কুয়াকাটা গিয়েছি। আমি, মাঞ্জুরুল হক আর ফাহাদ মেজবা ভাই। কুয়াকাটা যাওয়ার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। কিন্তু একটার পর একটা কারণে যাওয়া হচ্ছিল না। এরপর এ বছরের শুরু থেকেই হরতাল অবরোধ। এখনো যাওয়া হতো না। মাকে বলার পর চিন্তা করা শুরু করছে। বললাম লঞ্চে করে যাচ্ছি, সমস্যা হবে না। মঞ্জু এর আব্বু ও রাগ। ফাহাদ ভাই এর আব্বুও। কারণ দেশের অবস্থা ভালো না। তারপর ও যাচ্ছি।
রওনা দিয়েছি ২২ এ মার্চ, ২০০১৫। ৪টার দিকে লঞ্চে উঠেছি। একটা ডাবল কেবিন নিয়ে নিয়েছি আমরা। আমতলী হচ্ছে গন্তব্য।
সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে ফতুল্লা লঞ্চ ঘাটে এসে কিছুক্ষণের জন্য থামেছে। যাত্রি নেওয়ার জন্য। তারপর আবার ছেড়ে দিয়েছে।
লঞ্চে কিছু মানুষ নামাজ পড়েছে, আমরাও পড়ে নিলাম। মোড় ঘুরার সাথে সাথে কেবলার দিক ও পরিবর্তন হয়ে যায়। নামাজের মধ্যেই দেখলাম একজন নিজের দিক পরিবর্তন করে নিয়েছে।
সন্ধার সময় পশ্চিম দিক লাল হয়ে উঠেছে , স্বাভাবিক। নদীর অন্য পাড়ে বাতি গুলো স্পষ্ট হতে লাগল। নদীর দুই পাশেই অনেক গুলো ব্রিকফিল্ড। ব্রিকফিল্ড গুলোর চিমনি থেকে ধোয়া বের হয়ে তা অন্ধকারের সাথে মিশে যেতে লাগল। ততক্ষণে সূর্য ঢুবে গিয়েছে। আমরা লঞ্চের ঢেকে বসে পরিবেশ দেখছি। ডেকের বাতাসটা দারুণ। ঠান্ডা। নদীর দুপাড়ে বৈদ্যুতিক বাতির আলো। আমরা অন্ধকারে নদীর মাঝখান দিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে অপর দিক থেকে দুই একটা লঞ্চ আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। লঞ্চে ইঞ্জিনের ঘুম ঘুম শব্দ ছাড়া আর সব কেমন নিরবিলি।
রাতের খাবার আমরা সন্ধ্যায়ই খেয়ে নিয়েছি। লঞ্চের ভেতরে ছোট্ট হোটেল। আমরা যে টেবিলে বসেছি, সেখানে চতুর্থ অন্য আরেকজন ছিল। উনি শাক দিয়ে ভাত খাচ্ছিল। আমি হোটেলের লোককে জিজ্ঞেস করলাম শাক আছে? বলল না। পরে জানলাম উনি লঞ্চেরই স্টাফ। আমাদের শাক খেতে বলল। সবাই মিল মিশ শাক টেস্ট করলাম।
চায়ের কর্ণারে দেখলাম লুডু বোর্ড, বিক্রি করে। আমরা খাওয়া দাওয়া করে আসার সময় লুডু কিনে নিয়ে এসেছি। এরপর এক ম্যাচ খেলেছি। মঞ্জু প্রথম, আমি দ্বিতীয় আর ফাহাদ ভাই তৃতীয় হয়েছে।
রাতে কিছুক্ষণ হাঁটা হাঁটি করেছি, ডেকের মধ্যে। এরপর এসে মুভি দেখেছি। তারপর ঘুম। রাতে দেখি লঞ্চ আটকিয়ে গেছে। ভাটার কারণে নদী থেকে পানি নেমে গিয়েছে। এ জন্য। পরে ২ ঘণ্টার মত এক জাগায় দাঁড়িয়ে ছিল। পরে অন্য লঞ্চ পেছন দিয়ে ধাক্কা দিয়ে আবার ঠিক হল। আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম।
সকালে উঠে দেখি কুয়াশা। কুয়াশায় লঞ্চ চালানো ভয়ঙ্কর। কোন কিছু না দেখেই ছোট নদীতে লঞ্চ চলে, আস্তে আস্তে।
আমাদের আমতলী প্রায় ১০টার দিকে নামিয়ে দিল। যেখানে ৭টায় আমরা আমতলী পৌঁছানোর কথা। নতুন দিন, ২৩ তারিখ, সোমবার। আমতলী নেমে সকালের নাস্তা করে নিয়েছি।
আমতলী থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছি। রাস্তা গুলো অনেক সুন্দর। সোজা রাস্তা, দুইপাশ সবুজ। খেত গুলোতে সান ফ্লাওয়ারের চাষ করেছে। ফুল গুলো কি সুন্দর ফুটে রয়েছে।
রাস্তার দুই পাশের সৌন্দর্য দেখার জন্য আমি বাসের সামনে গিয়ে বসেছি। ড্রাইভারের পাশে। ৩৫ কিলোমিটার এর মত রাস্তা।
আমতলী থেকে কুয়াকাটা যেতে তিনটে ফেরি পার হতে হয়। প্রথম ফেরি ঘাট হচ্ছে কলাতলী। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি আজই প্রথম ফেরিতে উঠেছি।
এক একটা ফেরি ঘাটে অনেক্ষণ বসে থাকতে হয়। ভালোই বিরক্তিকর। প্রায় দেড়টায় কুয়াকাটা এসে পৌঁছিয়েছি। ২১ ঘণ্টার লেগেছে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা আসতে! যদিও তেমন টায়ার্ড লাগে নি। বলতে গেলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই এসেছি।
কুয়াকাটা এসেই হোটেল ঠিক করে ব্যাগ রেখে, ড্রেস পরিবর্তন করে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত চলে এসেছি। দৌড়া দোড়ি, লালা লাফি সব করেছি। বীচে দৌঁড় প্রতিযোগিতা করেছি আমরা তিন জন। দুই বারই মঞ্জু প্রথম হয়েছে। সৈকত থেকে লম্প জম্প করে বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হয়েছি দুপুরের খাবারের জন্য। ভালো কোন রেস্টুরেন্ট নেই। যেখানে গিয়েছি, সেখানের খাবার ছিল মোটামুটি খারাপ। খেয়ে দেয়ে বের হয়ে পড়লাম ঘুরা ঘুরি করতে। এক দিনেই অনেক জায়গা ঘুরেছি। যার কারণ হচ্ছে মোটর সাইকেল। অনেক দ্রুত এদিক সেদিক নিয়ে গেলো আমাদের। যদিও মোটর সাইকেল ছাড়া আর কোন বাহন নেই ঘুরাঘুরির জন্য।
প্রথমে গিয়েছি ঝাউবন দেখতে। এরপর গঙ্গামতির চর। তারপর ক্যানেলে। এ স্পট গুলো সমুদ্রের কেনারে। মোটর সাইকেল সমুদ্রে সৈকত দিয়েই চালিয়ে আমাদের এসব দেখালো। মোটর সাইকেল ওয়ালা মামা নিজ থেকেই বলল যদি আমাদের কোন জায়গা ভালো লাগে, থামতে বলতে। যদিও বলতে হয় নি, কিছুক্ষণ পর পরই আমাদের থামিয়ে বিভিন্ন অংশ দেখালো।
এগুলো দেখে গিয়েছি লেবুর বন। সেখান থেকে গিয়েছি সুন্দরবনের কাছা কাছি একটা যায়গা, যেখান থেকে সুন্দরবনের পূর্বাংশ দেখা যায়। আবার ফিরে এসেছি লেবুর চরে। যেখানে বসে আমরা কাঁকড়া খেয়েছি। অনেক গুলো কাঁকড়া ছিল খাওয়ার জন্য। আমরা কোন গুলো খাবো, সে গুলো দেখিয়ে দিলে তারা পরিষ্কার করে ভেজে দেয়। সাথে অন্যান্য পর্যটক ও ছিল। তারপর ফিরে এসেছি জিরো পয়েন্টে। আসার পথে কিছু শুটকি কিনে নিলাম আমরা। তখন রাত হয়ে গিয়েছে।
বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবার বের হয়ে পড়লাম। রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। যদিও তখনো সন্ধ্যা। রাতের দিকে খাবারের দোকান খোলা থাকবে কিনা ভেবে সাড়ে নয়টার দিকেই রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। খাবার খেয়ে আর রুমে ফিরি নাই। সৈকতে চলে এসেছি।
সৈকতে সমুদ্রের গর্জন সব সময়ই কেমন ভালো লাগে। যেন কেউ ডাকে। অনেক দূর থেকে। একটা প্রাকৃতিক সুর। উপরে তাকালে দেখা যায় অনেক গুলো তারা, মিটিমিটি জ্বলছে। সুন্দর আবহাওয়া, সুন্দর পরিবেশ। এক বুড়ো লোক দো-তারা বাজাচ্ছিল। টুং টাং… ইচ্ছে করছিল ডেকে এনে আমার সাথে বসাই। বসে বসে তার দোতারা শুনি। কিন্তু মানিব্যাগ রুমে রেখে গিয়েছি। শুনা শেষে উনাকে সন্মান দেখাতে পারব না, তাই আর ডাকি নি। সমুদ্রের গর্জনে মন দিয়েছি। অন্য রকম আরেকটা সুর, প্রাকৃতিক সুর।
সৈকতের পাশেই আমাদের হোটেল। আমি কিছুক্ষণ পর গিয়ে ম্যাকবুকটা নিয়ে এসেছি। ক্লায়েন্ট ভদ্রলোক একটা মেসেজ দিয়েছিল, তার উত্তর দেওয়ার জন্য। সৈকতের বীচ সিটে হেলান দিয়ে একটু আধটু কাজ ও সেরে নিয়েছি।
সকালে মোটর চাইকেল ওয়ালা কল দিয়ে ঘুম থেকে জাগালো। আরেকটি দিন, মঙ্গলবার। সকালে আবার গিয়েছি গঙ্গামতির চর। সেখান থেকে এক সাথে সূর্যদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। আমরা গিয়েছি সূর্যদয় দেখতে। অনেক কুয়াশা ছিল, যত সুন্দর দেখাবে ভেবেছিলাম, তত সুন্দর হয় নি।
ঐখানে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। আসে পাশে কোন বসত বাড়ি নেই। জিজ্ঞেস করলাম কারা কিনে আপনার দোকানের সদাই। বলল জেলেরা। ট্যুরিস্টরা কিছু খেলে খাবে, না খেলে নেই। কিন্তু জেলেরা ঐ দোকানের নিয়মিত কাস্টোমার। আমরা সেখানে গিয়ে চা বিস্কিট আর কলা খেলাম।
তারপর গিয়েছি কাউয়ার চর। তার জন্য ক্যানেল পার হতে হয়েছে। ক্যানেল পাড় হওয়ার জন্য একটা নৌকা/ফেরিতে উঠেছি, মোটর সাইকেল সহ। অপর পাড় গিয়ে মোটরসাইকেল আমি চালানো শুরু করেছি। ড্রাইভারকে পেছনে দিয়ে। সৈকতের কেনারে চালাতে ভালোই লাগল। কাউয়ার চরের পর হচ্ছে লাল কাঁকড়ার দ্বীপ। কাঁকড়া গুলো উঠে সূর্য ভালো করে উঠলে। আমরা সকালেই ঐখানে গিয়েছি, তাই কাঁকড়া গুলো দেখতে পারিনি ঠিক মত। কাঁকড়া গুলো নাকি বের হয়ে পুরো সৈকত লাল করে ফেলে।
ঐখান থেকে গিয়েছি বৌদ্ধ মন্দির। মন্দিরটি শহরের কুয়াকাটার ভেতরের দিকে। সমুদ্র সৈকত থেকে দূরে। মন্দিরের পাশেই হচ্ছে রাখাইন পল্লি। রাখাইনরা যেখানে থাকে, সেখানে গিয়েছি এরপর। তারা বিভিন্ন জামা কাপড় বিক্রি করে। আমরা সবাই কিছু কিছু জামা কাপড় কিনে নিলাম বাড়ির জন্য।
এরপর আবার চলে এসেছি জিরোপয়েন্টের কাছা কাছি। যেখানে রয়েছে কুয়া। কুয়াকাটার কুয়া। যে কুয়ার নামেই এই কুয়াকাটা। কুয়ার তলদেশে অল্প কিছু পানি। আর অনেক গুলো বোতল পড়ে রয়েছে। কুয়ার পাশে আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির। মন্দিরের পাশে সুন্দর একটি বাড়ি। মন্দিরের ভেতরের গৌতম বুদ্ধের আরেকটি মুর্তি রয়েছে, এটা ছোট মুর্তি। মন্দিরের বাহিরে রয়েছে একটি ছিওয়ালি আর্হাৎ [Shivali Arhan] এর একটা মুর্তি। এগুলো দেখানোর পর ড্রাইভার আমাদের হোটেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো।
দুই দিন আমাদের সময় দেওয়ার ফি দেওয়ার সময় হয়েছে। আমরা ছিলাম তিনজন। মোটর সাইকেল ছিল দুইটা। ওদেরকে টাকা দিয়ে রুমে গেলাম। কেনা কাটা যা করেছি, এগুলো রুমে রেখে আবার বের হয়েছি। তখনো আমাদের সকালের খাবার খাওয়া হয় নি। মাত্র ৯টা বাজে। খাবার গুলো কেন জানি ভালো লাগে নি কুয়াকাটার। তারপর ও কিছু খেয়ে নিলাম। প্রায় ১০টা ভেজে গেছে তখন।
সমুদ্রের পাড়ে আমার মোটর সাইকেল চালাতে ইচ্ছে করল। তাই আমাদের যে ড্রাইভ করেছে, তাদের একজনকে আমি চালাবো। তারপর মোটর সাইকেল চালিয়েছি সৈকতে গিয়ে। বালির উপর দিয়ে চালাতে ভালোই লাগে। সাথে ড্রাইভারের পাশা পাশি ফাহাদ ভাই ও ছিল। মঞ্জুর কাছে খারাপ লাগায় ও রুমে রয়ে গেছে। আমরা চালাতে চালাতে আবার শুটকির চর, লেবুর বন হয়ে সুন্দরবনের পূর্বাংশ দেখা যায় যেখান থেকে, সেখানে গেলাম। তারপর আবার ফিরলাম লেবুর বনে।
লেবুর বনে আমি কোন লেবু গাছ দেখি নি যদিও। ঐখানে কয়েকটা দোকান রয়েছে। যেখানে কাচা মাছ, চিংড়ি এবং কাঁকড়া পাওয়া যায়। কিনে দিলে তারাই ভেজে দেয়। গত কাল সন্ধ্যায় এখান থেকে কাঁকড়া খেয়ে গিয়েছি। আজ আবার দুইটা অর্ডার দিয়েছি ভাজি করার জন্য। এগুলো তাজা। মারা যাওয়ার সাথে সাথেই এরা ফেলে দেয়। এক দোকানে দেখেছি তরমুজ বিক্রি করে। ছোট্ট একটা কিনে নিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের কাঁকড়া ভেজে দিল। তারপর খেয়ে নিলাম। এভাবে ১২টা ভেজে গেলো। রুমে ফিরে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। ব্যাগ সকালেই গুছিয়ে রেখেছি।
তিনটা ফেরি পার হতে হবে। কুয়াকাটা থেকে প্রথম ফেরি পর্যন্ত এসেছি মোটর সাইকেল দিয়ে। এরপরের ফেরি পর্যন্ত ও এসেছি মোটর সাইকেল দিয়ে। তাপররও একটা বাসে উঠে বসেছি। বাসে উঠেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। বাস কোথায় যাচ্ছে আমার কোন খবর নেই। মঞ্জু আর ফাহাদ ভাই সামনে বসেছে। উনাদের উপর নির্ভর করে আমি নিশ্চিন্ত ঘুম দিলাম। মঞ্জুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। দেখি সবাই নামতেছে। অর্থাৎ আমরা গন্তব্যে পৌঁছিয়েছি। যদিও জানি না কোথায়। আমরা আমতলী নামার কথা। কিন্তু অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম এটা আমতলী নয়, পটুয়াখালী।
তখন ঘড়িতে বাজে তিনটা। সকালে যা খেয়েছি, এতক্ষণ পেটে থাকার কথা না। খেতে হবে। ভালো কোন খাবার দোকান খুঁজে পাচ্ছি না। না পাওয়ার কারণে একটা মসজিদে এসে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। জোহরের নামাজ। তারপর আবার খাবারের রেস্টুরেন্ট খুঁজতে লাগলাম। পাই নি, লঞ্চ ঘাট চলে এসেছি এরপর। লঞ্চ ঘাটে এসে একটি হোটেলে খিচুড়ি খেয়ে নিয়েছি। খিচুড়ির পর ডাব। তারপর লঞ্চে উঠেছি। সুন্দরবন-৯। বিশাল লঞ্চ। কেবিনে ঢুকে জামা কাপড় পরিবর্তন করে নিয়েছি। বাসে আসার কারণে বালিতে সব কেমন বালি বালি হয়ে গিয়েছিল। আর শরীর ও প্রচণ্ড ব্যথা করে দিল। রোঁদে দুইদিন ঘুরা ঘুরি করার কারণে সূর্য আমাদের চকলেট কালার করে দিয়েছে। খারাপ না।
আমাদের শেষ মজা হয়েছে লঞ্চে রাতের খাবার খাওয়ার সময়। ভাত ও অন্যান্য তরকারির সাথে মরিচের ভর্তা অর্ডার দিয়েছি আমি। মঞ্জু এবং ফাহাদ ভাই খাবে না, তাই একটা। মরিচের ভর্তা আনার পর উনারা দুইজনই বেশি অংশ নিয়ে নিয়েছে। মামাকে বলছি আরেকটা নিয়ে আসতে। আরেকটাও সবাই কাড়া কাড়ি করে নিয়ে নিল। আমার ভাগ্যে ছিল অল্প একটু। মামাকে বার বার বলতে খারাপ লাগে। নিচ তলা থেকে কেবিনে আনতে হয়। তাই। তারপর ও আবার বললাম আরেকটা আনতে। শেষটা খেয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু! দারুণ লেগেছে।
খেয়ে দেয়ে লঞ্চে একটু হাঁটা হাঁটি করে দিয়েছি বিশাল ঘুম। ঘুম ভেঙ্গেছে সকালে, সাড়ে ৫টার দিকে। তখন লঞ্চটি নারায়নগঞ্চে থেমেছিল। সেখান থেকে সদর ঘাট। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। সদরঘাট নেমে একটা রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম। ততক্ষণে পূর্বদিকে একটা লাল টুকটুকে সূর্য উঁকি দিল। আরেকটি নতুন দিন।
যারা কুয়াকাটা যেতে চান, তাদের জন্য কিছু তথ্যঃ
ঢাকা থেকে যারা যেতে চান, তারা ঢাকা থেকে পটুয়াখালি গেলে ভালো হবে। পটুয়াখালির লঞ্চ গুলো বড়। সাধারনত আমতলী গিয়ে নামে অনেকে। ঢাকা থেকে আমতলী যে লঞ্চ গুলো যায়, সে গুলো ছোট। সময় ও বেশি লাগে। আমরা আমতলী গিয়েছি সফরাজ আলী হাওলাদার এন্ড কো. নামক একটি লঞ্চে করে। ডাবল কেবিনের ভাড়া নিয়েছে ১৫০০ টাকা। আমরা তিনজন গিয়েছি, তাই এক্সট্রা একটা ডেকের টিকেট কাটতে হয়েছে। লেগেছে টোটাল ১৭০০ টাকা।
আসার সময় পটুয়াখালিে হয়ে এসেছি, পটুয়াখালি থেকে ঢাকায়। ডাবল কেবিন নিয়েছিল সম্ভবত ১৭০০টাকা + একটা ডেকের ভাড়া ২০০। সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া সম্ভবত ৭০০টাকা।
মোটর সাইকেল ৬০০টাকায় সব গুলো স্পট ঘুরিয়ে আনবে। এটা কমিটি থেকে নির্দিষ্ট। মোটর সাইকেল চাইবে এক দিনেই সব ঘুরাতে। ভালো হবে যদি প্রথম দিন জিরো পয়েন্ট থেকে হাতের ডানের দিকের সৈকতে যাওয়া যায়। লেবুরচর, শুটকি পল্লির এদিকে। পরের দিন সকালে বাকি অংশ। সব গুলো স্পটের লিস্ট থাকে মোটর সাইকেলের ড্রাভারদের কাছে।ডাবল রুম ভাড়া নিয়েছিল ৪০০টাকা। রুম ভাড়া মোটামুটি কমই। সিঙ্গেল রুম ৩০০ টাকায় পাওয়া যাবে।
যে সব জাগায় যেতে পারেনঃ
দুই দিন থাকার প্ল্যান করলে প্রথমে যাবেনঃ
শুটকি পল্লী, লেবুর বন, সুন্দরবনের পূর্বাংশ। ঘুরাঘুরি করে বিকেলে বা সন্ধ্যায় লেবুর বনের এখানে মাছ/চিংড়ি/কাঁকড়া ভাজি খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন।
পরের দিন সকালে চলে যাবেন গঙ্গামতির চর, যেখান থেকে সূর্যদয় দেখা যাবে। সেখান থেকে ক্যানেলে। ক্যানেল পার হয়ে এরপর লাল কাকড়ার দ্বীপ। কাঁকড়া গুলো সূর্য উঠার পরে উঠে। তাই গঙ্গামতীর চরের এখানে কিছুক্ষণ বসে থাকতে পারেন। ক্যানেলের অংশটা সুন্দর। বসার মত অনেক জায়গা আছে। সাথে নাস্তা পানি কিছু নিয়ে গিয়ে এখানে বসে বসে পরিবেশ দেখতে দারুণ লাগবে। এরপর মন্দির, কুয়াকাটার কুয়া, এসব দেখতে যেতে পারেন।
ভাই খুব ভালো লাগলো লেখাটা। দারুণ রিভিউ!!
অসাধারণ লেগেছে, ছবি গুলো আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে আর্টিকেলটি কে! যারা এখনো যান নি কুয়াকাটায় ঢুঁ মাড়ুন এখানে http://bit.ly/2asIVZE
২২ এ মার্চ, ২০০১৫ 😀 😀
লেখাটা দারুণ ছিল।