টিক টক

ইলন মাস্ক প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা পায়। আমরাও ২৪ ঘণ্টা পাই। কিন্তু ইলন মাস্ক সময় কে যে ভাবে কাজে লাগাতে পারে, আমরা সেভাবে কাজে লাগাতে পারি না। আমরা চাই ইলন মাস্কের মত হতে, তার মত প্রতি সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা কাজ করতে। ঐটা আমরা চাই, আমাদের ইচ্ছে, কিন্তু আমরা কি করি?

আমরা প্রথমে ফেসবুকে যাই। কারো কোন স্ট্যাটাসে একটা কমেন্ট করি বা নিজে কোন স্ট্যাটাস দেই। এরপর অপেক্ষা করি রিপ্লাই বা নোটিফিকেশনের। এরপর একের পর এক নোটিফিকেশন আসতে থাকে। আমাদের ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে একটু একটু করে সময় চলে যেতে থাকে।

একটা গান শুনার জন্য ইউটিউভে যাই, গান ছেড়ে দেই। চিন্তা করি এই গানটা শুনেই এরপর কাজ বা পড়ালেখা শুরু করব। কিন্তু গানটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর পাশে দেখানো আরেকটা গান দেখতে পাই। আহ, কত সুন্দর একটা গান। অনেক আগে কত শুনতাম। গানের সাথে প্রিয় কারো স্মৃতিও জড়িয়ে থাকে। তাই ঐ গানটাও শুনি। এরপর যেহেতু প্রিয় কারো কথা মনে পড়ে যায়, তার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে চেক করি। তাকে একটা কল দেই। অথবা দেই একটা মেসেজ। এভাবে করতে করতে দেখা যায় দিনের অর্ধেক সময় শেষ! ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার এসব তৈরিই করা হয়েছে আমাদের সাইকোলজি নিয়ে গেম খেলার জন্য। আমাদেরকে যতক্ষণ তাদের সাইটে ধরে রাখতে পারবে, ততই তাদের জন্য ভালো।

বছরের জানুরারী মাসটা মনে হচ্ছে এই তো কিছুদিন আগে শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ ডিসেম্বর ও চলে যাচ্ছে। মনে আছে ২০১৫ তে আমরা কত প্ল্যান করেছি ২০১৬ এর জন্য? কিন্তু সময় গুলো কত দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের কত কিছু করা হয় নি। একদিন একদিন করে বছরের সব গুলো দিন শেষ হয়ে গেলো।

আচ্ছা, আমাদের কাছে এক ঘণ্টা কত সময়? এক ঘণ্টা এক সাথে অনেক সময়। কিন্তু যখন আমরা এটাকে ভাগ করে ফেলি, তখন আর ঐটা এক ঘণ্টা থাকে না। মিনিটে পরিণত হয়ে যায়। আমরা পাঁচ মিনিট হয়তো ফেসবুকে সময় দেই, পাঁচ মিনিট দেই WhatsApp এ। ইন্সটাগ্রামে গিয়ে কিছু ছবি আপলোড করি। এরপর ভাবি একটু মনোযোগ দিব, তখন আসে একটা কল। শত ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও তখন কাজে মনোযোগ দেওয়া হয়ে উঠে না। এক ঘণ্টা আর এক ঘণ্টা থাকে না। হয়তো অন্য আরেকটা ঘণ্টা থেকেও সময় ধার করে নেয়।

এই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময়। যে যার সময়কে যত ভালো ভাবে কাজে লাগাতে পারে, তার সময়ের মূল্য তত বেশি। একটা অফিসের পিয়নের সময়ের দাম আর CEO এর দাম এক না। সময়কে সঠিক ভাবে কাজে লাগানোর জন্যই ইলন মাস্ক ইলন মাস্ক হয়ে উঠে। আমরা তাদের সম্পর্কে কথা বলি, তাদের নিয়ে রিসার্চ করি। তাদের মত হয়ে উঠা হয় না।

আজকের সময়টা আমরা আর পাবো না। কোন দিন ও না। আজকের সময়টার সব গুলোকে ছোট ছোট ভাগ করে কিছু ফেসবুকে, কিছু ইউটিউবে, কিছু আড্ডা দিয়ে নষ্ট না করে কিছুটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। নিজের পছন্দের কোন বিষয়ের উপর পড়ালেখা করুন, নিজের পছন্দের কোন বিষয়ের উপর কোন প্রজেক্ট তৈরি করুন। একা না পারলে কোন একজন ফ্রেন্ড এর সাহায্য নিন। ঐ প্রজেক্টের ভালো দিক গুলো খুঁজে বের করুন। কি কারণে ঐ প্রজেক্টে আপানার কাজ করা উচিত, তা খুঁজে বের করুন। যদি এমন কিছু না পেয়ে থাকেন, নতুন কিছু নিয়ে চিন্তা করুন। আপনার শুরু করা ছোট প্রজেক্টটাই দারুণ কিছু হয়ে উঠবে। সময় গুলোকে ছোট ছোট ভাগ করে সব জায়গায় বিলিয়ে না দিয়ে সময়ের বড় অংশ কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। নিজের সময়টাকে দামী করে তুলুন। শুভ কামনা। 🙂

7 thoughts on “টিক টক”

  1. অনেক সুন্দর করে সত্যিকারের কথাটাই লিখেছেন। আমারা একটা জীবনে কয়টা বছরই বা পাবো। জীবনতো একটাই। এই মাত্র কয়েকটা বছরেই আমাদেরকে কতোকিছুই না করতে হবে। তাই সময় কোথায়?

    Reply
  2. বাস্তব কথা গুলি লিখছেন। এভাবে আমাদের সময় শেষ হয়ে যায়। কাজের কাজ কিছুই হয়না। ধন্যবাদ জাকির ভাই !

    Reply
  3. ফেসবুকে গেলাম, এখানে আসলাম লেখাটা পড়লাম, কিছুটা সময় নষ্ট হলো। এখন আমাকে ট্রিট দেবে কে?

    Reply
    • ভাবিরে বলে দিব ট্রিট দেওয়ার জন্য 😐

  4. এভাবেই নষ্ট করে দিয়েছি ৭ বছর অনেক কিছু করার ছিল

    Reply

Leave a Reply