ছুটি রিসোর্টে আমাদের ছুটি

যারা জব করে, তারা বিভিন্ন মানুষের সাথে দেখা করা, কথা বলা বা ঘুরাঘুরি করার সুযোগ অনেক বেশি পায়। আমরা যারা অনলাইন প্রফেশনাল, আমরা যেখানে যাই, সেটাই আমাদের অফিস। আর দেখা যায় বাসার বাহিরে খুব একটা যাওয়া হয় না। অন্য দের সোশাল হওয়ার সুযোগ বেশি হলেও আমাদের সোসাল হওয়ার সুযোগ কম। সোসাল নেটওয়ার্কে সবচেয়ে বেশি অ্যাক্টিভ হয়েও আমরা কিছুটা আনসোসাল।

আগে ওডেস্ক বা ইল্যান্স থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো, আমরা ফ্রিল্যান্সাররা মিলিত হওয়ার সুযোগ পেতাম। এখন আর এই সুযোগ নেই। ওডেস্ক ইল্যান্স মার্জ হয়ে আপওয়ার্ক হয়েছে। আর তারা আগের মত অফিশিয়াল মিটয়াপের আয়োজন করে না। যাদের সাথে বিভিন্ন ইভেন্টে দেখা হয়, তারা সবাই মিলে ভাবলাম, আমরা নিজেরাই তো মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে পারি। গত বছর আমরা এরকম ঘুরতে গিয়েছি জল ও জঙ্গলের কাব্যে, এছাড়া জিন্দা পার্কে। এবার সবাই মিলে প্ল্যান করলাম ছুটি রিসোর্টে একটি দিন সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে পার করে দেওয়ার।

অনেক প্ল্যান করে আমরা ঠিক করলাম ৪ তারিখ, রবিবারে ঘুরতে যাবো। রবিবার হচ্ছে আমাদের জন্য উইকেন্ডের মত। আমাদের বেশির ভাগই US বা ঐরকম টাইম মেনে কাজ করতে হয়। এ জন্যই। সকাল সকাল আমরা রওনা দেই ছুটি রিসোর্টের উদ্দেশ্যে। আমাদের কেউ কেউ নিজেদের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছে। বাকিদের জন্য কোস্টার। সবাই মিলিত হয়েছি আমরা ৩০০ ফিট। এরপর এক সাথে রওনা দিয়েছি ছুটি রিসোর্টের দিকে।

ছুটি রিসোর্টটি হচ্ছে গাজিপুরে। ঢাকা থেকে কাছেই বলা যায়। যদিও জ্যামের কারণে এই স্বল্প দূরত্ব যেতেও প্রায় ২ ঘন্টার মত লেগে গেলো আমাদের। সকালের নাস্তা আমরা ছুটি রিসোর্টেই করে নিলাম। ব্যুফে নাস্তা। আইটেম যদিও অল্প কিছু। খিছুড়ি, পরোটা, ডিম, সবজি, ডাল এবং চাটনি। নাস্তা করার পর চা খেয়ে আমরা নিজ নিজ মত করে ঘুরতে লাগলাম। ছোটখাট একটা রিসোর্ট, অনেক গোছানো। এখানে ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা রয়েছে, ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে টেবিল টেনিস। ফুটবলও খেলতে পারবেন চাইলে।

সুন্দর একটা সুইমিং পুল ছিল এখানে। ঠান্ডা পানির কথা চিন্তা করে আর নামতে ইচ্ছে করেনি। ভাই ব্রাদার অন্যরা যদিও নেমে অনেক মজা করেছে। আমরা যারা পুলে নামি নাই, তারা বসে বসে আড্ডা দিলাম। চারপাশ ঘুরে দেখলাম।

 

এখানে অনেক গুলো বরই গাছ আছে, গাছে রয়েছে পাকা বরই। ঢিল মেরে বরই পেড়ে খেয়েছি আমরা। রিসোর্টের চারপাসে একটা খাল রয়েছে। আর তার উপর বসার জন্য সুন্দর চাউনি করা রয়েছে। পানি যদিও কম। তারপরও ভালোই লেগেছে। ছিল ঘোড়া, যার মধ্যে উঠে ঘুরাঘুরি করা যায়।

হাঁটাহাঁটি, আড্ডা, এটা সেটা করতে করতে দুপুরের খাবারের সময় হলো। আমরা খাবার খেয়ে নিলাম। ব্যুফে। পোলাউ, সাদা ভাত, রুই মাছ ভাজি, বেগুন ভাজি, মুরগির রোস্ট, গরু ভুনা এবং ডাল। এছাড়া খাবার শেষে ছিল ফিরনি। খাওয়া দাওয়া করার পর আমরা বসে সবাই মিলে আড্ডা দিলাম রেস্টুরেন্টের পাশেই, কফি খাওয়ার জায়গাতে। টেবিল চেয়ার ছিল গাছের ছাউনির নিছে। সবাই মিলে অনেক আলোচনা সমালোচনা হলো। সুঃখ দুঃখের কথা হলো। কে কি করছে, কিভাবে করছে, এসব জানা হলো । সব শেষে একটাই আক্ষেপ, আমাদের পেপাল নেই। আহারে!

সুমিং পুলে ভাই ব্রাদার
আড্ডার ফাঁকে

বিকেল হয়ে যাওয়ার পর আমরা কিছু গেম খেললাম, যা সবাই মিলে খেলা যায় এমন। একটা গেম ছিল এমন, প্রথমে সবাই সবার নাম বলবে। এই নাম গুলো মনে রাখতে হবে। এরপর একটা বল বা ছুঁড়ে মারা যায় এমন কিছু যে কাউকে মারতে হবে। ছুঁড়ে মারার সময় যার দিকে মারবে, তার নাম বলতে হবে। এই খেলাটির একটা উপকারি দিক হচ্ছে সবাই সবাইকে চিনে নিতে পারে।

এরপর একটা গেম খেলেছি এমন যেখানে একজন নিজের জীবনে এমন কিছু করেছে তা বলবে। বাকি যাদের সাথে ঐটি মিল হবে, তারা ঐ ব্যক্তির গ্রুপে চলে যাবে। এটা খুব সিম্পল হলেও দারুণ লেগেছিল সবাই মিলে খেলতে।

আরেকটা মজার কাজ করেছি আমরা। সবাই মিলে গোল হয়ে দাঁড়িয়েছি। এরপর একজন একটা কথা আরেকজনের কানে কানে বলবে। সে ঐ কথাটাই অন্য পাশের জন্যকে বলবে। এভাবে শেষ পর্যন্ত যে প্রথমে বলেছে, তার কাছে আবার বলবে। তারপর মিলিয়ে দেখবে। দেখা গেলো শুরু করেছি একটা কথা দিয়ে, শেষ হলো অন্য কথায়। কেউই ঠিক মত অরিজিনাল কথাটা পাস করতে পারেনি। এরকম মজা করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। শেষে পুরষ্কার বিতরণ। ঢাকা থেকে প্রিন্ট করে আমরা অনেক গুলো মগ নিয়ে গিয়েছি। সবার জন্যই। মগ নিতে হলে একটা এক্টিভিটি করে দেখাতে হবে। গেম খেলার এবং এবং এই পুরষ্কার নেওয়ার অংশটা খুব দারুণ ছিল। কেউ গান গাইলো, কেউ কৌতুক বল, কেউ অভিনয় করল এভাবেই সবাই একটু একটু করে পারফর্ম করল। এরপর কেক কাটার মাধ্যমে আমাদের ডে-আউট শেষ হলো। ঢাকা থেকে আমরা একটা কেক কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। যেখানে লেখা ছিল অনলাইন ভাই ব্রাদার আপু সিস্টার্স। সবাই মিলে কেক খেলাম। এরপর রিসোর্ট থেকে আমাদের সন্ধ্যার স্ন্যাক্স দিল। একটি দিন খাওয়া দাওয়া, আড্ডা, মজা করে কাটিয়ে তারপর যে যার মত করে ঢাকায় বা নিজ নিজ বাড়ি ফিরলাম, কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে।

Leave a Reply