চট্রগ্রাম ট্যুর ডিসেম্বর ২০১৪

১১ তারিখ কক্সবাজার থেকে চট্রগ্রাম রওনা দিয়েছি। উঠেছি একটা লোকাল বাসে। লোকাল বাসে উঠা কত যে প্যাড়া, প্রতিক্ষণেই তা মনে করিয়ে দিতে লাগল। যাই হোক, সব কিছু মেনে নিয়ে চলতে লাগল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একটি ব্রিজ এর উপর গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলো। আজব! তেল শেষ নাকি। তেল আছে কি নেই, তা না জানিয়েই গাড়ি রাস্তায়। এরপর গাড়ি ধাক্কিয়ে মেবি ব্রিজ পার করিয়ে একটি পাম্প এর সামনে আনা হয়েছে। তেল ঢুকানো হয়েছে, তারপর ও গাড়ি আর স্টার্ট নেয় না। আমি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত, কি হচ্ছে কোন খবর নেই। কিছুক্ষণ পর দেখি সবাই নেমে যাচ্ছে, আমাদের ও নামতে হলো। এবং উঠতে হলো আরেকটি লোকাল বাসে। দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে ভালো লাগে না। ভয়াবহ বিরক্তি কর জার্নি করে সারাদিন কেটে গেলো কক্সবাজার থেকে চট্রগ্রাম আসতে।
ঐদিন আর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি। বাসায় এসে ফেসবুকিং করা, গান শুনা ইত্যাদি করেই কাটিয়ে দিয়েছি।
১২ তারিখ ছিল শুক্রবার। দুপুরে জুমার নামাজ পড়েই চলে গিয়েছি ভাটিয়ারী। চট্রগ্রামের সেরা একটি জায়গা। মিনি বান্দরবন বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। সারা বিকেল দারুণ কেটেছে। সারাক্ষণ হাসিখুশি ছিলাম। অনেক গুলো ছবি তুলেছি। সুহৃদ তুলে দিয়েছিল। সেরা কিছু ছবি। সাথে ছিল আসিফ ভাই, টিটু ভাই।
ছবিটবি তুলে গিয়েছি ক্যাফে 24 এ। ঐখানে ভেতরে সুন্দর কিছু জায়গা রয়েছে। ঘুরাঘুরি করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমরা এরপর খাওয়া দাওয়া করার জন্য বসলাম। খাওয়া দাওয়ার জন্য প্লেস গুলো ভালো লেগেছে। ছোট ছোট পাহাড়ের উপর ছাউনি। গাছের আস্ত কাঠ দিয়ে টেবিল। কাবাব আর রুটি অর্ডার দিয়েছি। দারুণ লেগেছে সবাই মিলে খেতে। ঐখান থেকে বাসায়। বাসায় বলতে আমার খালামনির বাসায়। উনারা এখানে থাকে।
IMG_20141212_163836
উপজাতীয়দের ঘর… এমন অনেক গুলো রয়েছে
IMG_20141212_173326
গাসের গুড়ির ভেতর লাইট… দারুণ
১৩ তারিখ, শনিবার। কর্নফুলি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছি। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিন্তু জ্বর, কাশি, সর্দি, এসব অসুখে জন্য বসে থাকতে রাজি নই, এ জন্যই ঘুরা ঘুরি বন্ধ করি নি। যদিও মাথা ব্যথা উঠলে কষ্ট দিত।। এরপর  বুকে ব্যথা শুরু হয়েছিল। তাই আর যেতে পারি নি। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। দুপুরে বের হয়েছি সুহৃদ এর সাথে। সুহৃদ কোন একটা স্পেশাল কাজে বের হয়েছিল।  হসপিটাল কয়েকটাতে গিয়ে দেখি ডাক্তার নেই, সব গুলোতেই ডাক্তার আসবে বিকেলের দিকে। তাই চট্রগ্রাম শহরের এদিক ঐ দিক ঘুরা ঘুরি করেছি।
সুহৃদের অপেক্ষা...
সুহৃদের অপেক্ষা…
বিকেলে ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়েছি, সন্ধ্যায় ডাক্তার দেখিয়েছি… 🙁 বুকে এতই ব্যাথা করে যে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, সাথে রয়েছে কাশি, কাশি দিতে গেলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ডাক্তার জিজ্ঞেস করছিল রেস্টুরেন্টে বেশি খাওয়া হয়? উত্তর কি দেওয়া যায়? -_-
যাই হোক, ওষুধ দিল। ঔষধ নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
১৪ তারিখ, রবিবার। খালাম্মার এখানে আসলে আমার জন্য কিছু না কিছু একটা তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দেয়। কারণ উনি জানে আমি রাতে জেগে থাকি, রাতে কিছু খেতে পছন্দ করি। গতকাল ফিরনি রান্না করে রেখে দিয়েছিল। আহ! অসুস্থ থাকার কারণে রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছি। যদিও কিছুক্ষণ পর পরই ঘুম ভেঙ্গে যেতো। পরে সকালে উঠে ফিরনি খেয়েছি… দিন শুরু …
সাড়ে এগারোটার দিকেSakhawat H Munna দেখা করতে এসেছে। সাথে ছিল তার এক বন্ধু। প্রোগ্রামিং নিয় এটা সেটা জানতে চেয়েছিল, কিছুক্ষণ কথা বলেছি।
দুপুরে লাঞ্চ করেই বেরিয়ে পড়লাম। আগে থেকেই বের হওয়ার প্ল্যান ছিল। Mizanur Rahaman Mizan ভাই এর সাথে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে বেরিয়ে চা খেলাম। এরপর অপেক্ষা করলাম Sadd Amin ভাই এর জন্য। উনি বাইক নিয়ে এসেছিল। এরপর উনাদের অফিসে গেলাম। Inspire Chitagong এ। ঐখানে ছিল Tanshir ভাই। আমাদের সাথে জয়েন করেছে আসিফ ভাই।   ঐখানে চা নাস্তা করলাম সবাই মিলে। কথা বললাম। কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে ঠিক করা হলো কর্ণফুলি নদীতে যাবো। ঐখানে গিয়ে সাম্পানে করে নদীতে ঘুরব।
সবাই মিলে গেলাম। সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা। ছোট ট্রলারে করে নদীতে বেঁসে থাকে। চারপাশে বিশাল বিশাল লঞ্চ। তার মধ্য দিয়ে আমরা। লঞ্চ ঘাটে সুন্দর আলোর খেলা… নদীর মাঝখানে গিয়ে ট্রলার বন্ধ করে গান গাওয়া। ইচ্ছে মত মজা করা… এর পর এক সময় আবার তীরে ফিরে আসা।
কর্ণফুলিতে
কর্ণফুলিতে
সাম্পানের উপর
সাম্পানের উপর
 সাম্পান থেকে চারপাশ যেমন দেখায়
সাম্পান থেকে চারপাশ যেমন দেখায়
তীরে ফিরে আমরা চলে এসেছি ওহ চিটাগং এ। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া। এরপর আবার সেখান থেকে বের হয়ে চা খাওয়া। তারপর চট্রগ্রামের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি। এরপর বাসায় ফিরলাম।
IMG_20141214_192825
ওহ চিটাগং
সেই ছোটবেলা থেকেই খালাম্মা যখন কাজিনদের খাবার খাইয়ে দিত, তখন আমিও বায়না ধরতাম, যেন আমাকে খাইয়ে দেয়।  আজ যখন রাতের খাবার খেতে ডাকলো, গিয়ে দেখি খালাম্মা ছোট কাজিনটিকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি বললাম আমকেও খাইয়ে দিতে। কাজিনকে যখন খাওয়াতে নিয়েছিল, এবং সে যখন মুখ দিচ্ছিল, আমি তাকে দূরে সরিয়ে খেয়ে নিলাম। ছোট কাজিনটি ছাড়াও আরো দুটি কাজিন ছিল। তারা আমার দেখা দেখি বলে আমিও খাবো। এরপর খালাম্মা একটি বড় বাটি নিল। এরপর সবাইকে খইয়ে দিল…
দিনটি অনেক সুন্দর কেটেছে। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে 🙂
১৫ তারিখ। আমি মোটামুটি অসুস্থ। তাই সারাদিন বাসায় কাটিয়েছি। রুম থেকে বের হই নি। সন্ধ্যার দিকে রানা ভাই বলল আসবে। উনি বাসায় আসলো। কথা বললাম অনেকক্ষণ। এরপর উনাকে এগিয়ে দিয়ে এসেছি।
ঐ রাতে একটা সুখবর শুনলাম। খালাম্মা বলল। ইনশাহ আল্লাহ, আমাদের ফ্যামিলিতে নতুন মেম্বার যোগ হবে। ছোট একটা বাবু আমাকে কাকা ডাকবে। কি কিউট না হবে …  রাতে ভাইয়া আমাকে বাড়ি আসতে বলল। আমি এটা বলি, ঐটা বলি পরে আসব বলি। টাকা নেই বলি।  তারপর ও আসতে বলে। কি করা, বললাম জানুরারীর প্রথমে আসব বাড়িতে। রাতে ফোন রাখলাম।  এসে এটা সেটা করে ঘুমিয়ে গেলাম।
১৬ তারিখ। বিজয় দিবস। শরীর বেশি সুস্থ না থাকায় বের হই নি কোথাও। এ ছাড়া ঠাণ্ডা। বের হলে অসুখ বাড়তে পারে তাই। ঘুম থেকে উঠে চা নাস্তা করে কম্পিউটারের সামনে। খালাম্মা এসে বলে ভাইয়া ফোন করেছে। আমাকে বাড়িতে  যেতে বলে। এতবার বলার কারণে কি আর করা ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। দুপুরের দিকে ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ৩টার দিকে রওনা দিলাম। চট্রগ্রামকে বিদায় জানাতে হলো। যদিও আমার আরো কয়েক দিন চট্রগ্রাম থাকার ইচ্ছে ছিল… আবার আরেকদিন 🙂

2 thoughts on “চট্রগ্রাম ট্যুর ডিসেম্বর ২০১৪”

  1. জাকির ভাই – অসাধারণ লেগেছিলো আপনার সাথে ভ্রমণ। আবার আসলে নতুন কোথাও ঘুরতে যাবো সবাই মিলে।

    Reply

Leave a Reply