আজব লেখক

ক্লাসে নিলয় কোন কথা বললেই সবাই হো হো করে হেসে উঠে, সবাই এমন ভাব করে নিলয় যেন মঙ্গল গ্রহের প্রাণী। দোষটা ছেলেমেয়েদেরও না। দোষ নিলয়েরই। কথা গুলো এত মিন মিন করে বলে আর কি বলতে চায় কিছুই বোঝা যায় না অথবা পরিবেশের সাথে মানায় না। আর তা নিয়েই হাসা হাসি। পাশ থেকে কেউ কেউ ভেংচি কাটতে ও ভুল করে না। ক্লাস শেষে আবার সবার সাথে বেহায়া এর মত মিশে সে, নেই কোন রাগ বা দুঃক্ষ।

কয়েকদিন থেকে আজব একটা সমস্যা নিয়ে চলাফেরা করে নিলয়। কোন কথাই ঠিক মত বলতে পারে না। যা বলতে চায়, বলতে গেলে অন্য আরেকটা বের হয় মুখে দিয়ে বা ভুলেই যায় কি বলবে। তারপর চুপ করে থাকা ছাড়া আর উপায় থাকে না। ক্লাসে যে স্যার কে কোন প্রশ্ন করবে তাও ঠিক মত করতে পারে না। তাই কোন সমস্যা থাকলেও তা নিয়ে ফিরতে হয়। এটা হয়তো পরিবেশ এর দোষ। সে কিছু বললে কি বলছে তা কোন দিন ও কেউ জানতে চায় না, ভালো না খারাপ। কথা আস্তে বলার কারনে তার উপস্থিতিও কারো নজরে পড়ে না।

নিলয় নতুন একটা বিষয় আবিষ্কার করছে। সে কিন্তু লিখতে গেলে সব কিছু অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারে। আর তাই সে চিন্তা করল এবার থেকে কথা না বলে সে লিখে জানাবে সব কিছু। স্যারকে কোন প্রশ্ন করলেও তাও তার আইপ্যাডে লিখে স্যারকে দেখাবে। টাইপিং স্পিড মোটামুটি ভালোই তার। এতে আরেকটা ভালো সুবিদা পাচ্ছে নিলয়। আর তা হচ্ছে তথ্য গুলো সে পরে যে কোন সময়ই দেখতে পারছে। ভুলে গেলেই একবার নজর ভুলিয়ে নিতে পারে সে সব কিছু।

তাদের প্রোগ্রামিং ক্লাস নেয় হাসান স্যার।  কিছু প্রোগ্রামিং প্র্যাকটিস দিয়েছে করার জন্য। একটা বিষয় বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারনে নিলয় হাত তুলে  স্যারকে ডেকে সমস্যার কথা বলল। স্যার কিছু না বুঝে বলল তোমার কথা কিচ্ছু বুঝতে পারি নি। আবার বল। পাশ থেকে ক্লাসে সবচেয়ে ধুর্ত, শয়তান, জগড়াটে মেয়ে আনিকা সে যে ভাবে বলছে ঠিক সে ভাবে নেকামি করে বলে উঠল। আর তা শুনে সবাই হেসে উঠল। নিলয় কিছু না বলে বসে পড়লো। সে চিন্তা করল সুন্দরী মেয়েরা এত খারাপ হয় কি করে? দুনিয়ার সকল সুন্দর মেয়েই কি এমন বদমাস নাকি কে জানে।  আনিকা মেয়েটিকে সে একটু একটু পছন্দ করত আর সে আনিকাও আজ তাকে সবার সামনে এমন হাসির পাত্র বানালো।। হাসান স্যার লোকটা মনে হয় অনেক ভালো, সে নিলয়ে পাশে এসে আবার জিজ্ঞেস করল। তারপর নিলয় তার সমস্যার সমাধান করে নিল। নিলয় ভাবে সকল শিক্ষক যদি এমন হত কত ভালো হতো। সে সব কিছু ঠিক মত করতে পারত।

ক্লাসের শেষের দিকে স্যার সবাইকে পড়ালেখা নিয়ে কিছু কথা বলছিল। দেখ, প্রোগ্রামিং মোটামুটি একটা কঠিন বিষয়। অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমাদের সাথের অনেক ক্লাসমিটই এখন ব্যাঙ্ক বা কোন ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। কিন্তু সে হওয়ার কথা ছিল বড় একজন প্রোগ্রামার। তোমাদের মঞ্জুর স্যারের দিকে তাকাও। তার অনেক সন্মান। তাকে পৃথিবীর অনেকেই ছিনে প্রোগ্রামার হিসেবে। তাই বলছি শেখার চেষ্টা কর। বার বার প্র্যাকটিস কর।

নিলয় হঠাৎ করে বলে উঠল স্যার, শিক্ষকদের বেতন কম। স্যার তার দিকে তাকিয়ে বলল দেখ, মঞ্জুর স্যারকে আজ অনেকেই চিনে তাই না? মানুষ এক সময় সুনামের জন্য চেষ্টা করে। তুমি দেখবা বিলগেটস ও এখন অনেক টাকা বিলিয়ে দেয় মানুষকে। তোমাদের এলাকায় অনেক মুরুব্বি দেখবা অনেক দান করে। কেন করে? সুনামের জন্য। মানুষের একসময় ইচ্ছে হয় তার অনেক সুনাম হোক। তাকে অনেক মানুষ জানুক, তখন আর টাকা রুজি করতে ইচ্ছে করে না খরচ করতে ইচ্ছে করে বলে স্যার ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন।

নিলয় বাসায় এসে বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবছে। আসলে স্যারকে ঐদিন ঐ কথা বলার কারন ও আছে। সে নিজেও আসলে চায় সুনাম, খ্যাতি। কোন দিনও টাকা পয়সার কথা চিন্তা করে নি। আবার সে শিক্ষক ও হতে পারবে না, কারন সে ক্লাস নিবে কি করে? সে তো ঠিক মত কথাই বলতে পারে না। স্যারকি তার কথায় রাগ করছে? আচ্ছা স্যার রাগ করলে তো অনেক সমস্যা। শিক্ষক হচ্ছে শিক্ষক তাদের সাথে কোন বেয়াদপি করা যায় না। স্যারকি তা বেয়াদপি হিসেবে নিয়েছে? সে তো কোনদিনও শিক্ষকদের সাথে বেয়াদপি করতে চায় না। আচ্ছা স্যারের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আসলে কেমন হয়? কিন্তু নিলয় জানে যে সে স্যারের সামনে গিয়ে কথা ঠিক মত বলতে পারবে না। সব কিছু গুলে ফেলবে। তাই সে একটা  ওয়ার্ড ডকুমেন্টে সে স্যারকে কি বলতে চায় তা লিখতে ফেললঃ

“স্যার ঐ দিন আপনাকে ক্লাসে বলছিলাম যে শিক্ষকদের বেতন কম। আসলে বলে ফেলার পর আমার খুব খারাপ লাগছে। একজন ব্যাংকার বা অন্যান্য প্রাইভেট ফার্মে যারা চাকরি করে তাদের অনেক বেতন আমি শুনেছি। আর এটা ও শুনেছি যে শিক্ষকেরা তাদের থেকে কম বেতন পায়। তাই মাঝে মাঝেই এটা নিয়ে ভাবি যে শিক্ষকেরা সব চেয়ে বেশি জানে। তাদের জ্ঞান সবচেয়ে বেশি তারপর ও তাদের বেতন কম দেয় কেন। তাই আমি ভুলে বলে আপনাকে ঐদিন বলে পেলছি যে শিক্ষকদের বেতন কম। শিক্ষক হতে পারলে আমার অনেক ভালো লাগত। কিন্তু আমার হয়তো সে যোগ্যতা নেই। আমি ঠিক মত কথাই বলতে পারি না…

স্যার যদি আপনি এটা মনে রাখেন বা কষ্ট পান, আমাকে ক্ষমা করে দিবেন… আমি কোন দিন ও শিক্ষকদেরকে ছোট চোখে দেখি নি। অনেক সন্মান তাদের। আর ঐ ব্যাংকার বা চাকরী জীবিরা শিক্ষকদের থেকে শিখেই কাজ করে।। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।”

তার এসানমেন্ট গুলো জমা দেওয়ার সময় স্যারকে এ ওয়ার্ড ডকুমেন্টটিও দিলো। তার পর বলল স্যার কষ্ট করে ফাইলটা ওপেন করে একটু পড়ুন।

স্যার পড়ে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আজব তো!! আমি এনিয়ে রাগ করব কেন তোমার উপর?

নিলয় ঠিক আছে স্যার, অনেক ধন্যবাদ বলে এক দৌড়ে স্যারের রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

1 thought on “আজব লেখক”

Leave a Reply