যেভাবে প্রোগ্রামিং শিখা

একটা কমন প্রশ্ন সবাই জিজ্ঞেস করে। প্রশ্নটি হচ্ছেঃ

প্রোগ্রামিং শিখছেন কিভাবে? বা কোথায় থেকে?

প্রথম হাতে খড়ি শাহরিয়ার মঞ্জুর স্যার থেকে। সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্স পড়ছি। প্রথম সেমিস্টারেই সি প্রোগ্রামিং ছিল। স্যার ক্লাস নিত, অনেক কিছুই মাথার উপর দিয়ে যেতো। সারের লেকচার গুলো যেন বুঝতে পারি, সে জন্য আগে থেকেই বই থেকে পড়ে নিতাম। কিছু কিছু বুঝতাম, কিছু কিছু বুঝতাম না। যে সব কিছু বুঝতাম না, সে গুলো নিয়ে স্যারকে জিজ্ঞেস করতাম।
দেখা যেতো অনেক সহজ বিষয় নিয়েও স্যারকে প্রশ্ন করে বসতাম। তবে আগ্রহ শুরু হয়েছিল আরো আগে, সফটওয়ার ব্যবহ্যার করতাম। সফটওয়ার গুলো কিভাবে তৈরি হয়, এটা মাথায় ঘুরপাক খেতো। মাসুম ভাই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। মাসুম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম। ভাইয়া বলল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ লাগে। সি, সি++ ইত্যাদি দিয়ে।

বাসায় বই দেখে দেখে কোড গুলো রান করিয়ে দেখতাম। প্রথম কোড লেখার সময় ১০ বারের মত ভুল হয়েছে। তার ও বেশি হতে পারে। ভুলে গেছি। একবার কমা দি নাই। একবার বড় কারেক্টার ছোট  করে লিখছি। ব্র্যাকেট দেওয়া হয় নি। ব্র্যকেট শেষ করি নি। আরো কত ভুল। প্রোগ্রামটি ছিল প্রিয় Hello World! কনসোলে দেখানো। ছোট্ট একটা প্রোগ্রামে এত্ত গুলো ভুল! তখন অনেকেই কোন ভুল না করেই প্রথম প্রোগ্রাম রান করাতে পারত, তাদের হিংসা হত। ওদের ভুল হয় নি, আমার ভুল হয়েছে কেনো 🙁
চার মাসের ক্লাস। স্যার দরকারী টপিক্স গুলো পড়িয়েছে। আরো অনেক কিছু পড়া বাকি। এখনো জানি না কিভাবে সফটওয়ার তৈরি করব। আমার প্রচন্ড মন খারাপ। সি প্রোগ্রামিং শিখছি অথচ সফটওয়ার তৈরি করতে পারি না। ফাইনাল এক্সাম দিলাম। বই এর আরো অনেক কিছু পড়ানো বাকী। স্যারকে সি প্রোগ্রামিং পরীক্ষা শেষেই জিজ্ঞেস করলাম। স্যার আমাদের তো আরো অনেক কিছু পড়া বাকি। কি করব? স্যার বলল পরে আস্তে আস্তে শিখবেন। পরে অন্যন্য প্রোগ্রামিং বিষয় গুলোতে আরো শিখতে পারবেন। বিদ্রঃ স্যার সবাইকে আপনি সম্মোধন করেন।

মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। এর পরের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল ৫ সেমিস্টার পর। জাভা প্রোগ্রামিং। আমি পরের সেমিস্টারেই জাভা নিব, সবাইকে বলে বেড়াচ্ছি। কারণ আমাদের ওপেন ক্রেডিট সিস্টেম। কি খুশি আমি। খুশি দেখে সবাই আমাকে “জাভা জাকির” বলে ডাকা শুরু করল।

ওপেন ক্রেডিট সিস্টেম হলেও তা আমাদের জন্য প্রজোয্য ছিল না। আমাদের ব্যাচ থেকে চার কোডের বিষয় কোড শুরু করেছিল। এ জন্য। তাই আর পরের সেমিস্টারে করতে পারি নি। পরে নিজে নিজে অনলাইনে অল্প সল্প ঘাটা ঘাটি শুরু করি। এক বার একটি বিষয় ভালো লাগে। এক বার এক বিষয় নিয়ে পড়ি। এভাবেই শুরু আরকি 🙂 শেষ হবে না। সারা জীবনেও না। কোনদিন নিজেকে প্রোগ্রামার হিসেবে পরিচওয় দিতে পারব না। কারণ এটার শুরু আছে, শেষ নেই। Hello World! দিয়ে প্রোগ্রামিং জীবনে প্রবেশ করেছি মাত্র, জানি না কবে শেষ হবে।
ইউনিভার্সিটিতে এত্ত গুলো বিষয় পড়েছি। ৬০টার মত। সি প্রোগ্রামিং এর মত মন দিয়ে আর কোন বিষয়ই পড়া হয় নি। জিনিশটা ভালো না খারাপ, জানি না। তবে সব বিষয়ই কোন না কোন কাজে লাগে। এটা বুঝতে পারি।
এ রিলেটেড আরেকটা প্রশ্ন অনেকেই জিজ্ঞেস করে, প্রশ্নটিঃ

প্রোগ্রামিং শিখতে হলে কি কম্পিউটার সাইন্সে পড়া দরকার?
এটা নিয়ে অনেকেই অনেক জাগায় লিখছে। আমিও বলি। নাহ! একটুও দরকার নেই। নিজে নিজেই ইন্টারনেটের সাহায্যে শিখে নেওয়া যায়। এবং ভালো ভাবেই প্রোগ্রামিং শেখা যায়। দরকার কোন কিছু ইন্টারনেট থেকে খুজে বের করার ক্ষমতা। একবার শুরু করলে বিষয়টি ভালো লাগবে। আর ভালো লাগা থেকেই অনেক কিছু তৈরি করা যাবে। আমি হয়তো ইউনিভার্সিটি থেকে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেছি। তবে এটা বাসায় বসে বই পড়ে এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে অনেক ভালো ভাবেই শেখা যায়। যদি কোথাও বুঝতে সমস্যা হয়, কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বুজিয়ে দেয় বা দিবে। এখানের সবাই অনেক হেল্পফুল। কেউ আপনাকে ফেরাবে না। দরকার শুধু শুরুর করার ইচ্ছে শক্তি।

বর্তমানে আমাদের সবারই একটু আধটু প্রোগ্রামিং জ্ঞান থাকলে ভালোই হয়। আর ভালো করে জানলে তো অনেক ভালো। ভবিশ্যতে কোন এক সময় বাংলা ইংরেজীর মত হয়তো প্রোগ্রামিং ও শিখতে হতে পারে। এ লেখাটা দেখা যেতে পারেঃ

প্রোগ্রামিং শুরু করতে চাইলে এটা দেখা যেতে পারেঃ

আর একটা সাধারণ প্রশ্ন সবার মনে উকে দেয়। প্রোগ্রামিং শিখে কি করব?

যা কিছু ইচ্ছে করে, সবই করা সম্ভব। পৃথিবীর সেরা ধনী হতে চাইলে তাও সম্ভব। বিল গেটস তো পোগ্রামিং দিয়েই শুরু করেছিল তাই না? Nokia, আমাদের সবার প্রিয় মোবাইল ব্র্যান্ড। এক যুগের বেশি সময় ধরে ভালো অবস্থানে থাকা এ ব্র্যান্ডটি মাইক্রোসফটের কাছে বিক্রি হয়েছিল মাত্র 7.2 বিলিয়ন। যেখানে  WhatsApp নামক ছোট্ট এবং সিম্পল একটা অ্যাপ ফেসবুকের কাছে বিক্রি হয়েছিল ১৯ বিলিয়ন। যা বাংলাদেশের বাজেটের থেকে বেশি। অ্যাপটির সাইজ ও অনেক কম। ১০ মেগাবাইট এর ও কম।

এ ছাড়া আর অনেক গুলো ছোট ছোট অ্যাপ বা গেমস  রয়েছে যে গুলো থেকে আয় করে ডেভেলপাররা বিলিয়নিয়ার হতে পেরেছে।

সব সময় সবারই ধারনা যে ডাক্তাররা সাধারণত অন্যান্য জব থেকে বেশি আয় করে। বর্তমানে একজন সফটওয়ার ডেভেলপার যে কোন ডাক্তারদের থেকে আর বেশি আয় করে। ডাক্তাররা মানুষের সেবা করে, তাই না? সফটওয়ার ডেভেলপাররাও সহজেই মানুষের সেবা করতে পারে। ছোট খাটো সফটওয়ার দিয়েই অনেক ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

তাই বলি, যা ইচ্ছে তাই সম্ভব। এই প্রোগ্রামিং করে। সকল স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। দরকার জানা। কিভাবে কি করতে হয়। দরকার ভালো প্রোগ্রামিং করা শেখা। কোন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করার চেষ্টা করা। একটা বিষয় নিয়ে লেগে থাকার মত ধৈর্য।

3 thoughts on “যেভাবে প্রোগ্রামিং শিখা”

  1. জাকির ভাই ভাই যে টেকার লোভ দেখাইছেন?? খাওয়া দাওয়া বন্ধ কইরা প্রগেরামিং হিকতে বইলাম৷ বাই দ্যা ওয়ে, পড়ে খুব ভাল লাগল৷

    Reply

Leave a Reply