উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, প্রথম দিনঃ সৈয়দপুর

কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দারবান, চট্রগ্রাম, নোয়াখালীর দ্বীপ গুলো, কুমিল্লা সহ বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে অনেক ঘুরা হয়েছে। সিলেটের, সীতাকুণ্ড ঐ দিকেও ঘুরে এসেছি। উত্তরাঞ্চলে এখনো যাওয়ার সুযোগ হয় নি। তাই প্ল্যান করেছি এবার ঐদিকে যাবো।

এ পর্যন্ত সব গুলো বড় ট্যুরে সঙ্গী ছিল বা কোন টিমের সাথে ঘুরতে গিয়েছি। এই প্রথম একা একা ঘুরতে বের হব। বড় সড় একটা ভ্রমণ। পুরো উত্তরাঞ্চল দেখে আসার ইচ্ছে। একা একা ঘুরার মধ্যে অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ কর, ছোট ছোট ট্যরু গুলোর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। একা একা প্ল্যান করার কারণে একটু বেশিই এক্সাইটেড।

ট্যুরের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন ব্যাকপ্যাক কিনে নিয়েছি। এখন বর্ষাকাল, তাই রেইন কভার যুক্ত ব্যাকপ্যাক। রেইন কভার শুধু ব্যাগকেই রক্ষা করবে, নিজের জন্য ছাতা কিনে নিয়েছি। ঢাকায় রুম থেকে বের হওয়া খুব কমই হয়। বৃষ্টি হলে বের হতে হয় না। তাই ছাতাও লাগে না। এছাড়া কিনে নিয়েছি ভ্রমণের জন্য নতুন জামা কাপড় এবং আনুষঙ্গিক অনেক কিছু। একা একা যাওয়ার কারণে যেন কোন সমস্যা না হয়, আগে থেকেই প্রিপারেশন।

ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে আছে একটা ম্যাকবুক এয়ার, একটা DSLR, একটা স্মার্টওয়াচ আর নেক্সাস 5 ফোনটি। ম্যাকবুক লেখা লিখির জন্য, ক্যামেরা ছবি তোলার জন্য। এগুলো চারটার জন্য চারটা চার্জার। ব্যাকপ্যাকের বেশির ভাগ অংশ এরা দখল করে নিয়েছে। ওজন ও এরাই বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাসা থেকে বের হয়েছি ৩০ এ মে, শনিবার। ১.১৫ এর দিকে। বাসাবো ফ্লাইওভার এর কাছে এসে গ্রেট তুরাগে করে এয়ারপোর্ট এসে নেমেছি। অন্য গাড়িতে ইচ্ছে করেই উঠিনি। সাঈদ, আমার কাজিন আমাকে বলল তুরাগে করে যাবে, আবার ভাব ধরে। তার কথা রাখার জন্যই তুরাগে করে এসেছি এয়ারপোর্ট।

এয়ার টিকেট কিছুদিন আগে কিনে রেখেছি। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পর সেখান থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জাগায় যাওয়ার প্ল্যান। প্ল্যান বলতে কোন প্ল্যান নেই। আগের রাতে ইন্টারনেটে ঘুরে দেখেছি কোথায় কি কি যায়গা আছে দেখার মত। সে গুলোর একটা লিস্ট তৈরি করেছি। ঐ লিস্ট ধরে যাবো। যেখান থেকে যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে, তা হচ্ছেঃ

ঢাকা > সৈয়দপুর > রংপুর > কিশোরঞ্জ > জলঢাকা > ডোমার > নীলফামারী > দেবীগঞ্জ > পঞ্চগড় > ঠাকুরগাঁও > পীরগঞ্জ > দিনাজপুর > ফুলবাড়ী > বিরামপুর > জয়পুর হাট > নওগাঁ > বগুড়া > নাটোর > রাজশাহী > চাঁপাই নবাবগঞ্জ > ঢাকা!

ডোমেস্টিক এয়ারে এই প্রথম ভ্রমণ। টিকেটে লেখা ছিল টার্মিনাল ওয়ান। তো আমি ইন্টারন্যশনাল টার্মিনালে ঢুকেছি। টার্মিনালে ঢুকার পর পাসপোর্ট দেখাতে বলার পর বললাম ডোমেস্টিক। পরে আমাকে ডোমেস্টিকের টার্মিনাল দেখিয়ে দিল। ঐটা এয়ারপোর্টের দিকে ঢুকতে হাতের ডানে। নিচ তলায়। আর ইন্টারন্যশনাল টার্মিনাল গুলো উপরে, দ্বিতীয় তলায়।অনেক রোদ, এই গরমে আবার অনেক দূর হেটে ডোমেস্টিক টার্মিনালে আসতে হলো।

কাউন্টারে এসে বোর্ডিং পাস নিলাম। এরপর অপেক্ষা। ফ্লাইট ৪ টায়। ৩.৩০ এ চেক ইন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো।

বসে বসে সেলফি তুলি, কি আর করব!
বসে বসে সেলফি তুলি, কি আর করব!
এয়ারপোর্ট এর পেছনের দিক।
এয়ারপোর্ট এর পেছনের দিক।

 

৩.৩০ এর জাগায় ৪টা ৩০ এ চেকইন করেছে। বিমান চেড়েছে ৪টা ৫০ এ। বিমানে আমার পাশের সিটে একটা ছেলে ছিল। আমি বসার সাথে সাথে জিজ্ঞেস করল, আপনি বাংলাদেশী?

তার বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমি বাংলাদেশী। এরপর আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল। কিছুক্ষণ তার সাথে কথা হল।

 

বিমানের ভেতরে, যদিও ছবি তোলা হয়তো নিষিদ্ধ -_-
বিমানের ভেতরে, যদিও ছবি তোলা হয়তো নিষিদ্ধ -_-

এর আগে যে বিমানে উঠেছি, তা মোটামুটি বিশাল ছিল। এটা অনেক ছোট। কিউট। ভেতরে বাসের মত। দুই পাশে দুই সিট করে। বিমান টেক অফের সময় আমার কেমন জানি ভালো লাগে। মনে হয় সব কিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাচ্ছি। কান তখন বন্ধ হয়ে আসে। তারপর ও ভালো লাগে। নিচের দৃশ্য গুলো আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। প্রথম দিকে সব কিছু সুন্দর ভাবেই বুঝা যায়। এরপর রাস্তা বা নদী গুলোকে সূতার মত মনে হয়। বিমান আরো উপরে উঠার পর আর কিচ্ছু বুঝা যায় না।

উপর থেকে।
উপর থেকে।

সৈয়দপুর এসে পৌঁছিয়েছি ৫টা ৪০ এর দিকে। এত ছোট বিমান বন্ধর! ছোট জিনিস কিউট হয়, সৈয়দপুর বিমান বন্ধর ও কিউট। বিমান বন্দর থেকে বের হয়েই ক্যান্টনমেন্ট।  রিক্সা ওয়ালারা জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবো। আমি নিজেও জানি না কোথায় যাবো। আমি যতটুকু জানি, কাছেই ক্যান্টমনেট। তাদের বললাম ক্যান্টমেন্ট যাবো। তারা উলটা পালটা একটা ভাড়া চেয়ে বসল। আমি রিক্সা না ঠিক করেই হাটা শুরু করলাম। যদিও একজনকে বললাম ক্যান্টনম্যান্ট এত টাকা দিব, যাবেন। রাজি হয় নি। কিছুক্ষণ পেছন থেকে একটা রিক্সা এসে বলল মামা, চলেন।  রিক্সা নিয়ে ক্যান্টনম্যান্ট ঢুকলাম। ঢুকতে কোন সমস্যা হয় নি। হাতে ছিল ক্যামেরা। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর একটা বিল্ডিং থেকে আমার উদ্দেশ্যে চিৎকার দিয়ে বলল ছবি না তুলতে। তুললাম না।

এরপর ক্যান্টমেন্টের ভেতরে ঢুকতে গেলে পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আরো অনেক কিছু। বললাম। আর ঢুকতে দেয় নি। বের হতে যাবো, তখন আবার পরিচয় জিজ্ঞেস করল। আমার আইডি কার্ড চেক করল। আইডি কার্ড রেখে দিল। এরপর অন্য আরেকটা গেটে পাঠালো, যে গেট দিয়ে ঢুকেছি, বলল ঐখানে গিয়ে কথা বলে আসতে। তারপর আইডিকার্ড দিবে।যাওয়ার পথে উপর থেকে কোন এক বদ পাখি আমার ব্যাগের উপর একটু খানি ইয়ে করে দিয়েছে। আহারে! মেহেমানদের সাথে কি ভাবে ব্যবহার করতে হয়, জানে না। অন্য গেটে গিয়ে কথা বললাম। আবার একই প্রশ্ন। প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এভাবে ক্যান্টনম্যান্ট থেকে বের হলাম।

সৈয়দপুর চিনি মসজিদ নামে একটা মসজিদ আছে। সন্ধ্যা হতে এখনো কিছু সময় বাকি। চিন্তা করলাম দেখে আসি। যে রিক্সা দিয়ে ক্যান্টনম্যান্ট ঢুকেছি, তা দিয়েই চিনি মসজিদের দিকে গেলাম। চিনি মসজিদ যাওয়ার পথে পড়ে সৈয়দপুরের সব চেয়ে বড় মার্কেট। এরপর রেল স্টেশন। অনেক পুরাতন রেল স্টেশন। এরপর চিনি মসজিদ। চিনি মসজিদের নাম চিনি মসজিদ কেন, কোন আইডিয়া নেই। তবে ছোট ছোট পাথর দিয়ে সুন্দর কারুকাজ রয়েছে। বর্তমানের কারো এসব ডিজাইন পছন্দ মনে হয় না হবে। আমার ও হয় নি। -_-

চিনি মসজিদ থেকে ফিরেছি বাস টার্মিনালে। রংপুর আসার জন্য।

চিনি মসজিদ থেকে বাস টার্মিনালে ফেরার পথে পড়ে সৈয়দপুর মার্কেট। দুপুরে আমি খাওয়া দাওয়া বলতে বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছি। এরপর প্লেনে দেওয়া স্ন্যাক্স দিয়েছে, সে গুলো খেয়েছি। ক্ষিদা লেগেছে। তা ছাড়া রংপুর যেতে মোটামুটি সময় লাগবে। রিক্সা ওয়ালা মামাকে বললাম কোন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে রাখতে কিছুক্ষণ। মামা বলল বাস স্ট্যান্ড রেস্টুরেন্ট আছে।

বিমানে যা খেতে দিল।
বিমানে যা খেতে দিল। মিনি পানির বোতলটা দারুণ কিউট

বাস স্ট্যান্ড যে রেস্টুরেন্ট, তা হোটেল সালাদিয়ার মত। -_- আমাকে ঐখানে নামিয়ে দিল মামা। তার উপর রিক্সা ভাড়াও মোটামুটি বেশিই নিয়েছে। ঐ হোটেলে ঢুকে খাবার অর্ডার দিলাম। খাবার কোয়ালিটি যথেষ্ঠ খারাপ। খেতে পারি নি। তো রেখে উঠে গিয়ে বিল দিতে গেলাম। আমার কাছে এক প্লেট গরুর দাম রেখেছে ২০০ টাকা। ঢাকার যে কোন ভালো রেস্টুরেন্ট থেকেও বেশি।

রংপুরে আসার জন্য বাসে উঠার কিছুক্ষণ পর থেকে আমার ঘুম শুরু। জিমাতে জিমাতে রংপুর চলে এসেছি। ৯টা ৩০ এর মত তখন। যেহেতু চোখে প্রচণ্ড ঘুম, তাই সবার আগে দরকার আমার একটা ঘুমানোর জায়গা। আবাসিক হোটেল খুঁজতে লাগলাম। একটা পেয়েছি নাম বনফুল। ঐখানে গিয়ে দেখি কোন রুম নেই।

পরে আরেকটু খুঁজে ফেলাম শাপলা হোটেল। জিজ্ঞেস করলাম সিঙ্গেল রুম আছে? বলল আছে। কত টাকা? বলল ১৫০..এত্ত কম?! রুমে গিয়ে দেখি কেমন একটা রুম। পছন্দ হওয়ার কথা না। টায়ার্ড থাকায় ঐখানেই থেকে গেলাম। কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠেই বের হয়ে পড়ব। ঐ হোটেল এর পাশেই কালি মন্দির। আমি রুমে ব্যাগ রেখে নিচে গিয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। রাতে খাওয়ার জন্য খাবার কিনে রুমে ফিরে ঘুমিয়ে গেলাম।

রাতের দিকে একবার উঠে ফেসবুকিং, এটা সেটা করলাম। খাবার খেলাম। এরপর আবার ঘুম। ঠান্ডা লাগছিল, ফ্যান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছিল যে এ সুন্দর আবহাওয়া। ঢাকায় তখন অনেক গরম। এরপর পরের দিনের ভ্রমনের অপেক্ষায়… নিচের লিঙ্ক থেকে  পড়া যাবে রংপুর ভ্রমন নিয়ে।

 

অনেক গুলো ছবি তুলেছি। সব গুলো ছবি দেখা যাবে ফেসবুক এলবাম থেকে। 

5 thoughts on “উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ, প্রথম দিনঃ সৈয়দপুর”

  1. ভাই, দেশের বাইরে কবে ঘুরতে যাবেন ?

    Reply
  2. অপ্রাসঙ্গিক কথা বেশি ছিলো । যাহোক, ধন্যবাদ।

    Reply

Leave a Reply