খুলনায় BIPT কনফারেন্সের জন্য মুজাহিদ ভাই ইনভাইট করল স্পিকার হিসেবে। আমি বললাম আমি স্পিকিং এ খুবি জগন্য, আমি আসব না। উনি বলল আপনাকে বলতে হবে না, আসেন। আমি রাজি হলাম। সাইদুর ভাই, শরিফ ভাইদের সাথে এয়ার টিকেটও কাটলাম। ইভেন্টের কয়েক দিন আগে আমাকে আবার নক করে বলে আপনি কি নিয়ে বলবেন, বলেন… আমি বলি কথা ছিল আমি কিছু বলব না। পরে বলে ২ মিনিটের জন্য হলেও বলেন। আমি আবার রাজি হলাম।
টিকেট গত মাসেই কিনে রেখেছিলাম আমরা। ২৪ তারিখ সকাল ৯টায় ফ্লাইট। কথা ছিল ৮টায় এয়ারপোর্ট থাকব সবাই। এক সাথে যেন বোর্ডিং পাস নিতে পারি, তাহলে একই সাথে সিট পাবো। আমি এয়ারপোর্ট এ ডমেস্টিক টার্মিনালে ঢুকলাম, পেছনে দেখি সাইদুর ভাই সহ সবাই।
চেকইন শেষে আমরা বোর্ডিং পাস নিলাম। আমাদের হাতে কিছু সময় আছে। আমরা গিয়ে এমেক্স লাউঞ্জে বসলাম। এমেক্স কার্ড হোল্ডারদের জন্য ঐখানে রেস্ট নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে নাস্তা এবং কফির ব্যবস্থা। সাইদুর ভাই এমেক্সের প্লাটিনাম কার্ড হোল্ডার। উনার সাথে পাঁচ জন গেস্ট এলাউড। আমরা বসলাম। কফি খেলাম। ফ্লাইটের সময় হলে আমাদের ডাকল। এরপর রওনা দিলাম বিমানের দিকে।
উড়তে কি যে ভাল লাগে। আমার যদি দুইটা ডানা থাকত, উড়ে উড়ে আমি কত দূর চলে যেতাম। অনেক দূর। টেক অফের সময় নিচের ঘর বাড়ি গুলো আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। গুগল ম্যাপের স্ট্রিত ভিউর এর মত। ভালো লাগে দেখতে।
আমরা নয়টা ৫০ এর দিকে যশোর এসে নামলাম। সেখান থেকে নভোএয়ারের বাসে করে খুলনা। ৬২ কিলো এর মত রাস্তা। প্রায় আড়াই ঘন্টার মত লেগেছে। খুলনা এসে আমরা উঠেছি সিটি ইন হোটেলে। শুক্রবার ছিল। ফ্রেস হয়ে আমরা মসজিদে চলে গেলাম জুমার নামাজ পড়তে। সেখান থেকে ফিরে আবার হোটেলে। সবার জন্য অপেক্ষা করা। এরপর চলে গেলাম মেজবান বাড়িতে। খুলনা ইউনিভার্সিটির গেটের অপজিটে। দুপুরের খাবার আমরা সেখানে খেলাম। হাঁসের মাংশ, গরুর মেজবানি মাংশ, কালো ভুনা। সবই একটু একটু ট্রাই করলাম। নিজ ঘরের রান্নার মত। হাঁসের মাংশটি সরিসার তৈল দিয়ে রান্না করা। কি সুন্দর ঘ্রাণ লাগে নাকে। একটু ঝালও। খেতেও দারুণ।
মাটির পাত্রে করে খাবার পরিবেশন করেছিল। পানির গ্লাসও ছিল মাটির। ভালো লেগেছে।
খাবার খেয়ে সবাই হোটেলে ফিরল। তখন ঘড়িতে তিনটে। আমি জানি হোটেলে গেলে এই সুন্দর বিকেলটা মিস করব। আমি তা চাই না। আমার কাজিন ছিল সাথে। তার সাথে প্রথমে খুলনা ইউনিভার্সিটিতে গেলাম। ক্যাম্পাসে গেলাম। এরপর ঐখানে চায়ের দোকানে বসে চা খেলাম, কথা বললাম। এরপর বিকেলের দিকে অটো নিয়ে চলে গেলাম রূপসা ব্রিজে। রূপসা ব্রিজ বলা যায় একটা পর্যটন স্পট। দুই পাশ থেকেই সিড়ি দিয়ে ব্রিজে উঠা যায়। অনেক উঁচু ব্রিজ। ব্রিজটি ভৈরব নদীর উপর। আর মূল নাম খান জাহান আলী ব্রিজ। কিন্তু রূপসা এলাকায় হওয়ার কারণে ব্রিজের নাম হয়ে গেলো রূপসা ব্রিজ।
ব্রিজে হাঁটতে হাঁটতেই সূর্যাস্ত দেখলাম। ঐখানে এক পাড়ে নিম গাছের বাগান ছিল। ঐ দিক থেকে ঘুরে আসলাম। পথে কি সুন্দর মাটির ঘর চোখে পড়ল।
ব্রিজ থেকে এসে নিউমার্কেটের এখানে আসলাম। তখন দেখি সবাই এখানে। যারা বাসে এসেছে, তারাও ইতি মধ্যে এসে পৌছেছে। সবাই চা খেতে বের হয়েছে। চা খেয়ে উনারা গেলো রূপসা ব্রিজ। আমি থেকে গেলাম ঐখানেই। শুভ্র পাল ভাই এসেছে। আমি উনার সাথে আড্ডা দিলাম। এরপর এক সময় মুজাহিদ ভাই কল দিল জিরোপয়েন্টে যাওয়ার জন্য। ঐখানে চইঝাল মাংশ দিয়ে রাতের খাবার খাবে। দুপুরে যা খেয়েছি, তা এখনো শেষ হয়নি। এর উপর এখন আবার খেতে হবে? আমি ভাবতে লাগলাম।
যাই হোক। গেলাম। এত বেশি ঝাল! টেস্টও দারুণ। সমস্যা হচ্ছে খুব একটা খেতে পারি নি। এত সকাল সকাল খাওয়া অভ্যাস না থাকার কারণে হয়তো।
খাওয়া দাওয়া করে আড্ডা দেওয়া, এরপর হোটেলে ফিরে এলাম। শরীফ ভাই, রাজিব ভাই রুবেল মিলে আমরা আড্ডা দিলাম কিছুক্ষণ। এরপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
২৫ এ নভেম্বর, শনিবার
সকাল ছয়টার দিকে ঘুম ভাঙ্গল। ফ্রেস হয়ে নিলাম। আমি আর রুবেল মিলে বের হলাম শহরে একটু হাঁটার জন্য। আমাদের পাশেই রাজিব ভাই এবং শরিফ ভাইর এর রুম। উনারা ঘুমুচ্ছিল। ডিস্ট্রাব করার জন্য উনাদের রুমের কলিং বেল চাপলাম আমরা। বড়দের ডিস্ট্রাব করার মত মজার জিনিস আর কি হতে পারে?
সকালে সব কিছুই কেমন নিরিবিলি ছিল। হাঁটতে ভালোই লেগেছিল। একটা টং এর দোকান থেকে চা খেয়ে নিলাম। চা এর পাতার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছিল। কি সুন্দর ঘ্রাণ।
হোটেলে ফিরলাম আটটার দিকে। হোটেলেই আমাদের জন্য কমপ্লিমেন্টারি নাস্তার ব্যবস্থা ছিল। ব্যুফে। সবাই মিলে এক সাথে বসে নাস্তা করলাম। অনেক গুলো আইটেম ছিল। খাবার গুলো মোটামুটি ভালোই ছিল।
দশটা থেকে BITPA অনুষ্ঠান শুরু। অনুষ্ঠানটি হয়েছে এখানের জাদুঘরের গ্যালারিতে। সিটি ইনের পাশেই জাদুঘর। আমরা গেলাম। স্পিকাররা কি বলল শুনলাম। নিজে কিছু বলার চেষ্টা করলাম। এভাবেই দুপুর হয়ে গেলো। রুমে ফিরে আসলাম এরপর। রুমে আমাদের জন্য দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দিল।
দুপুরের খাবারের পর একটু রেস্ট নিয়ে আবার গেলাম অনুষ্ঠানে। কিছুক্ষণ থেকে বের হয়ে চলে গেলাম খুলনা ইউনিভার্সিটিতে। ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঐখানে ছিল ইউনিভার্সিটি ডে। অরিন্দ পল ছিল সাথে। ছিল আমার কাজিন ফয়সাল ও। সেখানে ঘুরে ফিরে এলাম হোটেলে। ইভেন্ট তখনো শেষ হয় নি। এখানে র্যাফেল ড্র হলো। আমাদের ক্রেস্ট দিল। ইভেন্ট শেষ করে মাসনুন ভাই এর সাথে শর্মা হাউজে গেলাম। কথা বললাম। এরপর ফিরে এলাম আবার হোটেলে।
আমাদের জন্য রাতে ডিনারের ব্যবস্থা করা হলো BITPA থেকে। সকল গেস্ট এবং অরগানাইজারদের সাথে। এক সাথে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করলাম। সকাল সকাল খুব আগে আগে ঘুম থেকে উঠায় খুব ঘুম পাচ্ছিল। রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
২৬ এ নভেম্বর, রবিবার
পরের দিন ও সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলো। আমাদের প্ল্যান ছিলো ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে বাগেরহাট যাওয়া। ঐখানে ষাট গম্বুজ মসজিদ ও খান জানাহ আলীর মাজার দেখতে যাওয়া।
ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম হোটেলের রেস্টুরেন্টে। গত কাল যে সব আইটেম ছিল, আজ দেখি অন্য অনেক গুলো নতুন আইটেম। খেতে বসার পর দেখলাম শরীফ ভাই, মাসুদুর রশীদ ভাই সহ অন্যরাও যাবে। তিতাস ভাই সবার জন্য মাইক্রো ঠিক করে নিল। মাইক্রো হচ্ছে নদীর অন্য পাড়ে। তাই প্রথমে আমাদের রূপসা ঘাটে গিয়ে নদী পার হতে হলো। ট্রলারে করে পার হয়েছি। অন্য পাড়ে গিয়ে মাইক্রোতে করে রওনা দিলাম বাগেরহাটের দিকে।
আমরা প্রথমে গেলাম খান জাহান আলীর মাজারে। ঐখানে মাজারের পাশে বিশাল একটা দিঘী রয়েছে। দিঘীর পাশ দিয়ে পুরোটা আমরা ঘুরে এসেছি। ভেবেছিলাম পুরোটা রাস্তাই দিঘীর পাশ দিয়ে। পরে গিয়ে দেখলাম কিছুদূর যাওয়ার পর দিঘীর পাশ দিয়ে যাওয়ার আর রাস্তা নেই। অন্য রাস্তা ঘুরে আসতে হয়েছে। একটা ভালো হয়েছে কারণ আমরা ঐখানে একটা নয় গম্বুজের মসজিদ দেখতে ফেলাম।
দিঘীর পাড়ে কুমির দেখতে পেলাম আমরা। বিশাল একটা কুমির। এখানে নাকি আগে দুইটা কুমির ছিল। এখন একটাই আছে। ভাগ্য ভালো যে আমরা দেখতে পেয়েছি।
খান জাহান আলীর মাজার থেকে ফেরার পথে নামলাম ষাট গম্বুজ মসজিদ। এখানেও বিশাল একটা দিঘী রয়েছে। দিঘীর পানিতে গোসল করতে ইচ্ছে করছিল। হাতে সময় থাকলে এবং জামা কাপড় নিয়ে গেলে নিশ্চিত করতাম।
আমাদের হাতে খুব কম সময় ছিল। ছোট বেলায় যখন ষাট গম্বুজ মসজিদ নিয়ে পড়েছি, তখন ইচ্ছে করত নিজেই গুণে দেখতে কয়টা গম্ভুজ। এখন তো বড় হয়েছি। ইচ্ছেটা এখনো রয়েছে, কিন্তু গুণা হয় নি। হয়তো ইনশাহ আল্লাহ আরেকদিন। আর এখানে একটা যাদুঘরও রয়েছে। তাও দেখা হয়নি। ফিরে এসেছি আমরা খুলনাতে। অন্য কোন সময় গেলে এসব মিস করব না আশা করি।
সকালে বের হওয়ার সময় আমরা হোটেল চেক আউট করে ব্যাগ গুলো হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে রেখে গিয়েছিলাম। হোটেলে ফিরে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম তাদের রেস্টুরেন্টে। আমাদের ফ্লাইট সন্ধ্যা ছয়টা দশ এ। নভোএয়ারের বাস রয়েছে যা ৩টার দিকে ছাড়বে। তাই আমরা দ্রুত রেডি হয়ে বাস স্টপেজের দিকে গেলাম। যাওয়ার সময় দেখলাম নভোএয়ারের বাসটি। আমরা ভাবলাম বাসটি হয়তো স্টপেজের দিকেই যাচ্ছে। তাই আমরা স্টপেজের দিকে গেলাম। কিন্তু পরে দেখা গেলো বাসটি আসলে যাত্রী নিয়ে যশরের দিকে রওনা হয়েছে।
পরবর্তী ঘটনা গুলো খুব নাটোকীয় ভাবে ঘটেছে। বাস স্টপেজ ছিল একটা হোটেলের সামনে। পরে হোটেলে গিয়ে ঐ বাসের কন্ট্রাকটরের নাম্বার নিয়ে বাসওয়ালাকে কল দেওয়া হলো যেন বাস আমাদের জন্য অপেক্ষা করে। এছাড়া পাশা পাশি এখানে US-Bangla এয়ারের বাসও যাত্রী নিয়ে যশোর যাবে। তাদের সাথে কথা বললে ড্রাইভার জানালো উনি শিউর না আমাদের ৬টার মধ্যে যশোর পৌছাতে পারবে কিনা।
পরে নভোএয়ারের বাস সামনে আমাদের জন্য থামল। আমরা মাহিন্দ্রা নামক অটোতে করে বাসের কাছে গিয়ে উঠে পড়লাম। নিশ্চিত হলাম আমরা ফ্লাইট মিস করছি না।
কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর পড়লাম জ্যামে। হিসেব করে দেখা গেলো আমরা সময় মত পৌছাতে পারব না। বাসে নভোএয়ারের যে রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিল, উনি এয়ারপোর্টে ফোন করে আপডেট দিল। বলল ঢাকায় জানাতে। এভাবে করতে করতে আমরা ৬টা ১৫ এর দিকে এয়ারপোর্টের রোডে পৌছালাম। কোন এক ভিআইফি হয়তো বের হবে। আমাদের গাড়ি থামিয়ে রাখল। এখানে ছলে গেলো আরো কয়েক মিনিটের মত।
আমরা নেমেই বোর্ডিং পাস নিতে চলে গেলাম। বাসে যাত্রী মোট ২৬ জন ছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই খুব দ্রুত সবাইকে বোর্ডিং পাস দিল। বিমানের ইঞ্জিন আগেই চালিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা উঠে বসার আগে আগেই বিমান রানওয়ের দিকে ছুটতে লাগল। ৬টা ৩০ এর দিকে ফ্লাই করল। ৭টার দিকে আমরা এসে ঢাকায় নামলাম।
যশোর থেকে খুলনা যাওয়ার রাস্তা বেশি একটা ভালো না। যেতে বা আসতে আড়াই থেকে তিন ঘন্টার মত লাগে। এয়ারের টিকেট কেটে বাসে ভ্রমণ করার এর থেকে বড় সুযোগ অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। বাসের পেছনে বসতে পারলে রোলার কোস্টারের অনুভূতি পাওয়া যাবে। একের ভেতর তিন।
খুলনা শহরটা ভালো লেগেছে। বাগেরহাটও। বইতে কতবার যে পড়েছি। এত বছর পর দেখার সুযোগ হলো। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে।
ধন্যবাদ ভাই ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য 🙂
🙂