কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি

কোয়ান্টাম কম্পিউটার

পদার্থ বিজ্ঞানের কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপর ভিত্তি করে তৈরি বিশেষ কম্পিউটার হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। পরম তাপমাত্রায় [0 K] এ পদার্থ গুলো কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, ঐ বৈশিষ্ট্য গুলো ব্যবহার করেই এই স্পেশাল কম্পিউটার তৈরি করা হয়। আর পারমানবিক স্কেলে কণা গুলোর আচরণ আমাদের পরিচিত পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে মিলে না। যেমন উপর থেকে একটা বস্তু পড়লে তা নিচের দিকে নামবে, কিন্তু পারমানবিক স্কেলে এমন হয় না। অদ্ভুত কিছু আচরণ করে।  পারমানবিক স্কেলে কণা/বস্তু গুলো নিয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের শাখাটি হচ্ছে কোয়ান্টাম মেকানিক্স।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার
quantum computer

সাধারণত কম্পিউটারে একটি বিট 0 অথবা 1 হয়। কিন্তু এই স্পেশাল কম্পিউটারের বিট গুলো হয় 0 না হয় 1 অথবা 0 এবং 1 একই সাথে হতে পারে। এ নতুন ধরনের বিট সিস্টেমকে বলে QuBit বা কোয়ান্টাম বিট। এই সিস্টেম অনেক পাওয়ারফুল। সাধারণ কম্পিউটারে ৮ বিট লাগে একটি নাম্বার সেইভ করতে[0-256 পর্যন্ত যে কোন একটা সংখ্যা। ] । কিন্তু QuBit এ ০ থেকে ২৫৬ পর্যন্ত সকল সংখ্যা সেইভ করতে পারে। যেমনঃ

10টি কিউবিট 1024 টি সংখ্যা সেইভ করতে পারে।
11টি কিউবিট 2048 টি সংখ্যা সেইভ করতে পারে।
12টি কিউবিট 4096 টি সংখ্যা সেইভ করতে পারে। অর্থাৎ একটি কিউবিট বাড়ালেই আগের দ্বিগুণ সংখ্যা সেইভ করতে পারে। মাত্র ১০০টি কিউবিট 1267650600228229401496703205376 টি সংখ্যা সেইভ করতে পারে [one nonillion, 267 octillion, 650 septillion, 600 sextillion, 228 quintillion, 229 quadrillion, 401 trillion, 496 billion, 703 million, 205 thousand, 376 টি সংখ্যা  ]। যেখানে সাধারণ কম্পিউটারে ৮বিট লাগে একটি সংখ্যা সেইভ করতেই। ১০০টি বিটে মাত্র ১২টি সংখ্যা সেইভ করা যাবে।

যেসব জায়গায় অনেক ডেটা নিয়ে কাজ করতে হয়, এক সাথে অনেক গুলো প্রসেস চালাতে হয়, সেখানে সাধারণ কম্পিউটার অনেক স্লো। সেখানে কোয়ান্টাম কপম্পিউটার দিয়ে অনেক দ্রুত কাজ করা যায়।

সমস্যা হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সাধারণ পরিবেশে কাজ করে না। এ কম্পিউটার কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। যখন পরমাণু গুলো স্থির থাকে, তখন এরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর একটা পাওয়ারফুল বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। তা হচ্ছে দুটি জায়গাতে এক ভাবে অবস্থান করতে পারা। আর এই বৈশিষ্ট ব্যবহার করেই কোয়ান্টামম কম্পিউটার এর উৎপত্তি। এটি কাজ করে পরম তাপমাত্রায়। -273.15 ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কাছা কাছি তাপমাত্রায়। পরমাণু গুলো তখন সম্পুর্ণ স্থির থাকে। আর এ রকম রেফ্রিজারেটর তৈরি করা যথেষ্ট ব্যয় বহুল। তারপর ও মানুষ থেমে নেই, তৈরি করেছে। D-Wave Systems এমন ল্যাব তৈরি করেছে। এখন গুগল আর নাসা মিলে Google Quantum A.I. Lab এ কাজ করতেছে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে।

কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি

২৩ অক্টেবর ২০১৯ তারিখে গুগল জানালো যে তারা কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করেছে।  গুগল ৫৪  একটা  Quantum Computer  ডেভেলপ করেছে, যার নাম দিয়েছে Sycamore।

কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি দেখানোর জন্য তিনটা স্টেপ নিয়েছে।  প্রথম স্টেপে একটা সার্কিট নিয়েছে, এরপর এই সার্কিটটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সিমিউলেট করেছে, এবং শেষে একটা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে দেখতেছিল Quantum Computer কি করতেছিল। এরপর আস্তে আস্তে ঐ সার্কিটরি কমপ্লেক্সিটি বাড়াচ্ছিল। এক সময় ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সাথে আর তাল মিলাতে পারছিল না। মানে Quantum Computer  কি করতেছিল, তা বুঝে উঠতে পারছিল না। এর মানে Quantum Computer  কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করেছে।

দারুণ একটা ডকুমেন্টারিঃ

3 thoughts on “কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি”

  1. ভালোই লাগলো, তবে আমরা বাংলাদেশীরা মনে হয় এর ছুঁয়া এতো সহজে পাবো না!!!

    Reply

Leave a Reply