গণিত ভীতি অনেকেরই আছে। গণিতকে অনেকেই কেন যেন ভয় পায়। অনেক ভয়। মনে হয় যেন অনেক কঠিন একটা বিষয়। কিন্তু যারা গণিতকে ভালোবাসে তারাই জানে গণিত কত মজার। সত্যিই মজার। শহরের অনেক ছাত্র ছাত্রীর কাছেই গণিত একটা কঠিন বিষয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের গ্রামের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আরেকটু বেশি। তাই বার বার ফেল করতাম গণিতে। ক্লাসের রোল নাম্বার এক দুই তিন এমন কয়েক জন পাস করত। ক্লাসের ফাস্ট বয় যদি পেত ৯০ পরের জন পেত ৪০ কিবা ৫০। এমনি দুরত্ত্ব ছিল। আর হাতে গোনা কয়েক জনে পাশ করত। আমি ছিলাম ফেল করাদের দলে।
স্যার গণিতের প্রতি সবাইকে আকৃষ্ট করার জন্য যারা গণিতে ৮০ বা এর বেশি পেত, তাদেরকে এক ডজন কলম দিত। এটা আমার স্কুলে জয়েন করার সময় থেকেই দেখে এসেছি। ঐটা আমার স্বপ্ন ছিল যে স্যারের হাতের ঐ এক ডজন কলম পাবো। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেনি থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত অনেক গুলো পরীক্ষা দিয়েছি, আমি কলম পাই নি। পাস করাই কষ্টকর, সেখানে কলম পাবো কিভাবে।
তখন আমি দশম শ্রেনীতে পড়তাম। প্রিটেস্ট পরীক্ষা শেষ আমাদের। একই ফলাফল। হাতে গোনা কয়েক জন পাশ করছে। আর সবাই ফেল। আমিও সে দলে। স্যার চিন্তা করছে এভাবে তো আর চলে না। তাহলে তো SSC তে অনেকেই ফেল করবে। সাধারণত গণিত ছাড়া বাকি বিষয় গুলোতে অনেকেই পাস করে। তাই যদি গণিতে পাসের হার বাড়ানো যায়, স্কুল থেকে SSC তে পাসের হার বাড়বে। তখন স্যার এ সমস্যা সমাধানের জন্য ভালো একটা পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।
প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর একটা করে পরীক্ষা নিতেন স্যার। কয়েকটি গ্রুপ করে নিয়েছেন। গ্রুপ গুলো এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যেন সবার গ্রুপের মান সমান হয়। ভালো মন্দ মিশিয়ে আরকি। যাদের গ্রপে বেশি সংখ্যক ছেলে মেয়ে পাশ করবে তাদেরকে পুরষ্কার দেওয়া হবে। আমাদের গ্রুপে আমি যদি পাশ করি তাহলেই আমরা পুরষ্কারটা পেয়ে যাই। কারণ আমি আমি পাস করা থেকে হয়তো অল্প কয়েকটা মার্ক কম পেতাম। তাই গ্রুপ লিডার (মিজানুর রহমান) আমার প্রতি নজর দিয়েছে। কোন কোন চ্যাপ্টার থেকে কোন অংকটা করলে একটা অংক কমন পড়বেই তা শিখিয়ে দিয়েছে। আমিও ঐ ভাবে শিখে পাশ করে গেলাম। প্রথম বার পুরষ্কারটা আমাদের গ্রুপ পেয়ে গেলো। আমার এক্সাইটমেন্টও বেড়ে গেলো। আমি একটু মনোযগী হলাম।
দ্বিতীয় বার আবার পরীক্ষা নিল স্যার। দূর্ভাগ্য ক্রমেই বলব, আমি ঐ সময় ৮০ পেয়ে গেছি। আমাদের ফাস্ট বয় মিজানুর রহমানের পাশে বছিলাম। সে অনেক কিছু দেখিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারি নি যে আমি এত বেশি নাম্বার পাবো। স্যারও না, এমনকি ক্লাসের কেউ না। সে বারও পুরষ্কারটা আমরা পেয়েছি। আমি অনেক মজা পেয়ে গেছি।
তৃতীয় বার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে আবার। আমি সবার সাথে বসছিলাম পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। কিন্তু স্যার আমাকে বলল জাকির উঠে এসো। গত বার দেখে দেখে ৮০ পেয়েছো এবার দেখব কিভাবে পাও। আমিও হাসি মুখে উঠে গেলাম। আমার একটা বিশ্বাস ছিল তখন। আমাকে ক্লাসের এক কোনায় বসানো হয়েছে। একা একা পরীক্ষা দিয়ে আমি সেবার ৬০ এর উপর নাম্বার পেয়ছি। এটা ও আমার কাছে অনেক কিছু ছিল। যাই হোক। পরে নির্বাচন পরীক্ষায় আমি ক্লাসের সবার থেকে বেশি নাম্বার পেয়েছিলাম ৯৯। তখন আমার কেমন লেগেছে আমি বুঝাতে পারব না।
তখন স্যারের এ উদ্যেগ মনে হয়েছিল শুধু আমার জন্যই নেওয়া হয়েছিল। ক্লাসের ঐ ছোট প্রতিযোগিতা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আজ আমি অনেক দূর আসতে পেরেছি।। আজ স্যার অনেক দূরে। প্রায় সময়েই আমি স্যারের কথা মনে করি। বাড়িতে গেলে স্যারের সাথে দেখা করে আসি।
সদ্য হাস্যজ্বল ঐ স্যারের নাম আবদুল মান্নান। আমাদের কে এম ইউনাইটেড একাডেমীর গণিত শিক্ষক ছিলেন। স্যার আপনার মত কয়েক শিক্ষক অনেক কিছু দিতে পারে আমাদের। আর কিছু না পারে, আমার মত একটা ছেলের জীবন পালটে দিতে পারে।
সুন্দর টিউন।
আমার গনিতের কিছু বাংলা PDF Book দরকার।
বিশেষ Calculus করে এর উপর।
দিতে পারলে খুশি হব।
valo
Mr. Jakir Hossain ar story valo lagglo. you are zero to hero.
mr.jakir suggest me how can I make such a dairy .
valo laglo tiun ti pore good sajesen……
আবদুল মান্নান স্যারকে আমার অনেক অনেক প্রণাম। সেই সাথে আপনাকেও অনেক অনেক ভালবাসা ও ফুলেল সুভেচ্ছা।