গল্প – গন্তব্য

রেল লাইনের পাশেই বসে আছি। বসে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি বসে থাকলেও মন বসে নেই। কত শত ভাবনা ভেবে চলছে। সবচেয়ে বেশি যা মনে পড়ে, তা হচ্ছে জেনির কথা।

জেনিকে আমি আগে যতটা ভালোবাসি মনে হতো, সে চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে যতটুকুনা আমি দেখাতে পেরেছি, তার থেকেও বেশি ভালোবাসি। জেনির সৌন্দর্য দেখে যে কেউই প্রেমে পড়ে যাবে। আমি তার প্রেমে পড়েছি তার হাসি দেখে। সে তার অন্য আরেকটা বান্ধবী এর সাথে কোন একটা নিয়ে কথা বলে দুই জনেই হাসছিল। কি সুন্দর সেই হাসি। আস্তে আস্তে তার সাথে আমার পরিচয় হয়ে উঠে। একটু একটু করে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম পরের দিনের জন্য, আবার দেখা হওয়ার জন্য। আবার কথা হওয়ার জন্য। ঐ সময় গুলো কি রঙ্গিনই না ছিল। এখন আমার সময় গুলো সাদাকালো হলেও ঐ সময় গুলো সব সময়ই রঙ্গিন হয়ে থাকবে।

জেনির হাসির থেকেও বেশি ভালো লাগত পাগলামি। সে অনেক গুলো পাগলামি করে বেড়াতো। যা ইচ্ছে করত, তাই করে ফেলত। এটা সেটা না ভেবে। এটা আমার খুব ভালো লাগত। আমি ভাবতাম, আমার ছোট খাটো পাগলামি গুলোও তার ভালো লাগবে। কিন্তু আমার ছোট খাটো পাগলামি, ছোট খাটো ভুল গুলো জেনির হয়তো ভালো লাগত না। সে বলত, বাচ্চামি কর কেন এমন? কবে আমি মানুষ হয়ে উঠব?

জেনির জন্য বাচ্চামি ছেড়ে আমি বড় হয়ে উঠার চেষ্টা করতাম, তাতে ফলাফল আরো বেশি খারাপ হতো। মেয়েটি কোন দিন ও হয়তো জানে নি, তার একটু মন খারাপ হলে সে যতটুকুনা কষ্টে থাকত, আমি তার থেকে বেশি কষ্টে থাকতাম। নির্ঘুম রাত কাটাতে হতো। এত কিছুর পর ও জেনি থেমে থাকে নি।

ট্রেনের সাইরেন শুনা যাচ্ছে। ট্রেন আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। আমিও আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াই।

প্রচণ্ড শব্দ উৎপন্ন করতে করতে ট্রেন আমার পাশ দিয়ে চলে যায়। দূরে, অনেক দূরের গন্তব্যে। মাঝে মাঝে একটা ট্রেনে উঠে যেতে ইচ্ছে করে। দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করে। একদিন চলেও যাবো। তবে আজ না। ছোট ছোট কত গুলো পথ শিশুকে পড়াতে হবে। তাদের বড় করে তুলতে হবে। আমি বড় হয়ে উঠতে পারি নি, অন্তত তাদের তো বড় করতে পারি।

Leave a Reply