গল্পঃ অপেক্ষা

ক্লাসে যে কেউ প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কিছু না বুঝলেই আমার কাছে আসত। আমি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। মাঝে মাঝে ফোন করে খোঁজ খবর নিত। পরীক্ষার আগে ভালো রেস্টুরেন্টে ট্রিট দিত আর পরীক্ষার সময় পাশা পাশি বসার চেষ্টা করত। কিন্তু আমি অপেক্ষায় থাকতাম কখন মিলি এসে আমার পাশে সিটে বসবে। কখন আমার সাথে একটু কথা বলবে। কখন বলবে ঐ অ্যালগরিদমটা বুঝি না, একটু বুঝিয়ে দিবে? আমি তখন পৃথিবীর সেরা শিক্ষক হয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম।

সবার কথা বলতে ইচ্ছে করে, শুধু মিলির কথা বলতে ইচ্ছে করে না। মিলিরা হয়তো বুঝে যায়, কে তাদের পছন্দ করে, কে অপছন্দ করে। বুঝে গিয়েই দূরে থাকে। মিলি একদিন কথা বলতে আসবে, সে আশা নিয়ে আমি দিন গুণতে থাকি। মাঝে মাঝে চিন্তাও করি, মিলি কথা বলতে আসলে কি কথা বলবে, আমি কি উত্তর দিব।

ঐদিন ক্যান্টিনে বসে বসে চা খাচ্ছি। দূর থেকে দেখি মিলি এদিকে আসছে। আমি পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঐদিকে কেউ আছে কিনা। শিউর হয়ে নিলাম আমার কাছেই আসছে কিনা। ভাবতে লাগলাম, আমার অপেক্ষা বুঝি শেষ হলো। মিলি আমার সামনে এসেই দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করল কেমন আছি।

মিলি কিছু বললে কি উত্তর দিব ভেবে রেখেছি, সব ভুলে গিয়েছি। চায়ের কাপ রেখে দাঁড়িয়ে বললাম আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? নিজের কণ্ঠটা নিজের কাছেই কেমন অপরিচিত মনে হলো।

মিলি বলল আমি ভালো আছি। শুন, ফ্রাইডেতে আমার বিয়ে। ক্লাসের সবাই আসবে। তুমিও আইসো। বলে একটা কার্ড আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটি নিলাম। মিলি চলে যে দিক থেকে এসেছে, ঐ দিকেই চলে গেলো। আমার প্রোগ্রামিং, আমার অপেক্ষা কোন কিছুই কাজে আসল না!

Leave a Reply