আমরা মূলত বের হয়েছি শিমুল বাগান দেখার জন্য। বাইক নিয়ে। প্রায় ১৪ জন। শিমুল বাগান দেখে বাকিরা ঢাকায় ফিরেছে। আমি আর জাহাঙ্গীর ভাই রওনা দিলাম সিলেটের দিকে। তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট। পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যায়। আমাদের দুপুরের খাবার তখনো খাওয়া হয়নি। সিলেটে উনদাল রেস্টুরেন্টের খাবার আমার ভালো লাগে। এর আগেও যতবার গিয়েছি, ততবারই ঐখানে খেয়েছি। তাই চলে গেলাম উনদালে। খাওয়া দাওয়া করে বের হলাম।
অন্য আরেকটা বাইকার গ্রুপও শিমুল বাগানে গেলো। তারা ঘুরে ফিরল সিলেটে। ওরা কেক কাটল সফল ট্যুর হিসেবে। আমাদের দাওয়াত দিল। কেক খেলাম, চাওমিন খেলাম এভাবে করতে করতে প্রায় ১০টা বেজে গেলো। আমরা তখনো কোন হোটেল ঠিক করিনি। রাতে তো ঘুমাতে হবে। হোটেল যেটাই যাই, বলে রুম নেই। একটানা বন্ধের কারণে সবাই ঘুরতে বের হয়েছে। আর ঘুরাঘুরির জন্য সিলেট প্রচুর জায়গা রয়েছে। আমরা সিলেট শহরে কয়েকটা হোটেলে রুম না পেয়ে রওনা দিলাম শাহ পরাণ রহঃ এর দিকে। পথেই একটা হোটেল দেখে গিয়ে জিজ্ঞেস করি রুম আছে কিনা। জানালো হবে। টায়ার্ড থাকায় রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রওনা দেই লালাখালের দিকে। পথে এক জায়গায় থেমে নাস্তা করে নেই। লালাখালের দিকেও রিসোর্ট আছে। রাতে এদিকে এসেও থাকা যেতো হয়তো। লালাখালের পানি অনেক স্বচ্চ। নীল। ঐখানে গিয়ে নৌকায় করে জিরো পয়েন্টের দিকে গেলাম। পানি কম যদিও। তারপও ভালো লাগল। ঘুরে ফিরলাম। শুক্রবার। লালাখালের এখানেই একটা মসজিদ ছিল। ঐখানে গিয়ে জুমার নামাজ পড়ে নিলাম। এরপর রওনা দিলাম শ্রীমঙ্গলের দিকে।
লালাখাল যেতে একটা স্টিলের ব্রিজ পড়ে। মূলত সিলেট থেকে তামাবিল যেতে সারি নদীর উপর। ঐ ব্রিজ থেকে নদীর পাড় অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল। দেখলাম বাইক নিয়ে চেষ্টা করলে নেমে যাওয়া যাবে। নেমেও গেলাম। উপর থেকে যত সুন্দর, নদীর পাড় থেকে তত সুন্দর লাগল না। মছিবতে পড়লাম যখন বাইক নিয়ে উপরের দিকে উঠার চেষ্টা করলাম। সবই বালি। আর বাইকে এক্সিলারেশন দিলেই চাকা বালিতে ঢুকে যায়। কি বিপদ। পরে ঐখানের এক লোকের সাহায্য নিয়ে বাইক নিয়ে উঠলাম।
শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পথে পড়ে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা। ভাবলাম একটু ঘুরে যাই। কারখানার ঐখানে গেলে জানায় ছুটির দিন। আমরা ঢুকতে পারব না। বাহির থেকে দেখেই চলে আসলাম। বিশাল এরিয়া জুড়ে কারখানাটি। শ্রীমঙ্গল যেতে পড়ল মৌলভী বাজার। পৌরসবার ঐখানে দেখলাম অনেক চটপটি ফুচকার দোকান। আমরা নেমে চা খেয়ে নিলাম। এরপর আবার রওনা দিলাম।
শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। শহরে অনেক হোটেল থাকা সত্ত্বেও চিন্তা করলাম কোন রিসোর্টে থাকি। চলে গেলাম রিসোর্ট খুঁজতে। কোন রিসোর্টেই রুম নেই। বাধ্য হয়ে শহরে ফিরতে হলো। শহরে ফেরার পথে গ্র্যান্ড সুলতানে ঢুকতে গেলাম। দারোয়ান জিজ্ঞেস করল কিভাবে সাহায্য করতে পারি। বললাম থাকার জন্য। জিজ্ঞেস করল বুকিং আছে কিনা। আমরা বললাম অন স্পট বুকিং নেই? বলল ২৬ তারিখ পর্যন্ত সব বুকড। ঢুকতেই দিলো না। রওনা দিলাম শহরের দিকে। পথেই পড়ল সীমান্ত কাবাব। ঐখানে বসে কাবাব আর নান খেয়ে নিলাম।
শহরে এসে আরেক সুলতান হোটেলে উঠলাম। এটা গ্রান্ড সুলতান না হলেও সুলতান তো! এখানে একটা রুম নিয়ে উঠে পড়লাম। এটিও খারাপ না। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ১০টার দিকে রাতের খাবার খেতে নামলাম। হোটেলের রেস্টুরেন্টেই অর্ডার দিলাম। রুপচান্দা মাছের ঝাল ফ্রাই, টমেটো ভর্তা, ডাল। অর্ডার দিয়ে শহরে একটু হাটতে বের হলাম। ১০টার মধ্যেই সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যায় অনেক কোলাহল থাকলেও রাতে কেমন নিরিবিলি। ফিরলাম রেস্টুরেন্টে। খেয়ে দেয়ে এরপর রুমে গিয়ে ঘুম।
ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নিলাম। হোটেলের ফ্রি নাস্তা। খেয়ে রওনা দিলাম মাধবপুর লেকের দিকে। পথে পড়ল চা যাদুঘর। এটা গ্র্যান্ড সুলতান এর একটু আগে। টিকেট কেটে ঢুকলাম। যেখানে মূলত আগে চা বাগানে কি কি যন্ত্র পাতি ব্যবহার হতো, তার সংগ্রহ ছিল। এছাড়া ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত টেবিল। যা উনি চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ব্যবহার করেছিলেন। মাধপুর লেকের দিকে যাওয়ার পথে প্রচুর চা বাগান চোখে পড়বে। দুই পাশেই সুন্দর চা বাগান।
মাধবপুর লেকটা অনেক বড়। প্রায় তিন কিলোমিটার নাকি। আমরা শুধু এক পাড় দেখেই ফিরে এসেছি। বাইক নিয়ে ঢুকতে দেয় না। বাইক নিয়ে ঢুকতে পারলে পুরোটাই ঘুরে আসা যেতো।
মাধবপুর লেক দেখে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। শ্রীমঙ্গল থেকে মৌলভী বাজারের রাস্তাটা এত সুন্দর। কর্ণারিং করার জন্য দারুণ একটা ট্রেক। ভালো লাগছিল রাইড করতে। পথে পড়ল হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড। পাশেই ছিল রাবার বাগান। ঐ দিকে ঢুকার রাস্তাও ছিল। আমরা ভেতরের দিকে গেলাম। রাবার বাগানে প্রচুর বানর রয়েছে। এপাশ থেকে ঐ পাশ হেটে যেতে দেখলাম। নিজেরা নিজেরা খেলা করতে দেখলাম।
আমরা প্ল্যান করেছিলাম উজান ভাটিতে এসে দুপুরের খাবার খাবো। সবই ঠিক ছিল। একটা বাজারের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বালির উপর দিয়ে যাওয়ার সময় হুট করে ব্রেক করায় পড়ে যাই। পুরা রাস্তায় কত ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর ট্রেক ছিল। কোথাও কিচ্ছু হলো না। বাজারের উপর হালকা স্পিডে পড়লাম। কিছু টেরও পেলাম না। বাইকে স্ক্র্যাচ পড়ে। আমার হাটু একটু ছিঁড়ে যায়। দুই হাতের তালু এবং টাকনুতেও একটু ব্যাথা পাই। ভাগ্য ভালো যে অল্পের উপর দিয়ে যায়। আরো ভয়াবহ কিছু হতে পারত।
উজান ভাটিতে এসে দুপুরের খাবার খাই পরে। এরপর রওনা দেই। যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন আমরা ভৈরব ব্রিজের উপর। ট্রেনের ব্রিজটি তখন অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। এছড়া ভৈরব ব্রিজটিও সুন্দর। আমরা একটু দাঁড়ালাম। পেছনে লোকাল কয়েকটা ছেলে বাইক নিয়ে দাঁড়ালো। দেখলাম পুলিশ এসে ওদের সাথে কথা বলছিল। আমরা বাইকে উঠে দিলাম টান। ব্রিজ পার হয়ে দেখলাম পুলিশ সিগনাল দিচ্ছে থামানোর জন্য। স্লো করার পর আবার বলল চলে যেতে। সামনের দিকে চলতে লাগলাম। ভৈরব থেকে এরপর খুব বেশি সময় লাগেনি ঢাকা পৌঁছাতে। আমরা ৩০০ ফিট দিয়ে ঢুকেছি।
পুরো ট্যুরটাই সুন্দর ছিল। শেষ মুহুর্তে কেমন জানি একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে ঠিক মত বাসায় পৌছাতে পেরেছি।
ঐখানে দেখলাম অনেক চটপটি ফুচকার দোকান। আমরা নেমে চা খেয়ে নিলাম। ☺