ্যে হলেই হবে। বলে তাহলে ভিআইপি। এরপর আমাকে একটা হোটেলের সামনে এসে নামিয়ে দিল। হোটেল দেখিয়ে দিল। আমি ভাড়া দিতে গেলে আমার থেকে ভাড়া নেয় নি। এমনকি কাছে ধারে আরো দুই একটা হোটেল দেখিয়ে দিল। বলে দিল এটাতে না হলে যেন সেগুলোর একটাতে যাই। মেহেমানদের যাথে মানুষ যেভাবে ব্যবহার করে, ঠিক সে রকম ব্যবহার। আমি কি তাদের কাছে মেহমান ছিলাম? অথচ আমি তো তাদের অপরিচিত।
আমাকে যে হোটেল দেখিয়ে দিল, তা হচ্ছে এইচ কে প্যালেস। আমি এসে জিজ্ঞেস করি সিঙ্গেল রুম আছে কিনা। বলে আছে। তারপর কত টাকা জিজ্ঞেস করার পর বলে ২৫০ টাকা। রুম নিয়ে নিয়েছি। সুন্দর রুম। রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নামাজ পরে নিয়েছি। তারপর রাতের খাবার খেতে নিচে নামি। খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসে দিনের ডায়েরী লেখা, ফেসবুকিং করা, ক্লায়েন্টের মেসেজের রিপ্লাই দেওয়া সহ অন্যান্য এটা সেটা করতে করতে রাত ১টা ৩০ বেজে যায়। শরীর যথেষ্ট টায়ার্ড। শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসল। এক দিনে অনেক জাগায় ঘুরেছি। অনেক সুন্দর সুন্দর সব জায়গা। সেরা একটি দিন। মানুষ গুলো ব্যবহারে আমাকে অবাক করল।
পরের দিন পঞ্চগড় থেকে গিয়েছি ঠাকুরগাঁও, সে গল্প পড়া যাবে এখান থেকে।