সাইন্স ফিকশন – অ্যালগোরিদম

পুরো সিস্টেমটি কন্ট্রোল করে পৃথিবীর সকল মানুষকে। এক একটা বিষয় কন্ট্রোল করার জন্য রয়েছে এক একটা অ্যালগরিদম। একটা মানুষ কি খাবে, কখন খাবে, কখন ঘুমাবে, কখন ব্যয়াম করবে, কখন ঘুরতে বের হবে সব কন্ট্রোল করে সিস্টেমটি। এ নিয়ম গুলো থেকে ব্যতিক্রম হলে আবার রয়েছে শাস্থির ব্যবস্থা। কম শাস্থি থেকে অনেক ভয়াবহ সব শাস্থি।

প্রথম প্রথম যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স উন্নত হচ্ছিল , মানুষ অনেক খুশি হয়েছিল। মানুষের অনেক কাজ করতে হবে না। প্রায় কাজই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সমৃদ্ধ মেশিন দিয়ে করে নেওয়া যাবে। প্রথম দিকে এই ইন্টিলিজেন্স মূলত কন্ট্রোল করত মানুষরাই, কোন সমস্যা থাকলে আপডেট করে নিত।এরপর ঐ সিস্টেম যেন নিজেকে নিজে আপডেট করে নিতে পারে, সে অ্যালগরিদম তৈরি করে দিল। এরপর থেকে প্রথম প্রথম সিস্টেমটি অনেক ভালো ভালো কাজ করত। মানুষের জন্য। এরপর আস্তে আস্তে নিজের খাম খেয়ালি সব কাজ শুরু করল। মানুষদের নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা শুরু করল। নতুন নতুন অ্যালগরিদম ডেভেলপ করে তা মানুষের উপর প্রয়োগ করা শুরু করল।

এমনকি সিস্টেমটি ঠিক করে দেয় কার সাথে কে কম্প্যাটিবল। কত পারসেন্ট কম্প্যাটিবল। যার সাথে যে কম্প্যাটিবল, শুধু মাত্র তার সাথেই কথা বলতে দিত সিস্টেমটি। নিজের পছন্দ বলতে কিছুই নেই। একজনের সাথে আরেকজনের বিয়েও হত এই কম্প্যাটিবিলিটির উপর নির্ভর করে।

সর্বোচ্চ কম্প্যাটিবল হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের পর দেখা যেত একজন আরেকজনের সয্য করতে পারে না। একজন আরেকজনের সাথে মানিয়ে চলতে পারে না। জগড়া হয়ে অনেকেই সুইসাইড করে। সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে সুইসাইড করার কোন সুযোগ নেই। সিস্টেম সব কিছু মনিটর করে। কিন্তু তারপর ও ঐ মানুষ গুলো ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় সুইসাইড করে। এ নিউজ গুলো প্রকাশ হয় না। কারণ কোন নিউজ মানুষ পড়বে, তাও ঠিক করে দেয় সিস্টেমটি।

মানুষ গুলো আস্তে আস্তে সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগল। কিন্তু তাদের কিছুই করার ছিল না। সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বললে রয়েছে ভয়াবহ সব শাস্থি।

একটা ছোট্ট ছেলের বাবা সিস্টেমের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সিস্টেমটি তার বাবাকে নিয়ে যায়। ছেলেটির নাম অলিভার । তার বাবা আদর করে অলিভ বলে ডাকত। অলিভের বাবাকে আর ফেরত দিয়ে যায় নি। সে বুঝতে পারল তার বাবাকে হয়তো সে আর কখনো ফিরে পাবে না।

অলিভ সিস্টেমকে হ্যাক করার চেষ্টা করে। সে বিশ্বাস করে সব মেশিনই হ্যাক করা সম্ভব। এই বিশাল সিস্টেমটিও। সমস্যা হচ্ছে কেউ যদি সিস্টেমকে হ্যাক করার চেষ্টা করে, তাহলে করা ধরা খেলে সাথে সাথে মৃত্যুদন্ড দিয়ে দেয়।

অলিভার সিস্টেমটির ভুল গুলো খুঁজতে লাগল। আস্তে আস্তে পুরো সিস্টেমটির ব্যকডোর গুলো সম্পর্কে ধারণা নিল। তারপর একটা প্রোগ্রাম লিখল। সিস্টেমটির নলেজ বেজ ধংশ করার জন্য। এমন ভাবে ইরেজ করতে হবে যেন ব্যাকআপ থেকে রিস্টোর করার কোন সুযোগ না থাকে। আর তা সম্ভব শুধু নলেজ বেজকে ঠিক রেখে সব গুলো ডেটার অল্প কিছু অংশ পরিবর্তন করে দেওয়া। তাতেই সব গুলো ডেটা গারবেজে পরিণত হবে। নলেজ বেজ ছাড়া সিস্টেমটি অচল হয়ে পড়বে। সুন্দর আইডিয়া, এবং সে জানে আডিয়া হচ্ছে বুলেটপ্রুফ।

অভি সিস্টেমের কাছে ধরা খেয়ে যায়। সে জানে তার মৃত্যু কার্যকর করা হবে।

তার মৃত্যু কার্যকর করার আগেই সিস্টেমটিকে তার ছোট্ট প্রোগ্রামটি আক্রমণ করতে পারে। সিস্টেমটি অলিভকে ধরে ফেলার আগেই একটা ব্যকডোর দিয়ে তার প্রোগ্রামটি পুশ করে দিতে পারে সে।

আস্তে আস্তে সিস্টেমের সকল মনিটর, সকল সেন্সর অচল হয়ে পড়ে। ততক্ষণে সব মানুষ সিস্টেমের একটা অদৃশ্য জ্বাল থেকে বের হয়ে যায়। মুক্ত ভাবে ডানা মেলার স্বাধ পায়। নিজ ইচ্ছে মত কাজ করার সুযোগ পায়।

ছেলেটি ঐ পাহাড়ের দিকে চলে যায়। সিস্টেমের মতে ঐ নিষিদ্ধ পাহাড়ের দিকে। অথচ কতদিনই না তার ঐ পাহাড়ে যেতে ইচ্ছে করত। রুমের কাচের জানালা থেকে শুধু তাকিয়ে দেখত। আজ সে যেখানে যেতে পারবে। পাহাড়ে বসে সকালের সূর্যদয় আর বিকেলে সূর্যস্ত দেখাতে পাবে। এটাই স্বাধীনতা, আহ!

Leave a Reply