আমরা একটি টীম নেপাল ভ্রমণ করতে গিয়েছি। একটা ক্যাম্প এর উদ্দ্যেশ্যে 2nd International Rotaract – Unesco Adventure Camp 2014। বাংলাদেশ থেকে আমরা ১৭ জন গিয়েছি। এটা ছিল Rotaract এবং Unesco এর মেম্বারদের জন্য। আমি সুযোগ পেয়েছি একজন গেস্ট হিসেবে। এটা ছিল আমার প্রথম বিমান ভ্রমন। এবং প্রথম বিদেশ ভ্রমন। তাই অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। বাংলাদেশ থেকে ১৯এ মার্চ ২টা ১০ এয়ারপোর্ট থেকে রওনা দিয়েছি। ফিরছি ২৬ এ মার্চ সন্ধ্যা ৬.২৫ এ। ক্যাম্প সম্পর্কে প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন লিখলে ভালো হতো। সময় এর অভাবে লিখতে পারি নি। বানান ভুল এবং ব্যাকরণ জনিত অনেক ভুল রয়েছে। তাপরও প্রকাশ করে দিলাম 🙂 ভুল গুলো দেখিয়ে দিলে ভালো লাগবে।
প্রথম দিন।
১৯ তারিখ সকাল ৬টা ৩০ এর দিকে বের হয়েছি রুম থেকে। সাথে আসিফ ভাই ছিল।
পরোটা খেতে একটি দোকানে গিয়েছি, ঐটা এখনো বন্ধ। এখনো খোলা হয়নি। ভালো দোকান। গরুড় মাংস এবং গরম পরটার মত কিছুই হতে পারে না।
খেতে পারলাম না, অন্য দোকানে খেয়ে আমি ইউনিভার্সিটীতে চলে আসলাম। একটা ক্লাস ছিল ৮টা ৩০ এ। ঐটা করার জন্য। আধা ঘণ্টা আগেই চলে আসছি। তাই বসে বসে চা খাচ্ছিলাম। একটি শেষে আরেকটি।
ক্লাস শেসে মানি এক্সেঞ্জে গেলাম, বনানীতে। ওরা বলল গুলশানে যেতে। নেপালি টাকা ঐ খানে পাওয়া যাবে। যাওয়ার পথে বাংলাদেশের পতাকা খুঁজতে ছিলাম। পাই নি।
এর পর গুলশানে এসে টাকা এক্সেঞ্জ করে নিলাম।
হেঁটে হেঁটেই তারপর গুলশান থেকে নতুন বাজারের দিকে রওনা দিলাম। ঐখান থেকে বাসে করে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য।
পথে মামা বলে আপনার হাতে কি লেগেছে। দেখি অনেক গুলো ময়লা লেগে আছে হাতে। ঢাকার কাকের কুকর্ম হতে পারে।
আমি হাতা ঘুটিয়ে নিলাম। মামাকে জিজ্ঞেস করলাম আর কোথায় ও আছে। মামা বলে নেই।
নতুন বাজার এসে চিন্তা করলাম কিছু খাওয়া দরকার। ভাল কোন হোটেল নেই ঐ দিকে। চিন্তা করলাম বুমার্সে খাওয়া যেতে পারে। হাটতে থাকলাম। বুমার্স কাছে আসে না… অনেকক্ষণ পর হেটে হেটেই বুমার্সে পৌছালাম। গিয়ে অর্ডার দিলাম।
ওরা বলে স্যার আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট এর মত। রিপোর্টিং টাইম ১১টায়। ঘড়িতে তখন ১১.৩০ এর মত বাজে।
১২টায় গিয়ে এয়ারপোর্ট পৌছালাম। এয়ারপর্ট এসে সবার সাথে দেখা হল। সবার জন্য গেঞ্জি তৈরি করা হয়েছে। একটা গায়ে দিলাম। ময়লা সহ সার্ট ব্যগে রাখলাম।
বোর্ডীং এ গিয়ে টিকেট নিলাম। এর পর ইমিগ্রেশন করলাম। এর কিছুক্ষণ পর নামাজ পরে বিমানের জন্য ঢুকলাম। প্রথম বিমানে উঠা… স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিমানে আমার সিট পড়েছে জানালার একটু পাশেরটার পরের টায়। আমি জানালার পাশেরটায় বসে গেলাম।
উনার সাথে সিট এক্সচেঞ্জ করে নিলাম। কিছুক্ষণ পরই বিমান ফ্লাইট করল।
আস্তে আস্তে সব কিছু ছোট হতে লাগল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকাকে হারিয়ে ফেললাম। এর পর গ্রামের উপর দিয়ে, পাহাড়ের উপর দিয়ে নেপাল এসে পৌঁছালাম।
উপর থেকে বড় বড় নদী গুলকে কেমন জানি অনেক ছোট লাগত। রাস্তা গুল অনেক চিকন লাগত। ঘর বাড়ী কিছুই বুঝা যাচ্ছিল না। টিনের ঘর থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে কিছুটা বুজা যেতো…
বাসা থেকে এয়ারপোর্ট যেতে লেগেছে ২ ঘণ্টার ও বেশি। আর এয়ারপোর্ট থেকে নেপাল আসতে লেগেছে মাত্র ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট।
২টা ১০ এ রওনা নিয়ে ৩টা ১০ এ পৌঁছিয়েছি।
নেপাল আসার পর নেপালের রোটারি ক্লাবের সহকারী প্রেসিডেন্ট আমাদের গ্রহণ করল। আমাদের সবার জন্য একটি করে সিম নিয়ে আসলো। এর পর আমরা অন্যদের জন্য অপেক্ষা করলাম, যারা বাংলাদেশ থেকে ভিসা করে আনে নি। তারা ভিসা করল। আমরা রওনা দিলাম বান্দিপুরের দিকে।
প্রায় চার ঘণ্টায় আমরা বান্দিপুর এসে পৌছালাম। তখন প্রায় রাত ১২টা বাজে।
বান্দিপুর এসে দেখি আমাদের জন্য এরা ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে। আমাদের গ্রহণ করার জন্য। নেপালিরা আমাদের ফুল দিয়ে অভর্থনা জানালো। আমাদের কপালে টিপ দিলো। পরে জানলাম নেপালিরা সন্ধ্যা ৮টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে। আমাদের জন্য ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে জেনে ভালোই লাগল।
এর পর বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করলাম। ভাত, সবজি, শাক, ডাল এমন কিছু। খেয়ে এসে দিলাম ঘুম। ছিলাম হোমস্টে তে। নিজের বাড়ির মত। সকালে উঠলাম।
দ্বিতীয় দিন।
সকালে আমাদের জন্য রুটি, ডিম অমলেট আর বাজি ছিল। খেলাম। খেয়ে এখানে একটা পাহাড়ে উঠলাম। যেখান থেকে সুন্দর করে এভারেস্ট দেখা যায়।
পাহাড়ের উপর থেকে বান্দিপুর
নেপালিরা সকাল ৯টায় নাকি দুপুরের খাবার খায়। আমরা ঐখান থেকে নেমে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। যদিও আমাদের খেতে ১১. ৩০ এর মত লেগেছে।
খেয়ে দেয়ে আমরা রওনা দিলাম সিদ্বা গুহা দেখার জন্য। অনেক দূর পাহাড় থেকে নামতে হয়েছে। এটা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় গুহা।
চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। প্রায় দুই ঘণ্টার মত আমাদের হাঁটতে হয়েছে ঐখানে পৌঁছাতে।
গুহার ভেতরে ঢুকে আমরা এক মিনিট নীরবতা পালন করলাম। সব লাইট বন্ধ করে দিলাম। অন্ধকারের মধ্যে আমরা সবাই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থকলাম। অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা। যদি নীরবতা পালনের সময় অনেকেই আস্তে আস্তে হেসে দিচ্ছিল… জানি না কেন…
আসার সময় কেউ যে পথে গিয়েছি ঐ পথে আসছে। আর কেউ পাহাড় থেকে নিচের দিকে নেমে এসে বাসে করে চলে আসল আবার বান্ধিপুর। আমি বাসে করে আসছি।
রাতে এখানে এসে চাওমিন খেয়ে ঘুমিয়ে গেছি। এখন সকাল। বসে বসে লিখছি।
তৃতীয় দিন।
আজ আমাদের এডভ্যান্সার অফিশিয়ালি শুরু হবে।
পেশা হিসেবে আমি ফ্রীল্যান্সার। যে কোন জায়গা থেকেই কাজ করত পারি। গত রাতে কিছু কাজ করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু করতে পারি নি। টাইট সিডিউলের কারণে। রাতে এসে আর কাজ করার মত শক্তি থাকে না। আবার চিন্তা করতে হয় পরের দিন ভোরে উঠে সবার সাথে যেতে হবে। আজ ও জানি না করতে পারবো কিনা। ক্লায়েন্টে তো মহা খেপবে।
সকালে আমাদের দেরি হওয়ার কারণে সবার সাথে নাস্তা করা মিস করেছি। আমাদের দেরির কারণে আমাদের রেখে পুরো টিম চলে গিয়েছল। আমরা চারজন মিস করেছি। তাই নিজেরা নিজেরাই করে নিয়েছি। আমরা ডোনাট, নেপালি তরকারি [কিছুটা চটপটির মত] এবং চা খেয়েছি।
এর পর সবার জন্য অপেক্ষা করেছি। সবার জন্য পলিও টিসার্ট ছিল। সবাই তা পরে পলিও এওয়ারনেস রেলিতে অংশগ্রহন করেছি।
এর পর অফিশিয়াল অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। আমি ছবি তুলেছি। সেখানে সাংকৃতিক অনুষ্ঠান ও হয়েছিল।
আমরা বাংলাদেশী সংকৃতি তুলে ধরেছি।
অনুষ্ঠান থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ ফেসবুকিং করলাম। এর পর বিকেলে একটু ঘুরতে বের হলাম।
রাতে হলো ক্যাম্প ফায়ার। গান, নাচ ইত্যাদি। হলো বারবিকিউ পার্টি। তারপর বাসায় এসে ঘুম।
চতুর্থ দিন।
সকাল ৬টায়, মানে সূর্যদয়ের আগেই বের হয়ে পড়লাম রুম থেকে। যদি না বের হতাম, তাহলে আমাকে রেখেই চলে যেতো পুরো টিম। গেলাম র্যাপপ্টিং এর জন্য, ত্রিশুলি নদীতে। যাওয়ার পথে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। খাবার হিসেবে ছিল নিমকি এবং গরম জিলাপি।
এর আগে র্যাপ্টিং সব সময় টিভিতেই দেখে আসতাম। এবার নিজেরাই করেছি। প্রথমে খুব এক্সাইটেড ছিলাম। পানির ঢেউ এর সাথে পুরো বোর্ড এর উঠা নামা দারুণ লাগছিল। সত্যিকারের এডভ্যান্সার। প্রতি বোর্ড এ আমরা ৮জন, এবং গাইড।
এক্সাইটমেন্ট আস্তে আস্তে কমতে লাগল। কারণ র্যাপটিং আসলেই কঠিন। গাইডের ফাস্ট ফরওয়ার্ড, লেফট ফরওয়ার্ড, রাইট ফরওয়ার্ড, হোল্ড, অল ফরওয়ার্ড কমান্ড গুলো শুনতে শুনতে বিরক্ত শুরু হলো। যদি না আবার কমান্ড মেনে চলি, তাহলে পাথরের সাথে বাড়ি খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
মাঝখানে আমরা কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে দুপুরের খাওয়া শেরে নিলাম। আবার র্যাপ্টিং শুরু। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির কারণে ঠান্ডা লাগা শুরু হলো। আর তখনি মনে হচ্ছিল, এত কষ্ট করে র্যাপ্টিং না করলেও পারতাম। সর্বমোট আমরা ৩১ কিলোমিটার র্যাপ্টিং করেছি। কষ্ট হলেও অনেক মজা পেয়েছি। সব চেয়ে মজার ছিল অন্য Rafting Boat এর মানুষ দের ঠাণ্ডা পানি ছিটানো।
র্যাপ্টিং করে আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেলো।
আমাদের বিচ বলিবল খেলার কথা ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবং সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার কারণে তা আর হয়ে উঠেনি।
এর পর জামা কাপড় পরিবর্তন করে চলে আসলাম আমাদের জন্য তৈরি করা টেন্ট এর কাছে। সেখানে এসে সবার সাথে ফলোয়াপ। চা খাওয়া। একজন আরেকজনের সাথে পরিচয় পর্ব। এভাবেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো। নেপালিরা সন্ধ্যার পর পরই ডিনার সেরে ফেলে। আমরাও তাই করলাম। আমার জন্য চিকেন বিরিয়ানির ব্যবস্থা করেছিল।
খাওয়া দাওয়ার পর আবার ক্যাম্প ফায়ারিং এর ব্যবস্থা করেছে। ক্যাম্প ফায়ারের চারপাশে দাঁড়িয়ে গান গাওয়া, নাচানাচি হচ্ছিল। এর পর আস্তে আস্তে সবাই যার যার স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে টেন্টের ভেতর ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছে।
সারাদিন পরিশ্রম করার কারণে অসাধারণ একটা ঘুম হয়েছিল।
পঞ্চম দিন
ভোরে উঠে মুখ ধুয়ে চা/কফি খেয়ে নিলাম সবাই। এর পর সবাই উঠার পর আমাদের ব্রেকফাস্ট দিল। ব্রেড, ঘি, মধু, ডিম ইত্যাদি।
এর পর খেললাম বিচ বলিবল। নেপালিরা এক্সাপার্ট হওয়ার কারণে তারাই জিতেছে বলিবল খেলাতে।
বলিবল খেলে এসে খেলাম দুপুরের খাওয়া।
এরপর চলে গেলাম ক্যাবল কারে চড়তে। ক্যাবল কার আমাদের টেন্ট থেকে ৩ কিলো দূরে ছিল। তাই হেটেই রওনা দিলাম। নেপালে অনেক গুলো ঝুলন্ত ব্রিজ রয়েছে। ঐগুলো দিয়ে নদীর আরেক পাড়ে গেলাম। গিয়ে আস্তে আস্তে ক্যবল কার স্টেশনে গেলাম।
ক্যাবল কার এর রাস্তা প্রথম মনে করছিলাম অনেক ছোট। ঐতো দেখা যায়। যতটুকু দেখা যায়, ততটুকু উঠে দেখতে পেলার আরো উপরে উঠছে। অনেক দূর।
ক্যাবল কারে করে গেলাম মনকামনা টেম্পল দেখতে। এটা হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র যায়গা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে আসে নিজেদের মনের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য দোয়া চাইতে।
ক্যাবল কারে করে ফিরে আসলাম আবার।
এর পর রওনা দিলাম ধামুলি[Damuli], থানুন এ।
বাসের ভেতর পরের দিনের প্ল্যান করা হলো। রোটারি ক্লাব থেকে ঐখানের জেলের মানুষদেরকে তারা বিভিন্ন হেল্প করে থাকে। তাই আমরা চাইলাম আমরাও হেল্প করি। সবাই কন্ট্রিভিউট করে ৮ হাজার রুপির মত উঠানো হলো আমাদের টিম থেকে। ঠিক করা হলো ঐগুলো দিয়ে বই কিনে প্রিজনারদের দেওয়া হবে।
রাতে ধামুলির রোটারেরি ক্লাবের সাথে মিটিং হলো। হলো কালচারার এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম। নেপালের খাবার মমো খেলাম ঐদিন।
এরপর হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ষষ্ঠ দিন
সকালে উঠেই আমরা চলে গেলাম জেলে। ঐখানে গিয়ে প্রিজনাদের সাথে গিয়ে সময় কাটিয়ে আসলাম। দিয়ে আসলাম বই গুলো। আমাদের সাথে যোগ দিল থানুন এর পুলিশ প্রধান।
এর পর গেলাম যেখানে বসে মহাভারত লেখা হয়েছে, সে জায়গা দেখতে। তারপর সকালের নাস্তা।
এর পর আমরা গেলাম পোখরা। পোখরা গিয়ে মনে হলো আমাদের বান্দরবনের বগালেক। রাঙ্গামাটির কিছু জায়গাও এমন। সুন্দর জায়গা।
পোখরা তে গিয়ে পানিতে লম্প জম্প করলাম। ব্যাগ না নিয়ে যাওয়ার কারণে প্যান্ট খুলে আন্ডারওয়ার পরেই পানিতে নেমে পড়লাম। নবম দশম শ্রেনীর পর এমন ভাবে আর পানিতে লাফ দেওয়া হয়নি। নষ্টালজিক হয়ে গেলাম। ইচ্ছে মত লাফ দিলাম।
এর পর ঐখানে খাওয়া দাওয়া করে পোখরা থেকে চলে গেলাম International Mountaineering Museum দেখতে।
ঐখানে পাহাড়ী মানুষের বিভিন্ন স্মৃতি, এভারেস্টে উঠতে গিয়ে যাদের প্রাণ হারিয়েছে, তাদের স্মৃতি, যারা সফল হয়েছে তাদের কথা সহ অনেক ধরনের জিনিসের সংগ্রহ ছিল। ঐসব নিয়ে একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। প্লে স্টোরে বা আইটিউন্স থেকে ইনস্টল করে নেওয়া যাবে।
সন্ধ্যার পর Nepal Tourist Board এ হলো আমাদের কালচারারল এক্সচেঞ্জ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দারুণ লাগছিল। বাংলাদেশ থেকে আমরা, গান গেয়েছি, কবিতা আবৃতি করেছি এবং শেষে চার ছক্কা হই হই এর তালে তালে নেচেছি। নেপালী মেয়েদের নাছ দারুণ উপভোগ করেছি আমরা ওরা আমাদের এত বেশি সন্মান দিচ্ছিল, দেখে ভালো লেগেছে। তিনটি মেয়ের সাথে পরিচিত হয়েছি, যারা সবাই বাংলা সুন্দর করে বলতে পারে। তাদের মধ্যে একটি বাংলাদেশ থেকে ডেন্টালের উপর পড়ালেখা করেছে। পড়ালেখা শেষ করে এখন নেপালে থাকে।
প্রোগ্রাম শেষে হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিনের জন্য রেডি হওয়ার জন্য।
সপ্তম দিন
সকালে উঠে গেলাম David Falls দেখতে। পথিমধ্যে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। দুপুরের খাবারের পর থানুনের জেলার পুলিশ প্রধান আমাদের চায়ের নিমন্ত্রন করেছে। উনার ঐখানে চা খেয়ে David’s fall দেখলাম। এর পর যাওয়া হলো Gupteshwor Cave দেখতে।
এসব দেখে রওনা দিলাম নুয়াকোট এর দিকে। অনেক বিশাল জার্নি। নুয়াকোট আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমরা ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেলাম। এরপরে Mr & Mrs Adventure Camp প্রতিযোগিতার আয়োজন হলো। প্রোগ্রাম শেষে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমার পরের দিন ফ্লাইট ছিল। সাথে আরো তিনজন। আমাদের জন্য আলাদা মিটিং করা হলো পরের দিন কি করব তা নিয়ে। মিটিং শেষে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
শেষ দিন / অষ্টম দিন।
আমরা তিনজন আলাদা ভাবে গেলাম নুয়াকোর্ট দেখতে। ঐখান থেকে প্রায় সব দিয়ে সুন্দর ভাবেই দেখা যায়। অসাধারন ভিউ।
নুয়াকোর্ট থেকে এসে খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম কাঠমান্ডুর দিকে। পাহাড়ি রাস্তা। অনেক দূর। সারা শরীর ব্যাথা করে দিলো মাইক্রোবাসটি। গাড়িতে বসে আমি ঘুমাচ্ছিলাম শুধু। আর কিছুক্ষণ পর পর চোখ মেলে দেখি পাহাড়ের উপর দিয়ে আমাদের গাড়ি চলছে।
কাঠমান্ডু এসে কিছু কেনা কাটা করলাম। এর পর চলে আসলে এয়াররপোর্টে। ত্রিভূবন ইন্টারনেশনাল এয়ারপোর্ট।
এয়ারপোর্ট এসে অফিশিয়াল কাজ গুলো করে দেখি বিমান এক ঘন্টা লেট। ৪.১০ এ ছিল, ৫.১০ এ ফ্লাইট। অপেক্ষা করলাম। অপেক্ষা করা সবসময়ই বিরক্তিকর। প্রথম দিনে বিমানে উঠার সময় অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। আজ কোন এক্সাইটমেন্ট ছিল না।
বিমানে প্রথম দিন স্ন্যাক্স দিয়েছিল। ঠিক মত খাই নি। কারণ ভালো লাগে নি। কিন্তু নেপালের খাবার ঠিক মত না খেতে পারার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর স্ন্যক্স এর জন্য অপেক্ষা করলাম। দিল, প্রথম দিন যেটা খাই নি, ঐটাই আজ অনেক ভালো লেগেছে। খেতে খেতেই শুনি অভতরণ করবে। মাত্র এক ঘন্টা ঢাকায়। এরপর আরো দুই ঘন্টায় বাসে করে রুমে আসলাম।
আল্লাহর রহমতে সুন্দর মত সুস্থ দেখে ফিরতে পারলাম। র্যাপ্টিং করার দিন একটু ঠান্ডা লাগছিল। ঠোট ফুলে গিয়েছিল। হালকা জ্বর লাগলেও বেশি কোন অসুস্থ ফীল করি নি।
আমাদের এডভ্যান্সার ক্যাম্প পরের দিনও ছিল। আমি এবং আরো তিনজন একদিন আগেই চলে আসছি।
আমরা আসার পর শুনতে ফেলাম আমদের বাসটি গর্তে পড়ে গিয়েছে। টীমের অন্যান্য সদস্যরা হালকা ব্যাথা পেয়েছিল। যদিও তেমন কোন সমস্যা হয় নি।
বাংলাদেশের সাথে নেপালের ট্যুরিস্ট স্পটের তুলনা
ট্যুর শেষে আমার মনে হলো কি জানেন? আমাদের বান্দারবন আরো সুন্দর। নেপাল হচ্ছে বান্দরবনের একটা বড় রূপ।
আরেকটা জিনিশ লক্ষ করলাম নেপালীদের থেকে নেপালে ট্যুরিস্ট বেশি। এত্ত বিদেশী!! মনে হলো আমাদের ট্যুরিস্ট স্পট গুলো যদি ট্যুরিস্টদের জন্য সুন্দর ভাবে উপযোগী করে রাখা যেত, বাংলাদেশে নেপাল থেকে বেশি ট্যুরিস্ট আসত। [ যদিও এটা আমার ট্যুরের সাথে সম্পর্ক নেই, লেখার কারন হচ্ছে যারা বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটি ঘুরেন নি এখনো তাদের উৎসাহিত করা] আর নেপালে পাহাড় আর পাহাড়। বাংলাদেশে রয়েছে সব কিছু মিশ্রন। অনেক অসাধারণ কিছু জায়গা।
তৃতীয় যে জিনিসটা লক্ষ করলাম, তা হচ্ছে দাম। ট্যুরিস্ট স্পট গুলোতে জিনিস পত্রের দাম ৪-৫ গুণ বেশি। বাংলাদেশে এমন কিছু আমার চোখে পড়ে নি। কক্স বাজারে খাবার দাবার ঢাকা থেকে সস্তা। বান্দরবান শুধু একটু বেশি। তাও ৫টাকা বা ১০ টাকা। আবার বিভিন্ন জাগায় নেপালিদের জন্য এক দাম। আর ট্যুরিস্টদের জন্য তার ৩ গুন দাম।
আমার অনুভূতি
টীমের সাথে যাওয়ার কারণে খরচ এত্ত কম হয়েছে যে বলার বাহিরে। নেপাল সর্বমোট আটদিন, খাওয়াদাওয়া, ট্রান্সফোর্টেশন, বিভিন্ন জায়গার এন্ট্রি ফী, সব খরচ ছিল মাত্র ১৩০ ডলার। প্রায় দশ হাজার টাকা। একা গেলে যে সব জায়গায় ঘুরেছি ৫০ হাজার টাকা দিয়েও মনে হয় ঠিক মত ঘুরে আসতে পারতাম না। এ ছাড়া এমন সব জায়গায় ঘুরেছি, কোথায় যেতে হবে, তাও জানতাম না। এজন্য আমি রোটারি ক্লাবের মেম্বার আবদুল মান্নান আসিফ এর নিকট কৃতজ্ঞ, উনি আমাকে এ ক্যাম্প এর কথা বলেছিল। আর অপন চৌধুরিকে ধন্যবাদ। এ ক্যাম্প এর প্রেসিডেন্ট। আমাকে গেস্ট হিসেবে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ ক্যাম্পটা শুধু রোটারী মেম্বারদের জন্য ছিল। আর সকল কিছু সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করার জন্য Bishnukanta Ghimire অনেক অনেক ধন্যবাদ। এত সুন্দর করে সব কিছু ম্যানেজ করার ক্ষমতা আমাকে অবাক করেছে।
খাবার দাবারে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তা মেনে নিয়েছি। কারণ ভিন্ন দেশ, তাদের কালচার ভিন্ন, খাবার ও ভিন্ন। আর টাইট সিডিউলের কারণে আমার ঘুমুতে একটু সমস্যা হচ্ছিল 😀 দিনে ঘুমাই ৮ ঘণ্টা। ৭ দিন এত কম ঘুমিয়েছি ; (
এর পর আরেকটা সমস্যা হচ্ছিল, দুই মিনিট সমস্যা। সব কিছু দুই মিনিটের মধ্যে করতে বলত। যদিও ২০ মিনিটেও কমপ্লিট হতো না 😀 । বলতে গেলে দৌড়ের উপর ছিলাম। সত্যিকারেরই অ্যাডভ্যান্সার ছিল।
মনে থাকবে সারা জীবন। নতুন অনেক গুলো মানুষের সাথে মিশতে পেরেছি। নেপালিরা এত আপন করে নিয়েছে, সত্যিকারে অভাক হয়েছি।
আমার সাথে ছিল আমার প্রিয় Canon 70D, ইচ্ছে মত ক্লিক করেছি। প্রায় ৫হাজার ছবি তুলেছি। জীবনের একটি বিশাল স্মৃতি হয়ে থাকবে। অনেক ভালো লেগেছে। আরো অনেক কিছুই লেখার ছিল। হয়তো লিখব, আবার হয়তো সামনের দিকে নিজেকে ভাসিয়ে দিব। যেদিকে নিয়ে যাবে, সে দিকেই চলে যাবে। অজানা গন্তব্যে। আপনাকে ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
বিদায় নেপাল। হয়তো বেঁচে থাকলে আবার ও দেখা হবে।
ভালই মজা করছিস দেখা যায় , বাইচা থাকলে কোনদিন যামু 🙂
চলেন, এবার ইন্ডিয়া ঘুরে আসি। 🙂
jakir vi next time ami apnar sathe gurte chai,,,,,journey korte chai,,:p
Vhai ami to miss korlam ;(
🙁
পরের গুলো যেন মিস না হয়।
জাকির ভাই একতা পেটুক ফাকিবাজ,
খালি খানার কথাই লিখলেন ডজনে দুয়েক বার, মাগার এডভেঞ্চারের কোন এলাবোরেশান দিলেন না :/
আর হা ব্যাগ না নিয়ে অন্তর্বাস পরে যে নেমেছেন সেগুলার ছবি তুলেন নি 😛
সবার আগে খানা পিনা 😀
আর ঐ সব ছবি আমরা না দেখি 😀 সেন্সর ছবি না দেখাই ভালো
জাকির ভাই ‘নেপালিরা সকাল ৯টায় দুপুরের খাবার খায়’
খুব মজা লেগেছে। আমি আপসোস করছি এবং নিজেকে র্দূভাগা অনুভব করছি। আমি খবর পেয়ে ছিলাম কিন্তু টাকা না থাকার জন্য যেতে পারি নাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার অবিজ্ঞতা জানানোর জন্য। আপনার নম্বর টা পেলে খুশি লাগতো
ইকবাাল 019197000400
অনেক মজা করেছেন দেখি! পড়ে অনেক ভালো লাগলো। মনে হচ্ছিলো আমিও আপনার সাথে ৯:৩০-এ দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। 😛
Dear,
খুবই ভাল লেগেছে? নেপাল না যেয়েও যাওয়ার মজা পেয়েছি? পরবর্তীতে কোথাও প্রোগ্রাম থাকলে জানাবেন। আমি যাব। ধন্যবাদ
খুবই ভাল লেগেছে? নেপাল না যেয়েও যাওয়ার মজা কিছুটা হলেও পেয়েছি? পরবর্তীতে কোথাও প্রোগ্রাম থাকলে জানাবেন। আমি যাব। নেপাল যাওয়ার ইচ্ছা আছে, সময় পেলে যাব।আপনার সাথে আমি পরামর্শ নিতে চাই ।আপনার মোবাইল নম্বরটা দিবেন? আমার মোবাইল নম্বর হলো-০১৯১২১২৩৭৮৮। ভাল থাকবেন।
মনে হচ্ছিল নেপাল চলে গেছি। খুব অসাধারণ লাগলো।
ধন্যবাদ ভাই।