চাপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণ

উত্তরবঙ্গ ঘুরতে বের হয়েছি। ছিলাম বগুড়া, এরপর সেখান থেকে এসেছি রাজশাহী। রাতে রাজশাহীতে ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করেছি আম এবং লিচু দিয়ে। এরপর রুম চেক আউট করে বের হয়েছি। গন্তব্য চাপাই নবাবগঞ্জ। চাপাই কোথায় যাবো, তখনো জানি না। রাজশাহী থেকে গুগল ম্যাপে দেখলাম এক ঘণ্টার মত লাগবে যেতে। তো শুনেছি চাপাই অনেক আম গাছ। আমি বাস স্ট্যান্ড থেকে নেমে কাছে ধারে কোন আম বাগানে গিয়ে ঘুরে আসব। কিন্তু নামার পর শুনলাম কানসাটের দিকে আম বাগান বেশি। অটোতে করে যেতে হবে। অটো বলতে ইঞ্জিন চালিত ছোট CNG এর মত এক ধরণের যান। কানসাই নেয়াড় জন্য ভাড়া চাইলো ৩০০ টাকা, আবার বাস স্ট্যান্ড দিয়ে যাবে। চাপাই এর সোনামসজিদ অনেক পুরাতন, প্রত্ন সম্পদ। তা কানসাই থেকেও দুরে। তার পাশেই আছে তাপাখানা। তাও প্রত্ন সম্পদ। যেহেতু এসেছি, সেহেতু দেখে চাই। তার জন্য ভাড়া চাইলো ৫০০। পরে ৪৫০ টাকায় রাজি হলো আমাকে নিয়ে গেলো।

যাওয়ার পথের দুই ধারেই অনেক আম বাগান। অনেক আমই এখনো ছোট ছোট। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার হচ্ছে কানসাই। যদিও এখনো তা জমে উঠে নি। কয়েক দিন পর তা জমে উঠবে। সোনা মসজিদ, তাহাখানা মসজিদ   দেখে ফেরার সময় এক জায়গা থেকে আম কিনে নিলাম অল্প কিছু। খাওয়ার জন্য। অটোতে বসে খাওয়ার কারণে রস ছিটকে আমার জামায় পড়ল। দুই পাশের আম বাগান দেখতে দেখতে ফিরে এলাম চাপাই নবাবগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড। ঐখানে এসে অটো বেটা ৪৫০ টাকা এর জাগায় ৫০০ টাকা চেয়ে রাখল। ভদ্র ভাবেই চাইলো।

সোনা মসজিদ
সোনা মসজিদ

 

 

IMG_3228
তাহাখানা মসজিদ

 

 

তাহাখানা মসজিদ এ দুইটি পাথর রয়েছে। একটাকে বলে মুর্দা পাথর, আরেকটা জ্যান্ত। একটা ছোট। আরেকোটা বড়। বড়টা নাকি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে।

IMG_3261
তাহাখানা মসজিদ এর পাশেই আম বাগান
IMG_3278
আম বাগানের পাহারাদার
IMG_3282
আম গাছে ঝুলে আছে অনেক আম
IMG_3304
রাস্তার দুই পাশেই রয়েছে প্রচুর আম গাছ
IMG_3308
আমি নিজে খাওয়ার জন্য কিনে নিয়েছি কয়েকটি

কানসাট থেকে ফেরার পথে আপচুস হচ্ছিল। সব জায়গাতে কারো সাথে না কারো সাথে দেখা হয়েছে। কিন্তু চাপাই খুব কম সময়ের জন্য আসার কারণে কারো সাথে দেখা হয় নি। আম কিনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, এমন সময় Abdul Ouadud আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করল দেখা করবে। পরে আমি নাম্বার দিলাম। উনি আসল। দেখা ও হলো কথা হলো। এরপর উনি আমাকে বাসে উঠিয়ে দিল। সব জাগায় অনলাইন কমিউনিটির কারো না কারো সাথে দেখা হওয়াটা আমার কাছে দারুণ লেগেছে। সবাই এত আন্তরিকতা দেখিয়েছে। আমি ঢাকা বসে যা কল্পনাও করতে পারতাম না। বের হয়েছি একা একা। কিন্তু একটি বারের জন্যও মনে হয় নি আমি একা। কোন জাগায় গিয়ে আমি একা থাকি নি। কেউ না কেউ আমাকে সময় দিয়েছে। আমার এ ভ্রমটাকে দারুণ করে তুলেছে। কৃতজ্ঞতা কিভাবে যে জানাই। বলতে পারি, আমাদের অনলাইন কমিউনিটির মানুষ গুলো যথেষ্ঠ আন্তরিক।

বাস স্ট্যান্ড এসে দেখি আম বিক্রি করে। আম কিনলেই তা আমাকে ঢাকায় আনতে মোটামুটি ভালো কষ্ট সয্য করতে হবে। বাসে উঠাও, বাস থেকে নামাও। আবার বাস স্ট্যান্ড থেকে রেল স্টেশন আনো ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব চিন্তা করেই আম কিনি নাই। পরে আবার মত পরিবর্তন করে কিনে ফেললাম কিছু। ওরা বক্স করে দিল। রাজশাহী নিয়ে আসলাম। বিকেলেই চলে এসেছি রাজশাহী, ট্রেন ১১টা ২০ এ। এই আম গুলো আমার জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরহাদ ভাই এসে নিয়ে গেলো আমাকে উনার রুমে। উনার রুমে আম আর ব্যাকপ্যাক রেখে রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছি আবার। মোটর সাইকেলে করে আবার ঘুরালো। নাস্তা করলাম। এদিক সেদিক ঘুরলাম। সাথে ছিল রানা। এরপর ফরহাদ ভাই এর রুমে এসে কিছুক্ষণ বসে বের হলাম সাড়ে নয়টার দিকে। রেল স্টেশনের কাছে সিটি ফুড নামক রেস্টুরেন্টে এসে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম আমরা। আমি ফরহাদ ভাই আরো একজন। আম গুলো ক্যারি করার দ্বায়িত্ব উনারা নিয়ে নিলো। আমাকে আর ধরতে দেয় নি। একে বারে ট্রেনে উঠিয়ে দিল।

ট্রেনে উঠে দেখি অনেক গুলো আমের বক্স। এক ভদ্রলোকের আম। উনার শ্বশুর বাড়ি রাজশাহীতে। শ্বশুররা থাকে না বাড়িতে। ৫ বছর আগে নাকি উনি একটি বাগানে আম গাছ লাগিয়েছে। সেগুলোতে এখন আম ধরেছে। সেই আম এখন নিয়ে যাচ্ছে ঢাকায়। দারুণ!

গতকাল যখন ট্রেনের টিকেট কেটেছি শীত বাথ নামে আমি জানতাম না কি তা। এখানে এসে দেখি স্লিপিং কোচ। ঘুমাতে ঘুমাতে ঢাকায় যাওয়া যাবে। এক কেবিনে চারটি সিট। দুই পাশে দুইটা করে। একটার উপরে আরেকটা বিছানা। আমাদের কেবিনে ছিল আরো দুইজন। একজন আরেকজনের কাজিন। তারা ঘুরতে এসেছে চাপাই নবাবগঞ্জ। এসে দুই মণ আম কিনলো। সেগুলো কুরিয়ারে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়ে ট্রেনে করে ফিরছে। উনাদের সাথে কথা হল কিছুক্ষণ। সবাই ভ্রমণ প্রিয়। ভ্রমণ নিয়ে অনেক গল্প শুনলাম উনাদের কাছ থেকে। এরপর এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম যখন ভেঙ্গেছে তখন সকাল ৫টা। উনাদের জিজ্ঞেস করি কোথায় আমরা এখন। বলে কমলাপুর। আস্তে আস্তে ট্রেন থামল। ট্রেন থেকে নামলাম। তখন নতুন আরেকটি দিন… সুন্দর একটা ভ্রমণ করে বাড়ি ফেরার মজাই অন্যরকম।

যথেষ্ঠ ভালো লেগেছে আমার। একা বের হয়েও আমার একা মনে হয় নি। একটুর জন্যও না।

এখানে নওগাঁ এবং নাটোর ঘুরা হয় নি। তা ছাড়া মোটামুটি সব জাগায় ঘুরা হয়েছে। ইনশাহ আল্লাহ, কোন এক সময় এ গুলোও এসে ঘুরে যাবো। সব গুলো জাগাই দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। অনেক কিছুই স্কিপ করেছি। সব কিছু সুন্দর ভাবে দেখার জন্য আরো বেশি সময় নিয়ে বের হলে সব সুন্দর মত ঘুরে দেখা যেতো।

3 thoughts on “চাপাইনবাবগঞ্জ ভ্রমণ”

  1. আপনার ভ্রমণের গল্প সব গুলা পড়লাম ভালই লেগেছ পড়ে।

    Reply
  2. আপনার লেখা পড়ে খুব ভাল লাগলো। দিনাজপুর আর পঞ্চগড় ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে, আপনার লেখাটা কাজে আসবে।

    Reply
  3. ভাই আপনার সুন্দর লেখনী পড়লাম ভালো লাগলো । উত্তর বাংলা আবারো আপনাকে সহ ভ্রমন পিপাসু ভাই/ বোনদের কে –
    সু স্বাগতম ।

    Reply

Leave a Reply