কক্সবাজারে কার ক্যাম্পিং

কার ক্যাম্পিং নিয়ে ইউটিউবে কিছু ভিডিও দেখেছি। দারুণ লাগে। যেখানে ইচ্ছে, সেখানে সহজেই গাড়ি পার্ক করে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া যায় । আমাদের দেশে কার ক্যাম্পিং  করতে কাউকে দেখা যায় না খুব একটা। আমাদের ট্যুরিস্ট স্পট গুলো আসলে কার ক্যাম্পিং ফ্রেন্ডলিও না। তো কার ক্যাম্পিং কোথায় করব, এই চিন্তা করার পর প্রথম যে স্পটের কথা মাথায় এসেছে, তা হচ্ছে কক্সবাজার!

আমাদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। বাড়ি থেকে প্রথমে চট্রগ্রাম যাই। কাজিনের বাসায় রাতে থাকি। ভোরে রওনা দেই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। ভোরের দিকে রাস্তা ফাঁকা থাকে। কিছু বাস, কিছু ট্রাক ছাড়া বেশি কিছু থাকে না রাস্তায়। তাই ড্রাইভ করে মজা পাওয়া যায়। আমরা যখন চট্রগ্রাম শাহ আমানত সেতুতে, তখন সূর্য উঠে। শাহ আমানত সেতু এমনিতেই সুন্দর। সূর্যদয় দেখে গাড়ি থামানোর লোভ সামলাতে পারিনি। কি অসাধারণ লাগছিল। এভাবে আস্তে আস্তে যেতে থাকি কক্সবাজারের দিকে। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে নাস্তা, চা খেয়ে নেই। আমরা কক্সবাজার পৌঁছাই সাড়ে দশটার দিকে।

শাহ আমানত ব্রিজ থেকে সূর্যদয়
শাহ আমানত ব্রিজ থেকে সূর্যদয়

কলাতলি গিয়ে গাড়ি পার্ক করে একটু ঘুরাঘুরি করি। শাকিল ভাই আসে, উনার সাথে বসে গল্প করি। খাওয়া দাওয়া করে এরপর সুগন্ধা পয়েন্টের দিকে যাই। ঐখানে কিছুক্ষণ রেস্ট নেই। গাড়িতেই। জল তরঙ্গের পাশে জাউবনে গাড়ি পার্ক করি।

জাউবন থেকে গাড়ি বের করতে গিয়ে গাড়ি আটকে যায়। নিচে সব বালি। যখন গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকি, কোন সমস্যা হয়নি। বের করতে গিয়ে আস্তে আস্তে বালিতে গাড়ি ঢুকে যায়। অনেক সময় পরে বের করতে পারি। এডভেঞ্চারে বের হয়েছি, এর থেকে বড় এডভেঞ্চার আর হয় না! গাড়ির একটা কিট খুলে যায়। ঐটা লাগাতে একটা গ্যারেজে খুঁজে নেই। গাড়ি ওয়াশ এবং কিট লাগিয়ে সৈকতে ফিরে আসি। কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনি। এরপর খাওয়া দাওয়া করতে যাই। খাওয়া দাওয়া করে আবার সৈকতে যাই। সাজিন ভাই আসে। গল্প করি। অনেকক্ষণ সৈকতে থেকে এরপর গাড়িতে এসে ঘুমাই।

আমরা হোন্ডা ভ্যাজেল নিয়ে যাই। গাড়ির পেছনের সিট ভাঁজ করার পর বুট স্পেসে দুইজন ঘুমানোর জন্য যথেষ্ট যায়গা হয়ে যায়। মশার জন্য জানালা খুলে রাখতে পারিনি। যদিও জানালা খুলে রাখা সেফও না। তাই ইঞ্জিন চালু রেখে এসি অন করে ঘুমাতে হয়েছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে হিমছড়ির দিকে রওনা দেই। পুরো সৈকত খালি। আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। খালি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। এরপর আবার কলাতলি ফিরে নাস্তা করে নেই।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
সমুদ্র!
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বিশালতার মাঝে ক্ষুদ্রতা

আমাদের প্ল্যান ছিল একদিন গাড়িতে থাকা। এক্সপেরিয়েন্স নেওয়া। পরের দিন হোটেলে উঠে যাওয়া। নাস্তা খেয়ে হোটেলে উঠি। এরপর সমুদ্রে গিয়ে কিছুক্ষণ পানিতে লম্প জম্প করে আসি।

ফিরে সাজিন ভাই সহ ইনানির দিকে রওনা দেই। রাস্তা কি যে সুন্দর। একপাশে পাহাড়, আরেক পাশে সমুদ্র। ড্রাইভ করতে কি যে ভালো লাগছিল। রয়াল টিউলিপের সামনে কিছুক্ষণ থাকি। এরপর আবার কলাতলির দিকে ফিরে আসি। ততক্ষণে দুপুর হয়ে যায়। হিমছড়ি আর্মিদের একটা রেস্টুরেন্ট আছে, স্টোন ফরেস্ট নামে। অর্ডার দেওয়ার পর রান্না করে দেয়। ফ্রেস খাবার খাওয়ার জন্য ঐখানে অর্ডার দেই। যদিও বলেছে ২০ মিনিট লাগবে খাবার সার্ভ করতে। পরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। আবার যতটুকু অর্ডার দিব, ঠিক ততটুকুই পাবো। এরপর এক্সট্রা কিছু লাগলে আর পাওয়া যাবে না। খাবার টেস্ট মোটামুটি ভালো। সার্ভিস আরেকটু ভালো হলে ভালো লাগত।

খাওয়া দাওয়া করে আমরা কক্সবাজারের ৬ নং ঘাটে যাই। উদ্দেশ্য মহেশখালী দ্বীপ। ৬ নং ঘাট থেকে মহেশখালী দ্বীপে স্পীডবোর্ডে যাওয়া যায়। মাত্র ৭৫ টাকা জন প্রতি। সৈকতে সী বোট গুলো এক্সপেন্সিভ। এর থেকে বড় কথা হলো খুব কম সময় দেয় ওরা। কম টাকায় অনেক ভালো এক্সপেরিয়েন্স পেতে চাইলে এই ৬ নং ঘাটে গিয়ে স্পীড বোটে করে মহেশখালী থেকে ঘুরে আসা যেতে পারে। অনেক বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। ৬ নং ঘাট বেশি দূরে না। কলাতলি থেকে ১৫-২০ মিনিট লাগবে যেতে। আর মহেশখালী যাওয়া আসা ২০ মিনিট করে ৪০ মিনিট। সময় কম থাকলেও ঘুরে আসা যায়। সমুদ্রের মাঝে দিয়ে যাওয়ার কারণে বিশাল ঢেউতে যখন স্পিড বোট দোল খায়, কেমন থ্রিল কাজ করে।

স্পিডবোট
স্পিডবোটে করে মহেশখালী

আমরা মহেশখালী গিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করি। ঘাটের পরই বাজার। আর দূরে কোথাও যাইনি। ইনশাহ আল্লাহ অন্য কোন সময় গেলে দ্বীপ ঘুরে দেখার ইচ্ছে আছে। এরপর আবার ফিরে আসি কক্সবাজার। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সি ল্যাম্প বিচ ক্যাফেতে বসে কফি খাই। ঐখানে মূলত ভালো ফিস বার-বি-কিউ পাওয়া যায়। একটু এক্সপেন্সিভ হলেও সার্ভিস ভালো। এর আগে ঐখানে খাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স ছিল। আমাদের পেটে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বার-বি-কিউ খাওয়া হয়নি। কফি খেয়ে হোটেলে ফিরে আসি। হোটেলের পাশেই সালিক রেস্টুরেন্ট। আগের দিন নলা হালিম সার্ভ করতে দেখে খেতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজ তাই নলা হালিম এবং রুটি খেয়ে নেই। এরপর রুমে গিয়ে ঘুম।

ভোরে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে চেক আউট করে নেই। এরপর রওনা দেই চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। ছোট্ট একটা ভিডিও করেছি, দেখতে চাইলেঃ

আলহামদুলিল্লাহ্‌। কক্সবাজার সাইকেল চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, বাইক চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ছিল গাড়ি ড্রাইভ করে যাওয়া। আল্লাহর রহমতে তাও হয়েছে। সাইকেল ট্যুর নিয়ে লেখা হয়নি, কারণ তখনো ট্রাভেল নিয়ে লেখালেখি শুরু করনি। বাইক ট্যুরের বিস্তারিতঃ

ঢাকা থেকে কক্সবাজার সলো বাইক ট্যুর ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন

1 thought on “কক্সবাজারে কার ক্যাম্পিং”

Leave a Reply