নিউরাললিঙ্ক

নিউরাললিঙ্ক অনেক পুরাতন একটা প্রযুক্তি। আগে শুধু গবেষণার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হত। এখন প্রায় সবাই তাদের মস্তিষ্কের সাথে এই নিউরাল লিঙ্ক ইন্টারফেস যুক্ত করে নিয়েছে। এতে মস্তিষ্কটা ডিজিটালি এক্সেস করা যায়। যে কোন তথ্য ডিজিটালি যুক্ত করা যায় বা রিমুভ করা যায়।

কারো সাথে কথা বলতে চাইলে আগের মত মৌখিক ভাবে বলতে হয় না। একজন আরেকজনের সাথে কানেক্ট হওয়ার পর যে কোন কথা কোন মাধ্যম ছাড়াই বলতে পারে।

একটা ছেলে একটা মেয়েকে বা একটা মেয়ে একটা ছেলেকে পছন্দ করলে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মধ্যে আস্তে আস্তে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্কের এক পর্যায় একজন আরেকজনকে ভালো ভাবে জানতে চায়। জানতে ইচ্ছে করে সত্যিই মানুষটা আমাকে ভালোবাসে কিনা। তার মনে অন্য কেউ আছে কিনা। আর এই জানার জন্য অনেকেই নাকি তাদের নিউরাললিঙ্ক এক্সেস দিয়ে দেয় তার পছন্দের মানুষটাকে। এরপর তার মস্তিষ্কের সব কিছুই দেখতে পারে, পড়তে পারে।

আমার কাছে জিনিসটা কেমন জানি লাগে। এতটুকু বিশ্বাস তো একজন আরেকজনকে করা উচিত। প্রতিটা মানুষের এতটুকু প্রাইভেসি পাওয়ার দরকার রয়েছে। কারো প্রাইভেসিকে সন্মান করা মানে তাকে সন্মান করা। এতটুকু সন্মান ছাড়া ভালোবাসা হয়?

মানুষ গুলোও কেমন। নিজের মস্তিষ্কে শুধু পছন্দের মানুষটাই আছে, এটা প্রমাণ করার জন্য মস্তিষ্ক থেকে অনেক গুলো স্মৃতি রিমুভ করে দেয়। জিনিসটা আমার কাছে কেমন জগন্য লাগত। কারো সাথে সম্পর্ক হলে আগের কারো সাথের স্মৃতি গুলো ডিলেট করতে হবে কেন, আমি বুঝে উঠতে পারতাম না। চিন্তা করতেই আমার কেমন দম বন্ধ লাগত। এভাবে কোন সম্পর্ক টিকানোও তো সম্ভব না। এতটুকু বিশ্বাস না থাকলে তো তাকে ভালোবাসাও বলা যায় না।

প্রতিদিন কত মানুষের সাথেই তো দেখা হয়, কথা বলতে হয়। একজন সন্ধেহ করবে, শুধু এই ভয়ে এরকম অনেক গুলো স্মৃতি ডীলেট করে দিতে হবে, ভাবলেই কেমন জানি লাগত।

কারো সাথে আগে কথা হয়েছে। কিন্তু আমি যদি সে স্মৃতি ডিলেট করে দেই, এরপর সে যদি কাছে এসে কথা বলা শুরু করে, তখন কেমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তার মেমরিতে আমি থাকলেও আমার মেমরিতে সে নেই! এর থেকে বিব্রতকর আর কি হতে পারে? কে জানত আমিও এমন কত স্মৃতি ডিলেট করে দিব?

একদিন আমিও প্রেমে পড়ি। আমারও একটা সম্পর্ক হয়। পছন্দের মানুষটাকে ভালোবাসি, এর প্রমাণ হিসেবে আমার নিউরাললিঙ্ক এক্সেস দিতে হয়। আর তার আগে বেছে বেছে কত গুলো স্মৃতি ডিলেট করে দেই। যে জিনিসটা আমি জীবনেও করতে হবে না ভেবেছি, তাই করতে হলো। নিজের মতের বিরুদ্ধে আসলে চলা যায় না। এক সময় আমাদের ব্রেকয়াপ হয়ে যায়। আক্ষেপ থেকে যায় যে, সম্পর্কটা কেড়ে নেয় কত গুলো স্মৃতি।

যা ডিলেট করে দিয়েছি, তা সত্যিই ডিলেট হয়ে গিয়েছে? একটুও রিকভার করা যাবে না? মাঝে মাঝে ভাবি। যায় না। আগের কোন স্মৃতিই আর মনে পড়ে না। কত পরিচিত মানুষ কথা বলতে আসে, আমি তাদের কোন কথাই মনে করতে পারি না। তারা হতাশ হয়। কত আপন ভেবেছিল আমাকে। আর আমি কত সহজেই সব স্মৃতি ডিলেট করে দিয়েছি।

যদিও কিছু কিছু স্মৃতি অনেক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোন দুঃস্বপ্ন বা কোন এক্সিডেন্ট। এরকম স্মৃতি গুলো ডিলেট করে দিলে ডিপ্রেশনের মত সমস্যা থেকে বাঁচা যায়। জীবনে কেউ ধোঁকা খেলে ঐ স্মৃতি মাঝে মাঝেই কষ্ট দেয়। এরকম স্মৃতি ডিলেট করলে সেই কষ্ট থেকে বাঁচা যায়। এসব চিন্তা করলে নিউরাল লিঙ্ক জিনিসটা এত মন্দ না।

মস্তিষ্কের এনালগ কোনায় কোন একটা স্মৃতি মাঝে মাঝেই উঁকি দেয়। প্রতিদিন একটি মেয়ে বিকেলের আলোতে হাঁটতে বের হয়। মেয়েটিকে খুব চেনা চেনা লাগে। কোন স্মৃতিই মনে পড়ে না। মেয়েটার মনেও হয়তো আমার কোন স্মৃতি নেই। যদি থাকত, তাহলে তো সে ঠিকই এসে কথা বলত। আমি একজনের জন্য আমার স্মৃতি ডিলেট করে দিয়েছি। সেও হয়তো অন্য কারো জন্য তার স্মৃতি ডিলেট করে দিয়েছে।
এখন মাঝে মাঝেই আগেরকার এনাগল সিস্টেমে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। নিউরাললিঙ্কটা রিমুভ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে নিজের স্মৃতি গুলো নিজের কাছেই রেখে দিতে। তা নিজের কাছেই গোপন থাকত। পারা যায় না। নিউরাললিঙ্কটা রিমুভ করা যাবে না। মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটবে।

ছোট ছোট স্মৃতি নিয়েই জীবন। কিছু স্মৃতি অন্য কেউ পছন্দ নাও করতে পারে। তারপরও এটা জীবনের অংশ। স্মৃতি ডিলেট করা মানে জীবনটাকেও একটু একটু করে রিমুভ করে দেওয়া। জানিনা এভাবে বেঁচে থাকতে সবার কেমন লাগে। আমার ভালো লাগে না। একটুও ভালো লাগে না। আমি আমার সব স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। সুখকর হোক আর দুঃখের হোক। স্মৃতি রিমুভ করে দেওয়া একটা রোগ মনে হয় আমার কাছে। আর আমরা সবাই অসুস্থ!

Leave a Reply