গরীব, মধ্যবিত্ত, বড়লোক

গরীব কেউ মনে করে তাদের থেকে মধ্যবিত্তরা বেশি সুখী , মধ্যবিত্তরা মনে করে বড়লোকেরা বেশি। আর সবাই মনে করে এই সুখ জিনিসটার মাপকাঠি হচ্ছে টাকা। বা যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে, তাদের সুখ বেশি, যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে, তাদের সুখ কম।

সুখ অনুভূত হয় মস্তিষ্ক দিয়ে। শরীর দিয়ে নয়। যাদের শারীরিক পরিশ্রম বেশি করতে হয়, তাদের প্রেশার যায় শরীরের উপর দিয়েই। আর যাদের বসে বসে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে কাজ করতে হয়, তাদের প্রেসার পড়ে মস্তিষ্কে। একজন কায়িক পরিশ্রম করে দেখা যায় দিন শেষে সে সুন্দর একটা ঘুম দিতে পারে। আর যে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে কাজ করে, তাকে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুম যেতে হয়।

মধ্যবিত্ত বা গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরাও দিন শেষে নিশ্চিন্তে একটা স্বপ্ন নিয়ে ঘুম যেতে পারে। একদিন অনেক বড় হবে, সেই স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন নিয়েই বড় হয়। তাদেরকে বড়লোক ছেলে মেয়েদের দেখিয়ে বলে, ওদের মত হতে হবে। আর বড়লোক ছেলে মেয়েদের মা বাবারা কিসের স্বপ্ন দেখায়? দেখা যায় অনেক বড় লোক বাপের ছেলে মেয়েদেরও দিন শেষ ঘুমানোর জন্য ঘুমের ঔষধের প্রয়োজন হয়।

বড় লোকের ছেলে মেয়েদের আমরা মনে করি তারা নিজেরা নিজেদের প্রিন্স বা প্রিন্সেস ভাবে। আসলে কি তাই? মূলত আমরাই দূরত্বটা তৈরি করি। গরিব, মধ্যবিত্ত, গরিবের আগে আমরা সবাই মানুষ, এটা ভুলে যাই। ভুলে যাই সবাই সমান।

গাড়িতে করে চাকরীরত ড্রাইভারের সাথে স্কুলে যাওয়ার থেকে মা / বাবা / বড় ভাই / বোড় বোনের হাত ধরে স্কুলে যাওয়াতে অনেক বেশি সুখ। অনেক অনেক বেশি সুখ। শুধু যতক্ষণ না বড় লোক কোন ক্লাসমীটের গাড়িতে করে স্কুলে আসা দেখে বড় নিশ্বাস আসে। নিজের যা কিছু আছে, তাতেই সুখ খুঁজতে হয়। ক্লাস শেষে লক্ষ্যহীন আড্ডা থেকে টিউশনি খুজতে থাকা ছাত্র/ছাত্রীর প্রাপ্তিতেই সুখ। শুধু আক্ষেপ না করলেই হয়, যে অন্যরা আড্ডা দিচ্ছে, আর আমাকে টিউশনি খুঁজতে হচ্ছে।

পাওয়া না পাওয়া সবার থাকে। বড় লোক ছেলে/মেয়েটির যেমন, মধ্যবিত্ত বা গরীব ছেলে/মেয়েটির ও তেমন। পাওয়া না পাওয়ার ব্যথাও তেমন সবার সমান। কেউ হয়তো এক বেলা রেস্টুরেন্টে খেতে পারে না। আর কেউ হয়তো এক বেলা মায়ের হাতের খাবার খেতে পারে না। ব্যথাটা কিন্তু সমানই। এখন অন্যের সাথে তুলনা করে নিজের ব্যথাটা না বাড়ালেই হয়।

আর টাকা অবশ্যই সুখ কিনতে পারে না। যদিও সুখী হওয়ার উপাদান গুলো পেতে টাকার দরকার হয়। কিন্তু সুখী হতে মূলত অল্প কিছু টাকা দরকার হয়। অলসতা না করলে ঐ টাকাটা পেতে কারোই বেগ পাওয়ার কথা না। টাকা মানুষ ইচ্ছে করলেই পেতে পারে। সুখ ইচ্ছে করলে পাওয়া যায় না। বড় হওয়ার ইচ্ছে তাই টাকা রুজি না হয়ে ভালো কিছু করা, ভালো কিছু হওয়া হলেই দারুণ হয়।

বড়লোক গরীব তুলনা করে লেখা গুলো দেখলে খারাপ লাগে। তাই নিজ দর্শন থেকে লেখাটি লেখা। আমার দেখা, জানা ভুল হতে পারে। যতটুকু জানি, তা দিয়ে বলতে পারি, তুলনা জিনিসটা খারাপ। ভয়াবহ খারাপ। তুলনা না করে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী চললে যথেষ্ট সুখী হওয়া যায়। নিজ সামর্থ্যের ভেতর সবাই সবার সুখ খুজে পাক। সুন্দর ভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিক 🙂

1 thought on “গরীব, মধ্যবিত্ত, বড়লোক”

Leave a Reply