ইসলামে পুরুষের দ্বায়িত্ব, নারীর অধিকার

আমি যতটুকু জেনেছি, সে প্রেক্ষিতে বলতে পারি ইসলামে পুরুষের দ্বায়িত্ব বেশি, নারীর অধিকার বেশি। এরপরও নারী রিলেটেড ইসলামিক কোন কিছু শেয়ার করলে আমরা সহজেই ট্রিগার্ড হই। আমরা ভাবি পুরুষেরা শুধু হয়তো মেয়েদের বিষয় গুলোই শেয়ার করে, পুরুষদের গুলো কম শেয়ার করে। আসলে ব্যপারটা এমন না। ব্যাপরটা হচ্ছে আমরা কোন বিষয়তে ফোকাস করি।

নারীবাদীরা এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বলে যেখানে তারা ভাবে মেয়েদের ছোট করা হয়েছে। আমরা যেহেতু এসব পোস্ট পড়ি, আমরা ভাবি সত্যিই তো, ইসলাম এত খারাপ! নারীদের জন্য এত বিধিনিষেধ অথচ পুরুষদের জন্য কোন বিধিনিষেধ নেই। যারা লিখে এবং যারা পড়ে, দুই পক্ষের এক পক্ষও সত্যিকার অর্থে ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না। ভুল ভাবে ইসলামকে জেনে ইসলামকে ছোট করে।

পুরুষেরা এ ক্ষেত্রে যেহেতু কোন পোস্ট দেয় না, তাই আমরা ধরে নেই ইসলামে হয়তো পুরুষদের পূর্ঙ্গান স্বাধীনতা। এখন যদি পুরুষবাদী বলতে কিছু থাকত, তাহলে তারা লিখত কেন বিয়ে করলে মোহরানা দিতে হবে, কেন মেয়েদের ভরণ পোষণের দ্বায়িত নিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনটা তারা যেহেতু লেখে না, আমাদের ফোকাস থাকে নারীবাদীদের লেখা গুলোর প্রতি। অবচেতন মনে ভাবতে থাকি, আহারে, ইসলাম মেয়েদের কত কিছু থেকেই বঞ্চিত করে রেখেছে। নারীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

আবার আমাদের মাথায় যেহেতু একটা বিষয় সেট হয়ে গিয়েছে যে পুরুষেরা নারীদের সব কিছু থেকে বঞ্চিত করে, তাই নারীদের নিয়ে কোন লেখা পড়লেই সহজে আমাদের চোখে পড়ে। পুরুষদের নিয়ে লেখা গুলো পড়লেও ঐ ভাবে আমরা ট্রিগার্ড হই না, কারণ সত্যিকার অর্থে ঐ সব নিয়ে ভাবি না। কখনো কি নিজেকে তখন প্রশ্ন করেছি পুরুষদের কেন এমন করতে হবে, সম অধিকার হলে তো মেয়েদেরও তো সেইম কাজ করা উচিত। প্রশ্ন করি না। কারণ আমরা এমন কোন লেখা পড়ি না, পুরুষেরা সাধারণত এমন কমপ্লেইন করে না।

সম অধিকারের নামে নারীবাদীরা সর্বদা এমন সব বিষয় শেয়ার করে যেগুলোতে ইসলাম নারীদের সম অধিকার দেয়নি। আল্লাহ তায়লা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, উনিই জানেন আমাদের জন্য কোনটা ভাল কোনটা খারাপ। গাইডলাইন ঠিক ঐ ভাবেই দিয়েছেন। নারীকে আল্লাহ তায়লা পুরুষদের মত করে তৈরি করেন নি যে পুরুষের মত সব কিছু করতে হবে। আবার নারীদের এমন সব বিষয়ে সক্ষমতা দিয়েছেন যেগুলো পুরুষেরা সারা জীবন চেষ্টা করলেও পারবে না। ইসলাম নারীদেরকে সম অধিকার না দিয়ে ছেলেদের থেকে বেশি অধিকার দিয়েছে। আপনাদের প্রিয় প্রথম আলো থেকে একটা লেখা শেয়ার করলামঃ

# নারীর শিক্ষা
পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন-ইবনে মাজাহ শরিফ)।

# মা হিসেবে নারীর সম্মান
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’।।

# কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’

# বোন হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।

# স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।

# নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ব্যক্তিত্বের প্রমাণ
রাসুলের একটি হাদিসে এসেছে, নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবী করিম (সা.)-এর জীবনে লক্ষণীয় ছিল—এক. নামাজের প্রতি অনুরাগ; দুই. ফুলের প্রতি ভালোবাসা; তিন. নারীর প্রতি সম্মান। (বুখারি ও মুসলিম)।

এখন দেখেন, সাধারণত ইসলামি পরিবার গুলোতে বৃদ্ধা মা বাবারা ভালো থাকে। পুরুষবাদীরা তো বলতে পারে, “ বাবা মায়ের দরকারেই আমার জন্ম হয়েছে। আমি তো বলিনি আমাকে জন্ম দিতে। এখন বুড়া বয়সে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করতে পারব না।” নারীবাদীরা যে সব অভিযোগ তোলে, তার সাথে এটা মিলালে তাদের অভিযোগ গুলো এর রকমই শুনাবে। একই ভাবে পুরুষবাদীরা বলতে পারে কেন আমরা স্ত্রীর সব ভরণ পোষণের দ্বায়িত নিব, কেন বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পর বোনের জন্য কিছু করব ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা এসব বলতে শুনেন না। শুনেন না বলেই নারীবাদীদের অভিযোগ গুলো বড় করে দেখেন। অথচ ইসলামে নারীর অধিকার কতটুকু দিয়েছে, জানার চেষ্টাও করি না।

ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ। আল্লাহর যে হুকুম করেছেন, তা পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। আল্লাহ তায়লা আমাদের দুর্বল করে তৈরি করেছেন। আমাদের দ্বারা সব গুলো হুকুম হয়তো পরিপূর্ণ ভাবে পালন করা সম্ভব না। সম্ভব না হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব। কিন্তু কমপ্লেইন করব না। কমপ্লেইন করলে ঈমান থাকবে না 🙂

Leave a Reply