স্রোতের বিপরীতে চলা

ট্রেন্ড এর বাহিরে চিন্তা খুব কমই করি। যাকে বলে আউট অফ বক্স চিন্তা। বক্স নিয়ে একটা গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটি আরেক দিন বলব। আজ বলি আমাদের কমিউনিটির বৃত্ত নিয়ে।

এক সময় অনলাইনে ডেটা এন্ট্রি করেই স্মার্ট একটা পেমেন্ট পাওয়া যেতো। এক সময় আস্তে আস্তে সবাই কিভাবে ডেটা এন্ট্রির কাজ গুলো করতে হয় তা শিখে গেলো। যেহেতু এটা খুব সহজ, সেহেতু সবাই একটু চেষ্টার ফলেই শিখতে পারল। পরে ডেটা এন্ট্রির কাজ গুলোর পেমেন্ট কমে গেলো। এমনকি দিন এনে দিন খায় যারা, তাদের একদিনের সেলারি থেকে ডেটা এন্ট্রি যারা করে, তাদের সেলারি কম।

এক সময় শুধু HTML আর CSS দিয়েই দারুণ সব ওয়েব সাইট তৈরি করা হত। আর HTML এবং CSS দিয়ে ওয়েব সাইট তৈরি করেই কোটিপতি বনে গেছে অনেকে। যেহেতু এইচটিএমএল সিএসএস দিয়ে দারুণ কিছু করা যায়, অনেকেই এগুলো জানা শুরু করল। পরে যারা শুরু করল, তারা তেমন একটা ভালো করতে পারল না। কারণ এখন আর শুধু এইচটিএমএল আর সিএসএস দিয়ে কাজ হয় না। আরো কত কিছুই জানা লাগে। JS, Less, SASS, Bootstrap, Foundation সহ কত শত কিছু।

ওয়েব সাইটের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে টেমপ্লেটিং জনপ্রিয় হতে লাগল। যারা প্রথম দিকে টেম্পলেট তৈরি করল, তারা মিলিওনিয়ার বনে যেতে লাগল। আর তাদের মিলিওনিয়ার হওয়ার গল্প চারদিকে ছড়াতে লাগল। ট্রেন্ড হয়ে গেলো টেম্পলেট তৈরির। সবাই তা শুরু করল। কিন্তু যারা ভালো করার, তারা ইতিমধ্যে ভালো একটা পজিশনে রয়েছে। নতুন যারা আছে, তারা পুরাতনদের মত কোয়ালিটি প্রোডাক্ট তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ কত রঙ্গিন গল্পই না পড়ল তারা।

স্মার্ট মোবাইল জনপ্রিয় হওয়ার পর অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শুরু করে রাতারতি মিলিওনিয়ার বনে গিয়েছে, এমন অনেক গল্প জানছে সবাই। তাই অনেকেই অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছে। যখন তারা অ্যাপ তৈরি শুরু করবে, তখন ইতি মধ্যে কোয়ালিটি অ্যাপ হয়তো মার্কেটে থাকবে। নতুন যারা, তারা এসে দেখবে গল্পে যেমন শুনেছে, বাস্তবতা ভিন্ন।

এখন যদি কাউকে জিজ্ঞেস করি প্রোগ্রামিং শিখে কি করবে? তাহলে যদি তার ওয়েবে আগ্রহ থাকে, তাহলে বলবে থিম তৈরি করব। থিম ফরেস্টের জন্য। আর না হয় এন্ড্রয়েড ডেভেলপার হব বা এমন কিছু। মার্কেটিং এ আগ্রহ থাকলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হবে। এমন অনেক কিছু। ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে।

ট্রেন্ড এর বাহিরে অনেক কিছু আছে। ভবিষ্যৎ এ কি আসছে, তার চিন্তা করছে না। ভবিষ্যৎ এর চিন্তাই করছে না। সামনে কি এটা ভালো হবে নাকি খারাপ হবে, সে চিন্তা না করেই সবাই যা করছে, তাই করার চেষ্টা করছে। হুজুগ বলি যাকে।

যারা প্রোগ্রামিং করি, তাদের জন্য ট্রেন্ড এর বাহিরে অনেক কিছু করার আছে। অনেক অনেক অনেক কিছু। শুধু চোখ কান খোলা রাখতে হবে। নতুন নতুন কি তৈরি হচ্ছে, কোন প্লাটফরম তৈরি হচ্ছে এসব জেনে নতুন প্লাটফরম নিয়ে কাজ করলে হয়তো এখন কিছু করা যাবে না, কিন্তু ভবিষ্যৎ এ দারুণ কিছু করা সম্ভব হবে। দারুণ কিছু। সবাই যে দিকে যাচ্ছে, সে দিকে না গিয়ে মাঝে মাঝে বিপরীত দিকেও যেতে হয়। গিয়ে দেখতে হয়। তা হয়তো রিস্ক। আর রিস্ক থেকেই দারুণ কিছু হয়। একটা প্রিয় উক্তি দিয়ে লেখাটি শেষ করিঃ

“Risks must be taken, because the greatest hazard in life is to risk nothing. The person who risks nothing, does nothing, has nothing, is nothing, and becomes nothing. He may avoid suffering and sorrow, but he simply cannot
learn, feel, change, grow or love. Chained by his certitude, he is a slave; he has forfeited his freedom.
Only the person who risks is truly free.” – Leo Buscaglia

2 thoughts on “স্রোতের বিপরীতে চলা”

  1. সত্যি আমারা ভবিষ্যৎ এর চেয়ে বর্তমানকেই বেশী প্রাধন্ন দেই 🙁

    Reply
  2. ট্রেন্ডের বাইরে গিয়ে কিছু করব বলে কোন কিছু না করেই বসে থাকা আমি 😑

    Reply

Leave a Reply