কোন না কোন কারণে অমুসলিমদের প্রতি আমাদের অনেকের অনেক ক্ষোভ কাজ করে। জিনিসটার উৎপত্তি কোথায় থেকে জানা নেই। ঠিক একই ভাবে ইন্ডিয়াতে মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদেরও অনেক ক্ষোভ কাজ করে। ইন্ডিয়ায় যেহেতু মুসলমানরা প্রায় সময় নির্যাতনের শিকার হয়, দেশের কতিপয় মুসলিম মনে করে তাদেরও হিন্দুদের প্রতি নির্যাতন করার অধিকার রয়েছে!
ভাবছেন হাতে গোনা কয়েক জনের এমন চিন্তা? আমার কাছে মনে হয় না। অনেক বড় অংশের মনেই এমন চিন্তা। যারা হয়তো কোন দিন সত্যিকারের ইসলাম কি জানার চেষ্টা করেনি। আমাকে একটা আয়াত বা সহীহ হাদিস দেখাতে পারবেন যেখানে বলা হয়েছে অমুসলিমদের সাথে খারাপ আচরণ করতে? বা তাদেরকে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে? অথচ উল্টোটাই রয়েছে। অমুসলিমদের সাথেও ভালো ব্যবহার করার আদেশ রয়েছে।
অন্য দেশের মধ্যে মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হয়, তাই বলে আমাদের দেশের অমুসলিমদের আমরা নির্যাতন করতে পারি না। ইসলাম তো আমাদের এভাবে শেখায় না। বরং তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে শেখায়।
আমরা যেমন শুকরের মাংস খেতে চাইবো না, হিন্দুরাও গরুর মাংস খেতে চাইবে না। আমাদেরটা ঘৃণা, তাদেরটা ভক্তি। কেউ আমার সামনে শুকরের মাংস খেলে আমার খারাপ লাগবে। গাঁ গুলিয়ে আসবে। আমি জানি না কোন হিন্দুর সামনে গরুর মাংস খেলে তার কেমন লাগবে, নিশ্চিত খারাপ লাগবে। কারণ তারা গরুকে অনেক বেশি ভক্তি করে। অনেক সন্মান করে। ভালোবাসে।
যদিও আমরা অনেক মুসলমান হালাল হারাম বেছে চলি না। ঠিক একই ভাবে অনেক হিন্দুও এগুলো বেছে চলে না। ঐটা অন্য হিসেব। একজনও যদি বেছে চলে, আমদের উচিত তাকে ঐ সন্মানটুকু দেওয়া।
যে রান্না ঘরে শুকরের মাংস রান্না হবে, সুযোগ থাকলে আমরা তো তা এডিয়ে যাবো তাই না? একবেলা না খেয়ে হলেও চেষ্টা করব তেমন কোন রেস্টুরেন্টে না খেতে। আমার ধারণা হিন্দুদেরও সেইম ফিলিংস। যেখানে গরু রান্না হবে, সেখানে তাদের খেতে খারাপ লাগার কথা। তারা যে জিনিসটা ভক্তি করে, সেই জিনিসটা তাদের সামনে অন্য কেউ চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে, খারাপ লাগার কথা। অন্তত আমার মানবিকতাবোধ তাই বলে। এছাড়া একই রান্না ঘরে রান্না হলে অল্প পরিমাণ হলেও মিক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দেখেন, আমরা চাইবো না আমাদের খাবারের সাথে সামান্য পরিমাণও শুকরের মাংসের ঝোল যুক্ত হয়ে যাক, হিন্দুরাও তো ঠিক তেমন চাইতে পারে, নাকি?
সুপ্রিম কোর্টের ক্যান্টিনে আগে থেকে সম্ভবত গরুর মাংস রান্না করা হতো না। কারো বিস্তারিত জানা থাকলে জানাতে পারেন। তো গত মাসের ২৯ তারিখে সম্ভবত ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্না হয়। পরের দিনও রান্না হয়। পরে কয়েক জন হিন্দু আইনজীবী তার প্রতিবাদ সরূপ আইনজীবী সমিতিতে একটা এপ্লিকেশন লেখে। এবার একজন মুসলিম আইনিজীবি ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্না করা ও বিক্রির নির্দেশ চেয়ে এপ্লিকেশন করেছে। একটা পেইজ তাকে বাহ বাহ দিয়ে শেয়ার করার কারণে আমার চোখে পড়ল।
কমেন্ট সাধারণত করি না পেইজ গুলতে। এরপরও কেন জানি চিন্তা করলাম করা উচিত। লিখলাম “শুধু নিজের কথা ভাবলে হবে না। গরুর মাংস নিজের বাসায় খেতে পারে। প্রতি বেলায় গরুর মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা হিন্দু, তাদের কথা ভাবা উচিত। একই রান্না ঘরে রান্না করলে আসলে মিক্স হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেলফিস পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।” বাকিটা ইতিহাস!
পেইজে এতগুলো মানুষ, একটা মানুষের মধ্যে এই মানবিকতাবোধ টুকু জাগ্রত হয় নাই যে যেখানে ভিন্ন ধর্মের মানুষ এক সাথে কাজ করে, সেখানের ক্যান্টিনে সবার কথা চিন্তা করেই খাবার তৈরি এবং পরিবেশনা করা দরকার। ইসলামে কি বলে, তা পরের ব্যাপার। এটা তো সিম্পল মানবতাবোধ, সকর্মীদের প্রতি নিজের দ্বায়িত্ব। আমরা ক্যান্টিনে খাবো, তারা কি করবে? পরিবারে আমরা কি শিখি? ইসলাম আমাদের কি শেখায়? অথচ ঐ পেইজের সবাই মুসলিম। আমার কমেন্টে গালি দিয়ে রিপ্লাই দিতে একটুও ভাবেনি! ইসলাম থেকে এসব শিখি আমরা?
অনেকেই বলবেন যে তারা গুরু ছাড়া অন্য আইটেম গুলো দিয়ে খেলেই তো হয়। এটা কোন ভাবেই লজিক্যাল হতে পারে না। আগেই বলছি, একই রান্না ঘরে রান্না হলে মিক্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে। যদি বলেন মিক্স হবে না, তাহলে শুধু তা তর্ক করার খাতিরেই বলবেন।
যাই হোক, ইসলাম কি বলে এবার একটু জানা যাক।
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” আল-মুমতাহিনা-৮।
অমুসলিমদের সাথে আমাদের ব্যবহার কেমন হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে। অন্য একজন সাধারণ মুসলমানের সাথে যেমন আচরণ করবেন, একজন অমুসলিমদের সাথেও ঠিক একই আচরণ করবেন। তাদের বাসায় খেতে যেতে পারবেন, তাদের আপনার বাসায় দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারবেন। শুধু মাত্র একটা বিষয় নিষেধ করা হয়েছে, তা হচ্ছে ক্লোজ বন্ধু হিসেবে তাদের গ্রহণ না করতে। কিন্তু সব মুসলমানকে আমরা ক্লোজ বন্ধু হিসেবে নেই? নেই না। তা নেওয়ার দরকারও পড়ে না। আর ক্লোজ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করার কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের বন্ধুর দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত, তাই। কিন্তু দেখেন, তাদের প্রতি অন্য কোন বৈষম্য করতে বলা হয় নাই। ক্লোজ বন্ধু ছাড়া সাধারণ যত সম্পর্ক রয়েছে, সবই একজন অমুসলিমের সাথে আপনি করতে পারবেন।
এই যে, দেখেন। যে বুদ্ধিজীবীরা ফেসবুকে এসে গালি দিয়ে ইসলাম কায়েম করে, তারাই আবার অমুসলিমদের পূজা বা এমন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। যেগুলো সাপোর্ট করলে তার ঈমানই থাকার কথা না। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুক। অমুসলিমদের সাধারণ দাওয়াতে আমরা অংশ গ্রহণ করতে পারব, সেখানে কোন বাধ্যবাদকরা নেই। কিন্তু তাদের পূজা বা এমন কিছুতে আমরা অংশ নিতে পারব না। কিন্তু তাই করি। অমুসলিমদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, আমরা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি। এটা কোন ধরনের ইসলাম আমরা পালন করি? আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুক।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক গুলো পজিশনে হিন্দু ধর্মের ইমপ্লয়ি রয়েছে। অনেকের মনে দুঃখ। হয়তো দুই একটা ক্ষেত্রে বায়াসড হতে পারে। কিন্তু বেশির ক্ষেত্রেই তারা তাদের যোগ্যতা দিয়ে নির্দিষ্ট পজিশনে চাকরি পেয়েছে। সমবয়সী একজন হিন্দু কতটুকু পরিশ্রম করে, আপনি কতটুকু করেন একটু কম্পেয়ার করলেই বুঝতে পারবেন যে সে আপনার থেকে বেশি যোগ্য। যখন আপনি অলসতা করে শরীরে চর্বি জমাচ্ছে আর ফেসবুকে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন, তখন তারা নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে সময় দিচ্ছে। ভাবছেন চাকরিদাতা আপনাকে চাকরি দিবে? কোন যোগ্যতায়, মেজরিটি ধর্মের লোক বলে?
আমরা অমুসলিমদের প্রতি যে ঘৃণা রাখি অন্তরে, তা ইসলাম কোন ভাবেই সাপোর্ট করে না। কোন ভাবেই না। এই যে বিভিন্ন পেইজ গুলো, এমনকি অনেক হুজুর যে ভাবে ঘৃণা ছড়ায় আমাদের অন্তরে, তার জন্য নিশ্চিত আল্লাহর শাস্তি পেতে হবে। আর আল্লাহর পাকড়াও অনেক কঠিন। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দিক। সত্যিকারের ইসলাম জানার তাওফিক দিক।
আসসালামু আলাইকুম! ভাইয়া ইসলামে “আল ওয়ালা ওয়াল বারা” নামে একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক আছে। ইভেন তাওহীদের আলোচনার সাথে এটার আলোচনা করা হয়! আপনি তো মাশা আল্লাহ ভালোই পড়ালেখা করেন। সময় করে এই টপিকটাও পড়ে দেখিয়েন ইনশা আল্লাহ। জাঝাকাল্লাহু খয়রান ভাইয়া!
ইনশাহ আল্লাহ।
Inshalla