কোন একটা কাজ শুরু করা অনেক বেশি কঠিন। শুরু করার পর আগ্রহ ধরে রাখতে পারা আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। আর আগ্রহ না ধরে রাখতে পারলে দেখা যায় কাজটি অর্ধ সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। যা কোন কাজেই আসে না। সময়, শ্রম সবই নষ্ট হয়।
আগ্রহ ধরে রাখার জন্য সবার আগে যা দরকার হয়, তা হচ্ছে সঠিক প্ল্যান। সঠিক টাইমলাইন। কত সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ করতে হবে, কি কি ধাপ অনুসরণ করতে হবে, প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে কতটুকু সময় ব্যয় করতে হবে ঐ কাজটার পেছনে, এসবই শুরুর আগেই জানা দরকার।
রাতে ঘুমাতে যাচ্ছেন? পরের দিনের প্ল্যানের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম থেকে উঠেছেন? একটু অলসতা সবারই লাগে, আপনারও লাগতে পারে। অলসতাটুকু যতটুকু পারেন, ত্যাগ করে নিজের কাজটুকুতে মনোযোগ দিন। প্রথম ৫ মিনিটই একটু বেশি কষ্ট হবে। এরপর কাজের মধ্যে ডুবে গেলে অলসতার কথা মনেও থাকবে না।
গ্রেট কিছু করার জন্য আগ্রহ ধরে রাখা, নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকার থেকে বড় সিক্রেট আর কিছুই হতে পারে না। যারা গ্রেট কিছু করে, আমরা ভাবি সে অনেক লাকি। শুধু আউটকামটাই দেখি। আউটকামের পেছনের কষ্ট, ত্যাগ, শ্রম, এসব দেখি না।
লাইফে সফল মানুষদের আমরা দেখি, দেখে তার কথা ভাবি। তাদের মত হতে ইচ্ছে করে হয়তো। কিন্তু তাদের মত কষ্ট করতে ইচ্ছে করে না। এখন অনেকেই ক্রিকেট খেলা দেখছেন। হয়তো সাকিব, মুশফিক বা মাশরাফিদের মত হতে ইচ্ছে করে, তাদের মত খেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাদের মত হতে হলে যে ব্যাট বল নিয়ে খেলায় নেমে যেতে হয়, তা ভাবি না। তারা শুধু অন্যের খেলা দেখেই এত বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠেনি। অন্যের খেলা দেখে ইন্সপায়ার হয়ে নিজেরাও খেলতে নেমে গিয়েছে বলেই আজ এত বড় ক্রিকেটার। সারা বিশ্বের মানুষ চিনে। আর আমি আপনি? টিভির সামনেই পড়ে আছি। হাত তালি দিচ্ছি। নিজেকে ইম্প্রুভ করার কথা ভাবছি না।
সফলতা যদি আপনার দরজায় কড়া না নাড়ে, তাহলে আপনার উচিত গিয়ে সফলতার দরজায় কড়া নাড়ানো। সফলতা আপনাকে আলিঙ্গন না করলে আপনার উচিত সফলতাকে আলিঙ্গন করা। আমরা বিশ্বাস করি হয়তো যারা সফল, সফলতা নিজ থেকে এসেই তাদের কপালে আদর দিয়েছে। সত্যি কথা হচ্ছে তারা নিজেরাই খুঁজে নিয়েছে সফলতাকে। নিজের জীবনের লক্ষ্য সেট করে ঐ লক্ষ্য অনুযায়ী প্রতিদিন কাজ করে গিয়েছে। নিজের লক্ষ্যের প্রতি কাজ করার আগ্রহ ধরে রেখেছে।
আগ্রহ ধরে রাখার একটা ভালো উপায় হচ্ছে লাইফ থেকে ডিস্ট্রাকশন বা নয়েজ গুলো সরিয়ে পেলা। কি কি আপনাকে আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করতে বাধা দেয় বা আপনার সময় গুলো নষ্ট করে, তা খুঁজে বের করা। যেমন স্মার্টফোন একটা বিশ্বাল ডিস্ট্রাকশন হতে পারে। যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে দিনের নির্দিষ্ট সময় নিজেকে স্মার্ট ফোন থেকে দূরে রাখুন। এভাবে বাকি ডিস্ট্রাকশন গুলো খুঁজে বের করুন।
কিছু কিছু মানুষ রুটিন মেনে কাজ করতে পারে না। আবার কেউ কেউ রুটিন মেনে কাজ করলে ভালো রেজাল্ট পায়। আপনি যদি রুটিন মেনে কাজ করতে পারেন, তাহলে নির্দিষ্ট একটা রুটিন ফলো করুন। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করুন। কাজ শেষের আগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা নয়, মুভি সিরিয়াল বা খেলা দেখা নয়, কোন অনুষ্ঠানে যাওয়া নয় … সব কিছুর আগে নিজের কাজটা শেষ করা। এরপর বাকি সব কিছু করা যাবে। নিজের লক্ষ্যের প্রতি এতটুকু ডেডিকেশন থাকলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।
আগ্রহ ধরে রাখার আরেকটা ভালো উপায় হচ্ছে এক্সাটিং কিছু করা। যে কাজ করলে বোরিং লাগবে না এমন কিছু খুঁজে নেওয়া। লাইক ক্রেজি কিছু। দেখা যাবে সারা পৃথিবী তখন নিজের বিপক্ষে যাবে। আর তখন শুধু সবাইকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও নিজের কাজে সফল হতে ইচ্ছে করবে। সহজেই আগ্রহ ধরে রাখা যাবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি যা করছেন, তা ক্রেজি এনাফ কিনা?
যে কথাটা আমরা কাজ করতে করতে ভুলে যাই, তা হচ্ছে নিজের যত্ন নেওয়া। কাজ করতে করতে একটা সময় পর দেখা যায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। অথবা শরীরে এমন একটা রোগ বাঁধিয়ে নেই যা অনেক ভয়াবহ। তাই নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করার পাশা পাশি নিজের শরীরের যত্ন নিতে হয়। কোন কিছু করার পর যদি নিজেই না থাকি, তখন হয়তো তা মিনিংলেস হয়ে পড়বে। তাই যারা ডেস্ক জব করি, আমাদের দরকার মাঝে মধ্যে একটু বাহিরে বের হওয়া। একটু হাঁটা হাঁটি করা।
সহজ ভাবে যদি বলি, তাহলে বলব লক্ষ্য বা ফিনিশ লাইন সেট করা। এরপর প্রতিদিন ঐ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটু একটু করে কাজ করে যাওয়া। ছোট ছোট অংশে কাজটাকে ভাগ করা। এরপর প্রতিটা অংশ শেষ করতে পারলে নিজের জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা। ছোট হলেও। যেমন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, ভালো কোন রেস্টুরেন্টে নিজের পছন্দের খাবার খেতে যাওয়া বা সুন্দর একটা জামা কেনা । আমাদের ব্রেইন তখন ভাববে, আরে একটা কাজ শেষ করতে পারলেই তো আমি পুরষ্কার পাচ্ছি। তাহলে পরের ধাপ আরো ভালো ভাবে করতে উৎসাহী হবে। আগ্রহ ধরে রাখা সহজ হবে। শুভ কামনা 🙂
সফলতা পাওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ব্রেইন কাজের উৎসাহ ধরে রাখতে পারতেছেনা।
অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া। ধর্য শক্তি বাড়াইতে হবে অনেক আর নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে দিন শেষে যে আজকের দিনের অর্জন কতটুকু।
আসলেই
আসলে অনেক ভালো কথা লিখেছেন ভাইয়া। এই ভাবে কাজ করতে পারলে আসলেই সাকসেস হওয়া সম্ভব।
“যে কথাটা আমরা কাজ করতে করতে ভুলে যাই, তা হচ্ছে নিজের যত্ন নেওয়া”- এই লাইটি খুব গুরুত্বপূর্ণ লাইন, আমাদের জীবনের জন্য। ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে ছুটতে, আমরা নিজেদের শরীর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করতেই ভুলে যাই।