কম্পিউটার সাইন্স এর ভবিষ্যৎ এবং অন্যান্য

কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে কারো কারো ধারণা এটা পড়ে কোন লাভ নেই। কোন জব পাওয়া যায় না। রাস্তায় বের হলেই একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে ধাক্কা খায়। আর যারা কম্পিউটার সাইন্স সম্পর্কে একটু ধারনা রাখে, তাদের ধারনা এটা নিয়ে পড়লেই কোটি কোটি টাকা।

যাদের ধারণা এটাতে পড়ে কোন লাভ নেই, আগে সে সম্পর্কে কিছু বলি। ঘুম থেকে উঠে মানুষ আগে পত্রিকা পড়ত। এখন পড়ে অনলাইন নিউজ পেপার। তা পড়ে কোন ট্যাবের মাধ্যমে, না হয় স্মার্টফোনের মাধ্যমে, না হয় ল্যাপটপে বা পিসিতে। যেখানেই পড়ে, সে গুলো আবার অনেক গুলো সফটওয়ার লাগে। যেমন মোবাইলের কথাই বলি, মোবাইলটি একটি অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে চলে। ঐটার ভেতরে একটি ব্রাউজার আছে যা দিয়ে পত্রিকা পড়া হয়। সব গুলোর জন্যই লিখতে হয়েছে অনেক গুলো প্রোগ্রাম, কোড। পত্রিকাটি ব্রাউজারে লোড হওয়ার পেছনে কাজ করে অনেক গুলো কোড। যে গুলো লিখেছে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়া কোন কোডার…

টিভি দেখতে গেলে এখনকার টিভি গুলো হচ্ছে স্মার্ট টিভি। সব গুলোই অনেক গুলো প্রোগ্রামে ভর্তি। ক্যামেরা গুলোও হচ্ছে স্মার্ট ক্যামেরা। অনেক গুলো প্রোগ্রামে পূর্ণ। হয়তো স্মার্ট কার আমাদের দেশে পেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে, কিন্তু উন্নত দেশ গুলতে বর্তমানে তৈরি করা সব গুলো গাড়িতেই স্মার্ট কন্ট্রোল প্যানেল রয়েছে। তৈরি হচ্ছে চালক বিহীন গাড়ি। যে গুলো নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে সফটওয়ার দ্বারা। আর যা লিখছে কম্পিউটার সাইন্সের বিষয় গুলো যে জানে, তেমনি কেউ।

হসপিটাল গেলে এনালগ কিছু চোখে পড়ে? সব কিছুই ডিজিটাল। সব কিছু। এমনকি কঠিন কঠিন অপারেশন করা হয় রোবটের সাহায্যে। যে গুলো চালনা করা হয় নিখুত সফটওয়ার দিয়ে। সামনে আরো ভালো ভাবে, আরো নিখুত ভাবে সব অপারেশনে এমন রোবট ব্যবহার হবে। আমি সব কিছু নিয়ে লিখতে গেলে কয়েক পৃষ্ঠা লিখতে পারব। সব কিছুই সফটওয়ার দিয়ে কন্ট্রোল হচ্ছে। এগুলো মাত্র শুরু হয়েছে। সামনে আরো কত কিছু বাকি রয়েছে।

ওয়ারেবল টেকনোলোজি এসে সব কিছুই পালটে দিচ্ছে। আমরা যে পোশাকটি গায়ে দিচ্ছি, সে গুলো হচ্ছে প্রোগ্রামেবল। যে চশমটা পরছি তা হচ্ছে প্রোগ্রামেবল। যে লেন্সটি চোখে দিচ্ছি, তা প্রোগ্রামেবল। চাইলে আপনার জুতাও প্রোগ্রাম করে নিতে পারবেন।

রাইড শেয়ারিং সম্পর্কে সবাই পরিচিত। কোন রুট ফলো করলে কম সময় যাওয়া যাবে, কত টাকা আসবে, কত সময় লাগবে এ সবই দেখায় ডেটা সাইন্স ব্যবহার করে। অনলাইনে কিছু কিনতে যাচ্ছি? সাথে রিলেটেড কিছু প্রোডাক্ট দেখায়। যে ঐ প্রোডাক্টটি কিনেছে, সে আর কি কি জিনিস কিনতে পারে, কি কি জিনিস দরকার। এ সবই ডেটা সাইন্স ব্যবহার করে। ডেটার উপর মেশিং লার্নিং প্রয়োগ করে এসব জানায় ব্যবহারকারীকে।

এগুলো সব গুলো সম্ভভ হয়েছে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়া একদল উৎসাহী মানুষের জন্য। সামনে আরো এগিয়ে যাবে। আরো নতুন কিছু দেখতে পাবো। এখনো যদি কেউ যদি মনে করে কম্পিউটার সাইন্স পড়ে কি করবে, তাহলে নিশ্চই উনারা উনিশ শতকের বাসিন্দা।

শীগ্রই মানুষের বেশিরভাগ কাজ কর্ম রোবট দখল করে নিবে। বেশির ভাগ জব করবে রোবটে। রোবট গুলোর দুইটা অংশ, হার্ডওয়ার, সফটওয়ার। যে প্রোগ্রামিং জানবে, সেই তো সফটওয়ার ডেভেলপ করতে পারবে, তাই না? হার্ডওয়ার গুলো ও কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়া কোন ইঞ্জিনিয়ার, কোন ডক্টরই তো ডেভেলপ করবে…

আবার যারা মনে করেণ কম্পিউটার সাইন্সে পড়লে কোটি কোটি টাকা, তেমন ও নয়।

এ পুরো ফিল্ডটাই হচ্ছে প্র্যাকটিক্যাল। সমস্যা সমাধাণ করা, কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করা, তা প্রয়োগ করা, হার্ডওয়ার এবং সফটওয়ার এক সাথে কম্বিনেশন করে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করিয়ে নেওয়া ইত্যাদি জানতে হয়। কম্পিউটার সাইন্সে যখন পড়বেন, তখন প্রথম প্রথম অনেক গুলো থিওরি পড়াবে… তারপর আপনাকে ঐ থিওরি গুলো কাজে লাগে নতুন কিছু করতে বলা হবে। এই নতুন কিছু করার জন্য আপনাকে প্রতিষ্ঠানে পড়ানো বিষয় গুলোর পাশা পাশি অনেক কিছু জানতে হবে। রাত দিন প্র্যাকটিস করে যেতে হবে। কম্পিউটার সাইন্স সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে আপনাকে একাডেমিক ভাবেই যে কম্পিউটার সাইন্সে পড়তে হবে, এমন না। যে ব্যাকগ্রাউন্ডেই পড়ালেখা করেন না কেন, আপনি চাইলে কম্পিউটার সাইন্সের বিষয় গুলো নিয়ে পড়ালেখা করতে পারেন। দরকার শুধু আগ্রহ।

এটা এমন না যে আপনি কোথাও কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়তে গেলেন, শেষে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে বের হয়ে আসলেন। এমন যে আপনি নিজের স্কিল নিয়মিত আপডেট করতে হবে। আর তখন একসময় সত্যিকারে সফলতা পাওয়া যাবে। কম্পিউটার সাইন্সে কাজ করার জন্য লোক দরকার হলেও স্কিল বিহীন কোন লোক কোন কাজে আসবে না এখানে।

সার্টিফিকেটের দরকার হলে দেশে অনেক গুলো ইউনিভার্সিটি রয়েছে, যেখানে কিছু টাকা দিলেই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। ঐ সার্টিফিকেট ধুয়ে পানি খাওয়া ছাড়া কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না।। কম্পিউটার সাইন্স সম্পর্কে জানতে হলে কোন প্রতিষ্ঠানের দরকার পড়ে না। ইন্টারনেটে সব তথ্যই রয়েছে। দরকার নিজে নিজে শিখে নেওয়া। রয়েছে অনেক গুলো কমিউনিটি। কোন সমস্যায় পড়লে সাহায্য করার মত অনেক এক্সপার্ট। কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে আপনার কি ধারণা তা মূখ্য নয়, আপনি কতটুকু জানেন এ বিষয় সম্পর্কে তাই মূখ্য। নিজের জানাটাকে কাজে লাগানোটাই প্রধান উদ্দেশ্য।। আর ভালো করে জানলে, ভালো করে তা প্রয়োগ করলে সত্যি সত্যি সফলতা হাতছানি দিবে…

আমরা নিজের সম্পর্কে যত জানি, গুগল, ফেসবুক আমাদের থেকে বেশি জানে। নিয়মিত ডেটা কালেক্ট করে আমাদের বিহেবিয়ার এনালাইসিস করছে। কি পণ্য কিনতে পারি, সেই পণ্যের এড দেখাচ্ছে। এসবের পেছনে কোন না কোন একজন প্রোগ্রামার, ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছে।

কোন এক সময় একটা অ্যাপ বা ওয়েব সাইট থাকবে, যে বলে দিবে, তুমি এটা করলে তোমার জীবন এরকম হবে। ঐ কাজ করলে তোমার জীবন ঐ রকম হবে। না না, এটা ম্যাজিক না, আবার জ্যোতিষশাস্ত্র ও না। প্রযুক্তি। হয়তো আপনি নিজেও এমন কিছু দেখে যেতে পারবেন। আর যদি দেখে যেতে পারি, দারুণ ভালো লাগবে… আর এগুলোর বেশির ভাগই সম্ভব হবে কম্পিউটার সাইন্স এর মাধ্যমে। প্রোগ্রামিং, অ্যালগরিদম, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ডাটা সাইন্স এসবের কম্বিনেশনে…

2 thoughts on “কম্পিউটার সাইন্স এর ভবিষ্যৎ এবং অন্যান্য”

Leave a Reply