ভাসমান পেয়ারা বাজার, দূর্গাসাগর দিঘী ও গুটিয়া মসজিদ ভ্রমণ

ভাসমান পেয়ারা বাজার শুনতেই কেমন এক্সাইটিং লাগত। অনেক ছবি দেখলাম ফেসবুকে। নিজ চোখে দেখার জন্য ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। গত ২৭ তারিখ, বৃহস্পতিবার স্বপ্নযাত্রা ট্রাভেল গ্রুপের সাথে চলে গেলাম দেখতে। যাওয়ার পথটা অনেক এক্সাইটিং ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর ঘাট চলে চলে গিয়েছি, উঠেছি সুন্দরবন ১০ লঞ্চে। সুন্দরবন ১০ অনেক বিশাল লঞ্চ, দেখতেও দারুণ। আমরা প্রায় বিশ জন এক সাথে রওনা দিলাম বরিশালের উদ্দ্যেশে।

লঞ্চে আমরা কোন কেবিন নেই নি। ডেকে করে রওনা দিয়েছি। লঞ্চ ছেড়েছে সাড়ে নয়টার দিকে। ততক্ষণে আমাদের ক্ষিদা লেগে গেলো। আমি বাসা থেকে রওনা দিয়েছি ৫টায়। সদরঘাট পৌছেছি ৮টার দিকে। বৃহস্পতিবার হওয়াতে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল। ঠিক মত পৌছাতে পারি কিনা, এ জন্য বলা যায় দৈনিক বাংলা থেকে সদরঘাট হেঁটে হেঁটেই যেতে হয়েছে। এ জন্য হয়তো ক্ষিদা একটু বেশি লেগেছে। মামুন ভাই দেখলাম আমাদের জন্য পুরান ঢাকার নবাব থেকে খাবার নিয়ে নিয়েছে আগেই। চিকেন বিরিয়ানি। খাবার যথেষ্ঠ ভালো ছিল। খাওয়া দাওয়া করে লঞ্চের এদিক সেদিক আমরা কিছুক্ষণ হাঁটা হাঁটি করলাম। এরপর কেউ কেউ কার্ড খেলল বসে। মাঝখানে একটু ঘুমিয়ে নিলাম।

সকাল পাঁচটার দিকে আমরা বরিশাল পৌঁছাই। নামতে নামতে সাড়ে পাঁচটা। সকালের নাস্তা করার জন্য আমরা ঢুকলাম চট্রগ্রাম মুসলিম হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে। বরিশালে এসে চট্রগ্রাম হোটেলে, খারাপ না। নাস্তা করে অটোতে করে রওনা দিলাম জুম্বদ্বীপ ব্রিজ, বানারিপাড়ার উদ্দেশ্যে। সকালের বরিশাল, পুরা শান্ত। রাস্তার দুই পাশে অনেক ফলের গাছ চোখে পড়ল, বিশেষ করে আমড়া গাছ। গাছে রয়েছে প্রচুর আমড়া। জুম্বদ্বীপে যেতে প্রায় এক ঘন্টার মত লেগেছে। এরপর সেখানে থেকে উঠলাম একটা ট্রলারে। উদ্দেশ্য পেয়ারা বাগান।

ট্রলারে আমরা

 

নৌকার উপর অনেক গুলো নৌকা

 

 

 

ট্রলারের ভ্রমনটা দারুণ। ভাসমান পেয়ারা বাগান হচ্ছে ভিমরুলীতে। ঐটা অন্য আরেকটা জেলায়, ঝালকাঠীতে। জায়গাটাতে অনেক খাল রয়েছে। খালের মধ্য দিয়ে ট্রলারে করে যেতে ভালো লাগছিল। দুই পাশে মানুষের বাড়ি ঘর চোখে পড়ছিল। বড় খাল থেকে আমরা যখন ছোট খালে ঢুকলাম, তখন দুই পাশে প্রচুর পেয়ারা বাগান চোখে পড়ল। ট্রলার থেকেই পেয়ারা ধরা যাচ্ছিল। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর আমড়া গাছ ও । ঝালকাঠি,পিরোজপুর,বরিশাল এই তিনজেলার প্রায় ৩১ হাজার একর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়। চাষীরা পাকা পেয়ারা পেড়ে নিয়ে যায় বিক্রি করার জন্য।

 

গাছ থেকে পাঁকা পেয়ারা পাড়া হচ্ছে

 

ছোট্ট খালের দুই পাশেই রয়েছে প্রচুর পেয়ারা বাগান

আমরা একটু সকাল সকাল পৌছে গিয়েছি ভিমরুলীতে। ঐখানে নেমে আমরা একটু ঘুরা ঘুরি করলাম। একটা বিদ্যালয় এর মাঠে কেউ কেউ ফুটবল খেলল। প্রথম দিকে বল না থাকায় জাম্বুরা দিয়ে খেলার চেষ্টা করল। এরপর ঐখানকার ছেলেরা বল নিয়ে আসলে ফুটবল দিয়ে খেলল।

 

ভিমরুলী বাজারের এখানে একটা দোকান থেকে মিষ্টি কিনে নিল মামুন ভাই। মিষ্টি গুলো দারুণ ছিল। আমরা যাওয়ার পর ছোট ছোট নৌকায় করে আস্তে আস্তে অনেকে পেয়ারা নিয়ে আসতে লাগল। ছোট নৌকা থেকে পেয়ারা গুলো বক্স করে বড় ট্রলারে উঠানো হচ্ছিল। আমাদের জন্য অনেক গুলো পেয়ারা কেনা হলো। আমরা পেয়ারা নিয়ে রওনা দিলাম নেছারাবাদ, পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে।

 

ভাসমান পেয়ারা বাজার

 

ভাসমান পেয়ারা বাজার

 

পিরোজপুর যাওয়ার পথে আমরা এক জায়গায় ট্রলার থামিয়ে গোসল করলাম। কড়ই গাছের উপর উঠে খালে লাফ দিলাম। ছোটবেলায় এমন গাছে উঠে পুকুরে লাফ দিতাম। অনেক দিন পর এমন লাফ দেওয়ার সুযোগ হলো। এরপর আবার রওনা দিলাম। ট্রলার থেকে নামলা নেছারাবাদ, পিরোজপুরে। সেখানে জুমার নামাজ পড়লাম এবং দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। নেছারাবাদ বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে আবার রওনা দিলাম বরিশালের উদ্দেশ্যে।

বাস থেকে নেমেছি দূর্গাসাগর দিঘী দেখার জন্য। দিঘীটি অনেক বড়। এটি হচ্ছে মাধবপাশায়, বরিশাল জেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। বরিশাল বিভাগের প্রাচীন নাম ছিল নাকি চন্দ্রদীপ। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ন ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে তার স্ত্রী দূর্গানীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে এই দিঘীটি নাকি খনন করেন।

দূর্গাসাঘর দিঘীর একাংশ

 

দিঘীর পাড়ে আমরা

দূর্গাসাগর দিঘী দেখার পর দেখতে গেলাম গুঠিয়া মসজিদ। দেখতে অসাধারণ এই মসজিদটি। চার পাশে ফুলের বাগানের ভেতর দিয়ে রয়েছে মানুষ হাটার জন্য রাস্তা। অনেক মানুষ এটি দেখতে আসে।

বরিশাল গুঠিয়া মসজিদ

গুঠিয়া মসজিদে কিছুক্ষণ থেকে আবার রওনা দিলাম আমরা বরিশালের উদ্দ্যেশে।  সন্ধ্যায় আবার সুন্দরবন ১০ এ উঠলাম, গন্ত্যব্য ঢাকা।

 

Leave a Reply