প্রতিদিনই ভার্সিটিতে যেতে হয় ক্লাস করতে। বাসে উঠা কত জামেলার কাজ যারা নিয়মিত উঠে তারাই বুঝতে পারে। মাঝে মাঝে বাস গুলো সাঁ করে চলে যায়। এ দিকে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। যদি না বাসে উঠতে পারি তাহলে পরীক্ষা দিতে পারব না। আর পরীক্ষা না দিতে পারলে শূন্য পাবো। এ শূন্যটা আমাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কারন প্রতিটা পরীক্ষার মার্কই জমা হচ্ছে। চারবছর পর একটা শীট হাতে পাবো। কোন পরীক্ষায় কত মার্ক পেয়েছি সব গুলো যোগ করে একটা ফলাফল হবে, যা দিয়ে আমার ভাগ্য নির্ধারন হবে। কোথাও চাকরি পাবো না পাবো এসব নির্ধারন হবে। তাই পরীক্ষাটা অনেক গুরুত্বপূর্ন। বাস না থামার কারনে দৌড়ে বাসে উঠতে হয় মাঝে মাঝে। যেখানে একটু হাত ফসকে পড়ে গেলেই বাসের নিছে। একবার আমি পড়ছি এভাবে বাসের নিছে। প্রথম যে বার ঢাকায় এসেছি। বাসে যে দৌড়ে উঠতে হবে তা ভালো করে তখনো রপ্ত করতে পারি নি। ভাগ্য ভালো থাকার কারনে বাসের ভিতরের সবাই আমাকে দেখছে যে আমি পড়ে গিয়েছি। আল্লাহর কাছে শোকর যে বাস ড্রাইভার দ্রুত বাস থামিয়ে দিয়েছে। পায়ে সামান্য ব্যাথা পেয়েছি। এক পায়ে বেশি আরেক পায়ে কম। একটু প্লাস্টার করতে হয়েছে। কয়েকদিন পরই ঠিক হয়ে গিয়েছি। এখনো ভয় করে। প্রতিদিনই ভয় করে বাসে উঠতে। তার পর ও উঠতে হয়। মৃত্যু ভয় নিয়ে প্রতিদিনই বাসে উঠি।
ভাগ্য ভালো যে ঢাকার ভিতর কেউ ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে পারে না জ্যামের জন্য। তারপরও যখন জ্যাম ছাড়ে তখন সবার মধ্যে যে প্রতিযোগতিতা সৃষ্টি হয় তা মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। তখন চিন্তা করি কখন ঠিক মত সুস্থ মত গন্ত্যব্যে পৌছব। এভাবেই চলে যায় দিন।
নাহ ভুল বলছি। এভাবে দিন যায় না। আরো ভয়ঙ্কর ভয়ের মধ্য দিয়ে দিন যায়। দুই একটা বলি।
আজ এ দলের সমাবেশ তো কাল ঐ দলের মিছিল। পরশু হরাতাল ইত্যাদি। আমি সাধারন মানুষ। পত্রিকা পড়ে এত কিছুর খবর রাখতে পারি না। পড়ার ধৈর্য্য কম বলে। তাই পথে বের হলেই একটা দুইটা মিছিলের সামনে পড়ে যাই। এক পক্ষের মিছিল অন্য পক্ষ কোন দিন ও পছন্দ করতে পারে না। মিছিল বানছালের জন্য চেষ্টা করে। হয় মারামারি। তখন ভয় করে। ভয় করে কখন কোন পক্ষের লোক আমাকে মেরে দেয়। ভয় একটু বেশিই পাই। নিজের ছোট্ট এ জীবনকে কেন জানি হারাতে চাই না। যে কয় দিন বেঁচে থাকি, সুন্দর ভাবে কোনরুপ ঝামেলা ছাড়াই কেটে দিতে চাই।
ভার্সিটিতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই আগুন নেভানোর স্প্রে গুলো নেড়ে ছেড়ে দেখি। সত্যি কি কাজে লাগবে যখন আগুন লাগবে? একদিন ভয়ে ভয়ে হাতলে চাপ দিয়ে ফেলছি। প্রচন্ড শব্দ করে গ্যাস বের হলো। ভয় ফেলেও মনে মনে প্রশান্তি লাভ করলাম এ বলে যে অন্তত ঠিক আছে। আগুন লাগলে আগুন নেভাবো যাবে। তারপরও ভয় করে। চারদিকে যেভাবে বিভিন্ন বিল্ডিং এ আগুন লাগে, অনেক মানুষ ঝলসে যায় কাবাবের মত, তাদের ঐখানেও তো মনে হয় আগুন নেভানোর স্প্রে ছিল। তারা তো তা ব্যবহা করতে পারে নি ঠিক মত, আমি কিভাবে পারব। ভয়ে ভয়ে থাকি সব সময়।
আবার চিন্তা করি কখন পুরো বিল্ডিং টাই ভেঙ্গে পড়ে। কোন বড় বিল্ডিং দেখলেই ভয় লাগে। ভেঙ্গে পড়ে কিনা। চারদিকে এত সব ধ্বসে পড়ছে যে ভয় করাটাই স্বাভাবিক। আর ভয় না করাটা হচ্ছে অস্বাভাবিক।
কোন এক গল্পে পড়ছি, কোন একটা অপরাধ সংঘঠিত হলে তার সাজা কাউকে না কাউকে পেতে হয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। দেখি সে অপরাধ করে যে কয়েক দিন গাঁ ঢাকা দিয়ে থেকে পরে আবার ঠিকই কলার নাচিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক বইতে পড়ছি এক অপরাধ করলে পুলিশদেরকে ভালো একটা পকেট মানি দিলে নাকি একজনের অপরাধ অন্যের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া যায়। তখন থেকে ভয় আরো বেড়ে গেছে। রাস্তায় মারা গেলে তারপর ও সবাই ভালো বলেই যানবে। কিন্তু আরেক জনের অপারধ নিজের উপর যদি এশে পড়ে, তখন কি হবে?
আর রাজনৈতিক কারনে হরতাল তো আছেই। এমন এক দেশে বাস করি যেখানে সরকারী দল ও হরতাল দেয়। আজীব। আর হরতাল মানেই ধংশ। মৃতু। লাশ। হরতালের দিন ভুলেও বের হই না। কিন্তু হরতালের তান্ডব শুরু হয় একদিন আগে থেকেই। আগেরদিন যেসব দেখি তা গায়ের লোম খাড়া হবার জোগাড়। হরতালের দিনের কথা তো বাদ দিলাম। এত কিছুর পর ও একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে ইচ্ছে করে। কারন আমি এখনো বেঁচে আছি।
বাস্তব ধর্মী লেখা। ছেলে টার স্বভাব অনেকটা আমার মত…