একদিন একটি মেয়ে ছাতা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হাতে নয়, মাথার উপর ছিল। কারন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। মেয়েটির নাম ছিল রিফতি। রিফতি একটি ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিল। ছেলেটি এসেছে। ছেলেটিকে খুব পছন্দ করত। প্রচণ্ড বিশ্বাস করত ছেলেটিকে। ছেলেটি যা বলত, তাতেই সায় দিত। ছেলেটির সঙ্গ ভালো লাগত। ভালো লাগত ছেলেটির কথা বলা, কথা বলার ধরণ। সব। ঐ দিন তারা খুব সুন্দর কিছু সময় পার করেছে। রিফতি পার করেছে তার জীবনের সবচেয়ে সেরা দিনটি।
ঐ দিনের পর ও ছেলেটির সাথে কথা হতো। তবে অনেক কম। আস্তে আস্তে ছেলেটি রিফতি থেকে দূরে সরে যেতে লাগল। রিফতি ছেলেটির সাথে দেখা করতে চাইলো, ঐ একই জায়গায়। যেখানে তারা প্রায় সময় দেখা করে। একটি কদম গাছ। তার পাশে একটি যাত্রী চাউনি। একটি ল্যাম্প পোস্ট। ছেলেটি বলল আসবে। আসে নি। বিকেল থেকে সন্ধ্যা হলো। কত মানুষ রিফতির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলো। কত মানুষ অবাক হয়ে তাকালো। নিথর হয়ে বসে থাকল রিফতি। ছেলেটি আসে নি।
প্রায় সময়ই রিফতি ঐ একই জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবত, হয়তো এক দিন না একদিন আসবেই আসবে। আসে না। অপেক্ষা করে থাকে। ছেলেটিকে বিশ্বাস করত। পছন্দ করত। তার বিশ্বাস মিথ্যে হবে, তা ভাবতেই পারত না। এত সহজেই সব কিছু মিথ্যে হবে, তা চিন্তা করতেই কেমন খারাপ লাগত।
অনেক দিন চলে গেলো। অনেক দিন পর রিফতি আবার ও ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ঐ একই জায়গ্যা। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। তার হাত ধরে আছে ছোট্ট একটা ছেলে। ছেলেটি জিজ্ঞেস করছিল, মা, আমরা কেন দাঁড়িয়ে রয়েছি? রিফতি উত্তর দিতে পারে নি।
বৃষ্টি হচ্ছিল, প্রচণ্ড বৃষ্টি। রিফতির চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। বাচ্ছা ছেলেটি চোখের পানি এবং বৃষ্টির পানি এখনো বুঝতে শিখে নি। তাই ধরতে পারেনি তার মায়ের চোখের পানি। রিফতি চোখের পানি গুলো মুছতে পারে নি। কারণ এক হাতে ছাতা, অন্য হাত ধরে আছে তার ছোট্ট বাচ্চাটি। সে শুধু ভাবছে, কত সহজেই মানুষ বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারে। কত সহজেই মানুষ একটা সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। কত সহজেই মানুষ দূরে চলে যেতে পারে। কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই তার। শুধু একটু কষ্ট হয়, এ জন্য যে সে ভালো খারাপ চিনতে পারে নি। না পেরে ভুল করেছে, যে ভুলের ফলাফল সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।