- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, প্রথম দিনঃ সৈয়দপুর, রংপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমন, দ্বিতীয় দিনঃ রংপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, তৃতীয় দিনঃ নীলফামারী, তেঁতুলিয়া, বাংলাবান্ধা, পঞ্চগড়
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, চতুর্থ দিনঃ ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, পঞ্চম দিনঃ দিনাজপুর
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমন, ষষ্ঠ দিনঃ দিনাজপুর, বগুড়া
- উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, সপ্তম দিনঃ বগুড়া, রাজশাহী
উত্তরবঙ্গ ঘুরতে বের হয়েছি। রাজশাহী এসেছি বগুড়া থেকে, রাতে ছিলাম হোটেল মিড টাউনে। সকালে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছি রাজশাহী রেল স্টেশন। নাস্তা করেছি প্রথমে আম এবং লিচু দিয়ে। এরপর নিচে গিয়ে আবার পরটা খেয়ে নিলাম। স্টেশনে গিয়েছি ট্রেনের টিকেট কাটতে। যদি আজকে টিকেট পাই, আজ ঢাকা চলে যাবো। এয়ার টিকেট পেলেও চলে যেতাম। কিন্তু আজ শনিবার। রাজশাহী থেকে কোন বিমান ঢাকায় যাবে না। আমার শেষ ডেস্টিনেশন ছিল চাপাই নবাবগঞ্জ। কিন্তু গরম এত বেশি যে, বলার মত না। ট্রেনের টিকেট ও পেলাম না। আগামী কালের টিকেট আছে, পদ্মা এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার হবে। রাতে ধুমেকেতু এক্সপ্রেসে এসি হবে। তো রাতের টিকেটের জন্যই বললাম। দিনে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। তাহলে চারপাশ দেখতে দেখতে যেতে পারতাম। কিন্তু কি আর করা… রাতে যেহেতু সিট আছে, রাতেই চলে যাই। আমাকে কাউন্টার থেকে জিজ্ঞেস করল শীত বাথে সিট হবে। আমি জানি না শীত বাথ কি। ট্রেনে ছড়েছি মাত্র দুই বার। ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম। চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা। ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম এসি টিকেট কিনে নন এসিতে যেতে হয়েছে। পরে যদিও চট্রগ্রাম থেকে এসি চেয়ার কোচে করে যেতে পেরেছি। না জানা সত্ত্বেও কিনে নিলাম। কাল ট্রেনে উঠলেই বুঝতে পারব…
চট্রগ্রাম রেল স্ট্রেশনের কিছু পরই রাজশাহী ইউনিভার্সিটি। রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে গেলাম। যাওয়ার আগেই চোখে পড়ল রুয়েট। বুয়েটে পড়ার ইচ্ছে প্রায় সকল সাইন্সে পড়া ছাত্র ছাত্রীরই থাকে। বুয়েটের পর পছন্দ থাকে চুয়েট বা রুয়েট এমন। রুয়েটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মন একটু কেঁপে উঠছিল। যদিও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। অনেক অনেক শুকরিয়া। রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে এ দিক ঐদিক ঘুরলাম। একা একা। হাতে ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও ছবি তুলতে কেমন লজ্জা লাগছিল। সব ছাত্র ছাত্রী চারদিকে। আমি একা একা। কেমন জড়তা কাজ করছিল। রিক্সায় উঠে বললাম আমাকে ঘুরাতে। এদিক সেদিক ঘুরালো। রিক্সায় থেকে দুই একটা ক্লিক দিলাম ক্যামেরায়।
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ঘুরে গিয়েছি রুয়েটের ক্যাম্পাসে। পাশা পাশি দুইটি ক্যাম্পাস। রিক্সায় করেই ভেতর থেকে ঘুরে এসেছি।
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে রানা নামে একজন নক দিলো। আমার সাথে দেখা করতে চায়। জিজ্ঞেস করল আমি ক্যাম্পাসে কতক্ষণ আছি। ততক্ষণে আমার মোটামুটি এক বার ঘুরা শেষ। আমি অন্য কোথায়ও যাবো। এখনো জানি না কোথায়। তো উনাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় আছেন। উনি আছে শহরের দিকে। এক ঘণ্টার মত লাগবে ক্যাম্পাসে আসতে। আমি উনাকে বললাম আমি তাহলে শহরের দিকে আসি। ট্যুর প্ল্যানে দেখলাম রুয়েটের এ দিক থেকে পুঠিয়া কাছে। আমি শহরের দিকে গেলে আবার রাজশাহী ইউনিভার্সিটির এ দিকে আসতে হবে। তার থেকে পুঠিয়া থেকে ঘুরে আসি। উনাকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলাম যে পরে দেখা করব। উনি ক্যম্পাসেই থাকে। উনাকে বললাম আমি পুঠিয়া থেকে ফেরার পথে আবার রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে নামব।
এস.বি অপু নামেও একজন নক দিল, রুয়েটের। উনাকেও বললাম আমি পুঠিয়া থেকে ফেরার পথে দেখা করব। পুঠিয়ার যাওয়ার জন্য বাসে উঠলাম। প্রায় ৪০ মিনিট পর পুঠিয়ায় নামিয়ে দিল। পুঠিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে পুঠিয়া রাজবাড়ি, পুঠিয়া বড় আহ্নিক মন্দির, পুঠিয়া বড় শিবমন্দির, পুঠিয়া দোলমন্দির, পুঠিয়া গোবিন্দ মন্দির এসব দেখতে। দেখার মত জিনিস। সব ভেঙ্গে চুরে রয়েছে। ছোট বেলায় অনেক এডভেঞ্চার গল্প পড়েছি এসব পুরাতন বাড়ি নিয়ে। সব মনে পড়তে লাগল। এ প্রত্ন সম্পদ গুলো রক্ষা করতে নাকি ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়েছে। প্রত্ন সম্পদ গুলো রক্ষা করার জন্য, পর্যটন স্পট বানানোর জন্য। দেখলাম কাজ ও শুরু হয়েছে।
রাজবাড়ি, গোবিন্দ মন্দির দেখলাম। রাজবাড়িতে তালা দেওয়া। তিনতলা বাড়ি। পরে শুনলাম বললে নাকি তালা খুলে দেখায়। একজন এক জাগায় যেতে বলল, যার কাছে চাবি থাকে। গেলাম। উনি পাঠাল অন্য জাগায়। শিবমন্দিরে পাঠাল, সম্ভবত লিটন নামের একজনের কাছে। শিবমন্দিরে গিয়ে বললাম রাজবাড়ি দেখব। পরে বলল অপেক্ষা করতে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর রাজবাড়ী নিয়ে গেলো। গেটের তালা খুলে দেখালো। আন্তরিকতার সাথে। ভেতরে সব খালি। কিছুই নেই। বড় বড় রুম, ছোট রুম। শুধু এক জাগায় দুই একটা সিন্দুক পড়ে আছে। ঐ গুলোর উপর কাজ করার লোকদের জিনিস পত্র।
রাজবাড়ি থেকে গেলাম আহ্নিক মন্দির। এরপর পাশেই রাজা আমলের জেল। উপরের ছাঁদ ভেঙ্গে রয়েছে। ছাঁদে উঠলাম। এইদিক সে দিক দেখলাম।
রাজবাড়ি থেকে দুই কিলো দূরে রয়েছে রাজার হাওয়া খানা। ঐটা ছিল একটা পুকুরের মাঝখানে। নৌকা দিয়ে রাজা হাওয়াখানায় যেতো। এখন যদিও রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। হাওয়া খানায় গিয়ে দেখি সত্যিই দারুণ হাওয়া। হাওয়া খানায় থেকে ফিরেছি তেমুনি বা এমন একটা জাগায়। যেখান থেকে বাসে করে আবার রাজশাহী ফিরব, মেইন রোডে।
যে অটোতে করে গিয়েছি, তাদের সাথে আগে দাম করে নি নাই। একটা ছেলে আমাদের সাথে ঘুরল। আমাদের বললে আমার সাথে আত্রাই থেকে আসা দুইটা ছেলে ছিল। তারাও দেখতে এসেছে। তো তারাও হাওয়া খানা দেখতে যাবে। আমাদের সাথে একটা ছেলে হাঁটছিল। লোকাল। সম্ভবত সবুজ দাস নাম। সুন্দর ব্যবহার করছিল। সে তার বন্ধুর অটো ডাকছিল আমাদের জন্য। তাতে করেই গেলাম। দুই কিলো যাওয়া, দুই কিলো আসা মোট চার কিলোর জন্য অটো ভাড়া চাইলো আমাদের কাছে ৩০০ টাকা। দাম না করে উঠার শাস্তি। পরে ২০০ টাকা দিয়েছি। যদিও রাজ বাড়ি থেকে হাওয়া খানায় আসা যাওয়ার ১০০ টাকাও বেশি ভাড়া হয়ে যেতো।
সেখান থেকে ফিরছি আবার রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে। এস.বি অপু এবং রানা এর সাথে দেখা করার জন্য। ওরা আমাকে আবার রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখালো। সকালে দেওয়া রাজশাহী ইউনিভার্সিটির চেক ইনে Sharmin Yeasmin আমাকে জিজ্ঞেস করল পশ্চিম পাড়ায় গিয়েছি কিনা। পশ্চিম পাড়ার বিশেষত্ব কি আমি বুঝতে পারি নি । আমি জিজ্ঞেস করলাম রাজশাহী ইউনিভার্সিটির পশ্চিম পাড়া? রিপ্লাই দেয় নি তখনো। আমি রানা কে জিজ্ঞেস করলাম পশ্চিম পাড়া কোথায় এখানে। পরে ও খুলে বলল। পশ্চিম পাড়ায় হচ্ছে মেয়েদের হল। এখানে ছেলেদের হল সব গুলো এক জাগায়, মেয়েদের হল সব গুলো এক জাগায়। এই হচ্ছে পশ্চিম পাড়ার মহত্ব! আবার বড় ভাইরা ছোট ভাইদের নাকি পশ্চিম পাড়া নিয়ে ছোট খাটো র্যাগ ও দেয়… যাই হোক, পশ্চিম পাড়া ঘুরে এসেছি। আমরা গিয়েছি দুপুরে। তাই পশ্চিম পাড়া, পূর্ব পাড়া আমার কাছে সবই সমান ছিল।
ঐদিক থেকে ফিরে গিয়েছি পদ্মার পাড়ে। Abdullah Al Mamun আমাকে কয়েক বার কল দিল, ফেসবুকে মেসেজ দিল। আমি কোথায় আছি, এসব জানার জন্য। অবশেষে তার সাথে দেখা হলো। সে নিয়ে গেলো। আমি দেখলাম আমার হোটেল থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা। আহ! জানলে গত রাতেই একবার ঘুরে যেতে পারতাম।
পদ্মার অনেক গল্প শুনেছি, পড়েছি। কিন্তু গল্প পড়ে যেমন ধারনা করেছি, তেমন না। পানি নেই। মাঝখানে চর দেখা যায়। চরে আবার বালু উড়ে। মরুভূমির মত। তারপর ও ছোট বেলা থেকে শুনে আসা পদ্মা। হাঁটলাম তীর ধরে। অনেক দূর চলে গিয়েছি হাঁটতে হাঁটতে। ঐ দিকে টি বাঁধ নামক জায়গা রয়েছে। সেদিক পর্যন্ত। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে ফিরলাম। ফেরার পথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে একটু ঢু মেরে এসেছি। তারপর সাহেব বাজার এসে চা খেলাম। লেবু চা। কালাই এর রুটি খেলাম। এরপর মানুন এবং অপু চলে গেলো। আমি রুমে ফিরলাম। ফেরার পথে লিচু আর আম কিনে নিলাম।
রুমে এসে মেইল চেক করে ক্লায়েন্টকে মেসেজ দিয়ে আবার বের হয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য পদ্মার পাড়। টি বাঁধ এর ঐ দিকে আড্ডা ক্যাফের সামনে দারুণ হাওয়া বইতে দেখে এসেছি সন্ধ্যায়। সেখানেই গেলাম সরাসরি। আড্ডা ক্যাফেতে গিয়ে একটা স্যান্ডুইস এবং একটা লাচ্চি অর্ডার করে বললাম নদীর পাড়ে দিয়ে যেতে। ক্যাফের সামনেই, তাদেরই চেয়ার আছে বসার জন্য। মন ভরে যাওয়ার মত বাতাস। আহ! অনেকক্ষণ বসে ছিলাম ঐখানে। তারপর রুমে ফিরলাম, দশটার দিকে। অনেক দূর হেঁটে হেঁটে ফিরতে হলো। নদীর পাড়ের ঐদিকে কোন রিক্সা নেই। কি নির্জন। নির্জন রাস্তায় হাঁটতেও ভালো লাগছিল তখন।
রুমে ফিরে আবার ম্যাকবুকের সামনে। সময় কোথায় দিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। সাড়ে এগারোটার দিকে সাইফুল নক দিল। এটা সেটা বলার পর জিজ্ঞেস করল খেয়েছি কিনা। আমার মনে পড়ল খেতে হবে। না হলে রাতে না খেয়ে থাকতে হবে। তারে ধন্যবাদ দিয়ে খেতে বের হয়ে পড়লাম। যদিও রাতে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট লিচু এবং আম রয়েছে।। খালি পেটে খেলে আবার কি হয়, তাই হালকা কিছু খেয়ে আসা।
খেয়ে এসে কিছু কাজ করলাম। তারপর একটা মুভি দেখার চেষ্টা করেছি। ভালো লাগে নি। কিছুক্ষণ পর ঘুম আসল। কিন্তু দুই ঘন্টা পর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আর ঘুম আসে না। রাতে উঠে আম আর লিচু খেলাম। গান শুনতে শুনতে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। সকালে উঠে চাপাই নবাবগঞ্জ যাবো। আম দেখতে। আম বাগান দেখতে।