হোটেলের ছেলেটি বা জীবনের মানে

বাবার সাথে যখন রেস্টুরেন্ট এ খেতে আসতাম তখন ও ছেলেটিকে দেখতাম। এখনো খেতে আসলে দেখি।

আগে যখন আসতাম তখন ছেলেটি ছোট ছিল, আমিও। আমার সাথে সাথে ছেলেটিও বড় হতে লাগল। নাকি ছেলেটির সাথে সাথে আমি?

আগে যখন আসতাম, তখন সে ছিল ওয়েটারের হেল্পপার। পানি এগিয়ে দিত, টেবিলটি পরিস্কার করে দিত।

এখন সে নিজে ওয়েটার। সাথে হেল্প করার মত আরেকটা ছোট ছেলে রয়েছে।

আমাকে যখন জিজ্ঞেস করল কিছু লাগবে? আমি বললাম না, উল্টো জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো। বলল ভালো। একটু ভালো নাকি বেশি?

এবার উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে হাসি দিল। হাসি দিলে প্রতি উত্তরে হাসি দিতে হয়? হয়তো হ্যা, নয়তো না। না হলে নাই। আমিও হাসি দিলাম। বললাম বসো। আমি একটু সরে বসলাম। বসতে চাইলো না। জোর করে বসিয়ে দিলাম।

জিজ্ঞেস করলাম এখানে চাকরি করা ছাড়া আর কি করে।

– আর কিছু না।

বিয়ে করেছো?

– না।

কেনো?

অন্য দিকে তাকালো। তারপর আবার আমার দিকে। বলতে ইতস্তত করল।

– যাকে পছন্দ করতাম, তার বিয়ে হয়ে গেছে।

আহ! কেন? তুমি বিয়ের প্রস্তাব দাও নি?

– এক চাচা এর মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়েছি। আমার সাথে বিয়ে দিবে না বলেছিল…

কেনো?

– আগেই বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে তাই। তাছাড়া হয়তো আমাদের অনেক টাকা নেই, তাই হয়তো।

এখন কি করবে?

– কিছু না।

মানে এখানে জব করা ছাড়া ভবিষৎএ কি করতে চাও?

– বিশাল একটা রেস্টুরেন্ট দিব…

– এরপর?

এরপর জানি না।

ছেলেটির মত আমিও জানি না। আমি এরপর কি করব। ছেলেটির সাথে নিজের মিল খোজার চেষ্টা করি। সেও পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে পারি নি। আমি ও না। তার পছন্দের মেয়েটির ও বিয়ে হয়ে যায়, আমার পছন্দের মেয়েটির ও বিয়ে হয়ে যায়। অমিল হচ্ছে তার হয়তো টাকার না থাকার কারণে বিয়েটা হয় নি। আর আমার টাকা থেকেও…

আমি মেয়েটিকে বুঝতে পারতাম না। বার বার নিজেকে প্রশ্ন করতাম, ইতি আমাকে ভালোবাসে? সুন্দর হাসি আর সুন্দর কথায় আমি বার বার ধোকা খেতাম। নিজেকে শান্তনা দিতাম, সত্যিই আমাকে ভালোবাসে।

ইতি একদিন একটি ছেলে কিয়ে নিয়ে আসল। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। নিলয়, এ হচ্ছে সূজন।

আমি ভাবলাম পরিচিত কেউ, কাজিন বা কোন বন্ধু। প্রশ্ন করি নি।

আস্তে আস্তে আমার থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। এই অজুহাত ঐ অজুহাত। বিশ্বাস করতাম।

একদিন সুজনের সাথে ইতির এঙ্গেজম্যান্ট হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে বলে নি, জানতাম না। এক দিন পর জেনেছি। অন্য বন্ধুর মাধ্যমে। কষ্ট পেয়েছি। আমাকে বলতে পারত। বলে নি। বলতে পারত নিলয়, আমি তোমাকে নয় সূজনকে ভালোবাসি।

এটাকে ধোকা বলে? হয়তো হ্যাঁ। হয়তো না। হয়তো ইতির সময় কাটানোর সঙ্গী ছিলাম। হয়তো তার কাছে আমি বোরিং হয়ে গিয়েছি। নতুন জীবনের জন্য নতুন সঙ্গী খুজে নিয়েছে। আমাকে একা রেখে। সে হয়তো ভালো আছে। সুজন কে বিয়ে করে। আমি ভালো নেই। এখনো প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধু এসবের মানে খুজে ফিরি। জানি না কবে এসবের মানে জানতে পারব। আচ্ছা হোটেলের ছেলেটি ও কি এমন মানে খুজে বেড়ায়? জিজ্ঞেস করলে হয়তো বলত। থাক না, কিছু জিনিস না জানাই থাক… এতটুকু জানি, আমি যতটুকু কষ্ট পাই, ছেলেটিও ততটুকু কষ্ট পায়। কষ্ট পরিমাপ করতে পারলে জানতাম কারো কষ্ট কারো থেকে একটুও কম নয়।

Leave a Reply