শাহাবাগ মোড়ে সব রকম ফুল পাওয়া যায়। ফুলের দোকান গুলো দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়। যতবার এই ফুলের দোকান গুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, তত বারই মেঘার কথা মনে পড়ে। মিথ্যে কথা। মেঘার কথা সব সময়ই মনে পড়ে। মস্তিষ্কের একটি কোনা দখল করে আছে সে। যে অংশটি সব সময়ই মেঘাকে নিয়ে ভাবতে থাকে। সম্ভবত আমার ছোট্ট মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম পুরোটাই মেঘার দখলে।
মেঘার সাথে দেখা হবে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে। ইচ্ছে করে শাহাবাগের সব গুলো ফুল মেঘার সামনে হাজির করি। ফুলের বিছানা বানিয়ে দি তাকে। ইচ্ছে করলেই সব কিছু করা যায় না। অত টাকা আমার কাছে নেই। সব গুলো দোকান খুঁজে সবচেয়ে সুন্দর গোলাপটি খুঁজে বের করেছি। মেঘার জন্য। গোলাপ কেনার পর আর ধানমন্ডি যাওয়ার মত ভাড়া নেই পকেটে। তাই হেঁটেই রওনা দিলাম। বেকার ছেলেদের হাতে প্রচুর সময়, পায়ে অনেক শক্তি।
মেঘার সাথে দেখা হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো মেঘা? মেঘা বলল ভালো আছি। এরপর আমি কি বলব তা খুঁজে পাচ্ছি না। মেঘাকে বলার জন্য অনেক গুলো কথা মস্তিষ্কে খেলা করে। তারপর ও তার সামনে গেলে কথা বলার জন্য কিছুই খুঁজে পাই না।
মেঘাকে গোলাপটি এগিয়ে দিলাম। মেঘা বলল thank you. মেঘার কাছ থেকে thank you চাই না। অন্য কিছু চাই। কি সেটা? তা জানি না। আচ্ছা, মেঘা কি বুঝতে পেরেছে, তাকে আমি সবচেয়ে সুন্দর গোলাপটি দিয়েছি? হয়তো পারে নি। পারলে গোলাপটিকে আরেকটু ভালো ভাবে দেখত। গোলাপটির ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করত। করে নি। মেঘা বলল আমি আসি, কাজ আছে বলে চলে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখছি। কিছুদূর যাওয়ার পর হাতের গোলাপটি লেকের পানিতে ফেলে চলে গেলো।
বেকার ছেলেদের হাতে প্রচুর সময়। লেকের পাড়ে বসে আমি পানিতে ভেসে থাকা গোলাপটিকে দেখছি। আর ভাবছি। কত শত ভাবনা। মেঘার কি পছন্দ? কি দিলে সে তা কিছুদূর হেঁটে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দিবে না। ঐ বস্তুর সৌন্দর্য দেখতে পাবে। জানতে ইচ্ছে করে।
আচ্ছা মেঘা কি জানে, গোলাপটি যদি আমি তাকে না দিয়ে সে আমাকে দিত, গোলাপটি তখন পানিতে ভেসে না থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ছেলেটির হাতে থাকত। কোন দিন হয়তো সে জানবেও না। না জানাটাই হয়তো ভালো। থাকুক না, যেভাবে আছে সেভাবেই। আমরা যা কিছু দেখি, শুনি, সব কিছুই তো মস্তিষ্ক দিয়েই অনুভব করি। মস্তিষ্কের একটা অংশে শুধু মেঘারই বসবাস, যা বাস্তবতা থেকেও সুন্দর। পানিতে ভেসে থাকা গোলাপটি থেকেও সুন্দর।