গল্পঃ অসৎ পুলিশ অফিসার


রনি বাইক নিয়ে বের হয়েছে। সাথে এক ফ্রেন্ড ছিল। দুইজনের একজনের মাথায়ও হেলমেট ছিল না। যে দিকে যাচ্ছে, সেদিকে কখনো পুলিশ থাকে না। ভাবল আজও থাকবে না। কিন্তু না। আজ তাদের পুলিশে ধরল। দুইজনের হেলমেটের জন্য মামলা দিবে বলল। ৩০০০ টাকার মামলা। আর চাইলে মামলা না নিয়ে ১০০০ টাকা নগদ দিলেই ছেড়ে দিবে। কি করবে বুঝতে পারছিল না রনি।
হঠাৎ মনে পড়ল তার দূর সম্পর্কের এক খালাত ভাইয়ের কথা। নতুন পুলিশে জয়েন করেছে। অনেক ভালো মানুষ। বয়সে তার থেকে একটু বড় হলেও সব সময় ফ্রেন্ডের মতই কথা বলেছে। তাকে একটা ফোন দেওয়া যাক।


হাসানকে ভদ্র ছেলে হিসেবেই সবাই চিনে। পড়ালেখাতেও ভালো ছিল। দেখতেও সুদর্শন, ফিটফাট। আর হয়তো তাই সাব ইন্সপেক্টরের নিয়োগের পরীক্ষায় এপ্লাই করার পর সব ধাপ সহজে পার হতে পেরেছে। পোস্টিং যদিও নিজ এলাকা থেকে একটু দূরেই পড়েছে। এরপরও কোন আক্ষেপ নেই। স্বপ্ন তার সফল পুলিশ অফিসার হওয়া। পুলিশের চাকরিতে অনেক নিয়ম কানুন। এরপরও সব নিয়ম কানুন মেনে তার সাধ্য অনুযায়ী অন্যায়কারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসাই তার লক্ষ্য।


চাকরিতে জয়েন করার কয়েক দিন পর একদিন বিকেলে একটা ফোন পেলো হাসান। নাম বলল রনি। নামটা পরিচিত মনে হচ্ছে। পুরাপুরি রিকল করতে পারছে না। এরপরও হ্যা হ্যা বলে গেলো। ঐ পাশ থেকে বলল যে পুলিশে তার বাইকের কাগজপত্র আটকালো। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই পাশের পুলিশের কাছে ফোন দিয়ে দিল। ঐ পুলিশের সাথে কথা হলো। নিজের পরিচয় দিল। কেমন জানি অস্বস্থি লাগল। এরপরও কথা বলল।
ঐ পুলিশ অফিসারকে বাইকের কাগজপত্র দিয়ে দেওয়ার রিকোয়েস্ট করার পর থেকে হাসানের নিজের কাছে নিজেকে কেমন অপবিত্র মনে হতে লাগল। মনে হলো পুলিশ জীবনের প্রথম অন্যায়টা সে করে ফেলছে। কাজ শেষে বাসায় এসে গোসল করল। এরপরও অপবিত্র লাগার অনুভূতিটা শরীর থেকে যায়নি। রাতে খুব একটা ঘুম হয়নি। সারারাত মনে হলো সে বিরাট অন্যায় করেছে। একজনকে অন্যায় করতে সাহায্য করেছে।


রনির কাগজপত্র কিভাবে ফেরত পেলো, তা বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বলা শুরু করল। আরে জানিস, আমার পরিচিত এক পুলিশ অফিসার রয়েছে। কোন সমস্যা হলেই উনাকে ফোন দেই। সাথে সাথে সমাধান হয়ে যায়। আস্তে আস্তে হাসানের নাম্বার সবার মোবাইলে চলে যেতে লাগল।


চাকরিতে জয়েন করার পর থেকেই নিয়মিত নানা বিষয়ে অন্যায় আবদার করে অনেকেই ফোন দেয়। অন্যায় আবদার গুলো মেটাতে কি যে খারাপ অনুভূতি হয়। এরপরও তাকে অন্যায় আবদার গুলো মেটাতে হয়। তাকে ছোট বেলা থেকেই সবাই ভদ্র, ভালো হিসেবেই জেনে এসেছে। এখন যদি এই আবদার গুলো না মেটায়, পরিচিত সবাই খারাপ ভাববে। অন্যরা খারাপ ভাববে, এই চিন্তা সারাক্ষণ হাসানকে গ্রাস করে রাখত। অথচ সবাই তাকে দিয়ে খারাপ কাজ গুলোই করানোর চেষ্টা করতে লাগল।


চাকরির বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু কেইস হ্যান্ডেল করা শুরু করল হাসান। ক্রিমিনালকে আটক করার পর এমন এমন লোভনীয় অফার পাওয়া শুরু করছে সে, যে না করা কষ্টকর। এরপরও সৎ থাকার পণ নিয়ে সব অফার দূরে সরিয়ে রেখেছে। অফার যত দূরে সরায়, চার পাশ থেকে তত বেশি হুমকি আসতে থাকে। চাকরি গেলে পাওয়া যাবে, কিন্তু জীবন গেলে কিভাবে পাবে?


চাকরিতে জয়েন করার কয়েক বছরের মধ্যেই হাসান নিজ এলাকায় তার মা বাবার জন্য সুন্দর একটা বাড়ি করল। মানুষ বলাবলি করা শুরু করল সে নাকি ঘুষের টাকা দিয়ে এই বাড়ি করেছে। রনি তার বন্ধুদের সাথে বাইক দিয়ে হাসানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বলতে লাগল এই হালা সম্ভবত বিরাট ঘুষখোর। না হলে পুলিশের চাকরি করে এত সুন্দর বাড়ি করা কিভাবে সম্ভব?

Leave a Reply