চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল ট্যুর

এর আগে কয়েক বারই শ্রীমঙ্গল যাওয়া হয়েছে। বাসে করে গিয়েছি, বাইকে করে গিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ্‌, এবার গাড়ি ড্রাইভ করে গেলাম। বৃহস্পতিবার সকালে আমরা শ্রীমঙ্গলের দিকে রওনা দেই। ঢাকা থেকে কাছেই বলা যায় শ্রীমঙ্গল। যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা লাগে। সকাল ৮টার দিকে আমরা রওনা দেই।

আমরা মাঝে মাঝে নেমে চা খেয়েছি, ছবি তুলেছি। তাই আমাদের একটু বেশি সময় লেগেছে। দুপুর দুইটার দিকে আমরা শ্রীমঙ্গল গিয়ে পৌঁছাই। পথে চা কন্যার পাশে দাঁড়াই। সেখানে মধু বিক্রি করছিল একজন। এক লিটার মধু কিনে নেই। খাঁটি মধু! 😛 সবাই খাঁটি মধু বিক্রি করে। তো এখানে উনি জানালো পাশ থেকেই মধু গুলো সংগ্রহ করেছে। বাসায় এনে দেখে মনে হলো সত্যিই খাঁটি ছিল।

শ্রীমঙ্গল পৌঁছে পানসিতে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। এত গুলো ভর্তা দেয় ওরা। এত প্রকারের ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে ভালো লাগে। অন্য কিছুর দরকার হয় না। ভর্তা আর ডাল হলেই যথেষ্ট হয়। সাধারণত শ্রীমঙ্গল হোটেল গুলোতে গরুর মাংস পাওয়া যায়। ঐ এলাকায় হিন্দু বেশি। এই কারণে। বিভিন্ন প্রকারের মাছ, মুরগি এবং খাসির মাংস পাওয়া যায়।

খাওয়া দাওয়া করে হোটেল খুঁজতে গেলাম। ঢাকা থেকে কনফার্ম করে যাইনি। একটা হোটেল পছন্দ হলেও মালিকের ব্যবহার যথেষ্ট জগন্য ছিল। বিকেলের দিকে গিয়েছি। উনারা রুমরেট জানানোর পর আমাকে জিজ্ঞেস করল আমাদের বাজেট কত। বুঝা গেলো হয়তো দামাদামি করা যাবে। তো আমি কিছু কম বলার পর মালিক এত্ত গুলো কথা বলল। ঘুরাঘুরির কি দরকার, টাকা সেভ করলেই তো পারি ইত্যাদি। কি যে খারাপ লাগতেছিল।

পরে হোটেল বুক না করেই ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দিকে গেলাম। রাস্তা গুলো এত সুন্দর। ড্রাইভ করতে কি যে ভালো লাগছিল। সেখান থেকে ফিরে রাবার বাগানে গেলাম। সন্ধ্যার দিকে আট লেয়ারের চা খেলাম। তারপর এক জায়গায় বসে গুগলে হোটেল লিখে সার্চ দিলাম। অনেক সুন্দর কিছু হোটেল পেয়ে গেলাম। আমরা শ্রীমঙ্গল ইনে উঠলাম। সব জায়গায় আমরা থাকতে পারতাম না, কারণ আমাদের সাথে গাড়ি ছিল। গাড়ি পার্কিং সব জায়গায় নেই। আগের যে রিসোর্টে গিয়েছি সেখান থেকে ভালো রুম পেয়েছি। দামও কম ছিল। বুঝলাম, আগেই গুগলে একটু সার্চ করে নিলে ভালো হত।

আট লেয়ারের চা

সকালে উঠে নাস্তা খেতে যাই। নাস্তা ফ্রি ছিল। নাস্তা খাওয়ার সময় এক বয়স্ক কাপল এসে বলে আমরা কোথাও ঘুরতে যাবো কিনা। উনি জিজ্ঞেস করছিল এক সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। আমি উনাদের বলি আপনারা চাইলে আমাদের সাথে আসতে পারেন। আমরা বাইক্কা বিলে যাচ্ছি। উনারা রাজি হলো। এক সাথে গেলাম। পথে গুগল ম্যাপ ভুল রোড দেখাচ্ছিল, কাঁচা রোড। ঐ রোডে ঢুকে একটা ট্রাকের সাথে হালকা লেগে যায় গাড়ি। ট্রাকটি নষ্ট ছিল। হাতে ঠেলতেছিল। এই জন্যই ড্রাইভার কন্ট্রোল করতে পারেনি।

বাইক্কা বিলে এখন পানি খুব একটা ছিল না। এরপরও প্রচুর অথিতি পাখি ছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই সব পানি শুকিয়ে যাবে। তখন হয়তো পাখি খুব একটা দেখা যাবে না। বাইক্কা বিলের টিকেট ৩০ টাকা। আমরা ৫জন ছিলাম। যে টিকেটের দ্বায়িত্বে ছিল, যে মাত্র একটা টিকেট দিয়েছে। দিয়ে ১৫০ টাকা নিয়েছে। এভাবে বাকি সবার সাথেই করে। অথরিটিকে এভাবে ফাঁকি দেয়।

বাইক্কা বিল ঘুরে এসে উনাদের হোটেলে নামিয়ে দিলাম। আমরা চা বাগানে ঘুরতে গেলাম। ফিনলে চা বাগানের দিকে যাওয়ার সময় সিকিউরিটি ভাবল তাদের এমডি এর গাড়ি। দ্রুত যাওয়ার রাস্তা করে দিল। ঐখানে একটা পরিত্যাক্ত এয়ারপোর্ট রয়েছে। এর আগেও সেখানে গিয়েছি। বাইক নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে বাইক চালিয়েছি। একজন এসে এয়ারপোর্টে ঢুকার পথ খুলে দিল। এয়ারপোর্টে গাড়ি চালালাম। স্পিডে যদিও চালানো যায় না। ঘাস উঠে রয়েছে এবং অনেক গর্ত রয়েছে। এরপরও তো এয়ারপোর্ট!

শ্রীমঙ্গল চা বাগান

চা বাগানের ভেতরের দিকের রাস্তা গুলো এত সুন্দর। দুই পাশে চা বাগান। এত বড় বাগান গুলো। কি যে ভালো লাগছিল। ফেরার পথে সিকিউরিটি বলল, আমরা ভেবেছি আমাদের এমডি এর গাড়ি। উনার গাড়ির মত দেখতে। তাই পথ খুলে দিয়েছিলাম। যদি চা খাবার টাকা দিতেন।

চা বাগান থেকে ফিরে এসে পানসিতে বসে খাওয়া দাওয়া করি। তারপর ঢাকার দিকে রওনা দেই। রসিদপুর গ্যাসফিল্ডের পাশে একটা রাস্তা আছে। দুই পাশে রাবার গাছ। ঐ রোডটাও কি যে ভালো লাগে। এর আগের বার অনেক বানর দেখেছি। ঐ রোডে ঢুকলাম। এবার অনেক খুঁজেও কোন বানর পাইনি। রাস্তাটা এত নিরিবিলি। অসাধারণ লাগে।

শ্রীমঙ্গল আমাদের সুন্দরতম জায়গা গুলোর একটা। রাস্তা গুলোও অসাধারণ সুন্দর। এমন রোডে বার বার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, আমরা সুন্দর ভাবেই ঢাকায় ফিরি। যদিও রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল। এছাড়া গাড়ি গুলো খুব বেপরোয়া ভাবে চালায় এই সিলেট রোডে। রোডে কোন ডিভাইডার না থাকায় খুব রিস্কি একটা রোড এটা। এছাড়া রাতের বেলায় সবাই হাইবীমে গাড়ি চালায়। সামনে ঠিক মত কিছুই দেখা যায়। যদিও গাড়ি গুলোকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। কারণ রোডে কোন মার্ক করা নেই। আর তাই হাইবীমেই চালাতে হয় গাড়ি। অনেকক্ষণ লোবীমে গাড়ি চালিয়ে অন্যপাশের গাড়ি গুলোর উপর রাগ উঠার পর নিজেকেও পরে হাইবীমে চালাতে হয়েছে 😐 এরপর কাঞ্চন ব্রিজের কাছে এসে প্রায় এক ঘণ্টা জ্যামে থেকে তারপর বাসায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

Leave a Reply