আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সঃ

বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিক্স হচ্ছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স।

মেশিনের বুদ্ধি শুদ্ধিকে আমরা বলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর বুদ্ধি হচ্ছে জ্ঞান আহরণ করা এবং তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা। মেশিনের জ্ঞান আহরণটা হচ্ছে মেশিন লার্নিং। দুইটা এক সাথে করলে হয় শেখা এবং প্রয়োগ করা। এই দুইটা মিলেই  হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা।

আমরা মুভি বা সাইন্স ফিকশনে দেখেছি রোবটরেরা অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠে। মানুষকে ধ্বংস করে। কিছু রোবট মানুষের উপকারে কাজ করে। এই  রোবট গুলোর ব্রেইনটাই হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টীলিজেন্স। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ছাড়া রোবট গুলো সাধারণ জড় পদার্থের মত। এমন না যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর জন্য আমাদের রোবট লাগবে। আমাদের পকেটের যে স্মার্ট ফোনটা রয়েছে, এটাতেই অনেক গুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স যুক্ত অনেক গুলো অ্যাপ রয়েছে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর ধাপঃ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রোগ্রাম গুলোকে তিনটে ধাপে ভাগ করা যায়।

ANI or Artificial Narrow Intelligence or Weak AI. ANI প্রোগ্রাম গুলো একটা নির্দিষ্ট কাজে এক্সপার্ট হয়। যেমন যে প্রোগ্রামটি দাবা খেলতে পারে, সে দাবা খেলাই সবচেয়ে ভালো পারবে। তাকে অন্য কোন কাজ করতে দিলে সে কিছুই করতে পারবে না। যেমন যদি তাকে  লুডু খেলতে দেওয়া হয়, সে পারবে না। ছোট বাচ্চাদেরকে কঠিন কোন কিছু করতে বললে তারা যেভাবে তাকায়, প্রোগ্রামটি আপনার দিকে ঠিক সেভাবে তাকাবে।

AGI or Artificial General IntelligenceI:  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে AGI। এটাকে Strong AI, বা Human-Level AI ও বলা হয়। এ ধাপে কম্পিউটার মানুষের মত চিন্তা করতে পারবে, মানুষের মত প্ল্যান করা, সমস্যা সমাধান করা, হঠাৎ নতুন কোন পরিবেশে আসলে চারপাশ দেখে সে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার মত ক্ষমতা অর্জা করবে।

ASI or Artificial Super Intelligence: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৃতীয় ধাপ। কম্পিউটার যখন মানুষ থেকেও বুদ্ধিমান হবে তখন তাকে আমরা বলব আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স। আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম তৈরি হলে কি হবে, মানুষের ভালো হবে না খারাপ হবে, তা নিয়ে গবেষকরা এখনই চিন্তিত।

Artificial Super Intelligence এ পৌঁছানোর পর আমরা থাকব কি থাকব না তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনই অনেক চিন্তিত। আমরা বেঁচে থাকি আর না থাকি, ASI তে পৌঁছালে সব কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে। পৃথিবীর সকল শক্তি কিভাবে ব্যবহার করা যায়, আমরা তা বের করে ফেলতে পারব।  হয়তো পৃথিবী থেকে বের হয় অন্য গ্রহ গুলোতে সহজেই যেতে পারব। বিচরণ করতে পারব মহাবিশ্ব।

আমরা কোন ধাপে রয়েছি?

আমরা এখনো Artificial Narrow Intelligence ধাপে রয়েছি। আমরা যত রকম প্রোগ্রাম দেখি বা ব্যবহার করি, সব গুলোই ANI প্রোগ্রাম। Gogole Search Ingine, Self Driving Car, Flight Control, Nuclear Project Control and other complex system সব গুলোই ANI প্রোগ্রাম। এগুলো একটা নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ। ঐ কাজের বাহিরে অন্য কোন কাজ করতে পারবে না।

আমাদের অর্জনঃ

১৯৯৭ সালে  IBM’s Deep Blue কম্পিউটার প্রোগ্রাম দাবার গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারায়। যা একটি বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম ছিল। ঐটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর অনেক বড় একটা অর্জন ছিল।

এ বছর মার্চে AlphaGo প্রোগ্রাম গো বোর্ড গেমের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নকে হারায়। এটা প্রথম অর্জন থেকেও অনেক বড় একটা অর্জন। কারণ দাবা খেলাতে প্রতিটা পজিশন থেকে পরবর্তি মুভ দেওয়ার জন্য প্রায় ২৫টা পসিবল মুভ দেওয়া যায়। গো গেমে দেওয়া যায় ২০০ টা মুভ। কোন মুভ দিতে হবে, তা মানুষ যত সহজে চিন্তা করতে পারে, কম্পিউটারের জন্য এত সহজ না। এ ছাড়া দাবা খেলাটা হচ্ছে লজিক্যাল খেলা। লজিক দিয়েই খেলা যায়। কিন্তু গো খেলাটি বুদ্ধি দিয়ে খেলতে হয়। মানুষ যেভাবে চিন্তা করে, সে ভাবে চিন্তা করতে হয়।

IBM Watson

এছাড়া IBM Watson ২০১১ সালে অ্যামেরিকার বিখ্যাত কুইজ শো Jeopardy এর দুইজন চ্যাম্পিয়নকে হারায়।

IBM Watson হচ্ছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম। এটা প্রথম দিকে ডেভেলপ করে প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়ার জন্য। Jeopardy এর দুই জন্ম চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে পথ চলা শুরু।  এখন নানা জায়গায় IBM ওয়াটসন ব্যবহার করা যায়। ডেটা এনালাইসিস, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই প্রোগ্রামটা ব্যবহার করা যায়।  ক্যান্সারের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের ডিসিশন নিতে IBM Watson হেল্প করে। এছাড়া লাঞ্জ ক্যান্সারের নার্সদের প্রায় ৯০% IBM Watson এর দেওয়া ডিসিশনের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই প্রোগ্রামের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে যত বেশি এটি ব্যবহার করা হবে, এ সিস্টেম তত উন্নত হতে থাকবে।

Watson API ব্যবহার করে যে কেউ ইন্টিজিলেজন্ট সফটওয়ার তৈরি করতে পারে। যদিও ফ্রি না!

Personal Assistant:

আমাদের কাছে পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাইন্স ফিকশন গল্পের মত মনে হলেও এখন অনেক কাজই পারসোনাল এসিস্টেনট দিয়ে করা যায়। আপনি যে কোন কিছু ওকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিবে। Ammazon Echo  বা Google Home এর মত প্রোডাক্ট গুলো দিয়ে কথা বলেই কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। সাইন্স ফিকশন মুভি গুলোতে যেমন দেখা তেমন। আগে গল্প থাকলেও বিষয় গুলো এখন বাস্তব।

হিউম্যানয়েড রোবটঃ

মুভিগুলোতে মানুষের মত আমরা যে রোবট দেখি, সেগুলোকে বলে  হিউম্যানয়েড রোবট। এখন পর্যন্ত সেরা হিউম্যানয়েড রোবট হচ্ছে হোন্ডার ASIMO রোবট। এছাড়া বোস্টন ডায়নামিক মিলিটারি গ্রেড রোবট নিয়ে কাজ করছে। তাদের রোবট গুলো অনেক স্ট্রং। সবার জন্য উন্মুক্ত  হিউম্যানয়েড রোবট হচ্ছে NAO. এটি প্রোগ্রামেবল। আপনি এটিকে ক্রয় করে নিজের মত করে মডিফাই করে নিতে পারবেন। এটিতে IBM Watson এর মত প্রোগ্রাম সেট করলে গুগল হোম বা অ্যামাজন ইকো এর মত কাজ করবে।

Self-Assemble Robot:

সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং রোবট হচ্ছে সেলফ এসেম্বলল রোবট। যারা বিগ হিরো মুভিটি দেখেছেন, সেখানে মাইক্রোবট দেখানো হয়। ছোট ছোট রোবট। যেগুলো এক সাথ হয়ে যে কোন আকার ধারণ করতে পারে। কয়েক দিন আগে মুভি দেখলে এখন দেখি বাস্তবে এরকম রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে। এবং সফল ও হয়েছে। MIT এর Self Assembly Lab এ রকম রোবট নিয়ে কাজ হচ্ছে। এবং দারুণ সব মাইক্রোবট তৈরি করেছে।

ন্যানো টেকনোলজি যখন অনেক অগ্রসর হবে, তখন এই সেলফ এসেম্বেল রোবট গুলো দিয়ে মানুষের শরীরের যে কোন রোগ সারানো সম্ভব হবে। শরীরে ভাইরাস? মাইক্রোবট রক্তকণিকায় প্রবেশ করে ভাইরাস গুলো ধ্বংস করবে। ক্যান্সারের মত রোগ বলতে কিচ্ছু থাকবে না।

Industrial Robot.

এমন না যে রোবট গুলো দেখতে মানুষের মত হবে। রোবট যে কোন রকম হতে পারে। ইন্ড্রাস্টিতে অনেক কাজই রোবট দিয়ে করা হয়। গাড়ি তৈরি থেকে শুরু করে মোবাইলের চিপ বা প্রসেসর তৈরির মত  কাজ গুলো রোবট দিয়ে করা হয়।

Machine Learning

আমরা শুধু ANI ব্যবহার করেই অনেক গুলো সমস্যা সমাধান করে ফেলছি। আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছি। এই ANI প্রোগ্রাম গুলো তৈরি করার সময় আমরা সরাসরি  বলে দেই না কি করতে হবে। আমরা কিছু উদাহরণ দেই। এরপর ঐ উদাহরণ থেকেই প্রোগ্রামটা একটা অ্যালগরিদম দাড় করে ফেলে। এরপর পরবর্তিতে  যে কাজ করতে বলা হয়, নিজের মত করে করে। এটাই হচ্ছে মেশিন লার্নিং।

কিছুক্ষণ আগে যত গুলো প্রোগ্রাম বা রোবটের কথা বলেছি, সব গুলোতেই মেশিন লার্নিং এর ব্যবহার রয়েছে। আগামী দুই তিন বছরের মত যত সফটওয়ার বা অ্যাপ রয়েছে, সব গুলোতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করা হবে।

Prisma

আমরা প্রিসমা অ্যাপ অনেকেই ব্যবহার  করেছি। যারা ব্যবহার করি নি, তারা অন্তত প্রিসমা দিয়ে তৈরি করা ছবি দেখেছি। সাধারণ ছবিকে কি সুন্দর আর্টিস্টিক ছবি তৈরি করে দেয়। এই অ্যাপটির মূলে রয়েছে ডীপ নিউরাল নেটওয়ার্ক। যা মেশিন লার্নিং এর একটা পদ্ধতি। এখন দারুণ কিছু করতে মেশিন লার্নিং প্রয়োগ করতেই হবে আমাদের।

মেশিন লার্নিং এর জব মার্কেটঃ

আপ ওয়ার্ক প্রতি চার মাস পর পর স্কিল ইনডেক্স শেয়ার করে। এখন সবচেয়ে গ্রোইং স্কিল হচ্ছে মেশিন লার্নিং! শুধু ভবিষ্যৎ না, বর্তমানেও মেশিন লার্নিং এর অনেক চাহিদা রয়েছে।

শিখব কোথায় থেকে?

অনলাইনে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে। আমার প্রিয় সাইট হচ্ছে ইউডাসিটি।  ফ্রি রিসোর্সের পাশাপাশি প্রিমিয়াম রিসোর্স ও রয়েছে। গিট হাবে Awesome Artificial Intelligence এবং Awesome Machine Learning  নামে দুইটা প্রজেক্ট রয়েছে। যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং এর উপর যত রিসোর্স রয়েছে, সব গুলোর লিস্ট রয়েছে। যা নিজের কাছে সহজ মনে হয়, সেখান থেকেই শুরু করতে পারেন।

স্লাইডটিঃ

 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং আরো কিছু লেখা। 

6 thoughts on “আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং”

  1. আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে কি কোর্সটা করা সম্ভব?

    Reply
    • এটা মূলত কম্পিউটার সাইন্স এর সাবজেক্ট। আপনার প্রোগ্রামিং জ্ঞান, কিছু স্ট্যাটিস্টিকক্স, ও গণিতের জ্ঞান লাগবে। প্রিরিকোয়জিট গুলো নিজে নিজে শিখে নিলে আপনি যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড এ পড়েও এ এগুলো নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

  2. মেশিন লার্নিং শেখার বাংলা কোন লিংক আছে নাকি?????????

    Reply

Leave a Reply