করিম সাহেবের প্রচুর টাকা। ঢাকার টপ কয়েকজন ধনীর মধ্যে একজন। সম্পত্তির সঠিক হিসেব নিজেও জানে না। যৌবন শেষ করেছে টাকার পেছনে ছুটে। এখন বুড়ো হওয়ার পথে। এখন টাকা উনার পেছনে ছুটে। সমস্যা এখানে না। সমস্যা হচ্ছে অন্য জাগায়। উনার কিছুইতে হাসি আসে না। ঐ দিন পত্রিকায় পড়ছে হাসলে নাকি মানুষের আয়ু বাড়ে। উনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু উনি মরতে চান না। তাই হাসার দরকার, আয়ু বাড়ানোর দরকার। সবাই যেখানে খিল খিল করে হাসে, সেখানে উনি হন বিরক্ত।
জয় সম্পর্কে করিম সাহেবের শ্যালক। পড়ালেখা করার জন্য এসেছে। পড়ালেখা ছাড়া আর সব করা হয়, কিন্তু শুধু এই পড়ালেখা হয় না। সব সময় ফুর্তিতে থাকে। করিম সাহেব মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে তাকায়। তাকিয়ে কিছু বলে না। রাগ কন্ট্রোল করে। জয়ের বুদ্ধি শুদ্ধি সব ঠিক আছে, সব বিষয়ে পণ্ডিত বলা যায়। শুধু পড়ালেখাটা ঠিক মত করে না। করিম সাহেব গত দুই দিন ধরে চিন্তা করছে জয়ের সাথে সমস্যাটা নিয়ে আলোচনা করবে কিনা। কিন্তু ঠিক মনস্থির করতে পারে নি। আজ সকালে যখন জয় কোথাও বের হবে, তখন করিম সাহেব ডাকল, জয় শুন। তোমার সাথে একটু কথা আছে।
জয় বলল এখন বলবেন? করিম সাহেব বলল হ্যাঁ। চল একটু বাহিরে কোথাও বসে কথা বলা যাবে।
তারা বের হলো। বাড়ির পাশেই পার্ক আছে, পার্কে গিয়ে বসল। তারপর করিম সাহেব সব খুলে বলল।
জয় কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর বলল চলেন, আমরা এক জাগায় যাই। ড্রাইভারকে ফোন দিল। জয় ড্রাইভারকে বলল ঢাকার বাহিরে একটা গ্রামে নামিয়ে দিতে। পথে এক জাগায় নেমে জয় করিম সাহেবকে বলল অনেক গুলো খেলনা, চকলেট, বিস্কিট এসব কিনতে। অনেক গুলো কিনল এসব।
একটা বস্তির কাছে গিয়ে তারা থামল। এক জাগায় বসল, সব খেলনা এবং চকলেট, বিস্কিট এসব নিয়ে। একটা ছোট্ট মেয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। জয় ডাকল ঐ মেয়েটিকে। জিজ্ঞেস করল তোমার নাম কি। বলল মিলি।
মিলি, তুমি স্কুলে যাও না?
মিলি মেয়েটি বলল, মাঝে মাঝে যাই, মাঝে মাঝে যাই না।
জয় বলল এখন থেকে নিয়মিত যাবে, এই নাও। এগুলো তোমার জন্য। মিলির হাতে চকলেট, বিস্কিট এবং একটা খেলনা দিল। মিলি ভয়ে ভয়ে সেগুলো নিয়ে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর মিলি অন্য আরেকটি ছেলে নিয়ে আসল। মিলি দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। ছেলেটি কাছে আসল। ছেলেটি কাছে আসার পর তার নাম জিজ্ঞেস করে তার হাতেও একটি করে চকলেট, বিস্কিটের প্যাকেট এবং একটা খেলনা দিল। ছেলেটি অনেক খুশিয়ে হয়ে চলে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
এবার পুরো বস্তির সকল ছেলে মেয়ে আসতে লাগল। সবাই এসে সোর গোল শুরু করল। করিম সাহেব মজা পেতে শুরু করেছে। সবার হাতে একটা করে চকলেট, বিস্কিট এবং খেলনা দিল। কিন্তু সামালতে পারছে না। কে কার আগে নিবে, সেই চেষ্টা।
জয় বলল সবাই লাইনে না দাঁড়ালে কাউকে কিছু দেওয়া হবে না। সবাই লাইনে দাঁড়ালো। এরপর করিম সাহেব এক একটা ছেলে মেয়ের হাতে একটা করে প্যাকেট ধরিয়ে দিল। সবাই হাসি মুখে সেগুলো নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকল। করিম সাহেব দেখল সবাই অনেক খুশি। তার নিজের কাছেও ভালো লাগল। অন্য রকম ভালো লাগা। এক ধরণের তৃপ্তি।
করিম সাহেব সবার সাথে অনেকক্ষণ খেলা করে তারপর বাড়ির দিকে ফিরল। জয়কে ধন্যবাদ জানালো এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য তাকে। জয় বলল, মানুষের আয়ু হাসলে বাড়ে না। কিন্তু অন্য ভাবে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। অন্য মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে পারে। আজ আপনি এত গুলো ছেলে মেয়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, এরা সারাজীবন এ কথা মনে রাখবে। এদের মাঝেই আপনি অনেক দিন বেঁচে থাকবেন। টাকার মধ্যে নয়, এভাবে হাসির মধ্যে বেঁচে থাকা যায়।