গত সোমবার, ৩০ এ আগষ্ট আমরা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ট্রেনে করে। ট্রেনের টিকেট আগেই কিনে রেখেছি। তিন দিন আগে সম্ভবত। কিনতে গিয়ে দেখি রাতে কেনা যায় না। রাত ১১টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত অনলাইনে টিকেট কাটা যায় না। আমাদের বাথ নেওয়ার ইচ্ছে ছিল। অনলাইনে শুধু মাত্র একটা খালি ছিল। পরে স্নিগ্ধা চেয়ার কেটে নেই।
আমি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেই ২৯ তারিখে। ২৯ তারিখে কিছুই হয়নি। ৩০ তারিখ সকালে ব্যথায় জ্বর চলে এসেছে। প্যারাসিটামল খেলাম। দুপুরের দিকে একটু জ্বর কমছিল। বিকেলে আবার এসেছে। এরপর আবার ঔষধ খেলাম। সন্ধ্যার দিকে একটু ভালো লাগছিল।
ট্রেন ছিল সাড়ে আটটায়। ঐটা হচ্ছে কমলাপুরের সময়। এয়ারপোর্ট প্রায় ৯টার দিকে। তো সঠিক সময়ে ট্রেন আসে। আমরা ট্রেনে উঠে পড়ি। ট্রেনের কেবিন ছাড়া অন্যান্য যায়গার সমস্যা হচ্ছে লাইট বন্ধ না করা। ঘুমাতে সমস্যা। যদিও সিট গুলো ঘুমানোর জন্য উপযোগী না। লাইট সারাক্ষণ জ্বলে থাকার কারণে বাকি সমস্যা ক্রিয়েট করে। এরপরও একটু আধটু ঘুমিয়ে সিলেট পৌঁছাই সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে। ট্রেনে কথা হচ্ছিল সৈয়দ মিরাজের সাথে। উনি সাজেশন দিচ্ছিল কোথায় থাকতে পারি, কোথায় খেতে পারি, কোথায় ঘুরতে পারি ইত্যাদি।
এত সকালে কি করব না করব ভেবে পাঁচভাই রেস্টুরেন্টে যাই। ফজরের নামাজ পাশের একটা মসজিদে পড়ে নেই। এরপর নাস্তা খেয়ে নেই। এত সকালে হোটেল পাওয়া যাবে না। সব গুলো হোটেল বন্ধ। আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়েও যাইনি আমরা। কয়েক জায়গায় কল করে দেখলাম হয় কল ধরে না বা ৮টার আগে হোটেলে আসবে না। হোটেল গোল্ডেন ইনে কল করার পর ধরল। রুম নিলাম। লকডাউনের পর সম্ভবত খুব একটা গেস্ট উঠেনি এই হোটেলে। বলল কিছুক্ষণ সময় লাগবে রুম রেডি করে দিতে। আমাদের অবস্থা এমন যে একটু ঘুমাতে পারলেই হলো। হোটেলের সার্ভিস খুব একটা ভালো ছিল না। রুমের এসি হচ্ছে উইন্ডো এসি। চালানোর পর মনে হচ্ছিল ডিজেল ইঞ্জিন স্টার্ট হয়েছে। ওদের লিস্টিং এ ছিল ব্রেকফাস্ট ফ্রি। জিজ্ঞেস করার পর প্রথম দিন বলছিল ব্রেকফাস্ট সার্ভ করে না। কিনে খেতে পারব চাইলে।
হোটেলে উঠে কিছুক্ষণ ঘুমালাম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম পানসিতে গিয়ে। পানসিতে কোয়েল পাওয়া যায়। ভর্তা, ভাত, ডাল এবং অন্যান্য আইটেম তো আছেই। এরপর রওনা দিলাম রাতারগুলের উদ্দেশ্যে। এখানকার সিএনজি গুলো অনেক বেশি দাম চায়। দামাদামি করে ঠিক করতে হয়। আমরা মোট ৬ জন। দুই সিএনজি লাগল। তিনজনের বেশি উঠা যায় না। পুলিশে ধরে নাকি।
রাতারগুল পৌঁছে নৌকা ঠিক করলাম। আমরা যেখানে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখলাম নৌকা ভাড়া ফিক্সড। আমাদের দুই নৌকা লাগবে। ছয় জন এক নৌকাতে উঠতে পারব না নাকি। তো খরচ নিল ১৮৫০ টাকা। যদিও পরে দেখলাম অন্য নৌকায় ৬ জনও উঠেছে।
রাতারগুল জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। বিশেষ করে বর্ষাকালে বা পানি থাকা অবস্থায়। পানি যখন কমে যাবে, তখন এভাবে নৌকা দিয়ে ঘুরে আর মজা পাওয়া যাবে না। তখন শুধু বন দেখা যাবে। এর আগেও আমার রাতারগুল যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমরা অনেকক্ষণ ধরে নৌকায় করে ঘুরেছি। পুরো সময়টাই উপভোগ করার মত।
রাতারগুল ঘুরার পর দেখলাম তখনো সময় আছে। সিএনজি ওয়ালা অপার দিল আমাদের সাদা পাথর ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। এক্সট্রা টাকা লাগবে। দামাদামি করে রাজি হলাম। টোটাল প্রতি সিএনজিতে ১৩০০ করে নিবে। আগে থেকে ঠিক করে আসলে আসলে আরো কম লাগত। যেতে যেতে আছর নামাজের সময় হয়ে গিয়েছে। ঐখানেও নৌকা দিয়ে যেতে হয়। তাও ফিক্সড। ৮০০ টাকা নিয়েছে। সাদাপাথর যাবো, গোসল করব না, তা হয় না। আমরা আগেই গোসল করার প্রিফারেশন নিয়ে এসেছি। ভেবেছি রাতারগুল গোসল করব। করা হয়নি। সাদাপাথর এসে পুষিয়ে নিয়েছি। আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত পুরো সময় পানিতে ছিলাম। ঐখানে টিউব পাওয়া যায়। টিউব একটা নিয়ে পানিতে ভেসে ছিলাম। খুব ভালো লেগেছে।
সাদাপাথর থেকে ফিরে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সিলেট পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেলো। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। পাশেই উনডাল ছিল। সিলেট এসেছি, উনডালে খাইনি, এমন হয়নি। সাদাপাথর থেকে আসার সময় সবাইকে উনডালের কথা বলতেছিলাম। সবাই ভাবল আমি হয়তো বাড়িয়ে বলতেছি। খাবার খেয়ে বলল, নাহ, খাবারের স্বাদ আছে।
খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে ঘুম। এর মধ্যে Abu Hurayra Ahmed Nayem আসল। উনার সাথে বসে চা খেলাম। সকালে নাস্তা খেয়ে বের হওয়ার সময় এক সিএনজি ড্রাইভার বলল কই যাবেন, আমরা বললাম এখন যাবো না, পরে যাবো। উনি বলল নাম্বার নিয়ে রাখেন। গেলে ফোন দিয়েন। রাতারগুল যাওয়ার সময় হোটেল থেকে বের হয়েই সিএনজি পাওয়ার কারণে তাকে আর ফোন দেওয়া হয়নি। রাতে সেই সিএনজি ড্রাইভার ফোন দিল। জিজ্ঞেস করল পরের দিন কোথায় যাবো। আমরা বললাম লালাখাল, শাপলা বিল, জাফলং। ১৫০০ করে প্রতি সিএনজি, আসা যাওয়া। বললাম সকাল ৭টার দিকে আসতে।
সিলেটে দ্বিতীয় দিন
ঘুম থেকে উঠে রেডি হলাম। সিএনজি ওয়ালা আসল। আমরা নাস্তা খেতে গেলাম। ভাবলাম উনাদের সাথে এতদূর যাবো, উনাদের নাস্তা খাওয়াই। নাস্তা খাওয়ালাম। নাস্তা খাওয়ানো যে ভুল হয়েছে, তা পরে হাড়ে হাড়ে বুঝেছি। নাস্তা খেয়ে আমরা রওনা দিলাম শাপলা বিলের উদ্দেশ্যে। শাপলা বিলে গিয়ে দেখি শাপলা নেই। ঐখান থেকে ইন্ডিয়ার পাহাড় গুলো দেখা যাচ্ছে। দারুণ লাগে দেখতে। এ ছাড়া জাফলং যাওয়ার পথটি অসাধারণ সুন্দর। দুই পাশে খোলা বিল। দূরে ইন্ডিয়ার পাহাড় গুলো। কি যে অসাধারণ লাগে এই রোডটা আমার কাছে।
শাপলা বিল থেকে রওনা দিলাম জাফলং এর দিকে। এখানেও নৌকা লাগবে ঘুরতে। সিএনজি ড্রাইভার বলল অফিস আছে, অফিস থেকে নৌকা নিতে। অফিসে গেলাম। বলল ৩ হাজার টাকা লাগবে। এর মধ্যে জাফলং জিরো পয়েন্ট এবং মায়াবী ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য ১৮০০ টাকা। খাসিয়া পল্লি যাওয়ার জন্য ১২০০ টাকা। আমাদের বলা হয়েছে একজন গাইড থাকবে। খাসিয়া পল্লিতে পান পাতা, চা বাগান, জমিদার বাড়ি ইত্যাদি দেখা যাবে। ভাবলাম এত কিছু দেখা যাবে, যাই। দেখে আসি।
খাসিয়া পল্লি যাওয়া ঠিক আছে, সুন্দর জায়গা। জমিদার বাড়ি বলতে যা আছে, তা দেখার মত না। তবে পান গাছ, এবং চা বাগানটা দেখার মত। কিন্তু কোন ভাবেই এখানে যাওয়া আসার খরচ ১২০০ টাকা হতে পারে না। আবার মায়াবী ঝর্ণায় গিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ। মানুষ কম হলে যায়গটা উপভোগ করার মত ছিল। মানুষ না হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ পাশেই অনেকে দোকান বসিয়েছে। এত মানুষের মধ্যে উপভোগ করার কিছুই নেই। তাই ঐখানে এক মুহুর্তও থাকিনি। আমরা এরপর জিরো পয়েন্টের দিকে এলাম। মাঝখানে এক জায়গায় নৌকা রেখে পানিতে নামলাম। জিরো পয়েন্ট হেঁটেই আসা যায়। এরপরও নৌকা দিয়ে আসতে চাইলে আসা যাবে। কিন্তু তাই বলে কোন ভাবেই ১৮০০ টাকা লাগার কথা না। এছাড়া কি সুন্দর ভাবে বলেছে আমাদের একজন গাইড থাকবে। পরে দেখলাম যে নৌকার মাঝি, সেই গাইড! গতকাল রাতারগুল এবং সাদাপাথর ঘুরেছি, ঐখানের নৌকা ভাড়াও বেশি। কিন্তু সে তুলনায় এখানে বলা যায় ডাকাতি করা হয়েছে! আসলে জাফলং এ নৌকা লাগে না। নৌকা লাগলেও লোকাল নৌকা পাওয়া যায়। খুব কম টাকায় এখানে ঐখানে যাওয়া যাবে।
যাই হোক, আমরা জায়গা গুলো খুব উপভোগ করেছি। খাসিয়াতে যে চা বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা অনেক বিশাল একটা চা বাগান। চা বাগানের পাশে একটা চা দোকানে চা খেয়েছি। ভাইবেন না যে অসাধারণ চা। আমাদের এলাকার টং এর চা এর মতই। চা বাগানের পাশে হলেই যে ভালো চা পাওয়া যাবে, এই আশা করা বোকামি। চা খেয়ে রওনা দিলাম মায়াবী ঝর্ণা। পথের দুই পাশে পান বাগান। এই পান গুলো হচ্ছে গাছ পান। সাধারণত সুপারি গাছ বেয়ে বড় হয়। অন্যান্য গাছের সাথেও বেয়ে উঠতে দেখেছি। তবে বেশি দেখেছি সুপারি গাছ। পান এবং সুপারি এক সাথে। দারুণ কম্বিনেশন।
মায়াবী ঝর্ণার কথা তো বলেছিই। সেখানে একটুও থাকতে ইচ্ছে করেনি। তার উপর আমাদের একজনকে হিজড়া ধরেছে। খুবি খারাপ আচরণ শুরু করেছে। কেমন খারাপ আচরণ, তা যারা হিজড়ার পাল্লায় পড়েছেন, তারাই বুঝবেন। বাকিদের কখনোই বুঝানো যাবে না। আমাদের নৌকার মাঝি বা গাইডকে ডাকলাম। জিজ্ঞেস করলাম আপনাকে কেন আনা হয়েছে। হিজড়ারা পেছন থেকে উত্তর দিল তাকে বা* … আনা হয়েছে। উনি এসে ওদের কিছু টাকা দিলে এরপর চলে যায়।
জাফলং জিরো পয়েন্টের পাশে আমরা অনেকক্ষণ ধরে গোসল করেছি। পানি গরমকাল হওয়া সত্ত্বেও যথেষ্ট ঠাণ্ডা। আমি ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে পারি না। জ্বর চলে আসে। এরপরও সাহস করে নেমে পড়লাম। এত সুন্দর পানি। কার না ইচ্ছে করবে। কি যে ভালো লেগেছে গোসল করতে। গোসল করে রওনা দিলাম তীরের দিকে। দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়ার দিকে বৃষ্টি হচ্ছে। এই দিকে আস্তে আস্তে বৃষ্টি আসছে। আমরা তীরে পৌঁছার পর ঝুম বৃষ্টি আসল। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে একটা ছাউনির দিকে গেলাম।
জিরো পয়েন্টের এখানে এক সাথে ইন্ডিয়ার মানুষ এবং বাংলাদেশি মানুষ। এদিক সেদিক কি সহজে যাওয়া আসা করে তারা। পাশেই দুই দেশের বর্ডার গার্ড। ওরা বুঝে কিভাবে কে বাংলাদেশি, কে ইন্ডিয়ান? এখান দিয়ে তো সহজেই বর্ডার পার হয়ে ইন্ডিয়া চলে যাওয়া যায়। কোন পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া!
যেখানে সিএনজি আমাদের ড্রপ করেছে, সেখানে অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে দেখতে গেলাম প্রাইসিং কেমন। ভাবলাম যদি উল্টা পাল্টা প্রাইসিং হয়, সিলেট গিয়ে দুপুরের খাবার খাবো, এখন শুধু হালকা কিছু খাবো। প্রাইসিং দেখলাম রিজনেবল। খাওয়া দাওয়া অর্ডার দিলাম। খাবার আসার পর দেখলাম খাবারের পরিমাণ খুবি কম। প্রাইসিং দিয়ে আমাদের ধোঁকা দেওয়া হয়েছে! যেখানে এক বাটি তরকারি লাগার কথা, সেখানে লাগল তিন বাটি! ট্যুরিস্ট স্পট গুলোর রেস্টুরেন্ট গুলো কেমন জানি বাটপারি করে। জানি না কেন করে।
খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম লালাখালের দিকে। পথে পড়ল জৈন্তিয়া জলপ্রপাত। সেখানে নামলাম। সেখানে একটা রিসোর্ট আছে। রিসোর্টা সুন্দর। ঐ রিসোর্ট থেকে দুইটা ঝর্ণার ভিউ পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে রওনা দিলাম আমরা। বৃষ্টি হচ্ছিল। সিএনজিতে ঘুমানো যায় না। এরপরও কেমন ঘুম পাচ্ছিল। কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর সিএনজি মামাকে জিজ্ঞেস করলাম মামা, লালাখাল আর কতদূর? মামা বলল লালাখাল তো ফেলে এসেছি। ঐখানে পানি ভালো না। এটা সেটা বলতেছিল।
রাতে উনাকে ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন দেওয়া ছিল যে আমরা লালাখাল, শাপলা বিল, জাফলং যাবো। উনি সকালে যাওয়ার পথে লালাখাল ব্রিজের আগে নামিয়ে আমাকে বলল, মামা লালাখাল এসেছি। দেখলে দেখেন, বা নৌকায় ঘুরলেও ঘুরতে পারেন। ভেবেছে আমি লালাখাল চিনি না। আমি সকালে বললাম আমরা ফেরার সময় লালাখালের স্পটে যাবো। নৌকায় ঘুরব। এখন যখন ফেরার পথে লালাখাল না গিয়ে উনি চলে এসেছে, কি যে খারাপ লাগছিল। উনাকে জিজ্ঞেস করি, কেন এমন করছেন। উনি একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছিল। বললাম, দেখেন আপনাকে আমি কথা দিয়েছি আপনাকে নিয়ে যাবো। তাই আজ আপনাকে নিয়ে এসেছি। আমরা অন্য সিএনজিও ঠিক করতে পারতাম, করিনি। সেখানে আপনি আমাদের সাথে এমন করলেন কেনো? উনি এমন সব লেইম উত্তর দিচ্ছিল। মেজাজ উল্টো গরম হচ্ছিল। রুবেল পাশ থেকে বলল থাক, বাদ দে। লালাখাল যেতে হলে উনাদের এক্সট্রা যাওয়া আসা মিলিয়ে ১৪ কিলোমিটারের মত ভেতরের রোডে যাওয়া লাগত। এই কারণে উনারা আমাদের সাথে এই প্রতারণাটা করেছে। অথচ এইখানে যাওয়ার কথা বার বার বলা হয়েছে ঠিক করার সময়। ঠিক এই কারণে মনে হয়েছে যে সকালে উনাদের নাস্তা খাওয়ানোই উচিত হয়নি। ভালো মানুষ পেয়ে ধোঁকা দিয়ে দিল।
খারাপ লাগার কারণ হচ্ছে আমার সাথে আরো পাঁচ জন মানুষ। এরা লালাখাল যায়গাটা দেখতে পারল না। আলহামদুলিল্লাহ্, আমি এর আগেও লালাখাল ঘুরে এসেছি। জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। আমাদের এভাবে ধোঁকা না দিলেও পারত। টাকা বেশি চাইলে দিতে আপত্তি করতাম না।
রওনা দিলাম সিলেটের দিকে। উনারা বলল সামনে আগুন পাহাড় দেখিয়ে নিয়ে যাবে। আমি বললাম আগুন পাহাড় দেখা লাগবে না, আপনি সিলেটের দিকে চলেন। এরপরও আমাদের আগুন পাহাড় নিয়ে গেলো। মেইন রোড থেকে সামান্য ভেতরে। আগুন পাহাড় বলতে এখান থেকে প্রচুর গ্যাস উঠে। তো যে কোন জায়গায় ম্যাচ দিয়ে আগুন জ্বালানো যায়। এটাই আগুন পাহাড়। একটা ছেলে ম্যাচ দিয়ে আগুন লাগাচ্ছিল। কেউ কিছু বলে নি। নিজ থেকেই আগুন লাগিয়ে দেখাচ্ছিল। আরো কয়েকটা ছেলে ছিল ট্যুরিস্ট। আমি প্রথমে ভেবেছি ঐ গ্রুপের। পরে ঐ গ্রুপ অন্য দিকে চলে যাওয়ার পর বুঝে গেলাম এটা ধান্ধাবাজ! ও নিজের থেকে আগুণ লাগাচ্ছিল। আমাদের সিএনজি ওয়ালারা এসে দেখাচ্ছিল এখানে আগুন লাগাও, ঐখানে আগুণ লাগাও। আমি সবাইকে বললাম চলো যাই। আগে থেকেই বুঝে গিয়েছি ঐ ছেলের ধান্দা, তাই আমি আগে আগেই চলে আসছিলাম। আমার চলে আসা দেখে ঐ ছেলেটি আগুন লাগানো রেখে আমার পেছন পেছন আসতেছিল। বলল মামা, বখশিশ। এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে। ওরে জিজ্ঞেস করলাম আমি জিজ্ঞেস করেছি আগুন লাগাতে? বলল, বললেন তো। এই জন্যই তো লাগালাম। আমাদের সিএনজি ওয়ালারা এবার এগিয়ে এসে ছেলেটারে থামাল।
আমারা বিকেলের দিকে সিলেট পৌছালাম। হোটেলের পাশেই পাশেই কাজি অ্যাসপারাগাস ফুড ভিলেজ। সেখানে চা খেলাম। এরপর কিছুক্ষণ রুমে গিয়ে রেস্ট নিয়ে আবার বের হলাম। পাশেই রায়হান ভাই এর অফিস। উনার অফিসে গিয়ে কফি খেলাম। আড্ডা দিলাম। এরপর গেলাম রেল স্টেশন। টিকেট কাটার জন্য। দুই দিন আগেও কোন টিকেট নেই। এছাড়া যে দিন সিলেট পৌঁছাই, ঐ দিনও দেখেছি যে অনলাইনে কোন টিকেট নেই। পরে বাসের টিকেট কেটে রুমে ফিরি।
সিলেটে তৃতীয় দিন
আজ আমাদের তেমন কোন প্ল্যান ছিল না। হোটেলে নাস্তা খেয়ে বের হলাম। হজরত শাহ জালাল এর মাজার দেখতে গেলাম। সেখান থেকে রওনা দিলাম হরিপুর। দুপুরের খাবার সেখানে খাবো বলে। হরিপুর সিলেট শহরের বাহিরে। প্রায় এক ঘণ্টার রাস্তা। যেতে যেতে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যায়। এরপর সেখানে খাওয়া দাওয়া করি। অসাধারণ লাগে খেতে। ঐখানে কি খেতে গিয়েছি, কি খেয়েছি বললে চাকরি থাকবে না। সেখান থেকে ফেরার পথে হজরত শাহ পরান এর মাজার দেখতে গিয়েছি। দেখে ভাবলাম সাস্ট ঘুরে আসি। সাস্টে গেলাম। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় ঢুকতে পারিনি। পরে শহরের দিকে ফিরে আসি। একটু কেনা কাটা করি। তারপর কাজি অ্যাস্পারাগাসে বসে খাওয়া দাওয়া করি। রাতের সাড়ে দশটায় আমাদের বাস ছিল। এরপর বাস স্ট্যান্ড এসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
সিলেট এর আগে যখন গিয়েছি, রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। এখন দেখলাম সব গুলো রাস্তাই ভালো। কেউ চাইলে সেলফ ড্রাইভ করে যেতে পারবেন। স্পট গুলোতে নিজের গাড়ি রাখার জন্য যথেষ্ট যায়গা আছে। আর কোন সার্ভিস নেওয়ার আগে যাচাই বাচাই করে দামাদামি করে নিলে ভালো। স্পট গুলোর মানুষ ভাবে যারাই ঘুরতে যায়, তারা সম্ভবত বলদ। যে ভাবে ইচ্ছে সে ভাবে টাকা নেওয়া যাবে। আশা রাখি একদিন স্পট গুলো আরেকটু ট্যুরিস্ট ফ্রেন্ডলি হবে।
অনেক কিছু জানতে পারলাম।
ট্রেনেরভস্নিগ্ধা চেয়ার কি AC?
জ্বি, AC
আপনার হয়তো অনেক টাকা, আর একটু বেশি সহজ-সরল আছেন। সিলেট ছাড়াও যেখানেই টুরিস্টদের আনাগোনা বেশি থাকে, সেখানেই ধান্দাবাজদের সংখ্যাও বেশি থাকে। এদের সাথে কড়াইগন্ডাই হিসাব করে চলতে হয়। আপনি জাফলংয়ে নৌকায় যেই টাকা দিয়েছেন, তা দিয়ে জাফলং, লালাখাল, আগুন পাহাড়, ডিবির হাওরে ভালোভাবে একজনের ঘোরা হয়ে যাবে। আপনি এতো প্রতারিত হয়েছেন শুনে খারাপ লাগলো। আরও দুবছর সিলেটে আছি ইনশাআল্লাহ। এর মধ্যে সিলেটে আসলে যোগাযোগ কইরেন। ভালোভাবে ঘুরানোর চেষ্টা করবো। আর সাস্ট ক্যাম্পাস থেকে ফিরে যেতে হয়েছে এজন্য দুঃখিত এবং লজ্জিত। 🙏