প্রীতির সাথে আমার অ্যারেঞ্জ বিয়ে হয়েছে। প্রীতির বয়সের সাথে আমার বয়সের ব্যবধান একটু বেশি। ৫ বছর। যদিও বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে এটাই স্বাভাবিক। বিয়ের সব ঠিক মতই সম্পন্ন হলো। প্রীতিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছি।
প্রীতি আমার সাথে ঠিক মত কথা বলত না। খাওয়া দাওয়াও ঠিক মত করত না। এর আগে তো বিয়ের অভিজ্ঞতা নেই। তাই এগুলোই স্বাভাবিক ধরে নিলাম। এর পর একদিন প্রীতি থেকে জানতে পারলাম প্রীতি একটি ছেলে পছন্দ করত। তার বাবা ছেলেটির সাথে তার বিয়ে দেয় নি। কারণ ছেলেটির কোন জব ছিল না। বুঝতে পারলাম, ঐ ছেলেটির সাথে আমার একটিই পার্থক্য। একটি জব। যদি সে জব করত, প্রীতির বাবা প্রীতিকে ঐ ছেলেটির সাথেই বিয়ে দিত। তারা হয়তো ভালো থাকত।
একদিন প্রীতি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে সাজতে লাগল। অন্য রুমে বসে আমি কিছুক্ষণ পত্রিকা পড়ি আর কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে দেখি। আমার ইচ্ছে করে তার পাশে গিয়ে বসি। এখান থেকে দেখি সে কপালের টিপটি ঠিক মত দিতে পারছে না। একবার দেয়, আবার খোলে। হয়তো একদম কপালের মাঝখানে হয় না, তাই। এক সময় লাগেজটি নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোথাও যাচ্ছো? কোন উত্তর দেয় নি। এতদিনে প্রীতির সব কিছুই আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেলো। একটি রিক্সা ডেকে সে রিক্সায় উঠলো। বারান্দা থেকে দেখে ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করে নি। তাই গাড়িটি বের করে আস্তে আস্তে তার পিছু নিলাম।
ভাবলাম সে হয়তো তাদের বাড়িতে যাবে। না, সে গিয়ে উঠলো রেল স্টেশনে। আমি গাড়িটি পার্ক করে দূর থেকে বসে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর পর মোবাইলটি বের করে কাকে যেন ফোন দেয়, আবার রেখে দেয়। আবার ফোন দেয়, আবার রেখে দেয়। একটি ট্রেন আসে, কিছুক্ষণ দাঁড়ায়, যাত্রী নামে, নতুন যাত্রী উঠে, আবার চলে যায়। এভাবে অনেকক্ষণ হয়ে গেলো। প্রীতি ঐ ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। আর আমিই ও দুরে বসে রইলাম।
আমার বুঝতে বাকি রইলো না কেন সে এখানে এসেছে। আরো অনেকক্ষণ পরেও যখন ঐ ছেলেটি আসলো না, তখন প্রীতি হাত থেকে ফোনটি রেল লাইনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আমি বুঝতে পারলাম যে কোন সময়ই প্রীতি কান্না করে দিবে। আমি দ্রুত এগিয়ে গেলাম। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেটি আসে নি?
অন্য সব প্রশ্নের মতই এ প্রশ্নটিও এড়িয়ে গেলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। যা ভেবেছি তাই। আচ্ছা, মানুষ গুলো তাকেই ভালোবাসে, যে ভালোবাসা বুঝে না? হয়তো। ভাবতে লাগলাম, হয়তো ঐ ছেলেটির সাথে আমার আরেকটি পার্থক্য রয়েছে। যা ছেলেটি পেয়েছিল, তা হারিয়েছে। আর আমি যা পেয়েছি, তাই আঁকড়ে ধরেছি…