গ্রাম ও গ্রামের পথ

গ্রামের পথ সব সময়ই সুন্দর। আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পথে কুমিল্লার পর নোয়াখালীর দিকে ঢুকতেই গ্রামের সৌন্দয্য চোখে পড়ে। ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের রাস্তাটাও সুন্দর। দুই পাশে গাছ, এরপরই মাঠ। ফসলের মাঠ। এ মাঠ এক সময় এক রকম দেখায়। শীতকালে একটা না একটা ফসল থাকেই। বর্ষাকালে পানি। পানি মধ্যে শাপলা ফুঁটে থাকে। পাকা ফসল এক রকম দেখায়, কাঁচা ফসল তো সব সময়ই সবুজ, দারুণ। আর বর্ষাকালে পানির মাঝে শাপলা ফুল ও অন্যান্য পানিতে জন্মানো গাছ। ভালোই লাগে।

 

বর্ষাকালে খেতের মাঝখানের বাড়ি গুলকে দ্বীপের মত মনে হয়। সবুজ দ্বীপ। কারণ চারপাশই গাছ দিয়ে বেষ্টিত থাকে। দূর থেকে দেখতে কি সুন্দরই না লাগে।

IMG_1119
আমাদের বাড়ির প্রাইমারি স্কুল
IMG_20140725_165129
বাড়ির পাশের মাঠ
IMG_20140725_165511
বাড়ির পাশ
IMG_20140725_165941
বাড়ির পাশ

বেশিরভাগ ভ্রমণই রাতে করা হয়। যে সব রাস্তায় দুই পাশে ঘন গাছ থাকে, ঐ সব রাস্তা রাতের বেলায় গুহার মত মনে হয়। বাসের সামনের সিটে বসে এ দৃশ্য সুন্দর ভাবে উপভোগ করা যায়।

যদি সব সময়ই গ্রামে থাকতাম, তাহলে এ দৃশ্য গুলো এত সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারতাম না। শহরে থাকার কারণে বুঝতে পেরেছি এ দৃশ্য গুলো কতই না সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ। গাড়ির প্যাঁ ফুঁ নেই। অসয্য গরম বলতেও কিছু নেই।

আমাদের বাড়ির পাশেই বেড়ি বাঁধের রাস্তা। অনেক উঁচু রাস্তা। ছোট বেলা থেকেই এ রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগানো ছিল। এখনো আছে। গাছ গুলো এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। ছোটবেলা থেকেই এ রাস্তা ভালো লাগত। রাস্তা গুলো অনেক সোজা ছিল। দুই পাশে গাছ থাকার কারণে দিনের বেলায়ও গুহার মত মনে হতো। এক পাশ থেকে আরেকপাশ কি সুন্দরই লাগত। ছোটবেলায় এ মাথা থেকে ঐ মাথা সুন্দর ভাবেই দেখতে পেতাম। এখন হালকা ঝাপসা লাগে। বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে এ ঝাপসা লাগা বেড়ে যাবে। সৌন্দর্য আর দেখতে পাবো না।

১৯৯৮ সালে যখন বন্যা হয়েছিল, অনেকের বাড়িই ডুবে গিয়েছিল। তখন সবাই এ বেড়ি বাঁধের পাশে এসে থাকত। চারদিকে তখন শুধু পানি আর পানি। বন্য ভালোই কষ্ট দিয়েছিল তখন। আমি ছোট ছিলাম। এখনো অনেক স্মৃতি মনে আছে। বেড়িটা স্মৃতিতে থেকে যাবে।

বৃষ্টি আনন্দের তখনই যখন এটা কিছুক্ষণের জন্য আসে। ইচ্ছে মত বৃষ্টি পড়ে আবার সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এক টানা পড়তে থাকলে এটা ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। শহর হোক আর গ্রাম হোক, দুই জায়গাই ভোগান্তি। গ্রামে একটু বেশি ভোগান্তি। কাছা রাস্তা কাঁদা হয়ে থাকে। হাঁটা কষ্ট কর। হাঁটতে গেলে পিচ্ছিল পথে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম, তখন মাঝে মাঝেই এমন পিচ্ছিল রাস্তা পড়ে বাসায় ফিরতে হতো। মাঝে মাঝে বই খাতাও নষ্ট হত। যদিও এখন প্রায় সব রাস্তাই পাকা হয়ে গেছে। কাঁদা রাস্তা খুবই কম। চোখে পড়বে না। তাছাড়া গ্রামে অনেক কাজ করার উপর নির্ভর করে। আর বৃষ্টি পড়া শুরু হলে কোন কাজ করতে পারে না। তাদের জন্য একটানা বৃষ্টি অভিশাপের মতই।

যদিও তারপর ও তারা কিছু একটা করতে পারে। কারণ গ্রাম আশির্বাদের মত। বৃষ্টি পড়লে মাছ ধরতে পারে। আর প্রায় মানুষরই ছোট খাটো একটা সবজি বাগান থাকে। মাছ, সবজি সুন্দর ভাবেই দিন চলে যায়।

নিজের কথা কিছু বলি। গ্রাম পছন্দ করলেও নিজ বাড়িতে খুব কম সময় থাকি। গত পরশু রাতে বাড়ি এসেছি। গত কাল এক দিন থেকে আজ সকালেই ঢাকা ফিরছি। বৃষ্টি থাকার কারণে কাল সারা দিন বলতে গেলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেটেছে। বাড়ি আসলে মা অনেক গুলো রান্না করে। খেতে বসলে অনেক খাওয়ার পর ও বলে আরেকটু নে, এতটুকু খেলে হয় এটা সেটা। তার উপর একটা খাওয়ার পর আরেকটা, আরেকটা খাওয়ার পর আরেকটা।

বৃষ্টি হছে গুড়ি গুড়ি। গাড়ির একবারে সামনের সিটে বসে ঢাকা ফিরছি। আবার সেই জ্যামের শহরে। ঢাকা আমার দুইটা কারণে পছন্দ হয়। দারুণ সব রেস্টুরেন্ট। আর ইন্টারনেট। মূলত ইন্টারনেটের কারণেই ঢাকা ফিরে যাওয়া। তা না হলে থেকে যাওয়া যেত, আমার গ্রামে। সবুজের মাঝে।

Leave a Reply