রিহান ভাইয়ার দর্শন

দৃষ্টি আপুর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর রিহান ভাই অনেক দিন মন খারাপ করে ছিল। আমরা উনাকে বাহিরে বের হতে দেখিনি কয়েক দিন। এরপর বের হলেও কারো সাথে কথা বলত না।

দৃষ্টি আপুকে উনি অনেক পছন্দ করত। দৃষ্টি আপুও পছন্দ করত রিহান ভাইকে। কিন্তু দৃষ্টি আপুর বাবা মা রিহান ভাইয়াকে পছন্দ করত না। পছন্দ না করার পেছনে কারণ ছিল রিহান ভাইয়ার জব ছিল না।

অনেক দিন মন খারাপ থাকার পর একদিন আমাদের বলে, চল সবাই মিলে কথা বলি।

আমাদের বাড়িতে অডিটোরিয়ামের মত একটা জায়গা আছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেখানে হয়, যেখানে আমরা সবাই একত্রিত হলাম। ভাইয়া কথা বলল। উনি শুরু করল এভাবেঃ

জীবন থেকে তুমি তাই পাবে, যা তুমি চাইবে। এর থেকে বেশি পাবা না। কম ও পাবা না। তাই চাইতে হবে। যতটুকই পারো, যত বেশি পারো, চাও। এরপর সে অনুযায়ী চেষ্টা কর। তুমি যা চাইবে, হয়তো তা পেতে কষ্ট হবে। আবার সহজেই পেয়ে যেতে পারো। কিন্তু তুমি না চাইলে কোন দিন ও পাবে না। কেউ তোমাকে এমনি এমনি কিছু দিবে না। হয়তো দেখবা কেউ কেউ সহজে অনেক কিছু পেয়ে যাচ্ছে, তা দেখে মনে মনে বলবে, ঐ ব্যাক্তি কত সহজেই সব পেয়ে যাচ্ছে, আর আমি?! তুমি তো দেখো নি ঐ ব্যাক্তি তার সফলতার জন্য কি কষ্ট করেছে। তার পজিশন থেকে দেখলে হয়তো দেখতে পেতে সে কত কষ্ট করেছে। কাউকে সহজেই বিচার করতে যেও না। আমাদের নিজ নিজ জীবন নিজেদের কাছে কঠিনই মনে হয়। অন্যদের জীবন সহজ মনে হয়। আমরা বুঝতে পারি না কে কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই সন্মান করার চেষ্টা কর, সবাইকে। সব পেশার মানুষকে।
এভাবে শেষ করার পর বলল পরের দিন ও বলবে।

ঐ দিন আমরা পরে অনেক হাসা হাসি করেছি ভাইয়াকে নিয়ে। কেউ কেউ ছ্যাকা খেয়ে পাগল হয়। ভাইয়া হয়েছে দার্শনিক। বেচারা! যদিও কথা গুলোও আমাদের অনেক ভালো লেগেছিল।

পরের দিনও আমরা ভাইয়ার কথা শুনতে গেলাম। ভাইয়া কথা বলা শুরু করল। আমরা মন দিয়ে শুনলাম।

কেউ ভুল করলে তাকে শুধরিয়ে দিও। আমরা মানুষ গুলো সহজেই ভুল করে বসি। ছোটরা ভুল করলে বড়রা অনেক ধমক দিতে দেখি। বড়রা কি ভুল করে না? তারাও ভুল করে। তারা বড় বড় ভুল করে। তাই কেউ যদি কোন ভুল করে, তাকে বুঝিয়ে দিও কেন ঐটা ভুল। সঠিকটা দেখিয়ে দিও। একবার সঠিক পথ দেখিয়ে দিলে সে আর ভুল নাও করতে পারে। ভুল খোঁজা সহজ। কেউ খারাপ করলে আমরা তার খারাপ গুণ গুলোই খুজে বের করি। ভালো গুণ গুলো দেখি না। তুমি খুঁজে দেখিও, সব গুলো মানুষ ভুলের পাশা পাশি অনেক গুলো ভালো কাজ করে। সব সময় ভুল না খুঁজে মাঝে মাঝে তার ভালো কাজ গুলোর কথা তাকে বলিও। সে আরো বেশি ভালো কাজ করতে উৎসাহিত হবে। এক সময় ভালো কাজ গুলো দ্বারা ভুল কাজ গুলো ঢাকা পড়ে যাবে।

এভাবে প্রতিদিন। আস্তে আস্তে ভাইয়া কথা বলার সময় লোক বাড়তে লাগল। একদিন এক একটা বিষয়ের উপর কথা বলত। প্রায় সময়ই আমাদের বই পড়তে বলত। বলতে জানতে। যতটুকু পারা যায়। বলত, যারা বই পড়ে, যারা জানে, তারা সব কিছু সহজেই বুঝতে পারে। বুঝতে পারে জীবন সম্পর্কে, মানুষ সম্পর্কে, ভালোবাসা সম্পর্কে। জানার মধ্যে মজা রয়েছে। যত বেশি জানবে, তত বেশি জানতে ইচ্ছে করবে।

একদিন ভাইয়া বলল, আজই উনার কথা বলা শেষ। উনি কানাডা চলে যাবে। পড়ালেখা করতে। প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ আসতে লাগল। ঐ দিন আমাদের অডিটোরিয়ামটা পুরাপুরি ভরে গিয়েছিল। অনেক মানুষ এসেছিল। ভাইয়া বলতে লাগলঃ

আমরা যে যত ভালোই হই না কেন, আমাদের থেকে ভালো লোক ও রয়েছে। আমাদের থেকে সেরা লোক রয়েছে। তুমি আজ যেখানে রয়েছ, সারা জীবন সেখানে থাকবে না। তোমার বর্তমান জায়গা দখল করার জন্য অনেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছে। তাদের কেউ না কেউ সফল হবে। তুমি রিপ্লেসড হয়ে যাবে। তা নিয়ে মন খারাপ করো না। সামনের দিকে দেখো। অনেক বিশাল পথ পড়ে রয়েছে। পৃথিবীটা অনেক বড়। অনেক গুলো পথ রয়েছে। যে কোন একটা পছন্দ করে চলতে থাকো। থেমে থেকো না। আস্তে আস্তে হোক, সমস্যা নেই। যাও, একটু একটু করেই। প্রতিটা দিন নিজের মত করে সুন্দর। কোন দিন খারাপ যাবে। কোন দিন ভালো যাবে। ভালোর পেছনে খারাপ কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার খারাপের পেছনেও ভালো কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে। যাই ঘটে না কেন, সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। ভালো থাকবে সবাই।

ভাইয়া কথা শেষ করে চলে গেলো। রেখে গেলো মনে রাখার মত অনেক সুন্দর সুন্দর কথা।

1 thought on “রিহান ভাইয়ার দর্শন”

  1. সত্যিই রিহান ভাইয়ার কথাগুলো আমারো মনে ধরেছে। প্রতিটা মানুষের কাছে তার নিজের জীবন অনেক কঠিন। জীবনে কিছু পেতে গেলে কিছু পরিশ্রম তো করতেই হবে। জীবনের প্রতিটা দিনই যদি আমরা নিজেদের কাজের পেছনে ব্যয় করতে পারতাম তাহলে আমদের মাঝ থেকেও অনেক ইউনিক বিলগেটস তৈরি হবে।

    Reply

Leave a Reply